অরুণ কর্মকার
গেল সপ্তাহ থেকে দেশের রাজনীতি বেশ উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক সমীকরণও ক্রমান্বয়ে জটিল হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে একদিকে যেমন নতুন করে নির্বাচনকেন্দ্রিক নতুন মেরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি রাজনীতিকদের বক্তব্য-বিবৃতিতে পারস্পরিক বৈরিতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থবিরতা কাটার আপাত কোনো লক্ষণ নেই, যা দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান গণ-উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
বিএনপি দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে ক্রমেই বেশি করে সোচ্চার হয়ে উঠছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।’ অর্থাৎ বিএনপির সন্দেহ যেকোনো একপর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকার তার নিরপেক্ষ চরিত্র হারাতে পারে। এর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে এভাবে কোনো কথা শোনা যায়নি। মির্জা ফখরুল বিবিসি বাংলাকে আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চান বলে জানা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না।’
এরপর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ আসাদ পরিষদের উদ্যোগে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আসাদের ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখছি যে বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছে না।... আমি অনুরোধ করব, আমি প্রত্যাশা করব, আমি আশা করি যে অন্তর্বর্তী সরকার সেই নিরপেক্ষতা পালন করবে এবং দেশে যে সংকট আছে, সেই সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করবার জন্য তারা কাজ করবে।’
এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ওই দিন তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটি এক-এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে।’ তিনি বলেন, বিএনপি কয়েক দিন আগে ‘মাইনাস টুর’ আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি এক-এগারো সরকারের প্রস্তাব করছে। এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই এটা মেনে নেবে না। এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র।’
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আরও অনেক কথা লিখেছেন। তার মধ্যে প্রণিধানযোগ্য হচ্ছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় সরকার না হলেও সরকারে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে এবং সব পক্ষই নানা সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের মহাপরিদর্শক নিয়োগ হয়েছিল, যাঁরা মূলত বিএনপির লোক। এ রকমভাবে সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানা স্তরে বিএনপিপন্থী লোকজন রয়েছেন। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতাও মাথায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা—সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ এগুলোর কোনোটাই ছাত্রদের কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে, সেখানে আমরা বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেব।’
এর পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির সভাপতি নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর একটি বক্তব্য। তিনি বলেছেন, তাঁরা মুজিববাদ কিংবা জিয়াবাদ কোনো বাদেরই পুনর্বাসন চান না। তেমন কিছু তাঁরা হতেও দেবেন না, যাতে পতিত স্বৈরাচারের স্থলে নতুন কোনো স্বৈরাচারের অধিষ্ঠান ঘটতে পারে। প্রায় একই কথা বলে আসছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। একই সঙ্গে তাঁরা রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াও চালাচ্ছেন বলে আলোচিত হচ্ছে। অবশ্য জানুয়ারি মাসের মধ্যে একাধিক নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে বলেও তাঁরা ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিএনপির মূল উদ্বেগের বিষয়, এই নতুন রাজনৈতিক দল, যা কিংস পার্টি হিসেবে তারা অভিহিত করে থাকে।
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্ট ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ওই পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনরায় আওয়ামী লীগের অবাধ অনুপ্রবেশ করতে দিলেও ছাত্র-জনতার সম্মিলনে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান দেখতে চায় না।’ বিএনপির এক শীর্ষ নেতার নামোল্লেখ না করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অথচ তিনি ভুলে গেলেন, এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। গুম, খুন ও গণহত্যা করে বাংলাদেশকে অরাজকতার শীর্ষ চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে। এতসব অন্যায়-অনাচার ও জুলুম-নিপীড়নের দায় এড়িয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক ব্ল্যাংক চেক দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাও করলেন না।’
এর পাশাপাশি জুলাই বিপ্লবের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কথিত, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়েও এন্তার আলোচনা হচ্ছে। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন ‘...জুলাই অভ্যুত্থান ছিল সব স্তরের মানুষের মিলনমেলা। কিন্তু এখন দেশে নতুন করে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ফ্যাসিবাদ এবার তার চেহারা বদলে বিভিন্ন রূপে ফিরে আসতে চাইছে। নতুন করে সক্রিয় হতে চাইছে। দেশের জনগণের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র অবশ্যই রুখে দিতে হবে। সামাজিক ফ্যাসিবাদ বনাম সেক্যুলারিজম শক্তির ভন্ডামি আমাদের উন্মোচন করতে হবে।’
রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ানো এইসব পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের পাশাপাশি বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী আলাদা আলাদাভাবে নির্বাচনকেন্দ্রিক নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে বিএনপি খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে তারা দ্রুত জাতীয় নির্বাচনসহ চলমান বেশ কয়েকটি নীতিগত প্রসঙ্গ ও আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয়েছে। বিএনপি তাদের নেতৃত্বাধীন সাবেক ২০ দলীয় জোটভুক্ত আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম অন্যতম। এই দলের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর একটি মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে একটা বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কথা বলার পর যদি চিন্তাচেতনার ঐক্য তৈরি হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে আমরা আপনাদের জানাব।’
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী বৈঠক করেছে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে। যদিও জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ। কিন্তু এমন সাক্ষাৎ এই দুটি দলের নেতাদের মধ্যে আগে কখনো হয়নি। এমনকি দল দুটির মধ্যে আদর্শগত বিষয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের একটি বক্তব্য উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ইসলামি দলগুলো কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছি। এটা তারই অংশ। যদিও বৈঠকটি ছিল সৌজন্যমূলক।’
কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বিরাট বড় অশুভ ইঙ্গিত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ (বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা) শীর্ষক প্রতিবেদনের জানুয়ারি (২০২৫) সংস্করণে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর নিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে ভাটার টান চলবে। বিপরীতে মূল্যস্ফীতি থাকবে চড়া। সরকারের মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্য পূরণ হবে না। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নামতে পারে, যা গত জুনের পূর্বাভাসের চেয়েও ১ দশমিক ৬ শতাংশীয় বিন্দু কম।
এর মানে হলো, অর্থনীতিতে স্থবিরতা। এর ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কমে যাবে। বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কারখানায় উৎপাদন বাড়বে না। ফলে মানুষের আয় বৃদ্ধির সুযোগ কমে যাবে। তিন বছর ধরে দেশে মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক উত্তাপ কমিয়ে আনা এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে তোলা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে দেশ কোন পথে যাবে, নাগরিকদের বড় ভাবনা সেটা নিয়ে।
গেল সপ্তাহ থেকে দেশের রাজনীতি বেশ উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক সমীকরণও ক্রমান্বয়ে জটিল হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে একদিকে যেমন নতুন করে নির্বাচনকেন্দ্রিক নতুন মেরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি রাজনীতিকদের বক্তব্য-বিবৃতিতে পারস্পরিক বৈরিতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থবিরতা কাটার আপাত কোনো লক্ষণ নেই, যা দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান গণ-উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
বিএনপি দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে ক্রমেই বেশি করে সোচ্চার হয়ে উঠছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।’ অর্থাৎ বিএনপির সন্দেহ যেকোনো একপর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকার তার নিরপেক্ষ চরিত্র হারাতে পারে। এর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে এভাবে কোনো কথা শোনা যায়নি। মির্জা ফখরুল বিবিসি বাংলাকে আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চান বলে জানা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না।’
এরপর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ আসাদ পরিষদের উদ্যোগে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আসাদের ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখছি যে বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছে না।... আমি অনুরোধ করব, আমি প্রত্যাশা করব, আমি আশা করি যে অন্তর্বর্তী সরকার সেই নিরপেক্ষতা পালন করবে এবং দেশে যে সংকট আছে, সেই সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করবার জন্য তারা কাজ করবে।’
এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ওই দিন তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটি এক-এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে।’ তিনি বলেন, বিএনপি কয়েক দিন আগে ‘মাইনাস টুর’ আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি এক-এগারো সরকারের প্রস্তাব করছে। এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই এটা মেনে নেবে না। এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র।’
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আরও অনেক কথা লিখেছেন। তার মধ্যে প্রণিধানযোগ্য হচ্ছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় সরকার না হলেও সরকারে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে এবং সব পক্ষই নানা সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের মহাপরিদর্শক নিয়োগ হয়েছিল, যাঁরা মূলত বিএনপির লোক। এ রকমভাবে সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানা স্তরে বিএনপিপন্থী লোকজন রয়েছেন। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতাও মাথায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা—সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ এগুলোর কোনোটাই ছাত্রদের কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে, সেখানে আমরা বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেব।’
এর পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির সভাপতি নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর একটি বক্তব্য। তিনি বলেছেন, তাঁরা মুজিববাদ কিংবা জিয়াবাদ কোনো বাদেরই পুনর্বাসন চান না। তেমন কিছু তাঁরা হতেও দেবেন না, যাতে পতিত স্বৈরাচারের স্থলে নতুন কোনো স্বৈরাচারের অধিষ্ঠান ঘটতে পারে। প্রায় একই কথা বলে আসছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। একই সঙ্গে তাঁরা রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াও চালাচ্ছেন বলে আলোচিত হচ্ছে। অবশ্য জানুয়ারি মাসের মধ্যে একাধিক নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে বলেও তাঁরা ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিএনপির মূল উদ্বেগের বিষয়, এই নতুন রাজনৈতিক দল, যা কিংস পার্টি হিসেবে তারা অভিহিত করে থাকে।
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্ট ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ওই পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনরায় আওয়ামী লীগের অবাধ অনুপ্রবেশ করতে দিলেও ছাত্র-জনতার সম্মিলনে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান দেখতে চায় না।’ বিএনপির এক শীর্ষ নেতার নামোল্লেখ না করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অথচ তিনি ভুলে গেলেন, এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। গুম, খুন ও গণহত্যা করে বাংলাদেশকে অরাজকতার শীর্ষ চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে। এতসব অন্যায়-অনাচার ও জুলুম-নিপীড়নের দায় এড়িয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক ব্ল্যাংক চেক দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাও করলেন না।’
এর পাশাপাশি জুলাই বিপ্লবের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কথিত, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়েও এন্তার আলোচনা হচ্ছে। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন ‘...জুলাই অভ্যুত্থান ছিল সব স্তরের মানুষের মিলনমেলা। কিন্তু এখন দেশে নতুন করে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ফ্যাসিবাদ এবার তার চেহারা বদলে বিভিন্ন রূপে ফিরে আসতে চাইছে। নতুন করে সক্রিয় হতে চাইছে। দেশের জনগণের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র অবশ্যই রুখে দিতে হবে। সামাজিক ফ্যাসিবাদ বনাম সেক্যুলারিজম শক্তির ভন্ডামি আমাদের উন্মোচন করতে হবে।’
রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ানো এইসব পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের পাশাপাশি বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী আলাদা আলাদাভাবে নির্বাচনকেন্দ্রিক নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে বিএনপি খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে তারা দ্রুত জাতীয় নির্বাচনসহ চলমান বেশ কয়েকটি নীতিগত প্রসঙ্গ ও আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয়েছে। বিএনপি তাদের নেতৃত্বাধীন সাবেক ২০ দলীয় জোটভুক্ত আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম অন্যতম। এই দলের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর একটি মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে একটা বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কথা বলার পর যদি চিন্তাচেতনার ঐক্য তৈরি হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে আমরা আপনাদের জানাব।’
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী বৈঠক করেছে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে। যদিও জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ। কিন্তু এমন সাক্ষাৎ এই দুটি দলের নেতাদের মধ্যে আগে কখনো হয়নি। এমনকি দল দুটির মধ্যে আদর্শগত বিষয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের একটি বক্তব্য উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ইসলামি দলগুলো কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছি। এটা তারই অংশ। যদিও বৈঠকটি ছিল সৌজন্যমূলক।’
কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বিরাট বড় অশুভ ইঙ্গিত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ (বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা) শীর্ষক প্রতিবেদনের জানুয়ারি (২০২৫) সংস্করণে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর নিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে ভাটার টান চলবে। বিপরীতে মূল্যস্ফীতি থাকবে চড়া। সরকারের মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্য পূরণ হবে না। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নামতে পারে, যা গত জুনের পূর্বাভাসের চেয়েও ১ দশমিক ৬ শতাংশীয় বিন্দু কম।
এর মানে হলো, অর্থনীতিতে স্থবিরতা। এর ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কমে যাবে। বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কারখানায় উৎপাদন বাড়বে না। ফলে মানুষের আয় বৃদ্ধির সুযোগ কমে যাবে। তিন বছর ধরে দেশে মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক উত্তাপ কমিয়ে আনা এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে তোলা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে দেশ কোন পথে যাবে, নাগরিকদের বড় ভাবনা সেটা নিয়ে।
২০ বছর আগে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অটিজম শব্দটির অস্তিত্ব প্রায় খুঁজে পাওয়া যেত না। অটিজম বিষয়ে মানুষের ধারণা সীমিত ছিল। ঠিক সেই সময়ে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘কানন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির একটি চারতলা ভাড়া বাড়িতে...
৯ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয় দেশটা বুঝি ট্রায়াল অ্যান্ড এররের ভিত্তিতে চলছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়েও নানা ধরনের পরীক্ষামূলক তত্ত্ব দেখতে পাচ্ছি। প্রথমে নতুন কিছু একটা বলা হয় বা চালু করা হয়। তারপর দেখা হয়—কতটা বিতর্ক হয় সেটা নিয়ে।
১৫ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়া ও অস্থায়ী আবাসনসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের ফলে কর্তৃপক্ষ আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার পরও প্রত্যাশিত দাবির বাস্তবায়ন না দেখে আবারও...
১৫ ঘণ্টা আগেআকৃষ্ট করেছিল, সে বাণী যেন কথার কথায় পরিণত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ভালো একটি ভবিষ্যতের আশা ক্রমেই ধূসরতার দিকে যাচ্ছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড ও নিউমার্কেট এলাকার মধ্যে থাকা ৫৭টি মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এই মার্কেটগুলো থেকে প্রতি মাসে সেবা খাত...
১৫ ঘণ্টা আগে