সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে বলেই মনে করছে জামায়াত ও তার সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকা দলগুলো। ওই দলগুলোর নেতারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা না করলেও বাস্তবে তাঁরা নানা হিসাবনিকাশ থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চান না।
আজাদুর রহমান চন্দন
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যতই জোর দেওয়া হচ্ছে, চারপাশে ততই বইছে আশঙ্কার গুমোট হাওয়া। আশঙ্কা দানা বাঁধছে সরকারেরই কিছু কথায়। সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি বলা হচ্ছে নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্ত্রের কথাও। ২ সেপ্টেম্বর কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সতর্ক করে বলেন, ‘যারা অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে দিতে চায় না, তারা যত রকমভাবে পারে বাধা দেবে। বাংলাদেশের সত্তাকে গড়ে তুলতে তারা বাধা দেবে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে নির্বাচন বানচাল করার। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার, যাতে নির্বাচন না হয়।’
কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও এমন ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে। যদিও প্রথম দিকে সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে প্রায় সবারই অভিযোগের তির ছিল পতিত আওয়ামী লীগ ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে। তবে দিনদিন তিরের লক্ষ্য ঘুরে যাচ্ছে ক্রিয়াশীল প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের দিকেও। কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নানা ধরনের অপরিণামদর্শী দাবি তোলা হচ্ছে। আলোচনার টেবিলেও প্রাধান্য পাচ্ছে হুমকির সুর। এভাবে গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তোলা হচ্ছে।
এ দেশের মানুষের কাছে ভোট একটি বড় উৎসবের মতো। পাকিস্তান আমলে বছরের পর বছর সাধারণ নির্বাচন না হওয়ায় ভোট-উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিল বাংলাদেশের মানুষ। পাকিস্তানের দুই অংশের বৈষম্য আর ভোট-বঞ্চনার জবাব বাঙালি খুব ভালোভাবেই দিয়েছিল সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের ১৫ বছরেও আর্থিক দুর্নীতির পাশাপাশি নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করায় দেশের সাধারণ মানুষ ভেতরে ভেতরে কতটা ফুঁসছিল, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেপথ্যে যার যে ডিজাইন বা ভূমিকাই থাকুক না কেন, মানুষের ক্ষোভ যে স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আন্দোলনে বৈষম্যমুক্তির যে আওয়াজ তোলা হয়েছিল, তা সহি ছিল নাকি মেকি, সেটিও বিচার করতে যায়নি বিক্ষুব্ধ জনতা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কোনো বিকল্প আমাদের হাতে নেই।’ ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর বাসভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সেদিন ব্রিফিংয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, দেশের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে আসবে। কোনো শক্তিই সুষ্ঠু নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। তিনি অবশ্য এও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু সরকারের ইচ্ছায় নয়, সমাজের বিভিন্ন অংশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপরও নির্ভর করে। ইলেকশন করে সোসাইটি, পলিটিক্যাল পার্টিগুলো—তারা যদি চায়, তাহলে একটি ভালো নির্বাচন অবশ্যই সম্ভব। এর মাত্র পাঁচ দিন আগে শফিকুল আলম বলেছিলেন, নির্বাচন যে করেই হোক ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই এই নির্বাচনকে ঠেকাতে পারে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলেও এরই মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। কিন্তু নতুন করে সীমানা নির্ধারণের পর দেশের কয়েকটি স্থানে এই সীমানা নিয়ে চলছে বাদ-প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। ৩০০ আসনের সীমানা নতুন করে নির্ধারণ করার কারণে ৩৭টি আসনে পরিবর্তন এসেছে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকাসহ সারা দেশের ৪৬টি আসনে। তবে ইসির পক্ষ থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলেও রাজনৈতিক দলগুলো সে অর্থে নির্বাচনমুখী হয়নি এখনো। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি চালুসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই দলগুলো ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্ষোভের অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, দলগুলোর টার্গেট হলো বিএনপি।
জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দলের চলমান কর্মসূচিকে ‘অহেতুক চাপ সৃষ্টি’ হিসেবে গণ্য করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আলোচনার মধ্যে এ ধরনের কর্মসূচির অর্থই হচ্ছে—অহেতুক একটা চাপ সৃষ্টি করা; যা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।’ বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নানা ইস্যুতে মতভেদ আছে। জুলাই সনদ ও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আছে মতবিরোধ। বিএনপি চায় নির্বাচিত সংসদ এটা করবে। জামায়াত গণভোট চায়। আর এনসিপি চায় গণপরিষদ নির্বাচন। জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ করার একটা ইস্যুও আছে। জামায়াত চায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেভাবে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, জাতীয় পার্টির কার্যক্রমও সেভাবেই নিষিদ্ধ করা হোক। এনসিপিও তা-ই চায়। তবে বিএনপির কথা, কোনো নির্বাহী আদেশে নয়, সেটা করা হোক বিচারের মাধ্যমে। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে, এই ইস্যুটিও ততই বড় হবে। এটা রাজনীতিতে দর-কষাকষির একটা বড় ইস্যু হবে। কারণ, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে সেটা জামায়াত ও এনসিপির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেবে। প্রধান বিরোধী দল হওয়ার বিষয়ে জামায়াত অনিশ্চয়তায় পড়বে। আবার জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে সেটা বিএনপিকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। কারণ, তখন জামায়াত ও এনসিপি মিলে বিএনপিকে বড় ধরনের চাপ দিতে পারবে।
কেউ কেউ মনে করছেন, জামায়াত ও তার সহ-আন্দোলনকারী দলগুলো আসলে বিএনপিকে শক্তি দেখাতে চাইছে। সে কারণেই তারা রাজধানী, জেলাসহ সারা দেশে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে সুবিধা নিতে চাইছে। এ ছাড়া এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা নির্বাচনের আগে একটা রাজনৈতিক মোর্চাও গড়তে চাইছে। সে লক্ষ্য থেকেই ‘সব ভোট এক বাক্সে আনার’ কথাও বলছেন দলগুলোর কোনো কোনো নেতা। এদিকে অতিসম্প্রতি জামায়াত ও এর মিত্র দলগুলোর সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে এনসিপির। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে না যাওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে যেই যুগপৎ আন্দোলন হচ্ছে, সেটাতে আমরা নাই। কারণ, নিম্নকক্ষে আমরা পিআর চাই না। নিম্নকক্ষে পিআরের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছি। আমরা শুধু উচ্চকক্ষে পিআর এবং জবাবদিহির জন্য একটি কার্যকর উচ্চকক্ষ চাচ্ছি।’ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতসহ সংশ্লিষ্ট দলগুলো যেসব ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করছে, সেগুলোর সঙ্গে একমত নয় এবি পার্টি এবং গণঅধিকার পরিষদও। আগে শোনা যাচ্ছিল যুগপৎ আন্দোলনে তারাও থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা থাকেনি।
সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে বলেই মনে করছে জামায়াত ও তার সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকা দলগুলো। ওই দলগুলোর নেতারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা না করলেও বাস্তবে তাঁরা নানা হিসাবনিকাশ থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চান না। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভালো করায় তাঁরা মনে করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে রাজনীতির মাঠে তাঁদের অবস্থা দিনদিন আরও ভালো হবে।
ওই দলগুলোর নির্বাচন চাওয়ার পাশাপাশি ‘দাবি না মানলে আমরা নির্বাচনে যাব না’—এমন মনোভাব দেখানোয় তাদের আসল উদ্দেশ্যটা বোঝা যায়। সব মিলিয়ে নির্বাচন নিয়ে এখনই আশায় বুক বাঁধতে পারছেন না অনেকেই। খেলাফত মজলিসের নেতা মামুনুল হকের হঠাৎ আফগানিস্তান সফর নিয়েও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এমন এক সময়ে এই সফর যখন কিনা তালেবান সরকার দেশটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম থেকে নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ করেছে। ফলে এই সফর উদারমনা মানুষের মনে শঙ্কা না জাগিয়ে কি পারে?
মার্কিন সেনা ও বিমানবাহিনীর শতাধিক কর্মকর্তা ১০ সেপ্টেম্বর উড়োজাহাজে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে অবতরণ করেন। সেই সঙ্গে দুটি হারকিউলিস পরিবহন বিমানে প্রচুর যন্ত্রপাতিও এসেছে। সরকারি ভাষ্যমতে, ‘প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল মহড়ার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এগিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ।’ কিন্তু প্রশ্ন হলো, মার্কিন সেনা এত ঘন ঘন কেন আসছে বাংলাদেশে? এ বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একের পর এক বাংলাদেশে আসছে-যাচ্ছে মার্কিন সেনা প্রতিনিধিদল। কখনো প্রশিক্ষণের নামে, কখনো দ্বিপক্ষীয় মতবিনিময়ের ছুতোয়, কখনোবা মহড়ার নামে। তলেতলে কি কিছু ঘটছে? এতসব শঙ্কা-উদ্বেগের মধ্যেও আশায় আছি, ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয়। যদিও জানি, নির্বাচিত সরকার এলেই দেশে সব ঠিক হয়ে যাবে না।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যতই জোর দেওয়া হচ্ছে, চারপাশে ততই বইছে আশঙ্কার গুমোট হাওয়া। আশঙ্কা দানা বাঁধছে সরকারেরই কিছু কথায়। সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি বলা হচ্ছে নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্ত্রের কথাও। ২ সেপ্টেম্বর কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সতর্ক করে বলেন, ‘যারা অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে দিতে চায় না, তারা যত রকমভাবে পারে বাধা দেবে। বাংলাদেশের সত্তাকে গড়ে তুলতে তারা বাধা দেবে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে নির্বাচন বানচাল করার। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার, যাতে নির্বাচন না হয়।’
কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও এমন ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে। যদিও প্রথম দিকে সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে প্রায় সবারই অভিযোগের তির ছিল পতিত আওয়ামী লীগ ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে। তবে দিনদিন তিরের লক্ষ্য ঘুরে যাচ্ছে ক্রিয়াশীল প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের দিকেও। কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নানা ধরনের অপরিণামদর্শী দাবি তোলা হচ্ছে। আলোচনার টেবিলেও প্রাধান্য পাচ্ছে হুমকির সুর। এভাবে গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তোলা হচ্ছে।
এ দেশের মানুষের কাছে ভোট একটি বড় উৎসবের মতো। পাকিস্তান আমলে বছরের পর বছর সাধারণ নির্বাচন না হওয়ায় ভোট-উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিল বাংলাদেশের মানুষ। পাকিস্তানের দুই অংশের বৈষম্য আর ভোট-বঞ্চনার জবাব বাঙালি খুব ভালোভাবেই দিয়েছিল সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের ১৫ বছরেও আর্থিক দুর্নীতির পাশাপাশি নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করায় দেশের সাধারণ মানুষ ভেতরে ভেতরে কতটা ফুঁসছিল, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেপথ্যে যার যে ডিজাইন বা ভূমিকাই থাকুক না কেন, মানুষের ক্ষোভ যে স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আন্দোলনে বৈষম্যমুক্তির যে আওয়াজ তোলা হয়েছিল, তা সহি ছিল নাকি মেকি, সেটিও বিচার করতে যায়নি বিক্ষুব্ধ জনতা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কোনো বিকল্প আমাদের হাতে নেই।’ ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর বাসভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সেদিন ব্রিফিংয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, দেশের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে আসবে। কোনো শক্তিই সুষ্ঠু নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। তিনি অবশ্য এও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু সরকারের ইচ্ছায় নয়, সমাজের বিভিন্ন অংশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপরও নির্ভর করে। ইলেকশন করে সোসাইটি, পলিটিক্যাল পার্টিগুলো—তারা যদি চায়, তাহলে একটি ভালো নির্বাচন অবশ্যই সম্ভব। এর মাত্র পাঁচ দিন আগে শফিকুল আলম বলেছিলেন, নির্বাচন যে করেই হোক ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই এই নির্বাচনকে ঠেকাতে পারে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলেও এরই মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। কিন্তু নতুন করে সীমানা নির্ধারণের পর দেশের কয়েকটি স্থানে এই সীমানা নিয়ে চলছে বাদ-প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। ৩০০ আসনের সীমানা নতুন করে নির্ধারণ করার কারণে ৩৭টি আসনে পরিবর্তন এসেছে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকাসহ সারা দেশের ৪৬টি আসনে। তবে ইসির পক্ষ থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলেও রাজনৈতিক দলগুলো সে অর্থে নির্বাচনমুখী হয়নি এখনো। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি চালুসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই দলগুলো ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্ষোভের অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, দলগুলোর টার্গেট হলো বিএনপি।
জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দলের চলমান কর্মসূচিকে ‘অহেতুক চাপ সৃষ্টি’ হিসেবে গণ্য করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আলোচনার মধ্যে এ ধরনের কর্মসূচির অর্থই হচ্ছে—অহেতুক একটা চাপ সৃষ্টি করা; যা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।’ বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নানা ইস্যুতে মতভেদ আছে। জুলাই সনদ ও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আছে মতবিরোধ। বিএনপি চায় নির্বাচিত সংসদ এটা করবে। জামায়াত গণভোট চায়। আর এনসিপি চায় গণপরিষদ নির্বাচন। জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ করার একটা ইস্যুও আছে। জামায়াত চায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেভাবে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, জাতীয় পার্টির কার্যক্রমও সেভাবেই নিষিদ্ধ করা হোক। এনসিপিও তা-ই চায়। তবে বিএনপির কথা, কোনো নির্বাহী আদেশে নয়, সেটা করা হোক বিচারের মাধ্যমে। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে, এই ইস্যুটিও ততই বড় হবে। এটা রাজনীতিতে দর-কষাকষির একটা বড় ইস্যু হবে। কারণ, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে সেটা জামায়াত ও এনসিপির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেবে। প্রধান বিরোধী দল হওয়ার বিষয়ে জামায়াত অনিশ্চয়তায় পড়বে। আবার জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে সেটা বিএনপিকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। কারণ, তখন জামায়াত ও এনসিপি মিলে বিএনপিকে বড় ধরনের চাপ দিতে পারবে।
কেউ কেউ মনে করছেন, জামায়াত ও তার সহ-আন্দোলনকারী দলগুলো আসলে বিএনপিকে শক্তি দেখাতে চাইছে। সে কারণেই তারা রাজধানী, জেলাসহ সারা দেশে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে সুবিধা নিতে চাইছে। এ ছাড়া এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা নির্বাচনের আগে একটা রাজনৈতিক মোর্চাও গড়তে চাইছে। সে লক্ষ্য থেকেই ‘সব ভোট এক বাক্সে আনার’ কথাও বলছেন দলগুলোর কোনো কোনো নেতা। এদিকে অতিসম্প্রতি জামায়াত ও এর মিত্র দলগুলোর সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে এনসিপির। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে না যাওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে যেই যুগপৎ আন্দোলন হচ্ছে, সেটাতে আমরা নাই। কারণ, নিম্নকক্ষে আমরা পিআর চাই না। নিম্নকক্ষে পিআরের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছি। আমরা শুধু উচ্চকক্ষে পিআর এবং জবাবদিহির জন্য একটি কার্যকর উচ্চকক্ষ চাচ্ছি।’ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতসহ সংশ্লিষ্ট দলগুলো যেসব ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করছে, সেগুলোর সঙ্গে একমত নয় এবি পার্টি এবং গণঅধিকার পরিষদও। আগে শোনা যাচ্ছিল যুগপৎ আন্দোলনে তারাও থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা থাকেনি।
সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে বলেই মনে করছে জামায়াত ও তার সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকা দলগুলো। ওই দলগুলোর নেতারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা না করলেও বাস্তবে তাঁরা নানা হিসাবনিকাশ থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চান না। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভালো করায় তাঁরা মনে করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে রাজনীতির মাঠে তাঁদের অবস্থা দিনদিন আরও ভালো হবে।
ওই দলগুলোর নির্বাচন চাওয়ার পাশাপাশি ‘দাবি না মানলে আমরা নির্বাচনে যাব না’—এমন মনোভাব দেখানোয় তাদের আসল উদ্দেশ্যটা বোঝা যায়। সব মিলিয়ে নির্বাচন নিয়ে এখনই আশায় বুক বাঁধতে পারছেন না অনেকেই। খেলাফত মজলিসের নেতা মামুনুল হকের হঠাৎ আফগানিস্তান সফর নিয়েও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এমন এক সময়ে এই সফর যখন কিনা তালেবান সরকার দেশটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম থেকে নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ করেছে। ফলে এই সফর উদারমনা মানুষের মনে শঙ্কা না জাগিয়ে কি পারে?
মার্কিন সেনা ও বিমানবাহিনীর শতাধিক কর্মকর্তা ১০ সেপ্টেম্বর উড়োজাহাজে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে অবতরণ করেন। সেই সঙ্গে দুটি হারকিউলিস পরিবহন বিমানে প্রচুর যন্ত্রপাতিও এসেছে। সরকারি ভাষ্যমতে, ‘প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল মহড়ার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এগিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ।’ কিন্তু প্রশ্ন হলো, মার্কিন সেনা এত ঘন ঘন কেন আসছে বাংলাদেশে? এ বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একের পর এক বাংলাদেশে আসছে-যাচ্ছে মার্কিন সেনা প্রতিনিধিদল। কখনো প্রশিক্ষণের নামে, কখনো দ্বিপক্ষীয় মতবিনিময়ের ছুতোয়, কখনোবা মহড়ার নামে। তলেতলে কি কিছু ঘটছে? এতসব শঙ্কা-উদ্বেগের মধ্যেও আশায় আছি, ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয়। যদিও জানি, নির্বাচিত সরকার এলেই দেশে সব ঠিক হয়ে যাবে না।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই জাতীয় সনদ সই করা হয়েছে। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
১ দিন আগেএ বছর পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর। আর মেলবোর্ন আছে চতুর্থ স্থানে। ২৯ বছর আগে এক ভোরবেলায় এ দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। ট্যাক্সিতে চড়ে যাওয়ার সময় ছবির মতো বাড়িঘর, সামনে বাগান, সারি সারি বৃক্ষ ও সাজানো রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোনো সিনেমার শুটিং...
১ দিন আগেহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য কমপ্লেক্সে ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে তিনটি বড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল।
১ দিন আগেজুলাই সনদ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা, জোট রাজনীতি, নারীনীতি, নির্বাচনী প্রতীক ইস্যু থেকে শুরু করে ফান্ডিং ও ‘মেধা বনাম কোটার’ বিতর্ক—এসব বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা..
২ দিন আগেতিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়িত হলে সেটি বাংলাদেশের ‘ম্যাগনাকার্টা’ বা মহান সনদ হিসেবে ঠাঁই পেত ইতিহাসে। ম্যাগনাকার্টা হলো ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক স্বাধীনতার এক ঐতিহাসিক সনদ, যা ১২১৫ সালের ১৫ জুন রাজা জন তাঁর বিদ্রোহী ব্যারনদের চাপের মুখে সই করেছিলেন।
আজাদুর রহমান চন্দন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই জাতীয় সনদ সই করা হয়েছে। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। যদিও অনুষ্ঠানস্থলে সনদে সই করেন ২৪টি দলের প্রতিনিধিরা। প্রতিটি দলের দুজন করে প্রতিনিধি তাতে সই করেন। দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে অর্ধশতাধিক। নিবন্ধনবিহীন দলের সংখ্যা আরও বেশি। নিবন্ধিত ও নিবন্ধনহীন বেশির ভাগ দলই জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রায় ৫০ শতাংশ দলকে (নিবন্ধিত) বাইরে রেখে সই হওয়া এই সনদ কতটা ‘জাতীয়’ সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেননি সনদের অঙ্গীকারনামায় বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ না থাকাসহ তিন কারণে। এ ছাড়া বামপন্থী চারটি রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ অংশ নেয়নি। গণফোরাম অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও সনদে সই করেনি। গণফোরাম নেতাদের দাবি, তাঁরা যে খসড়া দলিল পেয়েছিলেন, তাতে সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করা এবং পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল না রাখার কথা ছিল। তাঁরা বলেছিলেন, এটা সংশোধন করা হলে তাঁরা সনদে সই করবেন। কমিশন তাঁদের আশ্বস্ত করেছিল যে এটা সংশোধন হবে। কিন্তু অনুষ্ঠানে গিয়ে চূড়ান্ত কপি তাঁরা পাননি। এ জন্য তাঁরা সই করা থেকে বিরত ছিলেন। চূড়ান্ত কপি পর্যালোচনা করার পর রোববার গণফোরাম সনদে সই করেছে।
শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐক্য হবে, তার ভিত্তিতেই তৈরি করা হবে সনদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও বলেছিলেন, সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে, শুধু সেগুলোই ঐকমত্য হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু বাস্তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আরোপ করা সব বিষয়কে জাতীয় সনদ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এমনকি কোনো কোনো বিষয় শেষ মুহূর্তে দলিলে ঢুকিয়ে দেয় কমিশন। সর্বসম্মত বিষয় ছাড়াও নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া প্রস্তাবগুলো সনদে যুক্ত করা হয়েছে। অনেক দলের নোট অব ডিসেন্টগুলোর কারণও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি।
স্বাভাবিক কারণেই অনুষ্ঠানের আগের দিনই সংবাদ সম্মেলন করে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সিপিবিসহ বামপন্থী চারটি দলের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ৬ষ্ঠ তফসিলে থাকা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ (স্বাধীনতার ঘোষণা) এবং ৭ম তফসিলে থাকা ‘প্রোক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ (স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র) বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। এই দলগুলোর আপত্তির পর সনদে খানিকটা পরিবর্তন আনা হয়। এর ফলে সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ পড়ছে না।
প্রায় আট মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৪ অক্টোবর সনদের অনুলিপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান সংবিধানের ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি-সংক্রান্ত ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। এই সিদ্ধান্তে ৯টি দল একমত ছিল না। এরপর জুলাই সনদের এই জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চূড়ান্ত সনদে বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০ (২) সংশোধন করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। সংবিধানে ১৫০ (২) অনুচ্ছেদের তফসিল পরিবর্তন ছাড়াও বিদ্যমান চার মূলনীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ বদলে ফেলা হয়েছে। এসব পরিবর্তন নিয়ে আদালতে প্রশ্ন না তোলার অঙ্গীকার রাখা হয়েছে।
সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল যুক্ত করা হয়েছিল ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। পঞ্চম তফসিলে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ। ষষ্ঠ তফসিলে আছে ১৯৭১ সালের ‘২৫ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে’ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা। আর সপ্তম তফসিলে আছে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। অর্থাৎ জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধানে সংস্কার হলে তাতে সংবিধানের তফসিলে ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকবে না। তবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থাকবে। সংগত কারণেই এই সনদের বিষয়ে অসন্তুষ্ট মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আস্থাশীল অনেক নাগরিক। একাত্তরের একটি বিশেষ গেরিলা বাহিনীর এক সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘জুলাই সনদ জাতীয় সনদ নয়, লাখো শহীদের আত্মদানে অর্জিত ’৭২-এর সংবিধানের মৃত্যু সনদ।’
এ দেশের জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতারণা এক বড় নজির নব্বইয়ে প্রণীত ‘তিন জোটের রূপরেখা’র বাস্তবায়ন না হওয়া। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় ধরনের ঐকমত্য দেখা দিয়েছিল নব্বইয়ে। এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দলগুলো এককাট্টা হয়ে ১৯৯০ সালে তিন জোট একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল। রূপরেখায় মূল বিষয়গুলো ছিল—হত্যা, ক্যু, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের ধারা থেকে দেশকে মুক্ত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশে পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা; একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সার্বভৌম জাতীয় সংসদ গঠনের ব্যবস্থা করা; রাষ্ট্রীয় সব প্রচারমাধ্যমকে স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় পরিণত করা; অসাংবিধানিক কোনো পথে ক্ষমতা দখল প্রতিরোধ করা; জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা; মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী সব আইন বাতিল করা; ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা ও অপর দলের দেশপ্রেম ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকা, সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় না দেওয়া এবং সাম্প্রদায়িক প্রচারণা সমবেতভাবে প্রতিরোধ করা। প্রধান দুই দলের দুই নেত্রী ওই সনদে সই না করায় প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা মাঠে মারা যায়। ফিরে আসে সাংঘর্ষিক রাজনীতির ধারা।
তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়িত হলে সেটি বাংলাদেশের ‘ম্যাগনাকার্টা’ বা মহান সনদ হিসেবে ঠাঁই পেত ইতিহাসে। ম্যাগনাকার্টা হলো ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক স্বাধীনতার এক ঐতিহাসিক সনদ, যা ১২১৫ সালের ১৫ জুন রাজা জন তাঁর বিদ্রোহী ব্যারনদের চাপের মুখে সই করেছিলেন। এই মহান সনদটি ইংল্যান্ডের অলিখিত সংবিধানের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে নব্বইয়ের পর এবারই প্রথম অনানুষ্ঠানিক ঐক্য গড়ে ওঠে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। একটি মহল শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মনোভাব ও সাতচল্লিশের চেতনা প্রতিষ্ঠার পণ নিয়ে তৎপর না হলে জুলাই জাতীয় সনদ বাংলাদেশের ‘ম্যাগনাকার্টা’র মর্যাদা পেতে পারত।
গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান-পরবর্তী সময়ে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে বেশ কিছু কমিশন গঠন করে, যার অন্যতম সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় আলী রীয়াজকে। অথচ তাঁকে ঘিরে শুরু থেকেই ব্যাপক সমালোচনা ছিল। পরবর্তী সময়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতিও করা হয় আলী রীয়াজকে। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হলেও আলী রীয়াজকেই সনদ প্রণয়নের মূল কাজটিতে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। তাঁর নানা মন্তব্য বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে। শেষ দিকেও দেখা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘোরতর আপত্তি ও নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া বিষয়েও সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, সব বিষয়ে সব দল একমত। এ নিয়ে সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ৬ অক্টোবর ফেসবুকে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘খবরে শুনছি সব দল একমত! কয় দল হলে সব দল হয়? সব দল বললেই সব দল হয়ে যায়? ঐকমত্য কমিশনের এই ভুল বয়ান আর কত দিন শুনব?’
