Ajker Patrika

৩০ লাখ নতুন দরিদ্র

সম্পাদকীয়
৩০ লাখ নতুন দরিদ্র

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য আরও বাড়তে পারে—এমন এক আশঙ্কাজনক পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক গতি কমে যাওয়া, পণ্যের দাম বাড়া এবং চাকরি হারানোর ফলে লাখো মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়তে পারে, যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ৪ শতাংশ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। স্বল্প দক্ষ কর্মীদের মজুরি কমেছে ২ শতাংশ এবং উচ্চ দক্ষদের আয়ও সামান্য হ্রাস পেয়েছে। এর মানে, কাজ হারানোর পাশাপাশি যাঁরা এখনো কাজ করছেন, তাঁরাও আগের চেয়ে কম আয় পাচ্ছেন। এতে করে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। গত বছর যেখানে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে চলতি অর্থবছর শেষে তা বেড়ে হতে পারে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

জাতীয় পর্যায়ের দারিদ্র্যও কমছে না। বিশ্বব্যাংকের হিসাব বলছে, বর্তমানে প্রায় সাড়ে ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, যা ২০২৫ সালের মধ্যে বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। দেশের জনসংখ্যা যদি ১৭ কোটি ধরা হয়, তাহলে নতুন হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকবে, আর মোট দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩ কোটি ৯০ লাখের মতো।

এই আর্থিক সংকটের পেছনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগের ঘাটতি, কম ঋণপ্রবাহ এবং উন্নয়ন খাতে ব্যয় কমে যাওয়ার বিষয়গুলোও কাজ করছে। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে, আর উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের হার গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এসবের প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়েছে শ্রমবাজারে, যেখানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নামতে পারে, যা সরকারের নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ২ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনাতেও আমাদের অবস্থান পিছিয়ে পড়তে পারে। ভারতের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, আর পাকিস্তানের ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকরী সংস্কার। এখনই সময় অর্থনৈতিক খাতগুলোকে আরও উন্মুক্ত ও সক্রিয় করার। বাণিজ্য সহজ করতে হবে, কৃষিকে আধুনিক করতে হবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ

বাড়াতে হবে। কারণ, দারিদ্র্য কমাতে হলে শুধু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নয়—একটি শক্তিশালী, কর্মসংস্থানমুখী অর্থনীতি গড়ে তোলাই সবচেয়ে জরুরি।

এই মুহূর্তে সরকারের উচিত পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে বাস্তবতা স্বীকার করা। ‘সব ঠিক আছে’ বললেই বাস্তবতা পাল্টায় না। দেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া কেবল অর্থনৈতিক ব্যর্থতা নয়, নীতিনির্ধারণের দুর্বলতাও প্রকট করে তোলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত