অজয় দাশগুপ্ত
এ বছর পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর। আর মেলবোর্ন আছে চতুর্থ স্থানে। ২৯ বছর আগে এক ভোরবেলায় এ দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। ট্যাক্সিতে চড়ে যাওয়ার সময় ছবির মতো বাড়িঘর, সামনে বাগান, সারি সারি বৃক্ষ ও সাজানো রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোনো সিনেমার শুটিং স্পটে এসেছি। টালির ছাউনি, মসৃণ রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। যত মানুষ তার তিন গুণ বাড়িঘর।
তারপর কত জল গড়াল। এসেছিলাম অভিবাসন নিয়ে। দুই বছর পর নাগরিক হলাম। জন্মভূমি ও ক্যাঙারুর দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় সানন্দে তা নিয়েছি। এর ভালো দিকটা হলো পৃথিবীর বহু দেশে বিনা ভিসায় ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ, নীল পাসপোর্টের খাতির বা সন্দেহের চোখে না তাকানো। মন্দ দিকও আছে। নাগরিক মানে ভোটার। আর ভোট না দিলে মোটা অঙ্কের ডলার জরিমানা।
শুরুতে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, কী-জাতীয় চাকরি পাব। কঠিন শারীরিক কাজ বা তেমন কিছু পারব না, এটা জানতাম। কয়েক মাসের ভেতরই চাকরি পেলাম ব্যাংকে। দেশের অভিজ্ঞতায় বুক দুরুদুরু করত। ইউনিয়ন যদি বদলি করিয়ে দেয় কালো চামড়া বলে কিংবা বড় সাহেবের বদনজরে পড়ে যদি কিছু হয়? দেখি পুরো বিপরীত। এরাই বলছে, তুমি কিন্তু এই এলাকার বাইরে কোনো অফিসে যাবে না কোনো দিন। রিজিওনাল কর্ত্রী এসে চুপটি করে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে কখন হাতের কাজ সেরে তাঁর সঙ্গে দু মিনিট কথা বলা যাবে। বেশির ভাগ সময়ই তা ছিল সুখবর কিংবা অভিনন্দনজাতীয় আলাপ।
একসময় দেখি এরাই জোর করে পদোন্নতি দেয়। মনোজাগতিক দুর্বলতা কাটতে কাটতে একসময় সেবা উপদেষ্টার কাজও করে ফেললাম। ১৭ বছর পর অর্ধ অবসরে এসে ভাবলাম কিছু তো করা উচিত। অনেকটা যেচেই আমাকে চাকরি দেওয়া হলো পরীক্ষকের। লেখাপড়া-সংশ্লিষ্ট এমন কাজের প্রতি চিরকালের লোভ। কিন্তু আমি ছিলাম দোদুল্যমান। ওরাই বলেছিল, এটা তোমার জন্য পারফেক্ট। এখন দেখি আসলেই তাই। গত ছয়-সাত বছর পরীক্ষকের চাকরি করি, তা-ও আবার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষকের কাজ।
আমার ছেলে এ দেশে এসেছিল তার শিশুকালে। একদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কান্না—অর্কের ভয় ছিল ভাষার। পরে ও তাদের ইংরেজি পড়িয়েছে। নিজের ইচ্ছেমতো অভিনয় জগৎ বেছে নিয়ে এ দেশের প্রথম এশিয়ান তরুণ ও বাংলাদেশি হিসেবে হলিউড সিনেমাতে অভিনয় করেছে। এখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল লিবারেল ও লেবর—উভয় দলই সম্মান জানিয়েছে তাকে। এবার অস্ট্রেলিয়া ডে উদ্যাপনে ও ছিল বিচারকের আসনে। সিডনি শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরি ছিল ও।
এই দেশের নামের অর্থ মিলনস্থল। এই অস্ট্রেলিয়া নামটি এসেছে অ্যাবরোজিনাল বা আদিবাসীদের কাছে থেকে। ৫০ হাজার বছরের অধিক যাদের ইতিহাস বলে দাবি করা হয়, তারা অবশ্য ভাষালুপ্ত এক জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজরা জানত কোন দেশে থাকা যাবে, কোন দেশে শাসন করে তারপর ফিরতে হবে। সেভাবেই সেসব দেশকে গড়ে তুলত, সাজাত বলে অস্ট্রেলিয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের মতো। এটাও ঠিক, তারা এসেছিল আর সেভাবে গড়ে তুলেছে বলেই আমরা সবাই এসেছি। নানা কারণে বসত গেড়েছি। পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট মহাদেশের বড় দেশ। এটাও দেখেছি—কথায় না, কাজে কতটা মানবিক, কতটা উদার দানে। যে পরিমাণ ডলার মানুষ দান করে, তা ভাবাও কঠিন।
একসময় দেখি এরাই জোর করে পদোন্নতি দেয়। মনোজাগতিক দুর্বলতা কাটতে কাটতে একসময় সেবা উপদেষ্টার কাজও করে ফেললাম। ১৭ বছর পর অর্ধ অবসরে এসে ভাবলাম কিছু তো করা উচিত। অনেকটা যেচেই আমাকে চাকরি দেওয়া হলো পরীক্ষকের। লেখাপড়া-সংশ্লিষ্ট এমন কাজের প্রতি চিরকালের লোভ। কিন্তু আমি ছিলাম দোদুল্যমান। ওরাই বলেছিল, এটা তোমার জন্য পারফেক্ট। এখন দেখি আসলেই তাই। গত ছয়-সাত বছর পরীক্ষকের চাকরি করি, তা-ও আবার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষকের কাজ।
আমার ছেলে এ দেশে এসেছিল তার শিশুকালে। একদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কান্না—অর্কের ভয় ছিল ভাষার। পরে ও তাদের ইংরেজি পড়িয়েছে। নিজের ইচ্ছেমতো অভিনয় জগৎ বেছে নিয়ে এ দেশের প্রথম এশিয়ান তরুণ ও বাংলাদেশি হিসেবে হলিউড সিনেমাতে অভিনয় করেছে। এখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল লিবারেল ও লেবর—উভয় দলই সম্মান জানিয়েছে তাকে। এবার অস্ট্রেলিয়া ডে উদ্যাপনে ও ছিল বিচারকের আসনে। সিডনি শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরি ছিল ও।
এই দেশের নামের অর্থ মিলনস্থল। এই অস্ট্রেলিয়া নামটি এসেছে অ্যাবরোজিনাল বা আদিবাসীদের কাছে থেকে। ৫০ হাজার বছরের অধিক যাদের ইতিহাস বলে দাবি করা হয়, তারা অবশ্য ভাষালুপ্ত এক জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজরা জানত কোন দেশে থাকা যাবে, কোন দেশে শাসন করে তারপর ফিরতে হবে। সেভাবেই সেসব দেশকে গড়ে তুলত, সাজাত বলে অস্ট্রেলিয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের মতো। এটাও ঠিক, তারা এসেছিল আর সেভাবে গড়ে তুলেছে বলেই আমরা সবাই এসেছি। নানা কারণে বসত গেড়েছি। পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট মহাদেশের বড় দেশ। এটাও দেখেছি—কথায় না, কাজে কতটা মানবিক, কতটা উদার দানে। যে পরিমাণ ডলার মানুষ দান করে, তা ভাবাও কঠিন।
আজ বেড়াতে এসে এমন এক রেস্তোরাঁয় খেলাম যারা একটি মিল বিক্রি করলেই একজন অভুক্ত মানুষের খাবারের টাকা দেয় এর মুনাফা থেকে। এ পর্যন্ত ৬ কোটির বেশি মানুষকে খাবার জুগিয়েছে ওরা। সে ছবিটি মনে গাঁথা রইল। যেকোনো কাজে ভলানটিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ। নিজের জীবন তুচ্ছ করে কোয়েলা-ক্যাঙারুর বাচ্চা বুকে নিয়ে ছোটে নারী। এমন মমতা বিরল।
আমার মতো ঠোঁটকাটা মন খুলে কথা বলা মানুষের বড় বিপদ। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনে পদে পদে থাকে অপমান। এ দেশ তা থেকে মুক্ত রেখেছে আমাকে। এখানেও বাঙালির নীচুতা যায়নি। তবে তাদের আপনি অনায়াসে এড়িয়ে বলতে পারেন,
‘মেঘেরা যা খুশি লিখে রেখে যাক
আকাশের গায়ে কখনো লাগে না দাগ।’
কোনো তদবির বা যোগাযোগ ছাড়াই আমি পেয়েছি প্রথমবারের মতো আদিবাসী ও বহুজাতিক পদক। এই সেদিন এখানকার বাঙালিরা আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের জন্মদিন উদ্যাপন করে তাক লাগিয়ে দিলেন। পোশাক, খাবার, কথা ও জীবনে উদার আধুনিক সমাজে এই দেশের জাতীয় সংগীতে আমরা গাই—
‘অস্ট্রেলিয়ান অল লেট আস রিজয়েস
ফর উই আর ওয়ান অ্যান্ড ফ্রি...’
আমি এ দেশে না এলে জানতামই না ক্ষমতা একটা তুচ্ছ বিষয়, যা একমুহূর্তে ত্যাগ করতে পারেন কোনো প্রধানমন্ত্রী। ভোট দিতে যাওয়া মানুষের পেছনে ফেউয়ের মতো ঘোরে না কোনো রাজনীতি। কৃতজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়া, তোমার ক্রিকেট, তোমার সুইমিং, তোমার রাগবি, তোমার ফুটবলের মতো সুন্দরী রমণীর মতো রমণীয় তুমি।
সিডনি যে নয়নাভিরাম শহর সেটি বাসে, ট্রেনে, ফেরিতে বা গাড়িতে চড়লেই বুঝতে পারি। সবচেয়ে বেশি দেখি দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তির পর আকাশে চক্কর মারা উড়োজাহাজটি যখন অপেরা হাউসকে পিছে ফেলে নীল জলরাশি ছুঁতে ছুঁতে মায়াবী এক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে। বলতে কোনো কুণ্ঠা নেই কোনো দিন কোথাও—লিঙ্গ-ধর্ম-বর্ণ নিয়ে প্রশ্ন না করা এই দেশ, এই শহরকে ভালোবাসি। জন্মভূমি মাঝে মাঝে অচেনা ঠেকে আজকাল। তবু সে মা আর আবাসভূমি সিডনিও প্রিয় ভূমি।
শেষ কথা এই, এ দেশের কোনো নেতাকে কোনো দিন পালাতে হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ, আজ যে রাজা, কাল নয়, আজই সে সাধারণ মানুষ। সে সাধারণত্বই তাকে বা তাদের বাঁচিয়ে দেয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এ দেশে অযথা ‘বিপ্লব বিপ্লব’ বলার দরকার পড়ে না। আর তা যদি হয়ও, কারও ‘সেফ এক্সিট’ নামে কিছুর দরকার পড়ে না। এটাই গণতন্ত্রের দেশ ও তার সৌন্দর্য।
পত্রপল্লবে শোভিত সিডনিকে কখন যে ভালোবেসে ফেলেছি, নিজেই তা জানি না।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
এ বছর পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর। আর মেলবোর্ন আছে চতুর্থ স্থানে। ২৯ বছর আগে এক ভোরবেলায় এ দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। ট্যাক্সিতে চড়ে যাওয়ার সময় ছবির মতো বাড়িঘর, সামনে বাগান, সারি সারি বৃক্ষ ও সাজানো রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল আমি কোনো সিনেমার শুটিং স্পটে এসেছি। টালির ছাউনি, মসৃণ রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। যত মানুষ তার তিন গুণ বাড়িঘর।
তারপর কত জল গড়াল। এসেছিলাম অভিবাসন নিয়ে। দুই বছর পর নাগরিক হলাম। জন্মভূমি ও ক্যাঙারুর দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় সানন্দে তা নিয়েছি। এর ভালো দিকটা হলো পৃথিবীর বহু দেশে বিনা ভিসায় ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ, নীল পাসপোর্টের খাতির বা সন্দেহের চোখে না তাকানো। মন্দ দিকও আছে। নাগরিক মানে ভোটার। আর ভোট না দিলে মোটা অঙ্কের ডলার জরিমানা।
শুরুতে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, কী-জাতীয় চাকরি পাব। কঠিন শারীরিক কাজ বা তেমন কিছু পারব না, এটা জানতাম। কয়েক মাসের ভেতরই চাকরি পেলাম ব্যাংকে। দেশের অভিজ্ঞতায় বুক দুরুদুরু করত। ইউনিয়ন যদি বদলি করিয়ে দেয় কালো চামড়া বলে কিংবা বড় সাহেবের বদনজরে পড়ে যদি কিছু হয়? দেখি পুরো বিপরীত। এরাই বলছে, তুমি কিন্তু এই এলাকার বাইরে কোনো অফিসে যাবে না কোনো দিন। রিজিওনাল কর্ত্রী এসে চুপটি করে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে কখন হাতের কাজ সেরে তাঁর সঙ্গে দু মিনিট কথা বলা যাবে। বেশির ভাগ সময়ই তা ছিল সুখবর কিংবা অভিনন্দনজাতীয় আলাপ।
একসময় দেখি এরাই জোর করে পদোন্নতি দেয়। মনোজাগতিক দুর্বলতা কাটতে কাটতে একসময় সেবা উপদেষ্টার কাজও করে ফেললাম। ১৭ বছর পর অর্ধ অবসরে এসে ভাবলাম কিছু তো করা উচিত। অনেকটা যেচেই আমাকে চাকরি দেওয়া হলো পরীক্ষকের। লেখাপড়া-সংশ্লিষ্ট এমন কাজের প্রতি চিরকালের লোভ। কিন্তু আমি ছিলাম দোদুল্যমান। ওরাই বলেছিল, এটা তোমার জন্য পারফেক্ট। এখন দেখি আসলেই তাই। গত ছয়-সাত বছর পরীক্ষকের চাকরি করি, তা-ও আবার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষকের কাজ।
আমার ছেলে এ দেশে এসেছিল তার শিশুকালে। একদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কান্না—অর্কের ভয় ছিল ভাষার। পরে ও তাদের ইংরেজি পড়িয়েছে। নিজের ইচ্ছেমতো অভিনয় জগৎ বেছে নিয়ে এ দেশের প্রথম এশিয়ান তরুণ ও বাংলাদেশি হিসেবে হলিউড সিনেমাতে অভিনয় করেছে। এখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল লিবারেল ও লেবর—উভয় দলই সম্মান জানিয়েছে তাকে। এবার অস্ট্রেলিয়া ডে উদ্যাপনে ও ছিল বিচারকের আসনে। সিডনি শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরি ছিল ও।
এই দেশের নামের অর্থ মিলনস্থল। এই অস্ট্রেলিয়া নামটি এসেছে অ্যাবরোজিনাল বা আদিবাসীদের কাছে থেকে। ৫০ হাজার বছরের অধিক যাদের ইতিহাস বলে দাবি করা হয়, তারা অবশ্য ভাষালুপ্ত এক জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজরা জানত কোন দেশে থাকা যাবে, কোন দেশে শাসন করে তারপর ফিরতে হবে। সেভাবেই সেসব দেশকে গড়ে তুলত, সাজাত বলে অস্ট্রেলিয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের মতো। এটাও ঠিক, তারা এসেছিল আর সেভাবে গড়ে তুলেছে বলেই আমরা সবাই এসেছি। নানা কারণে বসত গেড়েছি। পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট মহাদেশের বড় দেশ। এটাও দেখেছি—কথায় না, কাজে কতটা মানবিক, কতটা উদার দানে। যে পরিমাণ ডলার মানুষ দান করে, তা ভাবাও কঠিন।
একসময় দেখি এরাই জোর করে পদোন্নতি দেয়। মনোজাগতিক দুর্বলতা কাটতে কাটতে একসময় সেবা উপদেষ্টার কাজও করে ফেললাম। ১৭ বছর পর অর্ধ অবসরে এসে ভাবলাম কিছু তো করা উচিত। অনেকটা যেচেই আমাকে চাকরি দেওয়া হলো পরীক্ষকের। লেখাপড়া-সংশ্লিষ্ট এমন কাজের প্রতি চিরকালের লোভ। কিন্তু আমি ছিলাম দোদুল্যমান। ওরাই বলেছিল, এটা তোমার জন্য পারফেক্ট। এখন দেখি আসলেই তাই। গত ছয়-সাত বছর পরীক্ষকের চাকরি করি, তা-ও আবার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষকের কাজ।
আমার ছেলে এ দেশে এসেছিল তার শিশুকালে। একদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কান্না—অর্কের ভয় ছিল ভাষার। পরে ও তাদের ইংরেজি পড়িয়েছে। নিজের ইচ্ছেমতো অভিনয় জগৎ বেছে নিয়ে এ দেশের প্রথম এশিয়ান তরুণ ও বাংলাদেশি হিসেবে হলিউড সিনেমাতে অভিনয় করেছে। এখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল লিবারেল ও লেবর—উভয় দলই সম্মান জানিয়েছে তাকে। এবার অস্ট্রেলিয়া ডে উদ্যাপনে ও ছিল বিচারকের আসনে। সিডনি শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরি ছিল ও।
এই দেশের নামের অর্থ মিলনস্থল। এই অস্ট্রেলিয়া নামটি এসেছে অ্যাবরোজিনাল বা আদিবাসীদের কাছে থেকে। ৫০ হাজার বছরের অধিক যাদের ইতিহাস বলে দাবি করা হয়, তারা অবশ্য ভাষালুপ্ত এক জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজরা জানত কোন দেশে থাকা যাবে, কোন দেশে শাসন করে তারপর ফিরতে হবে। সেভাবেই সেসব দেশকে গড়ে তুলত, সাজাত বলে অস্ট্রেলিয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের মতো। এটাও ঠিক, তারা এসেছিল আর সেভাবে গড়ে তুলেছে বলেই আমরা সবাই এসেছি। নানা কারণে বসত গেড়েছি। পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট মহাদেশের বড় দেশ। এটাও দেখেছি—কথায় না, কাজে কতটা মানবিক, কতটা উদার দানে। যে পরিমাণ ডলার মানুষ দান করে, তা ভাবাও কঠিন।
আজ বেড়াতে এসে এমন এক রেস্তোরাঁয় খেলাম যারা একটি মিল বিক্রি করলেই একজন অভুক্ত মানুষের খাবারের টাকা দেয় এর মুনাফা থেকে। এ পর্যন্ত ৬ কোটির বেশি মানুষকে খাবার জুগিয়েছে ওরা। সে ছবিটি মনে গাঁথা রইল। যেকোনো কাজে ভলানটিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ। নিজের জীবন তুচ্ছ করে কোয়েলা-ক্যাঙারুর বাচ্চা বুকে নিয়ে ছোটে নারী। এমন মমতা বিরল।
আমার মতো ঠোঁটকাটা মন খুলে কথা বলা মানুষের বড় বিপদ। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনে পদে পদে থাকে অপমান। এ দেশ তা থেকে মুক্ত রেখেছে আমাকে। এখানেও বাঙালির নীচুতা যায়নি। তবে তাদের আপনি অনায়াসে এড়িয়ে বলতে পারেন,
‘মেঘেরা যা খুশি লিখে রেখে যাক
আকাশের গায়ে কখনো লাগে না দাগ।’
কোনো তদবির বা যোগাযোগ ছাড়াই আমি পেয়েছি প্রথমবারের মতো আদিবাসী ও বহুজাতিক পদক। এই সেদিন এখানকার বাঙালিরা আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের জন্মদিন উদ্যাপন করে তাক লাগিয়ে দিলেন। পোশাক, খাবার, কথা ও জীবনে উদার আধুনিক সমাজে এই দেশের জাতীয় সংগীতে আমরা গাই—
‘অস্ট্রেলিয়ান অল লেট আস রিজয়েস
ফর উই আর ওয়ান অ্যান্ড ফ্রি...’
আমি এ দেশে না এলে জানতামই না ক্ষমতা একটা তুচ্ছ বিষয়, যা একমুহূর্তে ত্যাগ করতে পারেন কোনো প্রধানমন্ত্রী। ভোট দিতে যাওয়া মানুষের পেছনে ফেউয়ের মতো ঘোরে না কোনো রাজনীতি। কৃতজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়া, তোমার ক্রিকেট, তোমার সুইমিং, তোমার রাগবি, তোমার ফুটবলের মতো সুন্দরী রমণীর মতো রমণীয় তুমি।
সিডনি যে নয়নাভিরাম শহর সেটি বাসে, ট্রেনে, ফেরিতে বা গাড়িতে চড়লেই বুঝতে পারি। সবচেয়ে বেশি দেখি দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তির পর আকাশে চক্কর মারা উড়োজাহাজটি যখন অপেরা হাউসকে পিছে ফেলে নীল জলরাশি ছুঁতে ছুঁতে মায়াবী এক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে। বলতে কোনো কুণ্ঠা নেই কোনো দিন কোথাও—লিঙ্গ-ধর্ম-বর্ণ নিয়ে প্রশ্ন না করা এই দেশ, এই শহরকে ভালোবাসি। জন্মভূমি মাঝে মাঝে অচেনা ঠেকে আজকাল। তবু সে মা আর আবাসভূমি সিডনিও প্রিয় ভূমি।
শেষ কথা এই, এ দেশের কোনো নেতাকে কোনো দিন পালাতে হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ, আজ যে রাজা, কাল নয়, আজই সে সাধারণ মানুষ। সে সাধারণত্বই তাকে বা তাদের বাঁচিয়ে দেয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এ দেশে অযথা ‘বিপ্লব বিপ্লব’ বলার দরকার পড়ে না। আর তা যদি হয়ও, কারও ‘সেফ এক্সিট’ নামে কিছুর দরকার পড়ে না। এটাই গণতন্ত্রের দেশ ও তার সৌন্দর্য।
পত্রপল্লবে শোভিত সিডনিকে কখন যে ভালোবেসে ফেলেছি, নিজেই তা জানি না।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই জাতীয় সনদ সই করা হয়েছে। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
৫ ঘণ্টা আগেহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য কমপ্লেক্সে ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে তিনটি বড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল।
৫ ঘণ্টা আগেজুলাই সনদ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা, জোট রাজনীতি, নারীনীতি, নির্বাচনী প্রতীক ইস্যু থেকে শুরু করে ফান্ডিং ও ‘মেধা বনাম কোটার’ বিতর্ক—এসব বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা..
১ দিন আগেহাসনাত কাইয়ুম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি। হাওরের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে কারাভোগ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।
১ দিন আগে