জুলাই জাতীয় সনদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সই করাকে ‘নতুন বাংলাদেশের সূচনা’ হিসেবে অভিহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি আশা করেন, যে ঐক্যে জুলাই সনদে সই হলো, এই সুরই দেশকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। এই সুরকে বিএনপির জন্য ঘুমপাড়ানি গানের সুর হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। মনে করা হচ্ছে, অনেক বিষয়ে ঘোরতর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বিএনপি ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আশায় মোহিত হয়ে সনদে সই করেছে। নির্বাচনটা যথাসময়ে হলে তা-ও কিছুটা রক্ষা হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই জাতীয় সনদ সই করা হয়েছে। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। যদিও অনুষ্ঠানস্থলে সনদে সই করেন ২৪টি দলের প্রতিনিধিরা। প্রতিটি দলের দুজন করে প্রতিনিধি তাতে সই করেন। দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে অর্ধশতাধিক। নিবন্ধনবিহীন দলের সংখ্যা আরও বেশি। নিবন্ধিত ও নিবন্ধনহীন বেশির ভাগ দলই জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রায় ৫০ শতাংশ দলকে (নিবন্ধিত) বাইরে রেখে সই হওয়া এই সনদ কতটা ‘জাতীয়’ সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেননি সনদের অঙ্গীকারনামায় বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ না থাকাসহ তিন কারণে। এ ছাড়া বামপন্থী চারটি রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ অংশ নেয়নি। গণফোরাম অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও সনদে সই করেনি। গণফোরাম নেতাদের দাবি, তাঁরা যে খসড়া দলিল পেয়েছিলেন, তাতে সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করা এবং পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল না রাখার কথা ছিল। তাঁরা বলেছিলেন, এটা সংশোধন করা হলে তাঁরা সনদে সই করবেন। কমিশন তাঁদের আশ্বস্ত করেছিল যে এটা সংশোধন হবে। কিন্তু অনুষ্ঠানে গিয়ে চূড়ান্ত কপি তাঁরা পাননি। এ জন্য তাঁরা সই করা থেকে বিরত ছিলেন। চূড়ান্ত কপি পর্যালোচনা করার পর রোববার গণফোরাম সনদে সই করেছে।
শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐক্য হবে, তার ভিত্তিতেই তৈরি করা হবে সনদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও বলেছিলেন, সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে, শুধু সেগুলোই ঐকমত্য হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু বাস্তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আরোপ করা সব বিষয়কে জাতীয় সনদ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এমনকি কোনো কোনো বিষয় শেষ মুহূর্তে দলিলে ঢুকিয়ে দেয় কমিশন। সর্বসম্মত বিষয় ছাড়াও নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া প্রস্তাবগুলো সনদে যুক্ত করা হয়েছে। অনেক দলের নোট অব ডিসেন্টগুলোর কারণও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি।
স্বাভাবিক কারণেই অনুষ্ঠানের আগের দিনই সংবাদ সম্মেলন করে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সিপিবিসহ বামপন্থী চারটি দলের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ৬ষ্ঠ তফসিলে থাকা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ (স্বাধীনতার ঘোষণা) এবং ৭ম তফসিলে থাকা ‘প্রোক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ (স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র) বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। এই দলগুলোর আপত্তির পর সনদে খানিকটা পরিবর্তন আনা হয়। এর ফলে সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ পড়ছে না।
প্রায় আট মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৪ অক্টোবর সনদের অনুলিপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান সংবিধানের ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি-সংক্রান্ত ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। এই সিদ্ধান্তে ৯টি দল একমত ছিল না। এরপর জুলাই সনদের এই জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চূড়ান্ত সনদে বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০ (২) সংশোধন করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। সংবিধানে ১৫০ (২) অনুচ্ছেদের তফসিল পরিবর্তন ছাড়াও বিদ্যমান চার মূলনীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ বদলে ফেলা হয়েছে। এসব পরিবর্তন নিয়ে আদালতে প্রশ্ন না তোলার অঙ্গীকার রাখা হয়েছে।
সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল যুক্ত করা হয়েছিল ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। পঞ্চম তফসিলে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ। ষষ্ঠ তফসিলে আছে ১৯৭১ সালের ‘২৫ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে’ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা। আর সপ্তম তফসিলে আছে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। অর্থাৎ জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধানে সংস্কার হলে তাতে সংবিধানের তফসিলে ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকবে না। তবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থাকবে। সংগত কারণেই এই সনদের বিষয়ে অসন্তুষ্ট মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আস্থাশীল অনেক নাগরিক। একাত্তরের একটি বিশেষ গেরিলা বাহিনীর এক সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘জুলাই সনদ জাতীয় সনদ নয়, লাখো শহীদের আত্মদানে অর্জিত ’৭২-এর সংবিধানের মৃত্যু সনদ।’
এ দেশের জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতারণা এক বড় নজির নব্বইয়ে প্রণীত ‘তিন জোটের রূপরেখা’র বাস্তবায়ন না হওয়া। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় ধরনের ঐকমত্য দেখা দিয়েছিল নব্বইয়ে। এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দলগুলো এককাট্টা হয়ে ১৯৯০ সালে তিন জোট একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল। রূপরেখায় মূল বিষয়গুলো ছিল—হত্যা, ক্যু, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের ধারা থেকে দেশকে মুক্ত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশে পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা; একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সার্বভৌম জাতীয় সংসদ গঠনের ব্যবস্থা করা; রাষ্ট্রীয় সব প্রচারমাধ্যমকে স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় পরিণত করা; অসাংবিধানিক কোনো পথে ক্ষমতা দখল প্রতিরোধ করা; জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা; মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী সব আইন বাতিল করা; ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা ও অপর দলের দেশপ্রেম ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকা, সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় না দেওয়া এবং সাম্প্রদায়িক প্রচারণা সমবেতভাবে প্রতিরোধ করা। প্রধান দুই দলের দুই নেত্রী ওই সনদে সই না করায় প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা মাঠে মারা যায়। ফিরে আসে সাংঘর্ষিক রাজনীতির ধারা।
তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়িত হলে সেটি বাংলাদেশের ‘ম্যাগনাকার্টা’ বা মহান সনদ হিসেবে ঠাঁই পেত ইতিহাসে। ম্যাগনাকার্টা হলো ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক স্বাধীনতার এক ঐতিহাসিক সনদ, যা ১২১৫ সালের ১৫ জুন রাজা জন তাঁর বিদ্রোহী ব্যারনদের চাপের মুখে সই করেছিলেন। এই মহান সনদটি ইংল্যান্ডের অলিখিত সংবিধানের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে নব্বইয়ের পর এবারই প্রথম অনানুষ্ঠানিক ঐক্য গড়ে ওঠে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। একটি মহল শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মনোভাব ও সাতচল্লিশের চেতনা প্রতিষ্ঠার পণ নিয়ে তৎপর না হলে জুলাই জাতীয় সনদ বাংলাদেশের ‘ম্যাগনাকার্টা’র মর্যাদা পেতে পারত।
গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান-পরবর্তী সময়ে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে বেশ কিছু কমিশন গঠন করে, যার অন্যতম সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় আলী রীয়াজকে। অথচ তাঁকে ঘিরে শুরু থেকেই ব্যাপক সমালোচনা ছিল। পরবর্তী সময়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতিও করা হয় আলী রীয়াজকে। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হলেও আলী রীয়াজকেই সনদ প্রণয়নের মূল কাজটিতে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। তাঁর নানা মন্তব্য বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে। শেষ দিকেও দেখা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘোরতর আপত্তি ও নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া বিষয়েও সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, সব বিষয়ে সব দল একমত। এ নিয়ে সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ৬ অক্টোবর ফেসবুকে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘খবরে শুনছি সব দল একমত! কয় দল হলে সব দল হয়? সব দল বললেই সব দল হয়ে যায়? ঐকমত্য কমিশনের এই ভুল বয়ান আর কত দিন শুনব?’
জুলাই জাতীয় সনদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সই করাকে ‘নতুন বাংলাদেশের সূচনা’ হিসেবে অভিহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি আশা করেন, যে ঐক্যে জুলাই সনদে সই হলো, এই সুরই দেশকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। এই সুরকে বিএনপির জন্য ঘুমপাড়ানি গানের সুর হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। মনে করা হচ্ছে, অনেক বিষয়ে ঘোরতর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বিএনপি ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আশায় মোহিত হয়ে সনদে সই করেছে। নির্বাচনটা যথাসময়ে হলে তা-ও কিছুটা রক্ষা হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যতই জোর দেওয়া হচ্ছে, চারপাশে ততই বইছে আশঙ্কার গুমোট হাওয়া। আশঙ্কা দানা বাঁধছে সরকারেরই কিছু কথায়। সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি বলা হচ্ছে নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ বছর পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর। আর মেলবোর্ন আছে চতুর্থ স্থানে। ২৯ বছর আগে এক ভোরবেলায় এ দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। ট্যাক্সিতে চড়ে যাওয়ার সময় ছবির মতো বাড়িঘর, সামনে বাগান, সারি সারি বৃক্ষ ও সাজানো রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোনো সিনেমার শুটিং...
১ দিন আগেহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য কমপ্লেক্সে ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে তিনটি বড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল।
১ দিন আগেজুলাই সনদ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা, জোট রাজনীতি, নারীনীতি, নির্বাচনী প্রতীক ইস্যু থেকে শুরু করে ফান্ডিং ও ‘মেধা বনাম কোটার’ বিতর্ক—এসব বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা..
২ দিন আগেঅজয় দাশগুপ্ত
এ বছর পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর। আর মেলবোর্ন আছে চতুর্থ স্থানে। ২৯ বছর আগে এক ভোরবেলায় এ দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। ট্যাক্সিতে চড়ে যাওয়ার সময় ছবির মতো বাড়িঘর, সামনে বাগান, সারি সারি বৃক্ষ ও সাজানো রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোনো সিনেমার শুটিং স্পটে এসেছি। টালির ছাউনি, মসৃণ রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। যত মানুষ তার তিন গুণ বাড়িঘর।
তারপর কত জল গড়াল। এসেছিলাম অভিবাসন নিয়ে। দুই বছর পর নাগরিক হলাম। জন্মভূমি ও ক্যাঙারুর দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় সানন্দে তা নিয়েছি। এর ভালো দিকটা হলো পৃথিবীর বহু দেশে বিনা ভিসায় ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ, নীল পাসপোর্টের খাতির বা সন্দেহের চোখে না তাকানো। মন্দ দিকও আছে। নাগরিক মানে ভোটার। আর ভোট না দিলে মোটা অঙ্কের ডলার জরিমানা।
শুরুতে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, কী-জাতীয় চাকরি পাব। কঠিন শারীরিক কাজ বা তেমন কিছু পারব না, এটা জানতাম। কয়েক মাসের ভেতরই চাকরি পেলাম ব্যাংকে। দেশের অভিজ্ঞতায় বুক দুরুদুরু করত। ইউনিয়ন যদি বদলি করিয়ে দেয় কালো চামড়া বলে কিংবা বড় সাহেবের বদনজরে পড়ে যদি কিছু হয়? দেখি পুরো বিপরীত। এরাই বলছে, তুমি কিন্তু এই এলাকার বাইরে কোনো অফিসে যাবে না কোনো দিন। রিজিওনাল কর্ত্রী এসে চুপটি করে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে কখন হাতের কাজ সেরে তাঁর সঙ্গে দু মিনিট কথা বলা যাবে। বেশির ভাগ সময়ই তা ছিল সুখবর কিংবা অভিনন্দনজাতীয় আলাপ।
একসময় দেখি এরাই জোর করে পদোন্নতি দেয়। মনোজাগতিক দুর্বলতা কাটতে কাটতে একসময় সেবা উপদেষ্টার কাজও করে ফেললাম। ১৭ বছর পর অর্ধ অবসরে এসে ভাবলাম কিছু তো করা উচিত। অনেকটা যেচেই আমাকে চাকরি দেওয়া হলো পরীক্ষকের। লেখাপড়া-সংশ্লিষ্ট এমন কাজের প্রতি চিরকালের লোভ। কিন্তু আমি ছিলাম দোদুল্যমান। ওরাই বলেছিল, এটা তোমার জন্য পারফেক্ট। এখন দেখি আসলেই তাই। গত ছয়-সাত বছর পরীক্ষকের চাকরি করি, তা-ও আবার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষকের কাজ।
আমার ছেলে এ দেশে এসেছিল তার শিশুকালে। একদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কান্না—অর্কের ভয় ছিল ভাষার। পরে ও তাদের ইংরেজি পড়িয়েছে। নিজের ইচ্ছেমতো অভিনয় জগৎ বেছে নিয়ে এ দেশের প্রথম এশিয়ান তরুণ ও বাংলাদেশি হিসেবে হলিউড সিনেমাতে অভিনয় করেছে। এখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল লিবারেল ও লেবর—উভয় দলই সম্মান জানিয়েছে তাকে। এবার অস্ট্রেলিয়া ডে উদ্যাপনে ও ছিল বিচারকের আসনে। সিডনি শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরি ছিল ও।
এই দেশের নামের অর্থ মিলনস্থল। এই অস্ট্রেলিয়া নামটি এসেছে অ্যাবরোজিনাল বা আদিবাসীদের কাছে থেকে। ৫০ হাজার বছরের অধিক যাদের ইতিহাস বলে দাবি করা হয়, তারা অবশ্য ভাষালুপ্ত এক জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজরা জানত কোন দেশে থাকা যাবে, কোন দেশে শাসন করে তারপর ফিরতে হবে। সেভাবেই সেসব দেশকে গড়ে তুলত, সাজাত বলে অস্ট্রেলিয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের মতো। এটাও ঠিক, তারা এসেছিল আর সেভাবে গড়ে তুলেছে বলেই আমরা সবাই এসেছি। নানা কারণে বসত গেড়েছি। পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট মহাদেশের বড় দেশ। এটাও দেখেছি—কথায় না, কাজে কতটা মানবিক, কতটা উদার দানে। যে পরিমাণ ডলার মানুষ দান করে, তা ভাবাও কঠিন।
একসময় দেখি এরাই জোর করে পদোন্নতি দেয়। মনোজাগতিক দুর্বলতা কাটতে কাটতে একসময় সেবা উপদেষ্টার কাজও করে ফেললাম। ১৭ বছর পর অর্ধ অবসরে এসে ভাবলাম কিছু তো করা উচিত। অনেকটা যেচেই আমাকে চাকরি দেওয়া হলো পরীক্ষকের। লেখাপড়া-সংশ্লিষ্ট এমন কাজের প্রতি চিরকালের লোভ। কিন্তু আমি ছিলাম দোদুল্যমান। ওরাই বলেছিল, এটা তোমার জন্য পারফেক্ট। এখন দেখি আসলেই তাই। গত ছয়-সাত বছর পরীক্ষকের চাকরি করি, তা-ও আবার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষকের কাজ।
আমার ছেলে এ দেশে এসেছিল তার শিশুকালে। একদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কান্না—অর্কের ভয় ছিল ভাষার। পরে ও তাদের ইংরেজি পড়িয়েছে। নিজের ইচ্ছেমতো অভিনয় জগৎ বেছে নিয়ে এ দেশের প্রথম এশিয়ান তরুণ ও বাংলাদেশি হিসেবে হলিউড সিনেমাতে অভিনয় করেছে। এখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল লিবারেল ও লেবর—উভয় দলই সম্মান জানিয়েছে তাকে। এবার অস্ট্রেলিয়া ডে উদ্যাপনে ও ছিল বিচারকের আসনে। সিডনি শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরি ছিল ও।
এই দেশের নামের অর্থ মিলনস্থল। এই অস্ট্রেলিয়া নামটি এসেছে অ্যাবরোজিনাল বা আদিবাসীদের কাছে থেকে। ৫০ হাজার বছরের অধিক যাদের ইতিহাস বলে দাবি করা হয়, তারা অবশ্য ভাষালুপ্ত এক জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজরা জানত কোন দেশে থাকা যাবে, কোন দেশে শাসন করে তারপর ফিরতে হবে। সেভাবেই সেসব দেশকে গড়ে তুলত, সাজাত বলে অস্ট্রেলিয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের মতো। এটাও ঠিক, তারা এসেছিল আর সেভাবে গড়ে তুলেছে বলেই আমরা সবাই এসেছি। নানা কারণে বসত গেড়েছি। পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট মহাদেশের বড় দেশ। এটাও দেখেছি—কথায় না, কাজে কতটা মানবিক, কতটা উদার দানে। যে পরিমাণ ডলার মানুষ দান করে, তা ভাবাও কঠিন।
আজ বেড়াতে এসে এমন এক রেস্তোরাঁয় খেলাম যারা একটি মিল বিক্রি করলেই একজন অভুক্ত মানুষের খাবারের টাকা দেয় এর মুনাফা থেকে। এ পর্যন্ত ৬ কোটির বেশি মানুষকে খাবার জুগিয়েছে ওরা। সে ছবিটি মনে গাঁথা রইল। যেকোনো কাজে ভলানটিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ। নিজের জীবন তুচ্ছ করে কোয়েলা-ক্যাঙারুর বাচ্চা বুকে নিয়ে ছোটে নারী। এমন মমতা বিরল।
আমার মতো ঠোঁটকাটা মন খুলে কথা বলা মানুষের বড় বিপদ। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনে পদে পদে থাকে অপমান। এ দেশ তা থেকে মুক্ত রেখেছে আমাকে। এখানেও বাঙালির নীচুতা যায়নি। তবে তাদের আপনি অনায়াসে এড়িয়ে বলতে পারেন,
‘মেঘেরা যা খুশি লিখে রেখে যাক
আকাশের গায়ে কখনো লাগে না দাগ।’
কোনো তদবির বা যোগাযোগ ছাড়াই আমি পেয়েছি প্রথমবারের মতো আদিবাসী ও বহুজাতিক পদক। এই সেদিন এখানকার বাঙালিরা আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের জন্মদিন উদ্যাপন করে তাক লাগিয়ে দিলেন। পোশাক, খাবার, কথা ও জীবনে উদার আধুনিক সমাজে এই দেশের জাতীয় সংগীতে আমরা গাই—
‘অস্ট্রেলিয়ান অল লেট আস রিজয়েস
ফর উই আর ওয়ান অ্যান্ড ফ্রি...’
