Ajker Patrika

পুঁজি যখন ধর্মীয় আবেগ

সম্পাদকীয়
পুঁজি যখন ধর্মীয় আবেগ

ধর্মবিশ্বাস মানুষকে সৎ ও মানবিক হতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু প্রতারক চক্র মানুষের এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে নির্মমভাবে প্রতারণা করছে। সৎ ও মানবিক হওয়ার পথ দেখিয়ে তারাই করছে অসততা ও অমানবিক কাজ। সম্প্রতি ‘বার্ডস আই হেলিকপ্টার অ্যান্ড হজ কাফেলা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওমরাহ পালনের জন্য টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। প্রতারণার মাধ্যমে ৫ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করে এই চক্রের মূল হোতা বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ৩ মার্চ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

ঘটনায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় মামলা করেছেন ১৩ জন ভুক্তভোগী। মামলার পর প্রতারক চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শুধু এই একটি প্রতিষ্ঠানই নয়, উত্তরার বিএনএস সেন্টারের রোমিং ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সিও এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত।

প্রতারণার এ ঘটনা আমাদের সমাজে ধর্মভিত্তিক ভ্রমণ ব্যবস্থাপনার অনিয়ম ও দুর্বলতার মুখোশ খুলে দিয়েছে। যদিও এ দেশে এমন ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু কেন বারবার এ ধরনের প্রতারণার শিকার হতে হয় ধর্মপ্রাণ মানুষের, সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগিয়ে যারা সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করে, তাদের বিরুদ্ধে যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, তা নিশ্চয়ই ধর্ম মন্ত্রণালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজানা নয়।

প্রশ্ন উঠছে, এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকাই-বা কী? হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত এজেন্সির তালিকা ও কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি থাকা উচিত। হজ ও ওমরাহ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স যাচাই করা, অর্থ লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং প্রতিটি কোম্পানির কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। তদারকি সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাই কিন্তু এ ধরনের প্রতারণার সুযোগ করে দেয়।

সাধারণ মানুষকেও আরও সচেতন হতে হবে। ওমরাহ কিংবা হজ পালনের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে টাকা দেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটির বৈধতা যাচাই করা প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানোও জরুরি, যেন কেউ সহজে প্রতারিত না হয়। ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে যারা প্রতারণা করে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাধারণ জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

হাস্যকর ব্যাপার এই যে বার্ডস আই হেলিকপ্টার অ্যান্ড হজ কাফেলার পলাতক মালিক রাজিব মাহমুদের স্ত্রী নীলা আক্তার জানিয়েছেন, বিমানের টিকিটের দাম আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা ভয়ে পালিয়েছেন! অথচ তাঁরা সাধু হলে বিষয়টি সেবাগ্রহীতাদের জানাতে পারতেন, টিকিটের জন্য অতিরিক্ত অর্থ চাইতে পারতেন কিংবা জমাকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে পারতেন।

প্রতারক চক্রকে খুঁজে বের করা জরুরি এবং তাদের এমন শাস্তি দেওয়া দরকার, যেন ভবিষ্যতে ওমরাহ বা হজবিষয়ক জালিয়াতি চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত