বিভুরঞ্জন সরকার

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার বছরপূর্তি সামনে রেখে ওই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়, বরং একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাষ্ট্রব্যবস্থার অবসানের জন্য পরিচালিত সংগ্রাম। কিন্তু এক বছর পর দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে, সেই সংগ্রামের কাঙ্ক্ষিত পরিণতি মেলেনি। সরকার বদলালেও ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি, বরং আগের ব্যবস্থাই এখন নতুন নেতৃত্বের হাতে পুনঃস্থাপিত হয়েছে। এই বক্তব্যে আমরা একটি হতাশা লক্ষ করি, কিন্তু সেই হতাশার গভীরে ভবিষ্যতের জন্য একধরনের দায়িত্ববোধের প্রতিফলনও দেখতে পাই। নাহিদ ইসলামের ভাষায়, ‘আমাদের লড়াইটা ছিল ব্যবস্থার সঙ্গে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে, কিন্তু ব্যবস্থার বিলোপ ঘটেনি।’ এখানে মূল সংকেত হলো—শুধু সরকার পরিবর্তন কোনো কৃতিত্ব নয়, বরং মূল কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া এই পরিবর্তন বাহ্যিক।
এই অভ্যুত্থানের সময় প্রস্তুতির অভাব ছিল, নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজন ছিল এবং সবচেয়ে বড় যে ঘাটতিটি ছিল তা হলো সংগঠন ও দর্শনের পরিষ্কার কাঠামো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল এক প্রবল শক্তি, কিন্তু সেটি কোনো সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম ছিল না। ৫ আগস্টের পর যখন এটিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করা হয়, তখনই নানা প্রতিকূলতা দেখা দেয়। নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা, কর্মসূচির অস্পষ্টতা এবং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে মাঠে রাখা যায়নি। ফলে আন্দোলনের সংগঠিত কাঠামো গড়ে ওঠেনি, বরং একেকটি গোষ্ঠী নিজ নিজ অভিপ্রায় অনুযায়ী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নাহিদ ইসলাম এখানে যে কথাটি বলেন তা আন্দোলনের প্রকৃত ব্যর্থতা: ‘জুলাইয়ের পরে প্রত্যেকে যার যার অ্যাজেন্ডায় চলে গেছে।’ এই চলে যাওয়ার পেছনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, নেতৃত্বের লড়াই এবং পুরোনো ব্যবস্থার মোহ।
নাহিদ বলেছেন, যে ঐক্যটি শুরুতে তৈরি হয়েছিল—ছাত্র, সেনাবাহিনী, কিছু রাজনৈতিক দল এবং অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি সমর্থনের এক অলিখিত সমঝোতা—তা অভ্যুত্থানের পর ভেঙে পড়ে। শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত সবাই একত্র ছিল, কিন্তু পতনের পর কেউ আর এক জায়গায় থাকেনি। ফলে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যর্থতার দায় কেবল কোনো একটি গোষ্ঠীর নয়, বরং অভ্যুত্থানের সব পক্ষের মধ্যে সামষ্টিক সমন্বয়ের অভাব এর জন্য দায়ী।
বর্তমান সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নাহিদ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তিনি মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো, কিন্তু সেই পরিস্থিতি ধরে রাখার জন্য যে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, তা অনুপস্থিত। পুলিশের সক্রিয়তা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। ৫ আগস্টের পর অনেক থানাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সক্রিয় হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সংগঠিত না রাখতে পারায় সেই গতিও থেমে যায়। সরকার যখন প্রো-অ্যাকটিভ থাকে না, তখনই আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। নাহিদ মনে করেন, যাদের ‘মব’ বলে অপমান করা হচ্ছে, তারা আসলে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা। সঠিক কর্মসূচি ও নেতৃত্ব না থাকার কারণে তারা বিভ্রান্ত হয়েছে, ব্যবহার হয়েছে। এই বাস্তবতা বুঝতে না পারলে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কিন্তু এই ‘মব’ নামক সামাজিক শক্তির বেপরোয়া আচরণ দমন না করলে পরবর্তী সময়ে এটা আরও বিস্ফোরক রূপ নিতে পারে।
এই এক বছরে অভ্যুত্থানের শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ হয়নি, পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ায় রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং শহীদ পরিবারদের অভিযোগও উপেক্ষিত থেকেছে। সরকার বাজেট বরাদ্দ দিলেও তা সরাসরি ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছায়নি। নাহিদ মনে করেন, এই দেরি ও অব্যবস্থার পেছনে রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব এবং সদিচ্ছার ঘাটতি। সরকার চাইলে তালিকাপ্রক্রিয়াটি উন্মুক্ত করে দিয়ে শহীদদের সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারত, নিখোঁজদের অবস্থান জানাতে পারত। কিন্তু তা করা হয়নি।
অভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ঐক্য ছিল, তা কেন দ্রুত ভেঙে গেল, সে প্রশ্নের উত্তরও স্পষ্ট করেছেন নাহিদ। তিনি মনে করেন, অনেকেই রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে ওঠেন। কে উপদেষ্টা হতে পারল আর কে পারল না—এই প্রশ্ন অনেকের মধ্যে ঈর্ষা তৈরি করে। আবার আন্দোলনের সময় যেসব ছাত্রসংগঠনের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি, তারাও পরে নিজেকে ঐক্যভুক্ত অংশ বলে দাবি করে। নাহিদ এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো সর্বদলীয় ঐক্য প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এরপরও তিনি ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রত্যাশার কথা বলেন, জাতির প্রয়োজনে যেন সবাই এক হতে পারে, সেই সম্পর্ক রক্ষা করে চলা উচিত।
নাহিদ ইসলাম এই মুহূর্তে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি মনে করেন, পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো এই অভ্যুত্থানের শক্তিকে ধারণ করতে পারবে না বলেই তাঁরা নতুন দল গঠন করেছেন। যদিও দলের সংগঠন এখনো পুরোপুরি মাঠে গড়ায়নি, তবু জনগণের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান। তিনি এটাও স্বীকার করেন, তাঁদের পারফরম্যান্সে সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। তাঁর মতে, নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এনসিপি নিজেরা আগে সংগঠিত হতে চায়, তার পরই নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করা হবে। নির্বাচন নিয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন ৫ আগস্টের পর, যদি এর আগে প্রতিশ্রুত ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ করা যায়।
এখানে এসে একটি গভীর প্রশ্ন সামনে আসে, জুলাই সনদ এক বছরেও কেন হয়নি? সরকার দুই দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা দিতে পারেনি। ফলে এনসিপি এখন নিজেই সেই সনদ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা একটি বিকল্প দর্শন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা দিতে চায়। তাদের ভাষায়, যদি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দিশা না দেওয়া যায়, তাহলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে।
তবে রাজনৈতিক কাঠামো গড়তে গিয়ে তাঁরা নানা বাধার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে ছাত্র উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ, নেতাদের ব্যক্তিগত অডিও ফাঁস ইত্যাদি নানা ঘটনা অভ্যুত্থানের নৈতিক ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এসব বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, শুরুতে দুর্নীতি ছিল না, কিন্তু পুরোনো ব্যবস্থার লোকেরা সুযোগ পেয়ে পুরোনো প্রক্রিয়া চালু করেছেন। অন্য ছাত্রসংগঠনের সুযোগসন্ধানী কেউ কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় ব্যবহার করে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি হয়েছে অপপ্রচার। মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের চেষ্টা হয়েছে, বিশেষ করে নারীনেত্রীদের বিরুদ্ধে। নাহিদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের একটি প্রধান নৈতিক শক্তি ছিল নারীরা। তাই নারীদের রাজপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনো চলছে।’
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থান এবং ইসলামপন্থীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে। অনেকেই তাদের একটি ইসলামপন্থী দলের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করেন। নাহিদ ইসলাম এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, এনসিপি মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে চায়। একাত্তর, ইসলাম, নারী–এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার। তিনি মনে করেন, যোগাযোগের ঘাটতি এবং একটি সংগঠিত অপপ্রচারই এই ভুল ধারণার সৃষ্টি করছে। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগ যুগের রাজনীতির ভাষা দিয়ে নতুন রাজনীতিকে বিচার করা ঠিক নয়। নাহিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি হলো, ‘সুশীল সমাজ এই গণ-অভ্যুত্থান ঘটায়নি। গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে সাধারণ ছাত্র-জনতার মাধ্যমে।’
বিএনপির ভূমিকাও এনসিপি ইতিবাচকভাবে নিতে পারছে না। তাদের মতে, বিএনপি পুরোনো বন্দোবস্তের বিপক্ষে নয় এবং শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা আওয়ামী লীগের পরিবর্তে নিজেরাই ‘নতুন আওয়ামী লীগ’ হতে চায়। তারা নিজস্ব রাজনীতি, অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং জামায়াত সম্পর্কিত অবস্থান পরিষ্কার করছে না। ফলে একটি পুরোনো ধাঁচের রাজনীতিই আবার ফিরে আসছে।
সবশেষে যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অভ্যুত্থানের এক বছরে আপনি সরকারের পারফরম্যান্সকে কত নম্বর দেবেন, তখন তিনি নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, সরকার কেবল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছে, অন্য কোনো দলের কাছ থেকে নয়। সেনাবাহিনীর কাছ থেকেও প্রত্যাশিত সমর্থন আসেনি। সরকারের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, সরকারকে বারবার পুরোনো বন্দোবস্তে ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। নাহিদ নিজে উপদেষ্টা পদ ছাড়ার পর নিজের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশ করেছেন, কোনো বিদেশ সফর করেননি। সরকারে থেকেও কোনো অনৈতিক সুযোগ গ্রহণ করেননি বলে দাবি করেন।
নাহিদের পুরো বক্তব্যের সারকথা হলো—ফ্যাসিবাদবিরোধী অভ্যুত্থান যদি একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে রূপান্তরিত না হয়, তবে তা ব্যর্থ হবে। শুধু শেখ হাসিনার পতন কোনো অর্জন নয়। নাহিদ ইসলাম যে কথাটি বলেন, সেটি এই রাজনৈতিক মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি উপলব্ধি—‘নতুন বন্দোবস্ত না হলে, আওয়ামী লীগের পতন করে কী লাভ হলো, যদি আরেকটা আওয়ামী লীগই আসে?’ এই কথাটি নিছক একটি বাক্য নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রীয় প্রশ্ন। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ করব, নাকি পুরোনো কুশাসনের পাথরে ফের মাথা ঠুকব? প্রশ্নের উত্তর এখনো সময়ের হাতে। সময়ের সময় কবে শেষ হবে, দেখার বিষয় সেটাই।
লেখক:– জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক আজকের পত্রিকা

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার বছরপূর্তি সামনে রেখে ওই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়, বরং একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাষ্ট্রব্যবস্থার অবসানের জন্য পরিচালিত সংগ্রাম। কিন্তু এক বছর পর দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে, সেই সংগ্রামের কাঙ্ক্ষিত পরিণতি মেলেনি। সরকার বদলালেও ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি, বরং আগের ব্যবস্থাই এখন নতুন নেতৃত্বের হাতে পুনঃস্থাপিত হয়েছে। এই বক্তব্যে আমরা একটি হতাশা লক্ষ করি, কিন্তু সেই হতাশার গভীরে ভবিষ্যতের জন্য একধরনের দায়িত্ববোধের প্রতিফলনও দেখতে পাই। নাহিদ ইসলামের ভাষায়, ‘আমাদের লড়াইটা ছিল ব্যবস্থার সঙ্গে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে, কিন্তু ব্যবস্থার বিলোপ ঘটেনি।’ এখানে মূল সংকেত হলো—শুধু সরকার পরিবর্তন কোনো কৃতিত্ব নয়, বরং মূল কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া এই পরিবর্তন বাহ্যিক।
এই অভ্যুত্থানের সময় প্রস্তুতির অভাব ছিল, নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজন ছিল এবং সবচেয়ে বড় যে ঘাটতিটি ছিল তা হলো সংগঠন ও দর্শনের পরিষ্কার কাঠামো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল এক প্রবল শক্তি, কিন্তু সেটি কোনো সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম ছিল না। ৫ আগস্টের পর যখন এটিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করা হয়, তখনই নানা প্রতিকূলতা দেখা দেয়। নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা, কর্মসূচির অস্পষ্টতা এবং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে মাঠে রাখা যায়নি। ফলে আন্দোলনের সংগঠিত কাঠামো গড়ে ওঠেনি, বরং একেকটি গোষ্ঠী নিজ নিজ অভিপ্রায় অনুযায়ী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নাহিদ ইসলাম এখানে যে কথাটি বলেন তা আন্দোলনের প্রকৃত ব্যর্থতা: ‘জুলাইয়ের পরে প্রত্যেকে যার যার অ্যাজেন্ডায় চলে গেছে।’ এই চলে যাওয়ার পেছনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, নেতৃত্বের লড়াই এবং পুরোনো ব্যবস্থার মোহ।
নাহিদ বলেছেন, যে ঐক্যটি শুরুতে তৈরি হয়েছিল—ছাত্র, সেনাবাহিনী, কিছু রাজনৈতিক দল এবং অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি সমর্থনের এক অলিখিত সমঝোতা—তা অভ্যুত্থানের পর ভেঙে পড়ে। শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত সবাই একত্র ছিল, কিন্তু পতনের পর কেউ আর এক জায়গায় থাকেনি। ফলে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যর্থতার দায় কেবল কোনো একটি গোষ্ঠীর নয়, বরং অভ্যুত্থানের সব পক্ষের মধ্যে সামষ্টিক সমন্বয়ের অভাব এর জন্য দায়ী।
বর্তমান সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নাহিদ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তিনি মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো, কিন্তু সেই পরিস্থিতি ধরে রাখার জন্য যে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, তা অনুপস্থিত। পুলিশের সক্রিয়তা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। ৫ আগস্টের পর অনেক থানাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সক্রিয় হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সংগঠিত না রাখতে পারায় সেই গতিও থেমে যায়। সরকার যখন প্রো-অ্যাকটিভ থাকে না, তখনই আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। নাহিদ মনে করেন, যাদের ‘মব’ বলে অপমান করা হচ্ছে, তারা আসলে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা। সঠিক কর্মসূচি ও নেতৃত্ব না থাকার কারণে তারা বিভ্রান্ত হয়েছে, ব্যবহার হয়েছে। এই বাস্তবতা বুঝতে না পারলে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কিন্তু এই ‘মব’ নামক সামাজিক শক্তির বেপরোয়া আচরণ দমন না করলে পরবর্তী সময়ে এটা আরও বিস্ফোরক রূপ নিতে পারে।
এই এক বছরে অভ্যুত্থানের শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ হয়নি, পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ায় রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং শহীদ পরিবারদের অভিযোগও উপেক্ষিত থেকেছে। সরকার বাজেট বরাদ্দ দিলেও তা সরাসরি ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছায়নি। নাহিদ মনে করেন, এই দেরি ও অব্যবস্থার পেছনে রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব এবং সদিচ্ছার ঘাটতি। সরকার চাইলে তালিকাপ্রক্রিয়াটি উন্মুক্ত করে দিয়ে শহীদদের সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারত, নিখোঁজদের অবস্থান জানাতে পারত। কিন্তু তা করা হয়নি।
অভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ঐক্য ছিল, তা কেন দ্রুত ভেঙে গেল, সে প্রশ্নের উত্তরও স্পষ্ট করেছেন নাহিদ। তিনি মনে করেন, অনেকেই রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে ওঠেন। কে উপদেষ্টা হতে পারল আর কে পারল না—এই প্রশ্ন অনেকের মধ্যে ঈর্ষা তৈরি করে। আবার আন্দোলনের সময় যেসব ছাত্রসংগঠনের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি, তারাও পরে নিজেকে ঐক্যভুক্ত অংশ বলে দাবি করে। নাহিদ এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো সর্বদলীয় ঐক্য প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এরপরও তিনি ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রত্যাশার কথা বলেন, জাতির প্রয়োজনে যেন সবাই এক হতে পারে, সেই সম্পর্ক রক্ষা করে চলা উচিত।
নাহিদ ইসলাম এই মুহূর্তে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি মনে করেন, পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো এই অভ্যুত্থানের শক্তিকে ধারণ করতে পারবে না বলেই তাঁরা নতুন দল গঠন করেছেন। যদিও দলের সংগঠন এখনো পুরোপুরি মাঠে গড়ায়নি, তবু জনগণের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান। তিনি এটাও স্বীকার করেন, তাঁদের পারফরম্যান্সে সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। তাঁর মতে, নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এনসিপি নিজেরা আগে সংগঠিত হতে চায়, তার পরই নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করা হবে। নির্বাচন নিয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন ৫ আগস্টের পর, যদি এর আগে প্রতিশ্রুত ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ করা যায়।
এখানে এসে একটি গভীর প্রশ্ন সামনে আসে, জুলাই সনদ এক বছরেও কেন হয়নি? সরকার দুই দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা দিতে পারেনি। ফলে এনসিপি এখন নিজেই সেই সনদ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা একটি বিকল্প দর্শন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা দিতে চায়। তাদের ভাষায়, যদি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দিশা না দেওয়া যায়, তাহলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে।
তবে রাজনৈতিক কাঠামো গড়তে গিয়ে তাঁরা নানা বাধার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে ছাত্র উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ, নেতাদের ব্যক্তিগত অডিও ফাঁস ইত্যাদি নানা ঘটনা অভ্যুত্থানের নৈতিক ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এসব বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, শুরুতে দুর্নীতি ছিল না, কিন্তু পুরোনো ব্যবস্থার লোকেরা সুযোগ পেয়ে পুরোনো প্রক্রিয়া চালু করেছেন। অন্য ছাত্রসংগঠনের সুযোগসন্ধানী কেউ কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় ব্যবহার করে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি হয়েছে অপপ্রচার। মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের চেষ্টা হয়েছে, বিশেষ করে নারীনেত্রীদের বিরুদ্ধে। নাহিদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের একটি প্রধান নৈতিক শক্তি ছিল নারীরা। তাই নারীদের রাজপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনো চলছে।’
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থান এবং ইসলামপন্থীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে। অনেকেই তাদের একটি ইসলামপন্থী দলের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করেন। নাহিদ ইসলাম এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, এনসিপি মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে চায়। একাত্তর, ইসলাম, নারী–এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার। তিনি মনে করেন, যোগাযোগের ঘাটতি এবং একটি সংগঠিত অপপ্রচারই এই ভুল ধারণার সৃষ্টি করছে। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগ যুগের রাজনীতির ভাষা দিয়ে নতুন রাজনীতিকে বিচার করা ঠিক নয়। নাহিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি হলো, ‘সুশীল সমাজ এই গণ-অভ্যুত্থান ঘটায়নি। গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে সাধারণ ছাত্র-জনতার মাধ্যমে।’
বিএনপির ভূমিকাও এনসিপি ইতিবাচকভাবে নিতে পারছে না। তাদের মতে, বিএনপি পুরোনো বন্দোবস্তের বিপক্ষে নয় এবং শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা আওয়ামী লীগের পরিবর্তে নিজেরাই ‘নতুন আওয়ামী লীগ’ হতে চায়। তারা নিজস্ব রাজনীতি, অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং জামায়াত সম্পর্কিত অবস্থান পরিষ্কার করছে না। ফলে একটি পুরোনো ধাঁচের রাজনীতিই আবার ফিরে আসছে।
সবশেষে যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অভ্যুত্থানের এক বছরে আপনি সরকারের পারফরম্যান্সকে কত নম্বর দেবেন, তখন তিনি নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, সরকার কেবল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছে, অন্য কোনো দলের কাছ থেকে নয়। সেনাবাহিনীর কাছ থেকেও প্রত্যাশিত সমর্থন আসেনি। সরকারের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, সরকারকে বারবার পুরোনো বন্দোবস্তে ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। নাহিদ নিজে উপদেষ্টা পদ ছাড়ার পর নিজের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশ করেছেন, কোনো বিদেশ সফর করেননি। সরকারে থেকেও কোনো অনৈতিক সুযোগ গ্রহণ করেননি বলে দাবি করেন।
নাহিদের পুরো বক্তব্যের সারকথা হলো—ফ্যাসিবাদবিরোধী অভ্যুত্থান যদি একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে রূপান্তরিত না হয়, তবে তা ব্যর্থ হবে। শুধু শেখ হাসিনার পতন কোনো অর্জন নয়। নাহিদ ইসলাম যে কথাটি বলেন, সেটি এই রাজনৈতিক মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি উপলব্ধি—‘নতুন বন্দোবস্ত না হলে, আওয়ামী লীগের পতন করে কী লাভ হলো, যদি আরেকটা আওয়ামী লীগই আসে?’ এই কথাটি নিছক একটি বাক্য নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রীয় প্রশ্ন। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ করব, নাকি পুরোনো কুশাসনের পাথরে ফের মাথা ঠুকব? প্রশ্নের উত্তর এখনো সময়ের হাতে। সময়ের সময় কবে শেষ হবে, দেখার বিষয় সেটাই।
লেখক:– জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক আজকের পত্রিকা
বিভুরঞ্জন সরকার

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার বছরপূর্তি সামনে রেখে ওই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়, বরং একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাষ্ট্রব্যবস্থার অবসানের জন্য পরিচালিত সংগ্রাম। কিন্তু এক বছর পর দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে, সেই সংগ্রামের কাঙ্ক্ষিত পরিণতি মেলেনি। সরকার বদলালেও ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি, বরং আগের ব্যবস্থাই এখন নতুন নেতৃত্বের হাতে পুনঃস্থাপিত হয়েছে। এই বক্তব্যে আমরা একটি হতাশা লক্ষ করি, কিন্তু সেই হতাশার গভীরে ভবিষ্যতের জন্য একধরনের দায়িত্ববোধের প্রতিফলনও দেখতে পাই। নাহিদ ইসলামের ভাষায়, ‘আমাদের লড়াইটা ছিল ব্যবস্থার সঙ্গে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে, কিন্তু ব্যবস্থার বিলোপ ঘটেনি।’ এখানে মূল সংকেত হলো—শুধু সরকার পরিবর্তন কোনো কৃতিত্ব নয়, বরং মূল কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া এই পরিবর্তন বাহ্যিক।
এই অভ্যুত্থানের সময় প্রস্তুতির অভাব ছিল, নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজন ছিল এবং সবচেয়ে বড় যে ঘাটতিটি ছিল তা হলো সংগঠন ও দর্শনের পরিষ্কার কাঠামো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল এক প্রবল শক্তি, কিন্তু সেটি কোনো সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম ছিল না। ৫ আগস্টের পর যখন এটিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করা হয়, তখনই নানা প্রতিকূলতা দেখা দেয়। নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা, কর্মসূচির অস্পষ্টতা এবং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে মাঠে রাখা যায়নি। ফলে আন্দোলনের সংগঠিত কাঠামো গড়ে ওঠেনি, বরং একেকটি গোষ্ঠী নিজ নিজ অভিপ্রায় অনুযায়ী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নাহিদ ইসলাম এখানে যে কথাটি বলেন তা আন্দোলনের প্রকৃত ব্যর্থতা: ‘জুলাইয়ের পরে প্রত্যেকে যার যার অ্যাজেন্ডায় চলে গেছে।’ এই চলে যাওয়ার পেছনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, নেতৃত্বের লড়াই এবং পুরোনো ব্যবস্থার মোহ।
নাহিদ বলেছেন, যে ঐক্যটি শুরুতে তৈরি হয়েছিল—ছাত্র, সেনাবাহিনী, কিছু রাজনৈতিক দল এবং অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি সমর্থনের এক অলিখিত সমঝোতা—তা অভ্যুত্থানের পর ভেঙে পড়ে। শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত সবাই একত্র ছিল, কিন্তু পতনের পর কেউ আর এক জায়গায় থাকেনি। ফলে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যর্থতার দায় কেবল কোনো একটি গোষ্ঠীর নয়, বরং অভ্যুত্থানের সব পক্ষের মধ্যে সামষ্টিক সমন্বয়ের অভাব এর জন্য দায়ী।
বর্তমান সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নাহিদ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তিনি মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো, কিন্তু সেই পরিস্থিতি ধরে রাখার জন্য যে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, তা অনুপস্থিত। পুলিশের সক্রিয়তা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। ৫ আগস্টের পর অনেক থানাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সক্রিয় হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সংগঠিত না রাখতে পারায় সেই গতিও থেমে যায়। সরকার যখন প্রো-অ্যাকটিভ থাকে না, তখনই আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। নাহিদ মনে করেন, যাদের ‘মব’ বলে অপমান করা হচ্ছে, তারা আসলে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা। সঠিক কর্মসূচি ও নেতৃত্ব না থাকার কারণে তারা বিভ্রান্ত হয়েছে, ব্যবহার হয়েছে। এই বাস্তবতা বুঝতে না পারলে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কিন্তু এই ‘মব’ নামক সামাজিক শক্তির বেপরোয়া আচরণ দমন না করলে পরবর্তী সময়ে এটা আরও বিস্ফোরক রূপ নিতে পারে।
এই এক বছরে অভ্যুত্থানের শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ হয়নি, পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ায় রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং শহীদ পরিবারদের অভিযোগও উপেক্ষিত থেকেছে। সরকার বাজেট বরাদ্দ দিলেও তা সরাসরি ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছায়নি। নাহিদ মনে করেন, এই দেরি ও অব্যবস্থার পেছনে রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব এবং সদিচ্ছার ঘাটতি। সরকার চাইলে তালিকাপ্রক্রিয়াটি উন্মুক্ত করে দিয়ে শহীদদের সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারত, নিখোঁজদের অবস্থান জানাতে পারত। কিন্তু তা করা হয়নি।
অভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ঐক্য ছিল, তা কেন দ্রুত ভেঙে গেল, সে প্রশ্নের উত্তরও স্পষ্ট করেছেন নাহিদ। তিনি মনে করেন, অনেকেই রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে ওঠেন। কে উপদেষ্টা হতে পারল আর কে পারল না—এই প্রশ্ন অনেকের মধ্যে ঈর্ষা তৈরি করে। আবার আন্দোলনের সময় যেসব ছাত্রসংগঠনের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি, তারাও পরে নিজেকে ঐক্যভুক্ত অংশ বলে দাবি করে। নাহিদ এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো সর্বদলীয় ঐক্য প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এরপরও তিনি ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রত্যাশার কথা বলেন, জাতির প্রয়োজনে যেন সবাই এক হতে পারে, সেই সম্পর্ক রক্ষা করে চলা উচিত।
নাহিদ ইসলাম এই মুহূর্তে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি মনে করেন, পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো এই অভ্যুত্থানের শক্তিকে ধারণ করতে পারবে না বলেই তাঁরা নতুন দল গঠন করেছেন। যদিও দলের সংগঠন এখনো পুরোপুরি মাঠে গড়ায়নি, তবু জনগণের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান। তিনি এটাও স্বীকার করেন, তাঁদের পারফরম্যান্সে সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। তাঁর মতে, নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এনসিপি নিজেরা আগে সংগঠিত হতে চায়, তার পরই নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করা হবে। নির্বাচন নিয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন ৫ আগস্টের পর, যদি এর আগে প্রতিশ্রুত ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ করা যায়।
এখানে এসে একটি গভীর প্রশ্ন সামনে আসে, জুলাই সনদ এক বছরেও কেন হয়নি? সরকার দুই দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা দিতে পারেনি। ফলে এনসিপি এখন নিজেই সেই সনদ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা একটি বিকল্প দর্শন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা দিতে চায়। তাদের ভাষায়, যদি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দিশা না দেওয়া যায়, তাহলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে।
তবে রাজনৈতিক কাঠামো গড়তে গিয়ে তাঁরা নানা বাধার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে ছাত্র উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ, নেতাদের ব্যক্তিগত অডিও ফাঁস ইত্যাদি নানা ঘটনা অভ্যুত্থানের নৈতিক ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এসব বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, শুরুতে দুর্নীতি ছিল না, কিন্তু পুরোনো ব্যবস্থার লোকেরা সুযোগ পেয়ে পুরোনো প্রক্রিয়া চালু করেছেন। অন্য ছাত্রসংগঠনের সুযোগসন্ধানী কেউ কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় ব্যবহার করে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি হয়েছে অপপ্রচার। মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের চেষ্টা হয়েছে, বিশেষ করে নারীনেত্রীদের বিরুদ্ধে। নাহিদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের একটি প্রধান নৈতিক শক্তি ছিল নারীরা। তাই নারীদের রাজপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনো চলছে।’
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থান এবং ইসলামপন্থীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে। অনেকেই তাদের একটি ইসলামপন্থী দলের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করেন। নাহিদ ইসলাম এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, এনসিপি মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে চায়। একাত্তর, ইসলাম, নারী–এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার। তিনি মনে করেন, যোগাযোগের ঘাটতি এবং একটি সংগঠিত অপপ্রচারই এই ভুল ধারণার সৃষ্টি করছে। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগ যুগের রাজনীতির ভাষা দিয়ে নতুন রাজনীতিকে বিচার করা ঠিক নয়। নাহিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি হলো, ‘সুশীল সমাজ এই গণ-অভ্যুত্থান ঘটায়নি। গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে সাধারণ ছাত্র-জনতার মাধ্যমে।’
বিএনপির ভূমিকাও এনসিপি ইতিবাচকভাবে নিতে পারছে না। তাদের মতে, বিএনপি পুরোনো বন্দোবস্তের বিপক্ষে নয় এবং শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা আওয়ামী লীগের পরিবর্তে নিজেরাই ‘নতুন আওয়ামী লীগ’ হতে চায়। তারা নিজস্ব রাজনীতি, অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং জামায়াত সম্পর্কিত অবস্থান পরিষ্কার করছে না। ফলে একটি পুরোনো ধাঁচের রাজনীতিই আবার ফিরে আসছে।
সবশেষে যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অভ্যুত্থানের এক বছরে আপনি সরকারের পারফরম্যান্সকে কত নম্বর দেবেন, তখন তিনি নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, সরকার কেবল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছে, অন্য কোনো দলের কাছ থেকে নয়। সেনাবাহিনীর কাছ থেকেও প্রত্যাশিত সমর্থন আসেনি। সরকারের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, সরকারকে বারবার পুরোনো বন্দোবস্তে ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। নাহিদ নিজে উপদেষ্টা পদ ছাড়ার পর নিজের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশ করেছেন, কোনো বিদেশ সফর করেননি। সরকারে থেকেও কোনো অনৈতিক সুযোগ গ্রহণ করেননি বলে দাবি করেন।
নাহিদের পুরো বক্তব্যের সারকথা হলো—ফ্যাসিবাদবিরোধী অভ্যুত্থান যদি একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে রূপান্তরিত না হয়, তবে তা ব্যর্থ হবে। শুধু শেখ হাসিনার পতন কোনো অর্জন নয়। নাহিদ ইসলাম যে কথাটি বলেন, সেটি এই রাজনৈতিক মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি উপলব্ধি—‘নতুন বন্দোবস্ত না হলে, আওয়ামী লীগের পতন করে কী লাভ হলো, যদি আরেকটা আওয়ামী লীগই আসে?’ এই কথাটি নিছক একটি বাক্য নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রীয় প্রশ্ন। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ করব, নাকি পুরোনো কুশাসনের পাথরে ফের মাথা ঠুকব? প্রশ্নের উত্তর এখনো সময়ের হাতে। সময়ের সময় কবে শেষ হবে, দেখার বিষয় সেটাই।
লেখক:– জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক আজকের পত্রিকা

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার বছরপূর্তি সামনে রেখে ওই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়, বরং একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাষ্ট্রব্যবস্থার অবসানের জন্য পরিচালিত সংগ্রাম। কিন্তু এক বছর পর দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে, সেই সংগ্রামের কাঙ্ক্ষিত পরিণতি মেলেনি। সরকার বদলালেও ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি, বরং আগের ব্যবস্থাই এখন নতুন নেতৃত্বের হাতে পুনঃস্থাপিত হয়েছে। এই বক্তব্যে আমরা একটি হতাশা লক্ষ করি, কিন্তু সেই হতাশার গভীরে ভবিষ্যতের জন্য একধরনের দায়িত্ববোধের প্রতিফলনও দেখতে পাই। নাহিদ ইসলামের ভাষায়, ‘আমাদের লড়াইটা ছিল ব্যবস্থার সঙ্গে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে, কিন্তু ব্যবস্থার বিলোপ ঘটেনি।’ এখানে মূল সংকেত হলো—শুধু সরকার পরিবর্তন কোনো কৃতিত্ব নয়, বরং মূল কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া এই পরিবর্তন বাহ্যিক।
এই অভ্যুত্থানের সময় প্রস্তুতির অভাব ছিল, নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজন ছিল এবং সবচেয়ে বড় যে ঘাটতিটি ছিল তা হলো সংগঠন ও দর্শনের পরিষ্কার কাঠামো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল এক প্রবল শক্তি, কিন্তু সেটি কোনো সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম ছিল না। ৫ আগস্টের পর যখন এটিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করা হয়, তখনই নানা প্রতিকূলতা দেখা দেয়। নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা, কর্মসূচির অস্পষ্টতা এবং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে মাঠে রাখা যায়নি। ফলে আন্দোলনের সংগঠিত কাঠামো গড়ে ওঠেনি, বরং একেকটি গোষ্ঠী নিজ নিজ অভিপ্রায় অনুযায়ী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নাহিদ ইসলাম এখানে যে কথাটি বলেন তা আন্দোলনের প্রকৃত ব্যর্থতা: ‘জুলাইয়ের পরে প্রত্যেকে যার যার অ্যাজেন্ডায় চলে গেছে।’ এই চলে যাওয়ার পেছনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, নেতৃত্বের লড়াই এবং পুরোনো ব্যবস্থার মোহ।
নাহিদ বলেছেন, যে ঐক্যটি শুরুতে তৈরি হয়েছিল—ছাত্র, সেনাবাহিনী, কিছু রাজনৈতিক দল এবং অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি সমর্থনের এক অলিখিত সমঝোতা—তা অভ্যুত্থানের পর ভেঙে পড়ে। শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত সবাই একত্র ছিল, কিন্তু পতনের পর কেউ আর এক জায়গায় থাকেনি। ফলে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যর্থতার দায় কেবল কোনো একটি গোষ্ঠীর নয়, বরং অভ্যুত্থানের সব পক্ষের মধ্যে সামষ্টিক সমন্বয়ের অভাব এর জন্য দায়ী।
বর্তমান সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নাহিদ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তিনি মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো, কিন্তু সেই পরিস্থিতি ধরে রাখার জন্য যে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, তা অনুপস্থিত। পুলিশের সক্রিয়তা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। ৫ আগস্টের পর অনেক থানাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সক্রিয় হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সংগঠিত না রাখতে পারায় সেই গতিও থেমে যায়। সরকার যখন প্রো-অ্যাকটিভ থাকে না, তখনই আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। নাহিদ মনে করেন, যাদের ‘মব’ বলে অপমান করা হচ্ছে, তারা আসলে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা। সঠিক কর্মসূচি ও নেতৃত্ব না থাকার কারণে তারা বিভ্রান্ত হয়েছে, ব্যবহার হয়েছে। এই বাস্তবতা বুঝতে না পারলে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কিন্তু এই ‘মব’ নামক সামাজিক শক্তির বেপরোয়া আচরণ দমন না করলে পরবর্তী সময়ে এটা আরও বিস্ফোরক রূপ নিতে পারে।
এই এক বছরে অভ্যুত্থানের শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ হয়নি, পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ায় রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং শহীদ পরিবারদের অভিযোগও উপেক্ষিত থেকেছে। সরকার বাজেট বরাদ্দ দিলেও তা সরাসরি ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছায়নি। নাহিদ মনে করেন, এই দেরি ও অব্যবস্থার পেছনে রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব এবং সদিচ্ছার ঘাটতি। সরকার চাইলে তালিকাপ্রক্রিয়াটি উন্মুক্ত করে দিয়ে শহীদদের সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারত, নিখোঁজদের অবস্থান জানাতে পারত। কিন্তু তা করা হয়নি।
অভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ঐক্য ছিল, তা কেন দ্রুত ভেঙে গেল, সে প্রশ্নের উত্তরও স্পষ্ট করেছেন নাহিদ। তিনি মনে করেন, অনেকেই রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে ওঠেন। কে উপদেষ্টা হতে পারল আর কে পারল না—এই প্রশ্ন অনেকের মধ্যে ঈর্ষা তৈরি করে। আবার আন্দোলনের সময় যেসব ছাত্রসংগঠনের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি, তারাও পরে নিজেকে ঐক্যভুক্ত অংশ বলে দাবি করে। নাহিদ এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো সর্বদলীয় ঐক্য প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এরপরও তিনি ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রত্যাশার কথা বলেন, জাতির প্রয়োজনে যেন সবাই এক হতে পারে, সেই সম্পর্ক রক্ষা করে চলা উচিত।
নাহিদ ইসলাম এই মুহূর্তে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি মনে করেন, পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো এই অভ্যুত্থানের শক্তিকে ধারণ করতে পারবে না বলেই তাঁরা নতুন দল গঠন করেছেন। যদিও দলের সংগঠন এখনো পুরোপুরি মাঠে গড়ায়নি, তবু জনগণের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান। তিনি এটাও স্বীকার করেন, তাঁদের পারফরম্যান্সে সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। তাঁর মতে, নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এনসিপি নিজেরা আগে সংগঠিত হতে চায়, তার পরই নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করা হবে। নির্বাচন নিয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন ৫ আগস্টের পর, যদি এর আগে প্রতিশ্রুত ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ করা যায়।
এখানে এসে একটি গভীর প্রশ্ন সামনে আসে, জুলাই সনদ এক বছরেও কেন হয়নি? সরকার দুই দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা দিতে পারেনি। ফলে এনসিপি এখন নিজেই সেই সনদ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা একটি বিকল্প দর্শন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা দিতে চায়। তাদের ভাষায়, যদি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দিশা না দেওয়া যায়, তাহলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে।
তবে রাজনৈতিক কাঠামো গড়তে গিয়ে তাঁরা নানা বাধার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে ছাত্র উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ, নেতাদের ব্যক্তিগত অডিও ফাঁস ইত্যাদি নানা ঘটনা অভ্যুত্থানের নৈতিক ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এসব বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, শুরুতে দুর্নীতি ছিল না, কিন্তু পুরোনো ব্যবস্থার লোকেরা সুযোগ পেয়ে পুরোনো প্রক্রিয়া চালু করেছেন। অন্য ছাত্রসংগঠনের সুযোগসন্ধানী কেউ কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় ব্যবহার করে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি হয়েছে অপপ্রচার। মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের চেষ্টা হয়েছে, বিশেষ করে নারীনেত্রীদের বিরুদ্ধে। নাহিদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের একটি প্রধান নৈতিক শক্তি ছিল নারীরা। তাই নারীদের রাজপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনো চলছে।’
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থান এবং ইসলামপন্থীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে। অনেকেই তাদের একটি ইসলামপন্থী দলের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করেন। নাহিদ ইসলাম এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, এনসিপি মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে চায়। একাত্তর, ইসলাম, নারী–এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার। তিনি মনে করেন, যোগাযোগের ঘাটতি এবং একটি সংগঠিত অপপ্রচারই এই ভুল ধারণার সৃষ্টি করছে। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগ যুগের রাজনীতির ভাষা দিয়ে নতুন রাজনীতিকে বিচার করা ঠিক নয়। নাহিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি হলো, ‘সুশীল সমাজ এই গণ-অভ্যুত্থান ঘটায়নি। গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে সাধারণ ছাত্র-জনতার মাধ্যমে।’
বিএনপির ভূমিকাও এনসিপি ইতিবাচকভাবে নিতে পারছে না। তাদের মতে, বিএনপি পুরোনো বন্দোবস্তের বিপক্ষে নয় এবং শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা আওয়ামী লীগের পরিবর্তে নিজেরাই ‘নতুন আওয়ামী লীগ’ হতে চায়। তারা নিজস্ব রাজনীতি, অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং জামায়াত সম্পর্কিত অবস্থান পরিষ্কার করছে না। ফলে একটি পুরোনো ধাঁচের রাজনীতিই আবার ফিরে আসছে।
সবশেষে যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অভ্যুত্থানের এক বছরে আপনি সরকারের পারফরম্যান্সকে কত নম্বর দেবেন, তখন তিনি নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, সরকার কেবল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছে, অন্য কোনো দলের কাছ থেকে নয়। সেনাবাহিনীর কাছ থেকেও প্রত্যাশিত সমর্থন আসেনি। সরকারের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, সরকারকে বারবার পুরোনো বন্দোবস্তে ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। নাহিদ নিজে উপদেষ্টা পদ ছাড়ার পর নিজের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশ করেছেন, কোনো বিদেশ সফর করেননি। সরকারে থেকেও কোনো অনৈতিক সুযোগ গ্রহণ করেননি বলে দাবি করেন।
নাহিদের পুরো বক্তব্যের সারকথা হলো—ফ্যাসিবাদবিরোধী অভ্যুত্থান যদি একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে রূপান্তরিত না হয়, তবে তা ব্যর্থ হবে। শুধু শেখ হাসিনার পতন কোনো অর্জন নয়। নাহিদ ইসলাম যে কথাটি বলেন, সেটি এই রাজনৈতিক মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি উপলব্ধি—‘নতুন বন্দোবস্ত না হলে, আওয়ামী লীগের পতন করে কী লাভ হলো, যদি আরেকটা আওয়ামী লীগই আসে?’ এই কথাটি নিছক একটি বাক্য নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রীয় প্রশ্ন। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ করব, নাকি পুরোনো কুশাসনের পাথরে ফের মাথা ঠুকব? প্রশ্নের উত্তর এখনো সময়ের হাতে। সময়ের সময় কবে শেষ হবে, দেখার বিষয় সেটাই।
লেখক:– জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক আজকের পত্রিকা

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৯ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
২০ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
২০ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
২০ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার বছরপূর্তি সামনে রেখে ওই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়,
০৩ জুলাই ২০২৫
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
২০ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
২০ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
২০ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ এক্সিটের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। আর এবার তো জানা গেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দৃষ্টিতে দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নামধামের তালিকাই নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওই দিন সেই তালিকা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়নি। প্রয়োজন হলে পরে দেবে। এবার শুধু বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কয়েকজন উপদেষ্টা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।
শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলারও, যাঁরা তাদের দৃষ্টিতে কোনো না কোনো দলের হয়ে, বিশেষত বিএনপির হয়ে কাজ করছেন। আর বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতারা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই বিএনপির। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত বলেছে, নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে রদবদল আনতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আরও অভিযোগ, বিএনপি রাজনৈতিক চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হলেও এখন জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।
এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। শাপলা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না, তার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, সেই দায়ও সরকারের ওপরই পড়বে।
উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপিরও। জামায়াত ও এনসিপির এক দিন আগে, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে তারাও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কারও নাম উল্লেখ না করেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তাঁরা তখনই তাতে রাজি হননি। উপদেষ্টাদের ছাড়াও প্রশাসন নিয়েও অন্য দুই দলের মতোই উদ্বেগ আছে বিএনপিরও। মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা এই বলে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের প্রায় ৫০ ভাগ ফ্যাসিস্টের দোসর।
তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’
তা প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, যেখানে সব দলের কাছেই উপদেষ্টাদের (সবার নয়) এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে উল্লেখ করে যখন প্রকাশ্যে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিশ্চিন্তে নিশ্চিত থাকতে পারে! তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই তো দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন আরও একটু শক্ত কথা—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’ সরকার ভাবতে পারে যে এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বাহাস। এটা নিয়ে তাদের অতটা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বাহাসগুলো তো রাজনৈতিক বাস্তবতা। এগুলো তো রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তারপর উল্লেখ করা যায় মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে সম্পর্কে এনসিপির প্রতিক্রিয়ার কথা। এনসিপি বলল হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শটি দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি তাদের ম্যান্ডেট। অথচ বিএনপির বক্তব্যটি ছিল—নিরপেক্ষতার নিরিখে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে।
এইসব রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছাড়াও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। যেমন জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া। বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ছাড়া এই তিনটি দলের কাছেই (হয়তো আরও অনেক দলের কাছে) সাধারণ ইস্যু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় প্রতিটি দল চায় না। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই ভূমিকা নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রতীয়মান হওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জই বটে।

না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ এক্সিটের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। আর এবার তো জানা গেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দৃষ্টিতে দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নামধামের তালিকাই নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওই দিন সেই তালিকা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়নি। প্রয়োজন হলে পরে দেবে। এবার শুধু বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কয়েকজন উপদেষ্টা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।
শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলারও, যাঁরা তাদের দৃষ্টিতে কোনো না কোনো দলের হয়ে, বিশেষত বিএনপির হয়ে কাজ করছেন। আর বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতারা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই বিএনপির। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত বলেছে, নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে রদবদল আনতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আরও অভিযোগ, বিএনপি রাজনৈতিক চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হলেও এখন জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।
এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। শাপলা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না, তার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, সেই দায়ও সরকারের ওপরই পড়বে।
উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপিরও। জামায়াত ও এনসিপির এক দিন আগে, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে তারাও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কারও নাম উল্লেখ না করেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তাঁরা তখনই তাতে রাজি হননি। উপদেষ্টাদের ছাড়াও প্রশাসন নিয়েও অন্য দুই দলের মতোই উদ্বেগ আছে বিএনপিরও। মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা এই বলে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের প্রায় ৫০ ভাগ ফ্যাসিস্টের দোসর।
তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’
তা প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, যেখানে সব দলের কাছেই উপদেষ্টাদের (সবার নয়) এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে উল্লেখ করে যখন প্রকাশ্যে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিশ্চিন্তে নিশ্চিত থাকতে পারে! তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই তো দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন আরও একটু শক্ত কথা—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’ সরকার ভাবতে পারে যে এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বাহাস। এটা নিয়ে তাদের অতটা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বাহাসগুলো তো রাজনৈতিক বাস্তবতা। এগুলো তো রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তারপর উল্লেখ করা যায় মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে সম্পর্কে এনসিপির প্রতিক্রিয়ার কথা। এনসিপি বলল হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শটি দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি তাদের ম্যান্ডেট। অথচ বিএনপির বক্তব্যটি ছিল—নিরপেক্ষতার নিরিখে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে।
এইসব রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছাড়াও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। যেমন জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া। বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ছাড়া এই তিনটি দলের কাছেই (হয়তো আরও অনেক দলের কাছে) সাধারণ ইস্যু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় প্রতিটি দল চায় না। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই ভূমিকা নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রতীয়মান হওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জই বটে।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার বছরপূর্তি সামনে রেখে ওই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়,
০৩ জুলাই ২০২৫
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৯ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
২০ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
২০ ঘণ্টা আগেহেনা শিকদার

সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি। এমন এক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে সম্পর্কটি, মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে—বন্ধুত্ব।
একসময় বন্ধুত্ব ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক দারুণ উদাহরণ। সেখানে লেনদেনের কোনো হিসাব ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতা। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে আজও অনেকের মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। টিফিনের খাবার ভাগ করে খাওয়া, বন্ধুর দুঃখে নির্দ্বিধায় পাশে দাঁড়ানো, কিংবা সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া করে আবার মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরার মধ্যে যে পবিত্রতা ছিল, আজকের যান্ত্রিক সভ্যতায় তা যেন এক দুর্লভ বস্তু।
বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সবকিছুকে ব্যক্তিগত লাভের নিরিখে বিচার করতে হয়। আমরা এখন বন্ধু বানানোর আগেও অবচেতন মনে বিচার করে নিই—এই সম্পর্কটি আমার জীবনে কতটা মূল্য যোগ করবে? তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কিংবা তার মাধ্যমে আমার কোনো উপকার হবে কি না—এইসব প্রশ্নই এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একধরনের ‘শর্তাধীন’ বন্ধুত্বের জন্ম হচ্ছে, যেখানে স্বার্থের লেনদেন শেষ হলেই সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের বন্ধুত্ব অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানোই মূল উদ্দেশ্য।
এই স্বার্থপরতার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। প্রথমত, আধুনিক জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং প্রতিযোগিতা মানুষকে এতটাই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, সে নিজের জগৎ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার এক মায়াবী জগতের সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা হাজার হাজার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভরসা করার মতো বন্ধুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আসলে একধরনের লোকদেখানো সম্পর্ক, যার গভীরে কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। এখানে সবাই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে—কার কত বন্ধু, কে কতটা জনপ্রিয়। এই জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। স্বার্থের এই ঝোড়ো হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়েও কিছু মানুষ এখনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব মানে শুধু দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক টান, যা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় না। একজন সত্যিকারের বন্ধু আয়নার মতো, যে কেবল আমাদের ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে না, বরং আমাদের ভুলগুলোও দেখিয়ে দেয়। সে আমাদের বিপদের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এবং আনন্দের দিনে মন খুলে হাসে।
এই স্বার্থপর সময়ে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যদি আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে মুক্ত করতে পারি, তবেই এর আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব। বন্ধুত্ব কোনো পণ্য নয় যে তাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে হবে। এটি একটি চারা গাছের মতো, যাকে যত্ন, বিশ্বাস এবং সময় দিয়ে বড় করে তুলতে হয়। যখন একজন মানুষ সব ধরনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তখনই জন্ম নেয় এক নির্মল বন্ধুত্ব।
স্বার্থের এই সমাজে বন্ধুত্বের মানে হলো এক নিঃস্বার্থ আশ্রয়। এমন এক সম্পর্ক, যেখানে আপনি কোনো মুখোশ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কেউ উপহাস করবে না, বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই বন্ধুত্ব আপনাকে শেখাবে যে পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অর্থ বা ক্ষমতার বিনিময়ে কেনা যায় না, যা কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে খুঁজে বের করা এবং পরম মমতায় সেগুলো আগলে রাখা। কারণ, দিন শেষে এই সম্পর্কগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার আসল প্রেরণা জোগায়।
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি। এমন এক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে সম্পর্কটি, মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে—বন্ধুত্ব।
একসময় বন্ধুত্ব ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক দারুণ উদাহরণ। সেখানে লেনদেনের কোনো হিসাব ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতা। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে আজও অনেকের মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। টিফিনের খাবার ভাগ করে খাওয়া, বন্ধুর দুঃখে নির্দ্বিধায় পাশে দাঁড়ানো, কিংবা সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া করে আবার মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরার মধ্যে যে পবিত্রতা ছিল, আজকের যান্ত্রিক সভ্যতায় তা যেন এক দুর্লভ বস্তু।
বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সবকিছুকে ব্যক্তিগত লাভের নিরিখে বিচার করতে হয়। আমরা এখন বন্ধু বানানোর আগেও অবচেতন মনে বিচার করে নিই—এই সম্পর্কটি আমার জীবনে কতটা মূল্য যোগ করবে? তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কিংবা তার মাধ্যমে আমার কোনো উপকার হবে কি না—এইসব প্রশ্নই এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একধরনের ‘শর্তাধীন’ বন্ধুত্বের জন্ম হচ্ছে, যেখানে স্বার্থের লেনদেন শেষ হলেই সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের বন্ধুত্ব অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানোই মূল উদ্দেশ্য।
এই স্বার্থপরতার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। প্রথমত, আধুনিক জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং প্রতিযোগিতা মানুষকে এতটাই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, সে নিজের জগৎ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার এক মায়াবী জগতের সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা হাজার হাজার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভরসা করার মতো বন্ধুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আসলে একধরনের লোকদেখানো সম্পর্ক, যার গভীরে কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। এখানে সবাই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে—কার কত বন্ধু, কে কতটা জনপ্রিয়। এই জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। স্বার্থের এই ঝোড়ো হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়েও কিছু মানুষ এখনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব মানে শুধু দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক টান, যা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় না। একজন সত্যিকারের বন্ধু আয়নার মতো, যে কেবল আমাদের ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে না, বরং আমাদের ভুলগুলোও দেখিয়ে দেয়। সে আমাদের বিপদের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এবং আনন্দের দিনে মন খুলে হাসে।
এই স্বার্থপর সময়ে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যদি আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে মুক্ত করতে পারি, তবেই এর আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব। বন্ধুত্ব কোনো পণ্য নয় যে তাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে হবে। এটি একটি চারা গাছের মতো, যাকে যত্ন, বিশ্বাস এবং সময় দিয়ে বড় করে তুলতে হয়। যখন একজন মানুষ সব ধরনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তখনই জন্ম নেয় এক নির্মল বন্ধুত্ব।
স্বার্থের এই সমাজে বন্ধুত্বের মানে হলো এক নিঃস্বার্থ আশ্রয়। এমন এক সম্পর্ক, যেখানে আপনি কোনো মুখোশ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কেউ উপহাস করবে না, বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই বন্ধুত্ব আপনাকে শেখাবে যে পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অর্থ বা ক্ষমতার বিনিময়ে কেনা যায় না, যা কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে খুঁজে বের করা এবং পরম মমতায় সেগুলো আগলে রাখা। কারণ, দিন শেষে এই সম্পর্কগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার আসল প্রেরণা জোগায়।
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার বছরপূর্তি সামনে রেখে ওই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়,
০৩ জুলাই ২০২৫
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৯ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
২০ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
২০ ঘণ্টা আগেরিয়াদ হোসেন

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সাধারণ মানুষের মতো বাঘেরও প্রধান দুটি মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য ও বাসস্থান। বিশেষ করে খাদ্যের জোগান এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে বাঘ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা তাদের প্রজনন বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বাঘসহ অন্য প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন বাঘের অস্তিত্ব আছে। বাঘ বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বাঘ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বাঘের প্রধান হুমকি। কিছু অতিলোভী চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের জন্য দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সবশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। কয়েক বছর আগে বড় বড় বনদস্যু দলের আত্মসমর্পণের ফলে বাঘনিধন কিছুটা কমে এসেছে। দুই বছর আগেও খাদ্যসংকটে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। বন সংরক্ষণে বন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। এ জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জীবিকায় সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।
সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাঘ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ জন্য বন বিভাগ কিংবা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সুন্দরবন বা বাঘ কোনোটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না; যদি আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই। পাশাপাশি বাঘনিধন ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যে আইনের ৩৬ ধারায় বাঘশিকারি বা হত্যাকারী জামিন-অযোগ্য হবেন এবং সর্বোচ্চ সাত বছর সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনটিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন বাঁচানোর পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সাধারণ মানুষের মতো বাঘেরও প্রধান দুটি মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য ও বাসস্থান। বিশেষ করে খাদ্যের জোগান এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে বাঘ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা তাদের প্রজনন বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বাঘসহ অন্য প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন বাঘের অস্তিত্ব আছে। বাঘ বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বাঘ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বাঘের প্রধান হুমকি। কিছু অতিলোভী চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের জন্য দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সবশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। কয়েক বছর আগে বড় বড় বনদস্যু দলের আত্মসমর্পণের ফলে বাঘনিধন কিছুটা কমে এসেছে। দুই বছর আগেও খাদ্যসংকটে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। বন সংরক্ষণে বন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। এ জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জীবিকায় সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।
সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাঘ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ জন্য বন বিভাগ কিংবা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সুন্দরবন বা বাঘ কোনোটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না; যদি আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই। পাশাপাশি বাঘনিধন ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যে আইনের ৩৬ ধারায় বাঘশিকারি বা হত্যাকারী জামিন-অযোগ্য হবেন এবং সর্বোচ্চ সাত বছর সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনটিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন বাঁচানোর পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার বছরপূর্তি সামনে রেখে ওই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়,
০৩ জুলাই ২০২৫
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৯ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
২০ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
২০ ঘণ্টা আগে