আমি এ দেশে না এলে জানতামই না ক্ষমতা একটা তুচ্ছ বিষয়, যা একমুহূর্তে ত্যাগ করতে পারেন কোনো প্রধানমন্ত্রী। ভোট দিতে যাওয়া মানুষের পেছনে ফেউয়ের মতো ঘোরে না কোনো রাজনীতি। কৃতজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়া, তোমার ক্রিকেট, তোমার সুইমিং, তোমার রাগবি, তোমার ফুটবলের মতো সুন্দরী রমণীর মতো রমণীয় তুমি।
সিডনি যে নয়নাভিরাম শহর সেটি বাসে, ট্রেনে, ফেরিতে বা গাড়িতে চড়লেই বুঝতে পারি। সবচেয়ে বেশি দেখি দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তির পর আকাশে চক্কর মারা উড়োজাহাজটি যখন অপেরা হাউসকে পিছে ফেলে নীল জলরাশি ছুঁতে ছুঁতে মায়াবী এক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে। বলতে কোনো কুণ্ঠা নেই কোনো দিন কোথাও—লিঙ্গ-ধর্ম-বর্ণ নিয়ে প্রশ্ন না করা এই দেশ, এই শহরকে ভালোবাসি। জন্মভূমি মাঝে মাঝে অচেনা ঠেকে আজকাল। তবু সে মা আর আবাসভূমি সিডনিও প্রিয় ভূমি।
শেষ কথা এই, এ দেশের কোনো নেতাকে কোনো দিন পালাতে হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ, আজ যে রাজা, কাল নয়, আজই সে সাধারণ মানুষ। সে সাধারণত্বই তাকে বা তাদের বাঁচিয়ে দেয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এ দেশে অযথা ‘বিপ্লব বিপ্লব’ বলার দরকার পড়ে না। আর তা যদি হয়ও, কারও ‘সেফ এক্সিট’ নামে কিছুর দরকার পড়ে না। এটাই গণতন্ত্রের দেশ ও তার সৌন্দর্য।
পত্রপল্লবে শোভিত সিডনিকে কখন যে ভালোবেসে ফেলেছি, নিজেই তা জানি না।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
এ বছর পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর। আর মেলবোর্ন আছে চতুর্থ স্থানে। ২৯ বছর আগে এক ভোরবেলায় এ দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। ট্যাক্সিতে চড়ে যাওয়ার সময় ছবির মতো বাড়িঘর, সামনে বাগান, সারি সারি বৃক্ষ ও সাজানো রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোনো সিনেমার শুটিং স্পটে এসেছি। টালির ছাউনি, মসৃণ রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। যত মানুষ তার তিন গুণ বাড়িঘর।
তারপর কত জল গড়াল। এসেছিলাম অভিবাসন নিয়ে। দুই বছর পর নাগরিক হলাম। জন্মভূমি ও ক্যাঙারুর দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় সানন্দে তা নিয়েছি। এর ভালো দিকটা হলো পৃথিবীর বহু দেশে বিনা ভিসায় ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ, নীল পাসপোর্টের খাতির বা সন্দেহের চোখে না তাকানো। মন্দ দিকও আছে। নাগরিক মানে ভোটার। আর ভোট না দিলে মোটা অঙ্কের ডলার জরিমানা।
শুরুতে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, কী-জাতীয় চাকরি পাব। কঠিন শারীরিক কাজ বা তেমন কিছু পারব না, এটা জানতাম। কয়েক মাসের ভেতরই চাকরি পেলাম ব্যাংকে। দেশের অভিজ্ঞতায় বুক দুরুদুরু করত। ইউনিয়ন যদি বদলি করিয়ে দেয় কালো চামড়া বলে কিংবা বড় সাহেবের বদনজরে পড়ে যদি কিছু হয়? দেখি পুরো বিপরীত। এরাই বলছে, তুমি কিন্তু এই এলাকার বাইরে কোনো অফিসে যাবে না কোনো দিন। রিজিওনাল কর্ত্রী এসে চুপটি করে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে কখন হাতের কাজ সেরে তাঁর সঙ্গে দু মিনিট কথা বলা যাবে। বেশির ভাগ সময়ই তা ছিল সুখবর কিংবা অভিনন্দনজাতীয় আলাপ।
একসময় দেখি এরাই জোর করে পদোন্নতি দেয়। মনোজাগতিক দুর্বলতা কাটতে কাটতে একসময় সেবা উপদেষ্টার কাজও করে ফেললাম। ১৭ বছর পর অর্ধ অবসরে এসে ভাবলাম কিছু তো করা উচিত। অনেকটা যেচেই আমাকে চাকরি দেওয়া হলো পরীক্ষকের। লেখাপড়া-সংশ্লিষ্ট এমন কাজের প্রতি চিরকালের লোভ। কিন্তু আমি ছিলাম দোদুল্যমান। ওরাই বলেছিল, এটা তোমার জন্য পারফেক্ট। এখন দেখি আসলেই তাই। গত ছয়-সাত বছর পরীক্ষকের চাকরি করি, তা-ও আবার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষকের কাজ।
আমার ছেলে এ দেশে এসেছিল তার শিশুকালে। একদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কান্না—অর্কের ভয় ছিল ভাষার। পরে ও তাদের ইংরেজি পড়িয়েছে। নিজের ইচ্ছেমতো অভিনয় জগৎ বেছে নিয়ে এ দেশের প্রথম এশিয়ান তরুণ ও বাংলাদেশি হিসেবে হলিউড সিনেমাতে অভিনয় করেছে। এখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল লিবারেল ও লেবর—উভয় দলই সম্মান জানিয়েছে তাকে। এবার অস্ট্রেলিয়া ডে উদ্যাপনে ও ছিল বিচারকের আসনে। সিডনি শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরি ছিল ও।
এই দেশের নামের অর্থ মিলনস্থল। এই অস্ট্রেলিয়া নামটি এসেছে অ্যাবরোজিনাল বা আদিবাসীদের কাছে থেকে। ৫০ হাজার বছরের অধিক যাদের ইতিহাস বলে দাবি করা হয়, তারা অবশ্য ভাষালুপ্ত এক জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজরা জানত কোন দেশে থাকা যাবে, কোন দেশে শাসন করে তারপর ফিরতে হবে। সেভাবেই সেসব দেশকে গড়ে তুলত, সাজাত বলে অস্ট্রেলিয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের মতো। এটাও ঠিক, তারা এসেছিল আর সেভাবে গড়ে তুলেছে বলেই আমরা সবাই এসেছি। নানা কারণে বসত গেড়েছি। পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট মহাদেশের বড় দেশ। এটাও দেখেছি—কথায় না, কাজে কতটা মানবিক, কতটা উদার দানে। যে পরিমাণ ডলার মানুষ দান করে, তা ভাবাও কঠিন।
একসময় দেখি এরাই জোর করে পদোন্নতি দেয়। মনোজাগতিক দুর্বলতা কাটতে কাটতে একসময় সেবা উপদেষ্টার কাজও করে ফেললাম। ১৭ বছর পর অর্ধ অবসরে এসে ভাবলাম কিছু তো করা উচিত। অনেকটা যেচেই আমাকে চাকরি দেওয়া হলো পরীক্ষকের। লেখাপড়া-সংশ্লিষ্ট এমন কাজের প্রতি চিরকালের লোভ। কিন্তু আমি ছিলাম দোদুল্যমান। ওরাই বলেছিল, এটা তোমার জন্য পারফেক্ট। এখন দেখি আসলেই তাই। গত ছয়-সাত বছর পরীক্ষকের চাকরি করি, তা-ও আবার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষকের কাজ।
আমার ছেলে এ দেশে এসেছিল তার শিশুকালে। একদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কান্না—অর্কের ভয় ছিল ভাষার। পরে ও তাদের ইংরেজি পড়িয়েছে। নিজের ইচ্ছেমতো অভিনয় জগৎ বেছে নিয়ে এ দেশের প্রথম এশিয়ান তরুণ ও বাংলাদেশি হিসেবে হলিউড সিনেমাতে অভিনয় করেছে। এখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল লিবারেল ও লেবর—উভয় দলই সম্মান জানিয়েছে তাকে। এবার অস্ট্রেলিয়া ডে উদ্যাপনে ও ছিল বিচারকের আসনে। সিডনি শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরি ছিল ও।
এই দেশের নামের অর্থ মিলনস্থল। এই অস্ট্রেলিয়া নামটি এসেছে অ্যাবরোজিনাল বা আদিবাসীদের কাছে থেকে। ৫০ হাজার বছরের অধিক যাদের ইতিহাস বলে দাবি করা হয়, তারা অবশ্য ভাষালুপ্ত এক জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজরা জানত কোন দেশে থাকা যাবে, কোন দেশে শাসন করে তারপর ফিরতে হবে। সেভাবেই সেসব দেশকে গড়ে তুলত, সাজাত বলে অস্ট্রেলিয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের মতো। এটাও ঠিক, তারা এসেছিল আর সেভাবে গড়ে তুলেছে বলেই আমরা সবাই এসেছি। নানা কারণে বসত গেড়েছি। পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট মহাদেশের বড় দেশ। এটাও দেখেছি—কথায় না, কাজে কতটা মানবিক, কতটা উদার দানে। যে পরিমাণ ডলার মানুষ দান করে, তা ভাবাও কঠিন।
আজ বেড়াতে এসে এমন এক রেস্তোরাঁয় খেলাম যারা একটি মিল বিক্রি করলেই একজন অভুক্ত মানুষের খাবারের টাকা দেয় এর মুনাফা থেকে। এ পর্যন্ত ৬ কোটির বেশি মানুষকে খাবার জুগিয়েছে ওরা। সে ছবিটি মনে গাঁথা রইল। যেকোনো কাজে ভলানটিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ। নিজের জীবন তুচ্ছ করে কোয়েলা-ক্যাঙারুর বাচ্চা বুকে নিয়ে ছোটে নারী। এমন মমতা বিরল।
আমার মতো ঠোঁটকাটা মন খুলে কথা বলা মানুষের বড় বিপদ। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনে পদে পদে থাকে অপমান। এ দেশ তা থেকে মুক্ত রেখেছে আমাকে। এখানেও বাঙালির নীচুতা যায়নি। তবে তাদের আপনি অনায়াসে এড়িয়ে বলতে পারেন,
‘মেঘেরা যা খুশি লিখে রেখে যাক
আকাশের গায়ে কখনো লাগে না দাগ।’
কোনো তদবির বা যোগাযোগ ছাড়াই আমি পেয়েছি প্রথমবারের মতো আদিবাসী ও বহুজাতিক পদক। এই সেদিন এখানকার বাঙালিরা আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের জন্মদিন উদ্যাপন করে তাক লাগিয়ে দিলেন। পোশাক, খাবার, কথা ও জীবনে উদার আধুনিক সমাজে এই দেশের জাতীয় সংগীতে আমরা গাই—
‘অস্ট্রেলিয়ান অল লেট আস রিজয়েস
ফর উই আর ওয়ান অ্যান্ড ফ্রি...’
আমি এ দেশে না এলে জানতামই না ক্ষমতা একটা তুচ্ছ বিষয়, যা একমুহূর্তে ত্যাগ করতে পারেন কোনো প্রধানমন্ত্রী। ভোট দিতে যাওয়া মানুষের পেছনে ফেউয়ের মতো ঘোরে না কোনো রাজনীতি। কৃতজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়া, তোমার ক্রিকেট, তোমার সুইমিং, তোমার রাগবি, তোমার ফুটবলের মতো সুন্দরী রমণীর মতো রমণীয় তুমি।
সিডনি যে নয়নাভিরাম শহর সেটি বাসে, ট্রেনে, ফেরিতে বা গাড়িতে চড়লেই বুঝতে পারি। সবচেয়ে বেশি দেখি দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তির পর আকাশে চক্কর মারা উড়োজাহাজটি যখন অপেরা হাউসকে পিছে ফেলে নীল জলরাশি ছুঁতে ছুঁতে মায়াবী এক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে। বলতে কোনো কুণ্ঠা নেই কোনো দিন কোথাও—লিঙ্গ-ধর্ম-বর্ণ নিয়ে প্রশ্ন না করা এই দেশ, এই শহরকে ভালোবাসি। জন্মভূমি মাঝে মাঝে অচেনা ঠেকে আজকাল। তবু সে মা আর আবাসভূমি সিডনিও প্রিয় ভূমি।
শেষ কথা এই, এ দেশের কোনো নেতাকে কোনো দিন পালাতে হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ, আজ যে রাজা, কাল নয়, আজই সে সাধারণ মানুষ। সে সাধারণত্বই তাকে বা তাদের বাঁচিয়ে দেয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এ দেশে অযথা ‘বিপ্লব বিপ্লব’ বলার দরকার পড়ে না। আর তা যদি হয়ও, কারও ‘সেফ এক্সিট’ নামে কিছুর দরকার পড়ে না। এটাই গণতন্ত্রের দেশ ও তার সৌন্দর্য।
পত্রপল্লবে শোভিত সিডনিকে কখন যে ভালোবেসে ফেলেছি, নিজেই তা জানি না।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যতই জোর দেওয়া হচ্ছে, চারপাশে ততই বইছে আশঙ্কার গুমোট হাওয়া। আশঙ্কা দানা বাঁধছে সরকারেরই কিছু কথায়। সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি বলা হচ্ছে নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই জাতীয় সনদ সই করা হয়েছে। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
১ দিন আগেহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য কমপ্লেক্সে ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে তিনটি বড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল।
১ দিন আগেজুলাই সনদ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা, জোট রাজনীতি, নারীনীতি, নির্বাচনী প্রতীক ইস্যু থেকে শুরু করে ফান্ডিং ও ‘মেধা বনাম কোটার’ বিতর্ক—এসব বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা..
২ দিন আগেসম্পাদকীয়
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য কমপ্লেক্সে ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে তিনটি বড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল। এর আগে ১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরের এম এস আলম ট্রেডার্স নামের একটি রাসায়নিক গুদাম ও পাশের একটি পোশাক কারখানায় এবং ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের একটি কারখানায় আগুন লাগে। তিনটি বড় ধরনের আগুন লাগার ঘটনা ঘটল দু-এক দিনের ব্যবধানে।
এই অগ্নিকাণ্ড শুধু কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেনি, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
১৯ অক্টোবর আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডের সময় কার্গো ভিলেজে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার পণ্য মজুত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ পণ্যের ক্ষতির কারণে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন। এই ক্ষয়ক্ষতি শুধু টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা যাবে না। কারণ, সময়মতো নমুনা বা অ্যাকসেসরিজ হাতে না পাওয়ায় ক্রয়াদেশ হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্য সরকারের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি, ইউকে) পরিচালিত মূল্যায়নে কার্গো নিরাপত্তাব্যবস্থায় শতভাগ নম্বর পেয়েছিল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এই স্বীকৃতি কার্গো নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতি প্রমাণ করলেও এই অগ্নিকাণ্ড সেই সাফল্যের ওপর এক নেতিবাচক প্রভাব ফেলল।
যদিও এ ধরনের পণ্য আকাশপথে পরিবহনকালে বিমা করা থাকে, কিন্তু বিমার দাবি নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা ব্যবসায়ীদের তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ কমাতে পারবে না। এতে তাঁদের ব্যবসায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করবে।
ইতিমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ চিহ্নিতকরণ, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করার লক্ষ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগেও দেশের নানা জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
এই সংকটময় মুহূর্তে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শুধু ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে সীমাবদ্ধ না থেকে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর প্রভাব কমাতে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যেমন দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অভ্যন্তরীণ বিকল্প বন্দরপথ কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়েছে, সেদিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিশীলতা বজায় রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো এবং দ্রুত স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা সরকারের আশু কর্তব্য।
কার্গো ভিলেজের এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একটা আগাম বার্তা। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই। এই ক্ষতিকে একটি শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে ধরে, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করা এখন সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য কমপ্লেক্সে ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে তিনটি বড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল। এর আগে ১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরের এম এস আলম ট্রেডার্স নামের একটি রাসায়নিক গুদাম ও পাশের একটি পোশাক কারখানায় এবং ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের একটি কারখানায় আগুন লাগে। তিনটি বড় ধরনের আগুন লাগার ঘটনা ঘটল দু-এক দিনের ব্যবধানে।
এই অগ্নিকাণ্ড শুধু কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেনি, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
১৯ অক্টোবর আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডের সময় কার্গো ভিলেজে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার পণ্য মজুত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ পণ্যের ক্ষতির কারণে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন। এই ক্ষয়ক্ষতি শুধু টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা যাবে না। কারণ, সময়মতো নমুনা বা অ্যাকসেসরিজ হাতে না পাওয়ায় ক্রয়াদেশ হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্য সরকারের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি, ইউকে) পরিচালিত মূল্যায়নে কার্গো নিরাপত্তাব্যবস্থায় শতভাগ নম্বর পেয়েছিল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এই স্বীকৃতি কার্গো নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতি প্রমাণ করলেও এই অগ্নিকাণ্ড সেই সাফল্যের ওপর এক নেতিবাচক প্রভাব ফেলল।
যদিও এ ধরনের পণ্য আকাশপথে পরিবহনকালে বিমা করা থাকে, কিন্তু বিমার দাবি নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা ব্যবসায়ীদের তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ কমাতে পারবে না। এতে তাঁদের ব্যবসায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করবে।
ইতিমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ চিহ্নিতকরণ, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করার লক্ষ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগেও দেশের নানা জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
এই সংকটময় মুহূর্তে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শুধু ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে সীমাবদ্ধ না থেকে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর প্রভাব কমাতে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যেমন দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অভ্যন্তরীণ বিকল্প বন্দরপথ কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়েছে, সেদিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিশীলতা বজায় রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো এবং দ্রুত স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা সরকারের আশু কর্তব্য।
কার্গো ভিলেজের এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একটা আগাম বার্তা। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই। এই ক্ষতিকে একটি শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে ধরে, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করা এখন সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যতই জোর দেওয়া হচ্ছে, চারপাশে ততই বইছে আশঙ্কার গুমোট হাওয়া। আশঙ্কা দানা বাঁধছে সরকারেরই কিছু কথায়। সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি বলা হচ্ছে নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই জাতীয় সনদ সই করা হয়েছে। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
১ দিন আগেএ বছর পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর। আর মেলবোর্ন আছে চতুর্থ স্থানে। ২৯ বছর আগে এক ভোরবেলায় এ দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। ট্যাক্সিতে চড়ে যাওয়ার সময় ছবির মতো বাড়িঘর, সামনে বাগান, সারি সারি বৃক্ষ ও সাজানো রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোনো সিনেমার শুটিং...
১ দিন আগেজুলাই সনদ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা, জোট রাজনীতি, নারীনীতি, নির্বাচনী প্রতীক ইস্যু থেকে শুরু করে ফান্ডিং ও ‘মেধা বনাম কোটার’ বিতর্ক—এসব বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা..
২ দিন আগেজুলাই সনদ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা, জোট রাজনীতি, নারীনীতি, নির্বাচনী প্রতীক ইস্যু থেকে শুরু করে ফান্ডিং ও ‘মেধা বনাম কোটার’ বিতর্ক—এসব বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন খোলাখুলি কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। আসন্ন নির্বাচনে এনসিপির কৌশল এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও উঠে এসেছে এই দীর্ঘ আলাপচারিতায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অর্চি হক।
অর্চি হক
আজকের পত্রিকা: জুলাই সনদকে অনেকে বাংলাদেশের নতুন ‘রাজনৈতিক চুক্তি’ বলে অভিহিত করছেন। আপনি কি মনে করেন, এই সনদ বাস্তবায়নযোগ্য?
সামান্তা শারমিন: বাস্তবায়ন তো সেটা করবেন, যেটা বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কে সকলে একমত এবং সকলে ইচ্ছুক, উদ্গ্রীব। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার পদ্ধতি নিয়ে সকলেরই কমবেশি কনফিউশন আছে এবং নিজস্ব মতামত আছে, যেটা হয়তো অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলছে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অংশটা বলতে হবে, জুলাই সনদের সঙ্গে মানুষের সংযোগের জায়গা খুব একটা নেই। জুলাই সনদকে শ্রেণি-পেশার ঊর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জায়গা তৈরি করা হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের যে আলাপগুলো হয়েছে, সেগুলো মোটাদাগে রাজনৈতিক দলকেন্দ্রিক। বাংলাদেশ এমন এক সিস্টেমে এসে দাঁড়িয়েছে যে রাজনৈতিক দলগুলো ধারণা করে, বাংলাদেশের জনগণ তাদেরকে ম্যান্ডেট দিয়েছে যেকোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমাদের এইটুকু রাজনৈতিক বোঝাপড়া প্রয়োজন—শুধু রাজনৈতিক দল সকল জনগণের মতামত গ্রহণ করতে পারে না; ধারণ করতে পারে না। আমার কাছে মনে হয়, জুলাই সনদের যে বাস্তবায়ন পদ্ধতি, সেটার বিষয়ে যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে, এই মতপার্থক্য কমিয়ে আনার জন্য ঐকমত্য কমিশন যে ধরনের ভূমিকা নিয়েছে, এই ভূমিকার চেয়ে আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, আমূল পরিবর্তন এবং গুণগত পরিবর্তনের দিকে ঐকমত্য কমিশনের একধরনের ঝোঁক থাকবে। সেটার বদলে আমরা দেখতে পেয়েছি, বাহাত্তরের সংবিধানকে অবিকল রেখে গণ-অভ্যুত্থানকে বাহাত্তরের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার একধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই গণ-অভ্যুত্থান বাহাত্তরের সংবিধানকে অমান্য করে করা হয়েছে। সেই জায়গা থেকে অবশ্যই এই গণ-অভ্যুত্থানকে যেকোনো সংবিধানের ঊর্ধ্বে গণমানুষের চাওয়া, গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে স্থায়ীকরণ করা প্রয়োজন।
আজকের পত্রিকা: জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে আপনি জুলাই আন্দোলন-পরবর্তী সহিংসতা ও অস্থিরতার জন্য রাজনৈতিকভাবে কতটা দায় অনুভব করেন?
সামান্তা শারমিন: গত দুই মাসে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের, বিএনপির নিজস্ব নেতা-কর্মীর অন্তঃকোন্দলে নিহত হয়েছে ২০০ জন। আমি প্রতিটি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। কিন্তু বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক বাস্তবতা পরিবর্তনের জন্য এই রাজনৈতিক দলগুলো কোনো লড়াই করছে না। বারবার আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের কথা বলেছি। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, দলগুলো তাদের পুরাতন যে ব্যবস্থা, সেটার মধ্যেই কমফোর্ট ফিল করছে। এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য যা কিছু করা লাগে, যে ধরনের ষড়যন্ত্র করা লাগে, সেগুলোতে লিপ্ত থাকতে তারা দ্বিধাবোধ করছে না। সেই জায়গা থেকে প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর যে ধরনের মতবাদ এবং তাদের যে অ্যাকশনগুলো আমরা দেখে থাকি, সেই জায়গা থেকে অবশ্যই পুরাতন রাজনৈতিক দলগুলোকে দায় নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটের বিষয়ে কিছু ভাবছেন?
সামান্তা শারমিন: বিএনপি ও জামায়াত—দুটিই পুরোনো রাজনৈতিক দল। দুটিই এর আগে ক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশের মানুষ এই দুটি পার্টির শাসনামল দেখেছে। কী অস্থিরতার মধ্যে, কী পরিমাণ আইনশৃঙ্খলার অবনতির মধ্যে, কী ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্য দিয়ে সেই দিনগুলো পার করতে হয়েছে, সেই ইতিহাস কারও অজানা নয়। বিএনপি-জামায়াতের যদি কোনো রিফর্ম হতো, রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের কোনো রিফর্ম আমরা দেখতাম, তাহলে হয়তো ভাবা যেত। কিন্তু পুরোনো রাজনৈতিক ধারায় দালালি, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি এবং দখলদারির যে ব্যবস্থা আছে, এই ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন তারা করেনি। আপনারা এটাও দেখেছেন, বিএনপি কখনোই এককভাবে সরকারে যেতে পারেনি। তাদের সব সময় জোট গঠন করতে হয়েছে। এটা তাদের রাজনৈতিক ঐক্যের একটা বহিঃপ্রকাশ বলে আমি মনে করি। একই সঙ্গে, জামায়াত আসলে কোনো ধরনের গণমানুষের দল নয়। গণমানুষের মধ্যে তার যে এক্সেপটেন্স, সেটা যথেষ্টই প্রশ্নবিদ্ধ। এবং এটাও প্রশ্ন থেকে যায়, জামায়াত যদি ক্ষমতায় আসে, জামায়াত যদি এটা মনে করে, তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য ভালো, তাহলে তারা ভুল করছে। কারণ, জামায়াত এবং আওয়ামী লীগকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হিসেবেই আমরা দেখে এসেছি। নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কখনো কখনো জামায়াত আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করেছে। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে ব্যবহার করেছে। আর এবার আমরা দেখতে পাচ্ছি, জামায়াত আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করছে। কিন্তু প্রসঙ্গটা এখানেই যে যদি জামায়াত ক্ষমতায় আসে, তাহলে আওয়ামী লীগ ফিরে আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। বাংলাদেশের এবং বাইরের অনেক শক্তি এটা দেখানোর চেষ্টা করবে, বাংলাদেশ ইসলামিস্টের হাতে চলে যাচ্ছে। এভাবে আওয়ামী লীগ তার প্রাসঙ্গিকতা তৈরি করবে। সিভিল সোসাইটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষের অনেকে সোচ্চার, আওয়ামী লীগের পক্ষের ভোট কোথায় যাবে। জামায়াত চেষ্টা করে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের ভোটারদের অ্যাট্রাক্ট করতে, আওয়ামী লীগের ভোটটা যাতে তাদের থাকে। আমি মনে করি, এই দুটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের কোনোটির সঙ্গেই এনসিপির যে রাষ্ট্রকল্প, এনসিপির যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সেটার কোনো মিল নেই। এ কারণে এনসিপি এই পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে কোনোভাবে কমপ্লাই করতে বাধ্য নয়। আমরা নিজেদের জোট গঠনের চেষ্টা করব অথবা আমরা নিজেদের সক্ষমতা এই নির্বাচনেই পরখ করে দেখতে চাই।
আজকের পত্রিকা: গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আপনাদের একীভূত হওয়ার আলোচনাটা কি একেবারেই ভেস্তে গেছে?
সামান্তা শারমিন: আমরা তরুণদের রাজনীতিটা ওউন করি। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য পজিটিভ একটা এনফোর্সমেন্ট। তরুণেরা যদি সংসদে না যায়, এটা কোনো ভারসাম্য বা স্থিতিশীল সংসদ হবে না। সেই সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সাবেক অনেক কর্মী কিন্তু আমাদের দলে আছেন। তাঁরা কাজ করছেন। তাঁরা এনসিপির যে রাজনৈতিক প্রকল্প রাষ্ট্রকল্প, সেটাকে ওউন করে নিয়ে কাজ করছেন। গণঅধিকার পরিষদ একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল। তাদের সঙ্গে আমাদের নানান ফরমেটে আলাপ হয়েছে, কিন্তু একীভূত হওয়ার সুযোগটা আর নেই। তবে আমরা রাজনৈতিকভাবে একসঙ্গে কাজ করতে উদ্যমী আছি এবং সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনী প্রতীকের প্রশ্নে আপনারা শাপলা প্রতীকের ওপর এত জোর দিচ্ছেন কেন? আপনাদের দ্বিতীয় পছন্দ ছিল কলম। এখন কলম প্রতীক না নিয়ে শুধু শাপলাতে অনড় থেকে আপনারা আসলে কী বার্তা দিতে চাচ্ছেন?
সামান্তা শারমিন: আমরা বার্তা দিতে চাচ্ছি না; বরং শাপলা প্রতীকটা এনসিপিকে না দিয়ে ইসি (নির্বাচন কমিশন) একটা বার্তা দিতে চাচ্ছে। বার্তাটা এই যে এনসিপির যে তরুণদের রাজনৈতিক শক্তি, সেটা তাদের মনে একটা ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের যেই পক্ষ পরিবর্তন চায় না, মৌলিক পরিবর্তন চায় না, তারা তরুণদেরকে কোনোভাবেই একটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসা দল এবং যেটা অর্গানিকভাবে উঠে আসছে, সে রকম একটা পরিস্থিতিতে দেখতে চায় না। শাপলার ব্যাপারে প্রথম দিকে যখন ইসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, সিইসির (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তখন কোনো মিটিংয়েই তাঁরা আপত্তি জানাননি। প্রথম দিকে শাপলা প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল লিস্টে। তখন তাঁরা আপত্তি জানাননি। বলেছেন, এটা কোনো সমস্যা নয়। এখন কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, প্রতীকের লিস্টে নেই। আমরা যখন জুলাই পদযাত্রায় ছিলাম, আমরা দেখেছি, পুরো বাংলাদেশে মানুষের উচ্ছ্বাস। তার আগেও আমরা পার্টি গঠনের আগে যে মতামত গ্রহণ করেছি, যে জরিপ চালিয়েছিলাম, সেখানেও শাপলা প্রতীক নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস দেখেছি। এই যে দেশব্যাপী একটি অর্গানিক উচ্ছ্বাস, যেটার ব্যাপারে এনসিপি ক্যাম্পেইন আকারে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি, তারপরও মানুষের যে উচ্ছ্বাস—এটা অনেকের মনে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। তারা মনে করছে, এই প্রতীক যদি এই দল পায়, তাহলে সে প্রথম অবস্থাতে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এটা অনেকে ফেস করতে চাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠিত যে রাজনৈতিক দলগুলো, প্রতিষ্ঠিত যে রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো, তারা চায়, তাদের নিজেদের যে সক্ষমতা এবং তাদের যে কর্তৃত্ব, সেটা বজায় থাকুক। কোনো রাজনৈতিক দল সেই কর্তৃত্বকে প্রশ্ন করবে, সে অথরিটিকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে, এটা তারা চাচ্ছে না।
আমরা কলম প্রতীক দ্বিতীয় ভাগে রেখেছিলাম। কিন্তু যেহেতু মানুষের কাছ থেকে আমরা রেসপন্স পেয়েছি, আমাদের সেই গুরুত্বটা দিতে হবে। আমরা যদি সেই গুরুত্বটা না দিই, তাহলে গণমানুষের এবং জনতার রাজনীতির দল হিসেবে নিজেদের দাবি করার কোনো জায়গা নেই। তাঁরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, মানে মানুষের যে আগ্রহ শাপলা নিয়ে, তাদের যে এক্সেপটেন্স শাপলার প্রতি—সেটাকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আমরা সেটা গ্রহণ করেছিলাম এবং এ কারণেই আমরা শাপলার যেকোনো ধরনের ফরমেশনের ব্যাপারে আপত্তি জানাইনি। আমরা লাল শাপলাও বলেছি। আপনি শুধু শাপলা দিতে পারেন। সাদা শাপলাও দিতে পারেন। কিংবা শাপলার যে ডিজাইন, সেটা পরিবর্তন করেও দেওয়া সম্ভব। কোনো যুক্তিতর্কের তোয়াক্কা না করে ইসি তার পজিশন নিয়েছে। একটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এভাবে রাজনৈতিক পজিশন নিতে পারে কি না, এটা আমার প্রশ্ন। শাপলা প্রতীক আমাদের প্রাপ্য। সেই লড়াইটা আমরা জারি রাখব।
আজকের পত্রিকা: এনসিপির নারীনীতি কী? আপনারা সরকারে গেলে নারীরা কী ধরনের স্বাধীনতা পাবে? সবক্ষেত্রে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা কি তারা পাবে?
সামান্তা শারমিন: বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, আমি মনে করি, বাংলাদেশের নারীদের প্রতিটি ক্ষেত্রে—চাকরি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে পড়াশোনা, তার সামাজিক অবস্থান—সব জায়গায় অনিরাপত্তার বলয় আছে। এই বলয়টাকে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের নারীদের রাজনীতিতে আসা, সক্রিয় ভূমিকা পালন করা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের ভূমিকা—এই বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় অনেক সময়। আমরা সে ক্ষেত্রে মনে করি, বাংলাদেশের রাজনীতির যদি মৌলিক পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে নারীদের অংশগ্রহণ কোনোভাবে বাদ দিয়ে এটা করা যাবে না। ঐকমত্য কমিশনে আমরা দেখলাম, নারীদের আসন নিয়ে সেই ৫ পারসেন্ট সংরক্ষিত বলয়ে আটকে থাকতে বাধ্য হলাম। এখান থেকে অনেক রাজনৈতিক বাস্তবতা আমাদের বলা হলো, দেখানো হলো। কিন্তু এই রাজনৈতিক বাস্তবতাগুলো কারা তৈরি করেছে? এই রাজনৈতিক বাস্তবতাগুলো তৈরি করেছে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো। এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো যেভাবে শক্তি প্রদর্শনের যে প্রক্রিয়া আছে, সে প্রক্রিয়ায় অর্থ এবং অস্ত্র—দুটিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের নির্বাচনে আমরা অস্ত্রকে কী ভূমিকায় দেখতে পাব, অর্থকে কী ভূমিকায় দেখতে পাব—এগুলো পরিষ্কার নয়। এ রকম একটি অনিরাপদ রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এনসিপির একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি এবং গুরুত্বপূর্ণ কার্যপরিধির অংশ। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনসংখ্যার যে অধিকাংশই নারী, সেই প্রতিফলনটা আমরা রাজনীতিতে দেখতে পাব, ক্লাসরুমে দেখতে পাব, যেকোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানে দেখতে পাব, সেটা আমরা আশা করি।
আজকের পত্রিকা: ক্লাসরুম, রাজনীতি বা কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের প্রতিফলন দেখতে আরও কত বছর লাগতে পারে? তত দিন পর্যন্ত নারীদের কোটা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন কি?
সামান্তা শারমিন: নারীদের কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা যতটুকু কর্মক্ষেত্রে, রাজনীতির ক্ষেত্রে আসতে পারছে, কোটা তুলে দিলে তাদেরকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। অনিরাপত্তা, সামাজিক পরিস্থিতিসহ নানা কারণে উঠে আসতে তারা বাধার সম্মুখীন হয়। আমি মনে করি, নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই কোটা ব্যবস্থা থাকা উচিত, যাতে করে তাদেরকে আমরা নিয়ে আসতে পারি সামনের দিকে বা চাকরির ক্ষেত্রে। কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা, যেটাকে আমরা টোকেনিজম বলি, নারীদের শুধু সামনে রেখে শো করা যে আমাদের সঙ্গে ফোরামে এতজন নারী আছে। এটার পরিবর্তন দরকার।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমরা নারী ফুটবল দলের একাধিক ম্যাচ স্থগিত হতে দেখেছি। প্রকাশ্যে নারীদের হেনস্তার শিকার হতে দেখেছি। হেনস্তাকারীদের থানা থেকে সংবর্ধনা দিয়ে বের করে আনতে দেখেছি। এসব ঘটনায় এনসিপিকে সক্রিয় অবস্থানে দেখা যায়নি কেন?
সামান্তা শারমিন: আমার ধারণা, আপনার তথ্যে কিছুটা ঘাটতি আছে। যখন আক্রমণ করে মেয়েদের ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তখন আমাদের পার্টি হয়েছে কি না, মনে পড়ছে না। সম্ভবত নাগরিক কমিটি ছিল সে সময়। আমাদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন আমাদের নেতারা। ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আমরা সংগঠনগত জায়গা থেকে প্রেস রিলিজ দিয়েছি। আমরা পার্টিগত জায়গা থেকে মনে করি, মেয়েদের খেলার স্বাধীনতা আছে, মেয়েদের চলাফেরার স্বাধীনতা আছে এবং তার যে স্বাভাবিক অভিগমন, এটাকে বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আজকের পত্রিকা: আপনাদের দলের ফান্ডিং বা অর্থায়নের উৎস কীভাবে পরিচালিত হয়? কারা এখানে অর্থ দেয়? কীভাবে এখানে স্বচ্ছতা বজায় রাখেন?
সামান্তা শারমিন: একটা রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার অ্যাকাউন্টেবিলিটি (জবাবদিহি) এবং জনগণের কাছে তার অর্থের উৎস সম্পর্কে পরিষ্কার মনোভাব থাকা। এটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মানুষ আসলে কিছু আশা করে না, আমাদের কাছ থেকে করে। এই কারণে এই প্রশ্নগুলো এনসিপির কাছে বেশি আসে, যেটাকে আমরা খুবই ইতিবাচকভাবে দেখি। আমরা একটি ওয়েবসাইট লঞ্চ করেছি। কীভাবে আমাদের অর্থায়ন হয়, সেটার একটা পরিষ্কার নীতিমালা আমরা পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেছিলাম। সে সময় অনেক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন এবং আমরা জনতার কাছে সেটা উন্মুক্ত করেছি। আমাদের ডোনেশনগুলো এই মারফতই হয়ে থাকে এবং আমরা অর্থের উৎস এবং অর্থের যে জবাবদিহি, সেটার ক্ষেত্রে চেষ্টা করি যতটুকু সম্ভব একটা নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিষ্কার করতে। আমাদের অনেক ফ্যাসিলিটি ক্রিয়েট করতে হচ্ছে। সেটার জায়গা থেকে আমরা গ্রোয়িং একটা জায়গায় আছি। আমরা মনে করি না, এটাই সর্বোচ্চ জবাবদিহি। মনে করি, প্রতিটি পয়সা কীভাবে খরচ হচ্ছে, এটা জানার অধিকার মানুষের আছে। আমরা আমাদের দলের ফান্ডিং, ওয়েবসাইট এবং আমাদের নানা ধরনের প্রসেস আছে—বিদেশ থেকে পাঠালে এক রকমের প্রসেস, দেশের অভ্যন্তরে নানা রকমের প্রসেস আছে। এগুলো উন্মুক্ত করা আছে। এই মোতাবেকই আপাতত এই দলটা চলছে।
আজকের পত্রিকা: এনসিপি কবে নাগরিকদের সামনে আয়-ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ করবে?
সামান্তা শারমিন: ইনশা আল্লাহ, আমরা ইলেকশনের আগেই আমাদের দলের এখন পর্যন্ত যত খরচ হয়েছে এবং প্রোগ্রামে আমাদের খরচ কীভাবে হয়েছে—এসব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট, একই সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ অর্থ জোগানের নিয়মটা প্রকাশ করতে পারব।
আজকের পত্রিকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর থেকে ‘মেধা বনাম কোটার’ প্রশ্নে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। আপনি কি মনে করেন, বর্তমানে চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে?
সামান্তা শারমিন: না, এটা হচ্ছে না। বাংলাদেশে এই সিস্টেমটাই নেই। আমাদের পরীক্ষাপদ্ধতি, এমনকি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। চাকরির ব্যবস্থাও ধ্বংস করেছে। চাকরির ক্ষেত্রে যে প্রশ্নগুলো, যেভাবে যেভাবে নিয়োগ হয়, এটা পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, বাবর সাহেব (বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর) রিসেন্টলি একটা বক্তব্যে বলেছেন, ‘ভালো করে পড়াশোনা করেন। পরীক্ষাটা দেন। ভাইভাটা ফেস করেন। তারপরে আমার যতটুকু সম্ভব, আমি দেখব।’ এটা লাস্ট কে বলেছিল, আপনার মনে আছে? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। উনি বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ যারা করবে, যুবলীগ যারা করবে, তারাই চাকরি পাবে, আর কে চাকরি পাবে?’ আমরা এত দিন বলে আসছি, বিএনপি আওয়ামী লীগের রাস্তায় হাঁটছে; বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো করে কথা বলছে; ভারতপন্থী কথা বলছে। চাকরির ক্ষেত্রে ছোট একটা বিষয়ের মন্তব্য এভাবে মিলে যাচ্ছে! বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আপনি তাদের (বিএনপি) ওপর কীভাবে ডিপেন্ড করবেন?
আজকের পত্রিকা: আপনি নির্বাচনে অংশ নেবেন? যদি নেন, তাহলে কোন আসন থেকে?
সামান্তা শারমিন: কী ধরনের সংস্কার হচ্ছে এবং কী ধরনের রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্যে আমরা নির্বাচন করতে যাচ্ছি, এটা আমার কাছে অনেক বেশি জরুরি। আসলে আসনকেন্দ্রিক কখনোই কাজ করিনি। আমি সংগঠনকে বিস্তৃত করার জন্য বাংলাদেশের সব জায়গায় কাজ করতে আগ্রহী এবং করেছিও। সংগঠন আমাকে যেভাবে কাজ করতে দিতে চায়, আমি সেটা কমপ্লাই করব। আসনভিত্তিক যে একধরনের কামড়াকামড়ি আছে, একধরনের টেনশন আছে এবং অস্থিরতা আছে, এটা আমি মনে করি না, আমার নিজেরও করা দরকার।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সামান্তা শারমিন: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: জুলাই সনদকে অনেকে বাংলাদেশের নতুন ‘রাজনৈতিক চুক্তি’ বলে অভিহিত করছেন। আপনি কি মনে করেন, এই সনদ বাস্তবায়নযোগ্য?
সামান্তা শারমিন: বাস্তবায়ন তো সেটা করবেন, যেটা বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কে সকলে একমত এবং সকলে ইচ্ছুক, উদ্গ্রীব। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার পদ্ধতি নিয়ে সকলেরই কমবেশি কনফিউশন আছে এবং নিজস্ব মতামত আছে, যেটা হয়তো অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলছে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অংশটা বলতে হবে, জুলাই সনদের সঙ্গে মানুষের সংযোগের জায়গা খুব একটা নেই। জুলাই সনদকে শ্রেণি-পেশার ঊর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জায়গা তৈরি করা হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের যে আলাপগুলো হয়েছে, সেগুলো মোটাদাগে রাজনৈতিক দলকেন্দ্রিক। বাংলাদেশ এমন এক সিস্টেমে এসে দাঁড়িয়েছে যে রাজনৈতিক দলগুলো ধারণা করে, বাংলাদেশের জনগণ তাদেরকে ম্যান্ডেট দিয়েছে যেকোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমাদের এইটুকু রাজনৈতিক বোঝাপড়া প্রয়োজন—শুধু রাজনৈতিক দল সকল জনগণের মতামত গ্রহণ করতে পারে না; ধারণ করতে পারে না। আমার কাছে মনে হয়, জুলাই সনদের যে বাস্তবায়ন পদ্ধতি, সেটার বিষয়ে যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে, এই মতপার্থক্য কমিয়ে আনার জন্য ঐকমত্য কমিশন যে ধরনের ভূমিকা নিয়েছে, এই ভূমিকার চেয়ে আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, আমূল পরিবর্তন এবং গুণগত পরিবর্তনের দিকে ঐকমত্য কমিশনের একধরনের ঝোঁক থাকবে। সেটার বদলে আমরা দেখতে পেয়েছি, বাহাত্তরের সংবিধানকে অবিকল রেখে গণ-অভ্যুত্থানকে বাহাত্তরের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার একধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই গণ-অভ্যুত্থান বাহাত্তরের সংবিধানকে অমান্য করে করা হয়েছে। সেই জায়গা থেকে অবশ্যই এই গণ-অভ্যুত্থানকে যেকোনো সংবিধানের ঊর্ধ্বে গণমানুষের চাওয়া, গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে স্থায়ীকরণ করা প্রয়োজন।
আজকের পত্রিকা: জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে আপনি জুলাই আন্দোলন-পরবর্তী সহিংসতা ও অস্থিরতার জন্য রাজনৈতিকভাবে কতটা দায় অনুভব করেন?
সামান্তা শারমিন: গত দুই মাসে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের, বিএনপির নিজস্ব নেতা-কর্মীর অন্তঃকোন্দলে নিহত হয়েছে ২০০ জন। আমি প্রতিটি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। কিন্তু বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক বাস্তবতা পরিবর্তনের জন্য এই রাজনৈতিক দলগুলো কোনো লড়াই করছে না। বারবার আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের কথা বলেছি। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, দলগুলো তাদের পুরাতন যে ব্যবস্থা, সেটার মধ্যেই কমফোর্ট ফিল করছে। এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য যা কিছু করা লাগে, যে ধরনের ষড়যন্ত্র করা লাগে, সেগুলোতে লিপ্ত থাকতে তারা দ্বিধাবোধ করছে না। সেই জায়গা থেকে প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর যে ধরনের মতবাদ এবং তাদের যে অ্যাকশনগুলো আমরা দেখে থাকি, সেই জায়গা থেকে অবশ্যই পুরাতন রাজনৈতিক দলগুলোকে দায় নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটের বিষয়ে কিছু ভাবছেন?
সামান্তা শারমিন: বিএনপি ও জামায়াত—দুটিই পুরোনো রাজনৈতিক দল। দুটিই এর আগে ক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশের মানুষ এই দুটি পার্টির শাসনামল দেখেছে। কী অস্থিরতার মধ্যে, কী পরিমাণ আইনশৃঙ্খলার অবনতির মধ্যে, কী ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্য দিয়ে সেই দিনগুলো পার করতে হয়েছে, সেই ইতিহাস কারও অজানা নয়। বিএনপি-জামায়াতের যদি কোনো রিফর্ম হতো, রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের কোনো রিফর্ম আমরা দেখতাম, তাহলে হয়তো ভাবা যেত। কিন্তু পুরোনো রাজনৈতিক ধারায় দালালি, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি এবং দখলদারির যে ব্যবস্থা আছে, এই ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন তারা করেনি। আপনারা এটাও দেখেছেন, বিএনপি কখনোই এককভাবে সরকারে যেতে পারেনি। তাদের সব সময় জোট গঠন করতে হয়েছে। এটা তাদের রাজনৈতিক ঐক্যের একটা বহিঃপ্রকাশ বলে আমি মনে করি। একই সঙ্গে, জামায়াত আসলে কোনো ধরনের গণমানুষের দল নয়। গণমানুষের মধ্যে তার যে এক্সেপটেন্স, সেটা যথেষ্টই প্রশ্নবিদ্ধ। এবং এটাও প্রশ্ন থেকে যায়, জামায়াত যদি ক্ষমতায় আসে, জামায়াত যদি এটা মনে করে, তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য ভালো, তাহলে তারা ভুল করছে। কারণ, জামায়াত এবং আওয়ামী লীগকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হিসেবেই আমরা দেখে এসেছি। নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কখনো কখনো জামায়াত আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করেছে। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে ব্যবহার করেছে। আর এবার আমরা দেখতে পাচ্ছি, জামায়াত আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করছে। কিন্তু প্রসঙ্গটা এখানেই যে যদি জামায়াত ক্ষমতায় আসে, তাহলে আওয়ামী লীগ ফিরে আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। বাংলাদেশের এবং বাইরের অনেক শক্তি এটা দেখানোর চেষ্টা করবে, বাংলাদেশ ইসলামিস্টের হাতে চলে যাচ্ছে। এভাবে আওয়ামী লীগ তার প্রাসঙ্গিকতা তৈরি করবে। সিভিল সোসাইটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষের অনেকে সোচ্চার, আওয়ামী লীগের পক্ষের ভোট কোথায় যাবে। জামায়াত চেষ্টা করে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের ভোটারদের অ্যাট্রাক্ট করতে, আওয়ামী লীগের ভোটটা যাতে তাদের থাকে। আমি মনে করি, এই দুটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের কোনোটির সঙ্গেই এনসিপির যে রাষ্ট্রকল্প, এনসিপির যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সেটার কোনো মিল নেই। এ কারণে এনসিপি এই পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে কোনোভাবে কমপ্লাই করতে বাধ্য নয়। আমরা নিজেদের জোট গঠনের চেষ্টা করব অথবা আমরা নিজেদের সক্ষমতা এই নির্বাচনেই পরখ করে দেখতে চাই।
আজকের পত্রিকা: গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আপনাদের একীভূত হওয়ার আলোচনাটা কি একেবারেই ভেস্তে গেছে?
সামান্তা শারমিন: আমরা তরুণদের রাজনীতিটা ওউন করি। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য পজিটিভ একটা এনফোর্সমেন্ট। তরুণেরা যদি সংসদে না যায়, এটা কোনো ভারসাম্য বা স্থিতিশীল সংসদ হবে না। সেই সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সাবেক অনেক কর্মী কিন্তু আমাদের দলে আছেন। তাঁরা কাজ করছেন। তাঁরা এনসিপির যে রাজনৈতিক প্রকল্প রাষ্ট্রকল্প, সেটাকে ওউন করে নিয়ে কাজ করছেন। গণঅধিকার পরিষদ একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল। তাদের সঙ্গে আমাদের নানান ফরমেটে আলাপ হয়েছে, কিন্তু একীভূত হওয়ার সুযোগটা আর নেই। তবে আমরা রাজনৈতিকভাবে একসঙ্গে কাজ করতে উদ্যমী আছি এবং সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনী প্রতীকের প্রশ্নে আপনারা শাপলা প্রতীকের ওপর এত জোর দিচ্ছেন কেন? আপনাদের দ্বিতীয় পছন্দ ছিল কলম। এখন কলম প্রতীক না নিয়ে শুধু শাপলাতে অনড় থেকে আপনারা আসলে কী বার্তা দিতে চাচ্ছেন?
সামান্তা শারমিন: আমরা বার্তা দিতে চাচ্ছি না; বরং শাপলা প্রতীকটা এনসিপিকে না দিয়ে ইসি (নির্বাচন কমিশন) একটা বার্তা দিতে চাচ্ছে। বার্তাটা এই যে এনসিপির যে তরুণদের রাজনৈতিক শক্তি, সেটা তাদের মনে একটা ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের যেই পক্ষ পরিবর্তন চায় না, মৌলিক পরিবর্তন চায় না, তারা তরুণদেরকে কোনোভাবেই একটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসা দল এবং যেটা অর্গানিকভাবে উঠে আসছে, সে রকম একটা পরিস্থিতিতে দেখতে চায় না। শাপলার ব্যাপারে প্রথম দিকে যখন ইসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, সিইসির (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তখন কোনো মিটিংয়েই তাঁরা আপত্তি জানাননি। প্রথম দিকে শাপলা প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল লিস্টে। তখন তাঁরা আপত্তি জানাননি। বলেছেন, এটা কোনো সমস্যা নয়। এখন কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, প্রতীকের লিস্টে নেই। আমরা যখন জুলাই পদযাত্রায় ছিলাম, আমরা দেখেছি, পুরো বাংলাদেশে মানুষের উচ্ছ্বাস। তার আগেও আমরা পার্টি গঠনের আগে যে মতামত গ্রহণ করেছি, যে জরিপ চালিয়েছিলাম, সেখানেও শাপলা প্রতীক নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস দেখেছি। এই যে দেশব্যাপী একটি অর্গানিক উচ্ছ্বাস, যেটার ব্যাপারে এনসিপি ক্যাম্পেইন আকারে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি, তারপরও মানুষের যে উচ্ছ্বাস—এটা অনেকের মনে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। তারা মনে করছে, এই প্রতীক যদি এই দল পায়, তাহলে সে প্রথম অবস্থাতে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এটা অনেকে ফেস করতে চাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠিত যে রাজনৈতিক দলগুলো, প্রতিষ্ঠিত যে রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো, তারা চায়, তাদের নিজেদের যে সক্ষমতা এবং তাদের যে কর্তৃত্ব, সেটা বজায় থাকুক। কোনো রাজনৈতিক দল সেই কর্তৃত্বকে প্রশ্ন করবে, সে অথরিটিকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে, এটা তারা চাচ্ছে না।
আমরা কলম প্রতীক দ্বিতীয় ভাগে রেখেছিলাম। কিন্তু যেহেতু মানুষের কাছ থেকে আমরা রেসপন্স পেয়েছি, আমাদের সেই গুরুত্বটা দিতে হবে। আমরা যদি সেই গুরুত্বটা না দিই, তাহলে গণমানুষের এবং জনতার রাজনীতির দল হিসেবে নিজেদের দাবি করার কোনো জায়গা নেই। তাঁরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, মানে মানুষের যে আগ্রহ শাপলা নিয়ে, তাদের যে এক্সেপটেন্স শাপলার প্রতি—সেটাকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আমরা সেটা গ্রহণ করেছিলাম এবং এ কারণেই আমরা শাপলার যেকোনো ধরনের ফরমেশনের ব্যাপারে আপত্তি জানাইনি। আমরা লাল শাপলাও বলেছি। আপনি শুধু শাপলা দিতে পারেন। সাদা শাপলাও দিতে পারেন। কিংবা শাপলার যে ডিজাইন, সেটা পরিবর্তন করেও দেওয়া সম্ভব। কোনো যুক্তিতর্কের তোয়াক্কা না করে ইসি তার পজিশন নিয়েছে। একটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এভাবে রাজনৈতিক পজিশন নিতে পারে কি না, এটা আমার প্রশ্ন। শাপলা প্রতীক আমাদের প্রাপ্য। সেই লড়াইটা আমরা জারি রাখব।
আজকের পত্রিকা: এনসিপির নারীনীতি কী? আপনারা সরকারে গেলে নারীরা কী ধরনের স্বাধীনতা পাবে? সবক্ষেত্রে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা কি তারা পাবে?
সামান্তা শারমিন: বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, আমি মনে করি, বাংলাদেশের নারীদের প্রতিটি ক্ষেত্রে—চাকরি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে পড়াশোনা, তার সামাজিক অবস্থান—সব জায়গায় অনিরাপত্তার বলয় আছে। এই বলয়টাকে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের নারীদের রাজনীতিতে আসা, সক্রিয় ভূমিকা পালন করা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের ভূমিকা—এই বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় অনেক সময়। আমরা সে ক্ষেত্রে মনে করি, বাংলাদেশের রাজনীতির যদি মৌলিক পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে নারীদের অংশগ্রহণ কোনোভাবে বাদ দিয়ে এটা করা যাবে না। ঐকমত্য কমিশনে আমরা দেখলাম, নারীদের আসন নিয়ে সেই ৫ পারসেন্ট সংরক্ষিত বলয়ে আটকে থাকতে বাধ্য হলাম। এখান থেকে অনেক রাজনৈতিক বাস্তবতা আমাদের বলা হলো, দেখানো হলো। কিন্তু এই রাজনৈতিক বাস্তবতাগুলো কারা তৈরি করেছে? এই রাজনৈতিক বাস্তবতাগুলো তৈরি করেছে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো। এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো যেভাবে শক্তি প্রদর্শনের যে প্রক্রিয়া আছে, সে প্রক্রিয়ায় অর্থ এবং অস্ত্র—দুটিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের নির্বাচনে আমরা অস্ত্রকে কী ভূমিকায় দেখতে পাব, অর্থকে কী ভূমিকায় দেখতে পাব—এগুলো পরিষ্কার নয়। এ রকম একটি অনিরাপদ রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এনসিপির একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি এবং গুরুত্বপূর্ণ কার্যপরিধির অংশ। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনসংখ্যার যে অধিকাংশই নারী, সেই প্রতিফলনটা আমরা রাজনীতিতে দেখতে পাব, ক্লাসরুমে দেখতে পাব, যেকোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানে দেখতে পাব, সেটা আমরা আশা করি।
আজকের পত্রিকা: ক্লাসরুম, রাজনীতি বা কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের প্রতিফলন দেখতে আরও কত বছর লাগতে পারে? তত দিন পর্যন্ত নারীদের কোটা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন কি?
সামান্তা শারমিন: নারীদের কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা যতটুকু কর্মক্ষেত্রে, রাজনীতির ক্ষেত্রে আসতে পারছে, কোটা তুলে দিলে তাদেরকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। অনিরাপত্তা, সামাজিক পরিস্থিতিসহ নানা কারণে উঠে আসতে তারা বাধার সম্মুখীন হয়। আমি মনে করি, নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই কোটা ব্যবস্থা থাকা উচিত, যাতে করে তাদেরকে আমরা নিয়ে আসতে পারি সামনের দিকে বা চাকরির ক্ষেত্রে। কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা, যেটাকে আমরা টোকেনিজম বলি, নারীদের শুধু সামনে রেখে শো করা যে আমাদের সঙ্গে ফোরামে এতজন নারী আছে। এটার পরিবর্তন দরকার।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমরা নারী ফুটবল দলের একাধিক ম্যাচ স্থগিত হতে দেখেছি। প্রকাশ্যে নারীদের হেনস্তার শিকার হতে দেখেছি। হেনস্তাকারীদের থানা থেকে সংবর্ধনা দিয়ে বের করে আনতে দেখেছি। এসব ঘটনায় এনসিপিকে সক্রিয় অবস্থানে দেখা যায়নি কেন?
সামান্তা শারমিন: আমার ধারণা, আপনার তথ্যে কিছুটা ঘাটতি আছে। যখন আক্রমণ করে মেয়েদের ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তখন আমাদের পার্টি হয়েছে কি না, মনে পড়ছে না। সম্ভবত নাগরিক কমিটি ছিল সে সময়। আমাদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন আমাদের নেতারা। ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আমরা সংগঠনগত জায়গা থেকে প্রেস রিলিজ দিয়েছি। আমরা পার্টিগত জায়গা থেকে মনে করি, মেয়েদের খেলার স্বাধীনতা আছে, মেয়েদের চলাফেরার স্বাধীনতা আছে এবং তার যে স্বাভাবিক অভিগমন, এটাকে বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আজকের পত্রিকা: আপনাদের দলের ফান্ডিং বা অর্থায়নের উৎস কীভাবে পরিচালিত হয়? কারা এখানে অর্থ দেয়? কীভাবে এখানে স্বচ্ছতা বজায় রাখেন?
সামান্তা শারমিন: একটা রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার অ্যাকাউন্টেবিলিটি (জবাবদিহি) এবং জনগণের কাছে তার অর্থের উৎস সম্পর্কে পরিষ্কার মনোভাব থাকা। এটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মানুষ আসলে কিছু আশা করে না, আমাদের কাছ থেকে করে। এই কারণে এই প্রশ্নগুলো এনসিপির কাছে বেশি আসে, যেটাকে আমরা খুবই ইতিবাচকভাবে দেখি। আমরা একটি ওয়েবসাইট লঞ্চ করেছি। কীভাবে আমাদের অর্থায়ন হয়, সেটার একটা পরিষ্কার নীতিমালা আমরা পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেছিলাম। সে সময় অনেক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন এবং আমরা জনতার কাছে সেটা উন্মুক্ত করেছি। আমাদের ডোনেশনগুলো এই মারফতই হয়ে থাকে এবং আমরা অর্থের উৎস এবং অর্থের যে জবাবদিহি, সেটার ক্ষেত্রে চেষ্টা করি যতটুকু সম্ভব একটা নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিষ্কার করতে। আমাদের অনেক ফ্যাসিলিটি ক্রিয়েট করতে হচ্ছে। সেটার জায়গা থেকে আমরা গ্রোয়িং একটা জায়গায় আছি। আমরা মনে করি না, এটাই সর্বোচ্চ জবাবদিহি। মনে করি, প্রতিটি পয়সা কীভাবে খরচ হচ্ছে, এটা জানার অধিকার মানুষের আছে। আমরা আমাদের দলের ফান্ডিং, ওয়েবসাইট এবং আমাদের নানা ধরনের প্রসেস আছে—বিদেশ থেকে পাঠালে এক রকমের প্রসেস, দেশের অভ্যন্তরে নানা রকমের প্রসেস আছে। এগুলো উন্মুক্ত করা আছে। এই মোতাবেকই আপাতত এই দলটা চলছে।
আজকের পত্রিকা: এনসিপি কবে নাগরিকদের সামনে আয়-ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ করবে?
সামান্তা শারমিন: ইনশা আল্লাহ, আমরা ইলেকশনের আগেই আমাদের দলের এখন পর্যন্ত যত খরচ হয়েছে এবং প্রোগ্রামে আমাদের খরচ কীভাবে হয়েছে—এসব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট, একই সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ অর্থ জোগানের নিয়মটা প্রকাশ করতে পারব।
আজকের পত্রিকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর থেকে ‘মেধা বনাম কোটার’ প্রশ্নে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। আপনি কি মনে করেন, বর্তমানে চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে?
সামান্তা শারমিন: না, এটা হচ্ছে না। বাংলাদেশে এই সিস্টেমটাই নেই। আমাদের পরীক্ষাপদ্ধতি, এমনকি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। চাকরির ব্যবস্থাও ধ্বংস করেছে। চাকরির ক্ষেত্রে যে প্রশ্নগুলো, যেভাবে যেভাবে নিয়োগ হয়, এটা পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, বাবর সাহেব (বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর) রিসেন্টলি একটা বক্তব্যে বলেছেন, ‘ভালো করে পড়াশোনা করেন। পরীক্ষাটা দেন। ভাইভাটা ফেস করেন। তারপরে আমার যতটুকু সম্ভব, আমি দেখব।’ এটা লাস্ট কে বলেছিল, আপনার মনে আছে? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। উনি বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ যারা করবে, যুবলীগ যারা করবে, তারাই চাকরি পাবে, আর কে চাকরি পাবে?’ আমরা এত দিন বলে আসছি, বিএনপি আওয়ামী লীগের রাস্তায় হাঁটছে; বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো করে কথা বলছে; ভারতপন্থী কথা বলছে। চাকরির ক্ষেত্রে ছোট একটা বিষয়ের মন্তব্য এভাবে মিলে যাচ্ছে! বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আপনি তাদের (বিএনপি) ওপর কীভাবে ডিপেন্ড করবেন?
আজকের পত্রিকা: আপনি নির্বাচনে অংশ নেবেন? যদি নেন, তাহলে কোন আসন থেকে?
সামান্তা শারমিন: কী ধরনের সংস্কার হচ্ছে এবং কী ধরনের রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্যে আমরা নির্বাচন করতে যাচ্ছি, এটা আমার কাছে অনেক বেশি জরুরি। আসলে আসনকেন্দ্রিক কখনোই কাজ করিনি। আমি সংগঠনকে বিস্তৃত করার জন্য বাংলাদেশের সব জায়গায় কাজ করতে আগ্রহী এবং করেছিও। সংগঠন আমাকে যেভাবে কাজ করতে দিতে চায়, আমি সেটা কমপ্লাই করব। আসনভিত্তিক যে একধরনের কামড়াকামড়ি আছে, একধরনের টেনশন আছে এবং অস্থিরতা আছে, এটা আমি মনে করি না, আমার নিজেরও করা দরকার।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সামান্তা শারমিন: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যতই জোর দেওয়া হচ্ছে, চারপাশে ততই বইছে আশঙ্কার গুমোট হাওয়া। আশঙ্কা দানা বাঁধছে সরকারেরই কিছু কথায়। সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি বলা হচ্ছে নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই জাতীয় সনদ সই করা হয়েছে। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
১ দিন আগেএ বছর পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর। আর মেলবোর্ন আছে চতুর্থ স্থানে। ২৯ বছর আগে এক ভোরবেলায় এ দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। ট্যাক্সিতে চড়ে যাওয়ার সময় ছবির মতো বাড়িঘর, সামনে বাগান, সারি সারি বৃক্ষ ও সাজানো রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোনো সিনেমার শুটিং...
১ দিন আগেহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য কমপ্লেক্সে ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে তিনটি বড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল।
১ দিন আগে