Ajker Patrika

শহীদ মিনার ও শৌচাগার

সম্পাদকীয়
শহীদ মিনার ও শৌচাগার

গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠেছিল সাধারণ মানুষের মনে, তা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে অরাজকতা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে। যারা করছে, তারা তৌহিদী জনতাসহ নানা নামে উগ্র ধর্মান্ধতাও ছড়াচ্ছে। মব যেন একটা সিগনেচার টিউনে পরিণত হয়েছে। কিছু একটা হলেই হইহই রইরই করে মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া কিংবা আক্রমণের হুমকি দিয়ে কোনো উৎসব বাতিল করার ঘটনাকে সহনীয় পর্যায়ে আনার পাঁয়তারা চলছে।

ফ্যাসিবাদ নির্মূল করা হবে স্লোগানে মুখরিত নেতাদের অনেকের আচরণেই ফ্যাসিবাদের লক্ষণ দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যে কাউকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বা ‘স্বৈরাচারের দোসর’ ট্যাগ লাগিয়ে পানি ঘোলা করার প্রবণতাও বাড়ছে। আওয়ামী লীগ যেমন অরাজক ঘটনাগুলোর ক্রীড়নক হিসেবে জামায়াত-বিএনপিকে ট্যাগ দিত, তেমনি বর্তমানে ‘আওয়ামী দোসর’ ট্যাগ দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এই প্রবণতা যে মারাত্মকভাবে হিতে বিপরীত হবে, সে কথা কেউ ভেবে দেখছে না। জুলাই-আগস্ট মাসে আন্দোলনকারীদের প্রতি সাধারণ মানুষের যে আস্থা ছিল, ফেব্রুয়ারি মাসে এসে তা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, তা নিয়ে নির্ভেজাল জরিপ হওয়া উচিত।

গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো একটি ঘটনা ঘটেছে যশোরের মনিরামপুরে। প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশীদ স্কুলের শহীদ মিনার ভেঙে শৌচাগার নির্মাণ করেছেন। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শহীদ মিনারের ওপর যে আক্রমণগুলো হয়েছে, তাতে সহজেই বোঝা যায়, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি তীব্র ঘৃণা থেকেই এইসব অরাজক পরিস্থিতির জন্ম দেওয়া হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানাই আমরা। যশোরের মনিরামপুরের ঘটনাটির ওপরই আমরা বর্তমানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করব।

প্রথমে জানতে চাইব, কুশরীকোনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাংলাদেশের নাগরিক কি না। এরপর জানতে চাইব, তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস জানেন কি না। জানতে চাইব, ভাষা আন্দোলন আমাদের মনে স্বকীয়তা ও স্বাধীন অস্তিত্বের যে বীজ বুনে দিয়েছিল, সে ব্যাপারটি তিনি বোঝেন কি না। বড় কষ্ট নিয়েই প্রশ্নগুলো তুলতে হচ্ছে। প্রশ্নগুলো তোলার কারণ হলো, এ রকম মানসিকতার একজন মানুষ কী করে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হন? শিশুমন থাকে পরিচ্ছন্ন স্লেটের মতো। সেই মনে ইচ্ছেমতো দাগ কাটা যায়। এ বয়সে ওদের মনকে গড়ে তুলতে হয় মানবিকতা, সততা ও পরমতসহিষ্ণুতার সমন্বয়ে। কিন্তু এই প্রধান শিক্ষক কী করেছেন? কোন দৃষ্টান্ত রেখেছেন শিশুদের সামনে? এলাকায় কোন বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছেন? তিনি যে স্বজাতিবিদ্বেষী এক কূপমণ্ডূক, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশ ও জাতিকে নিয়ে এ ধরনের মশকরা করার অধিকার কি তাঁর আছে?

শুধু ধর্মান্ধতাই শহীদ মিনারের ক্ষতিসাধন করতে পারে। আমরা কি কট্টর ধর্মান্ধতাকে সহযোগিতা করব, নাকি তার লাগাম টেনে ধরব—এটাই এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার। একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এই বিকৃত মানসিকতার মানুষ থাকতে পারে না। আমরা দেখতে চাই সরকার এই বিকৃত মানসিকতার মানুষটির ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত