Ajker Patrika

ঠেকাবে কে

সম্পাদকীয়
ঠেকাবে কে

পাহাড় রক্ষা করা যখন খুবই জরুরি, তখন সে পাহাড় কেটে গোটা অঞ্চলের জন্য বিপদ ডেকে আনছে একদল দুর্বৃত্ত। খাগড়াছড়ির পানছড়ি এলাকায় অবাধে পাহাড় কাটা হচ্ছে, অথচ সরকারি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করছেন। আরও উদ্বেগের ব্যাপার, এই পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে যাঁরা সোচ্চার হচ্ছেন, তাঁদের ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে দমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুর্ভোগের ভয়ে অনেকেই নিশ্চুপ হয়ে গেছেন।

দুটি বিষয় রয়েছে আলোচনা করার। পাহাড় রক্ষা করা কেন দরকার এবং আইন ভঙ্গ করে কীভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে।

মনুষ্য-সৃষ্ট বিপদগুলোই আমাদের দেশে পাহাড়ধসের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। পাহাড়ের মাটি কেটে নেওয়া, পাহাড়সংলগ্ন বনের গাছ অবাধে কেটে ফেলা, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণ ইত্যাদি ভূতাত্ত্বিক গঠন নষ্ট করে পাহাড়কে নড়বড়ে করে তুলছে। যখন পাহাড়ে পরিবেশবান্ধব বনায়ন করে পাহাড় কাটা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা জরুরি, তখন শোনা যাচ্ছে পানছড়ি এলাকায় পাহাড় কেটে নিচু এলাকার জমি ও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। পানছড়ি উপজেলার দমদম, নাপিতাপাড়া, আইয়ুবনগর ও সুপারিবাগান এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এভাবে পাহাড় নিধন চলতে থাকলে অচিরেই পানছড়ি পাহাড়শূন্য হয়ে যাবে এবং এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মহাবিপদ হবে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর পানছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি পেলোডার ও এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে পাহাড় কাটার মচ্ছব লেগে যায়। কারা চালাচ্ছেন এই অপকর্ম? এই প্রভাবশালীদের রাজনৈতিক পরিচয় কী? সবচেয়ে ভয়াবহ কথা হলো, কেউ যদি পাহাড় রক্ষার কথা বলতে চায়, তাহলে এই প্রভাবশালীরা তাকে ‘ফ্যাসিবাদী’ তকমা দিয়ে মামলা-হামলার ভয় দেখান।

দেখা যাক, অবাধে পাহাড় নিধনের ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা কী। ১৩ এপ্রিল রাতে পানছড়ির দমদম গ্রামের তেঁতুলটিলা এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত একটি পেলোডার ও তিনটি ট্রাক্টর জব্দ করেছিল। তাতে ইতিবাচক ফল কি কিছু ফলেছিল? না। অভিযানের পরদিন সকাল থেকে আবার একই স্থানে পাহাড় কাটা শুরু হয়। তার মানে সেনাবাহিনী বা পুলিশকে মোটেই পরোয়া করছে না এই দুর্বৃত্তের দল। কেন করছে না?

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘পার্বত্য এলাকার সব স্থানে আমার যাওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া আমি মাত্র দু-তিন মাস হলো এখানে এসেছি। পরবর্তী সময়ে কোথাও পাহাড় কাটার খবর পেলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

এই যদি হয় প্রশাসনের ভাষ্য, তাহলে দুর্গম এলাকার পাহাড়গুলোর বাঁচার কি কোনো সম্ভাবনা আছে? যাঁরা এলাকার প্রভাবশালী, যাঁরা পাহাড় কেটে নিচু জমি ভরাট করছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করে দায়সারা কাজ ও বক্তব্য বুঝিয়ে দেয়, এই এলাকার প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে কতটা নিস্পৃহ হতে পারে প্রশাসন।

পার্বত্য এলাকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেন নিজ হাতে আমরা ডেকে আনছি। ঠেকাবে কে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত