Ajker Patrika

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিপক্ষে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ। ছবি: আজকের পত্রিকা
এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ। ছবি: আজকের পত্রিকা

সংবিধান সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অসন্তুষ্ট নয় বিএনপি। বরং রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী কাঠামো দাঁড় করানোর জন্য তাঁরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এবং একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা গেলে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে এবং রাষ্ট্র একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে, যা ধীরে ধীরে গণতন্ত্রকে কার্যকর করে তুলবে।

আজ রোববার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সংবিধান সংস্কারের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ২২ এপ্রিল তাঁরা আবারও আলোচনায় বসবেন। আজকের বৈঠকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এবং কিছু বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ

সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের সঙ্গে আরেকটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করার বিষয়ে তাঁরা একমত হয়েছেন। এটি রাষ্ট্রপতিকে স্বাধীনভাবে আইন প্রণয়নে আরও বেশি ক্ষমতা দেবে এবং কমিশনও এ বিষয়ে মোটামুটি একমত।

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ প্রসঙ্গে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে তাঁদের প্রস্তাব অনুযায়ী একজন ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে পারবেন না। তবে বিরতির পরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবে, সেই বিষয়টি উন্মুক্ত রাখা উচিত বলে তাঁরা মনে করেন। এই বিষয়ে কমিশনের একটি নতুন প্রস্তাব এসেছে যা বিএনপি এখন প্রকাশ করতে চায় না। দলের ফোরামে আলোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়ন পদ্ধতি

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের সিদ্ধান্তকে উচ্চ আদালত অসাংবিধানিক ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কোন ক্যাটাগরি থেকে কীভাবে আসবেন, সেই পদ্ধতিগত বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে তাঁরা পুরোপুরি একমত হতে পারেননি। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগ থেকে, যেমন প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের কথা উল্লেখ ছিল। এ ক্ষেত্রে বিকল্প কোনো পদ্ধতি ভাবা যায় কি না, সে বিষয়ে কমিশনও পরে প্রস্তাব দেবে এবং বিএনপিও একটি প্রস্তাব পেশ করবে।

স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়ে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত জানিয়েছেন। স্থানীয় সরকারকে স্বায়ত্তশাসন ও আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংবিধানে উল্লেখ করার জন্য কমিশনের প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি দিলেও বিএনপি মনে করে এটি আইনের মাধ্যমে করাটা অধিকতর সংগত হবে। তারা স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট এবং জেলা সমন্বয় কাউন্সিলও আইনের মাধ্যমে গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও দলীয় প্রতীক

বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকের পক্ষে নয় এবং এই নীতিটি সংবিধানে সংযুক্ত করার পক্ষেও দলটি একমত।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনলে দ্বন্দ্ব তৈরি হবে কি না, এমন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতির সরকারে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। তার কাছে কী কী ক্ষমতা থাকলে ক্ষমতার ভারসাম্য আসবে, তা চিন্তা করতে হবে। জনগণের কাছে জবাবদিহি হচ্ছে সংসদ ও প্রধানমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে সব বিষয়ে অতিরিক্ত সীমাবদ্ধতা দেওয়া হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় অসুবিধা হতে পারে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্যদের নিয়ে একটি নির্বাচকমণ্ডলী (ইলেকটোরাল কলেজ) গঠনের কথা জানিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশে কোনো প্রাদেশিক ব্যবস্থা না থাকায় শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট এবং প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের সদস্যদের নির্বাচকমণ্ডলী হিসেবে গণ্য করার বিষয়টি কমিশনকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।

প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া

সংবিধান বিষয়ে প্রস্তাবগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এগুলো অবশ্যই আগামী সংসদে সংশোধনী আনতে হবে। তবে একটি জাতীয় ঐকমত্য হলে এবং একটি সনদ স্বাক্ষরিত হলে, সেটি আগামী সংসদে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিবেচনার অধীনে থাকবে।

আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক পদে এবং বিচার বিভাগের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকের পদায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ক্ষমতায়িত করতে চান, তা ঠিক হলে তখন সেটি আইন করে সংসদে করা যেতে পারে— এই বিষয়েও তারা সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের সঙ্গে আরেকটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত