Ajker Patrika

নারীর চোখে এনসিপি: নতুন ‘বন্দোবস্তে’ পুরোনো বৈষম্য ও বিপন্ন আশাবাদ

হুসাইন আহমদ
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ১৮: ৩৮
তাজনূভা জাবীন, সারোয়ার তুষার ও নীলা ইস্রাফিল। ছবি: সংগৃহীত
তাজনূভা জাবীন, সারোয়ার তুষার ও নীলা ইস্রাফিল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া দলটি ‘নতুন বন্দোবস্তের’ স্লোগান দিয়ে নিজেদের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারক হিসেবে তুলে ধরেছে; বিশেষ করে নারীর নেতৃত্ব, অংশগ্রহণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রশ্নে এনসিপির বাণীতে অনেকে আশার আলো খুঁজেছেন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে দল গঠনের আগে ও পরে দলের নেতা-কর্মীদের ঘিরে একের পর এক ঘটনা সেই প্রত্যাশার বিপরীত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে, নারীর প্রতি দলটির অবস্থান বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে সামনের সারিতে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত দলটি এখন যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। সেই ঘটনার শুরু হয় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের সঙ্গে এক নারীর অডিও ফাঁস হওয়ার পর। সেখানে তুষারের পক্ষ থেকে যৌন হয়রানিমূলক কথাবার্তা শোনা যায়। অডিওতে নারী কণ্ঠটি যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীনের বলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তাজনূভার চরিত্রহনন শুরু হয় সামাজিক মাধ্যমে। তাজনূভা ফেসবুকে জানান, ওই নারী তিনি নিজে নন, তবে কে তা জানেন।

কয়েক দিনের জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটে যখন এনসিপির এক সংগঠক নীলা ইস্রাফিল প্রকাশ্যে আসেন। তিনি তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। তাঁর দাবি, বিষয়টি নিয়ে ঈদুল আজহার দিনে সংগঠনের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জানালেও বিষয়টির সমাধান পাননি। কেন্দ্রীয় নেতার আচরণের বিষয়ে তিনি ঢাকা মহানগর শাখার নেতাদের সঙ্গে আলাপ করতে বলেন। এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুষারের পক্ষ হয়ে নীলাকে আক্রমণ শুরু হয়, এতে এনসিপির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও যুক্ত হন। এমনকি দলের নারী নেত্রীরাও তাঁর পাশে দাঁড়াননি বলে নীলার অভিযোগ। এর মধ্যে এনসিপির পক্ষ থেকে তাজনূভা জাবীনের একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেটি ফেসবুকে শেয়ার করে তাজনূভা যে পোস্ট দিয়েছেন, তাতে নারী বিষয়ে দলের অবস্থান নিয়ে সুস্পষ্ট অনাস্থা ও অবিশ্বাসের প্রকাশ ঘটেছে।

এর আগে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যদের ‘বেশ্যা’ বলে গালি দেওয়া হয়। ওই সমাবেশে এনসিপির প্রভাবশালী নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন, বক্তব্য দিয়েছেন। হাসনাতের বিষয়টির প্রতিবাদ না করা বা সমাবেশ বর্জন না করায় বেশ সমালোচনা হয়। তা ছাড়া নারীর সমান অধিকারের পক্ষে এনসিপির স্পষ্ট অবস্থান নেই। শুরুর দিকে সামান্থা শারমিনকে এনসিপির মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একাধিক অনুষ্ঠানে নারী বিষয়ে দলের অবস্থান নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত দেখা গেছে। এনসিপির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত জাতীয় নাগরিক কমিটি ছেড়ে যাওয়া শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিও নারী বিষয়ে নেতৃত্বের দুর্বলতার কথ তুলে ধরেছেন।

নীলা ইস্রাফিলের অভিযোগ

মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে এনসিপির প্রতি আস্থা ও ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেছেন নীলা ইস্রাফিল। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের সময় সক্রিয় ছিলেন এবং এনসিপি গঠনের প্রাক্‌-পর্বেই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা সারোয়ার তুষারের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পর্ক ক্রমশ বিষাক্ত হয়ে ওঠে বলে দাবি করেছেন নীলা।

ফেসবুক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তুষার তাঁকে নানা সময় ‘আপত্তিকর বার্তা’ দিয়েছেন, যেমন ‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘তোমার প্রতিবাদী কণ্ঠ আমাকে আকৃষ্ট করে’ ইত্যাদি। নীলা প্রথমে বিষয়টি গোপনে মীমাংসার চেষ্টা করেন এবং ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের জানান। এমনকি তুষারের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি দলের ভেতরে এ বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এর বদলে তিনি দেখেন, তাঁকে দলের বিভিন্ন সেল থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলেছে এবং তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার শুরু হয়।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, অভিযোগ জানানোর পরও এনসিপি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়নি; বরং অডিও ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ‘চাপে পড়ে’ সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। নীলা দাবি করেছেন, গত ঈদের রাতে এক অনুষ্ঠানে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে তিনি বিষয়টি জানালে নাহিদ ‘মহানগরের দায়িত্বে থাকা’ নেতাদের বিষয়টি অবগত করতে বলেন। তা যদি সত্য হয়, তাহলে বলতে হবে, এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব যথাযথ সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিষয়টি ডিল করেনি। একপ্রকার এড়িয়েই গেছে। কারণ, সারোয়ার তুষার কেন্দ্রীয় নেতা, ঢাকা মহানগর কমিটি তাঁর বিষয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি কীভাবে করে।

নেতৃত্বের নির্লিপ্ততা: মুখে নারীবান্ধব, আচরণে নয়

নীলা ইস্রাফিল দাবি করেছেন, নাহিদের কথামতো বিষয়টি মহানগর নেতাদের জানানোর পর তাঁকে নিয়ে ‘সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল’ হয়, কিন্তু তখন দলের নারী সহকর্মীরাও তাঁর পাশে দাঁড়াননি। কারণ, তাঁর অপরাধ—তিনি ‘পাশ্চাত্য’ পোশাক পরেন এবং ‘তুমি’ সম্বোধন করেন এবং সহজভাবে সবার সঙ্গে মেশেন। তাঁর দাবির সত্য-মিথ্যা বিচার্য বিষয়। কিন্তু যদি সত্য হয়, তাহলে এনসিপির ভেতরে রক্ষণশীলতা ও নারী স্বাধীনতাবিরোধী সংস্কৃতিচর্চার প্রকাশ এটি।

অভিযোগ ওঠার পর সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে ১৭ জুন একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়, যেখানে তাঁকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কিন্তু উল্লেখযোগ্য যে, এর আগে দলীয় নেতৃত্ব বা নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেননি কিংবা কোনো সহমর্মিতা প্রকাশ করেননি। এই প্রেক্ষাপটে এনসিপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীনের ফেসবুক স্ট্যাটাস গভীর তাৎপর্য বহন করে। তিনি সরাসরি কোনো নেতার নাম বলেননি, তবে তাঁর বার্তা ছিল দল সম্পর্কে অনাস্থা ও সংশয়ের প্রকাশ।

ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, এনসিপি বাংলাদেশের নারীদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে—কেন তারা এনসিপিকে সমর্থন করবে। শুধু কাগজে-কলমে আর বক্তৃতায় না, কাজেও। বাস্তবায়নেও।’ তাজনূভা মনে করেন, এনসিপির নেতাদের উচিত, আগে নিজের দলের নারীদের যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করা। তারপর তাঁদের সংসদে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি তোলা উচিত।

তিনি দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘সংসদে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি বৃথা, যদি দলে আপনি যোগ্য নারী নেতৃত্ব তৈরি করতে সহযোগিতা না করেন। যে গণতান্ত্রিক উত্তরণ এনসিপি সংসদে, রাষ্ট্রে দেখতে চায়, সেটা তাকে আগে নিজের মধ্যে‍ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

তাজনূভা আরও বলেন, ‘অজানা, অচেনা, সাধারণ ঘরের যোগ্য, দৃঢ়, শিক্ষিত নারীরা যাতে রাজনীতিতে এসে দেশকে দিতে পারে, সে জন্য এনসিপিকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হতে হবে।’ নয়তো বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এনসিপির কোনো পার্থক্য থাকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তাঁর ভাষ্য, বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কোনো রাজনৈতিক দল গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়নি। এনসিপির সুযোগ আছে এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার। আর এর জন্য কোনো গোপন বা কঠিন সমীকরণের প্রয়োজন হবে না বলে মনে করেন তিনি। নারীর বিষয় উপেক্ষা করে বাংলাদেশে টেকসই রাজনীতি কখনোই সম্ভব নয় বলেও মত দেন তাজনূভা জাবীন।

তিনি নারীর বিরুদ্ধে দলীয় সহকর্মীদের যৌন হয়রানিমূলক প্রচারণা ও অপপ্রচারকে ‘রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত করার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁর পোস্টে দলীয় সহকর্মী ও গণমাধ্যমের ভূমিকাও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেন—যারা অভিযোগকারী নারীনেত্রীদের বিপক্ষে ইঙ্গিতপূর্ণ সংবাদ প্রচার বা নীরবতা পালন করেছে।

কাঠামোগত পিতৃতন্ত্রের মুখোমুখি নারী নেতৃত্ব

সারোয়ার তুষারের সঙ্গে সম্পর্কের প্রসঙ্গে নীলা ইস্রাফিল লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে অসংখ্য নারীকে ক্ষমতাবান পুরুষের সঙ্গে এই ধরনের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়।’ এই বাক্য কেবল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, বরং রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে নারীর স্থান কোথায়, তা তুলে ধরে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ থাকলেও তাঁদের ওপর বারবার চাপ প্রয়োগ, উপেক্ষা, প্রলোভন ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটে থাকে। জুলাই অভ্যুত্থানের গর্ভজাত এনসিপি ‘নতুন বস্তোবস্ত’ নামে নতুন রাজনীতির দাবি করলেও বাস্তবে তারা পুরোনো চর্চার মধ্যে যে রয়েছে, তা স্পষ্ট।

এই অভ্যুত্থানের অন্যতম সহযোদ্ধা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি ২০২৫ সালের মে মাসে নাগরিক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। সম্প্রতি তিনি ফেসবুক পোস্টে এনসিপির নারীবিষয়ক অবস্থানের সমালোচনা করেন। তাঁর মতে, নারীদের প্রশ্নে ‘মিনিমাম সততা’ না দেখিয়ে দ্বিচারিতা করে যাচ্ছে এনসিপি।

নারী মুখপাত্র: প্রতীকী উপস্থিতি, না বাস্তব নেতৃত্ব

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখপাত্র হিসেবে সামান্থা শারমিন এবং তাঁদের সমর্থিত ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের মুখপাত্র করা হয়েছে আশরেফা খাতুনকে। তাঁদের উপস্থিতি নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হলেও প্রশ্ন রয়ে গেছে—তাঁরা আদৌ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখেন কি না, নাকি শুধুই ‘ক্যামেরার সামনে উপস্থাপনের’ সস্তা কৌশল?

একাধিক অনুষ্ঠান ও সাক্ষাৎকারে নারীর সমান অধিকার বিষয়ে সামান্থার অপ্রস্তুত প্রতিক্রিয়া এই আশঙ্কাকে জোরালো করেছে যে, তাঁদের ভূমিকা বাস্তবায়নের চেয়ে বেশি প্রতীকী। এনসিপি যদি সত্যিই নারীবান্ধব দল হতে চায়, তবে এই প্রশ্নের সদুত্তর দেওয়া জরুরি।

দলীয় হিপোক্রেসি ও নৈতিক পরীক্ষা

এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ হেফাজতের সমাবেশে অংশ নেন, যেখানে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যদের ‘বেশ্যা’ বলে আক্রমণ করা হয়। এনসিপির নৈতিক অবস্থান ও নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধের কথা বারবার বলা হলেও এই ঘটনায় দল বা নেতারা প্রকাশ্যে কোনো বিবৃতি দেয়নি। এতে আবারও প্রমাণিত হয়, নারীর অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে দলটি নীরবতা পালন করেছে।

তুষারের বিরুদ্ধে এর আগেও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। ২০২১ সালে তাঁর সাবেক প্রেমিকা বীথি সপ্তর্ষি ওই অভিযোগ করেন। তুষার সে সময় রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য ছিলেন। বীথির অভিযোগের ভিত্তিতে তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমাকে আহ্বায়ক করে আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও গবেষক দিলশানা পারুলের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী উভয়ের বক্তব্য নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলও করেছিল তদন্ত কমিটি। তুষারের বিরুদ্ধে বীথির অভিযোগের বিষয়ে ‘গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তি হয়নি’ বলে সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানান ড. শহিদুল আলম। সেই বিবৃতিতে সই করেন মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও ড. সামিনা লুৎফাও। প্রশ্ন উঠেছে, এ রকম অবস্থায় একজন ব্যক্তিকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কীভাবে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, দ্বিতীয়বার যখন অভিযোগ উঠল, তখন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হলো না কেন?

যে দলটি নারীর অংশগ্রহণের কথা বলছে, সেই দলের শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে যখন যৌন হয়রানির অভিযোগ আসে এবং তা বারবার উপেক্ষিত হয়, তখন সেটি একটি নৈতিক পতনের ইঙ্গিত দেয়। আবার সেই অভিযোগকারী নারীকে যখন দমন, অপমান ও দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন সেটি আর কেবল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থাকে না; বরং তা নারীর প্রতি কাঠামোগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।

এমন অবস্থায় এনসিপি নৈতিক ও সাংগঠনিক অগ্নিপরীক্ষার মুখে রয়েছে। দলটি সত্যিই নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারক হতে চাইলে তাদের কয়েকটি কাজ করতে হবে—

১. সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত করতে হবে।

২. অভিযোগকারী নীলা ইস্রাফিলের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ও দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।

৩. দলের ভেতরে নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিতে বাধ্যতামূলক জেন্ডার নীতিমালা চালু করতে হবে।

৪. ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ ও অভ্যন্তরীণ অভিযোগব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে।

৫. নারীবান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য দলীয় নেতৃত্বে নারীর সংখ্যা ও ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

৬. মুখপাত্র বা মুখ্য নেত্রীদের প্রতীকী না করে তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে পূর্ণাঙ্গ ভূমিকা দিতে হবে।

না হলে এনসিপি সেই পুরোনো ধারার রাজনীতিরই আরেক রূপ হয়ে থাকবে, যেখানে নারী কেবল ব্যানারে থাকবে, মঞ্চে থাকবে, মুখপাত্র হবে, কিন্তু দলের ভেতরের কাঠামোতে তাঁর জায়গা থাকবে না। গণ-অভ্যুত্থান থেকে উদ্ভূত এক রাজনৈতিক শক্তির পক্ষ থেকে সেটিই হবে সবচেয়ে বড় প্রতারণা।

লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক

আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত