Ajker Patrika

‘বহুত্ববাদ’ নয় ‘বহুমত, বহুপথ’ যুক্ত করার প্রস্তাব খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ২১
সোমবার খেলাফত মজলিশের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ছবি: সংগৃহীত
সোমবার খেলাফত মজলিশের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ছবি: সংগৃহীত

সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ রাখতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটির বক্তব্য, বহুত্ববাদ শব্দটি আল্লাহর একত্ববাদের বিপরীত শব্দ। তবে শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুমত’ বা ‘বহুপথ’ রাখার প্রস্তাব করেছে দলটি। তারা বাংলাদেশকে চার প্রদেশে ভাগ করার প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছে।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে দলটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এসব কথা জানানো হয়।

আজ সকাল ১০টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। শেষ হয় বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪৭টিতে একমত, ১৫টিতে দ্বিমত ও ৪টি আংশিকভাবে একমত বলে লিখিত মতামতে জানিয়েছে।

সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্ত করার প্রস্তাবের বিষয়ে কমিশন ব্যাখ্যা দিয়েছে জানিয়ে খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেন, ‘উনারা বলেছেন, তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন, বহুত্ববাদ বলতে বহু সংস্কৃতি, বহু মত ও পথের লোক যেহেতু বাংলাদেশে বাস করেন, সবার বিষয়টি যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। তখন আমরা বলেছি, বহুত্ববাদ যেহেতু একত্ববাদের বিপরীত শব্দ, শব্দটা বাদ দেন। বহু সংস্কৃতি, বহুমত, বহুপথের সঙ্গে আমরাও একমত। আমরাও চাই এটা আসুক। এ জন্য অন্য শব্দ যেন এখানে ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজন হলে বহুমত, বহুপথ এই শব্দও ব্যবহার করতে পারেন।’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে। বিষয়টিতে দলটির দ্বিমত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জালাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বহুত্ববাদের বিরোধিতা করেছি। কারণ, শব্দটি একত্ববাদের বিপরীত শব্দ বা প্রতিশব্দ। এর মাধ্যমে আল্লাহ যে এক, এটার বিরোধিতা বোঝা যায়। তাই এটি বাদ দেওয়ার জন্য জোর প্রস্তাব করেছি।’ সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখার বিধান পুনর্বহালের দাবি করেছেন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশকে চার প্রদেশে ভাগ করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জানিয়ে দলটি মহাসচিব বলেন, ভৌগোলিক আকারে বাংলাদেশ ছোট দেশ। চারটি প্রদেশে ভাগ করতে গেলে রাষ্ট্রের খরচ বেড়ে যাবে। তাই এ ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছি।

সরাসরি নয়, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। বিষয়টিতে দ্বিমত করেছে খেলাফত মজলিস। মহাসচিব জালাল আহমেদ বলেন, ‘ইউপি সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে না। আমরা বলেছি, জনগণের প্রত্যক্ষ সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। সেটা ইউপি বা উপজেলা পরিষদে।’ ইউপি সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে টাকার ছড়াছড়ি হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট কথা হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোষীদের বিচার করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এ মুহূর্তে দ্রুত নির্বাচন করতে গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুলিশ প্রশাসনের বর্তমানে সক্ষমতা এখনো হয়ে ওঠেনি।’

দ্বিমত করা বিষয়গুলোতে আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়েছেন কি না, জানতে চাইলে জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দ্বিমত হওয়া বিষয়ে একমত হই নাই। তবে উপজেলা পর্যায়ের নাগরিক কমিটিতে শিক্ষার্থী রাখার প্রস্তাবে আংশিকভাবে একমত হয়েছি। কারণ, আমরা মনে করি, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকলে লেখাপড়া ব্যাঘাত ঘটবে। তবে কমিশন বলেছে, শিক্ষার্থীরা যাতে জনকল্যাণ কাজ করতে শেখে, পুনর্বিবেচনা করুক। তখন বলেছি, থাকতে পারে।’

সূচনা বক্তব্যে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের অধিকার নিশ্চিত এবং দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠা করা ৷ আর যেন কোনো অবস্থাতেই ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে না আসে ৷ পাশাপাশি জনগণ যেন অনুধাবন করতে পারে যে নাগরিক হিসেবে তাঁর সব অধিকার সুরক্ষিত আছে।

আলী রীয়াজ বলেন, আর যেন কেউ গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয় ৷ মানুষ তাঁর জীবনাচরণের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি না হয় ৷ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত