বিভুরঞ্জন সরকার
একটি জাতীয় দৈনিকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আরও অনেক প্রশ্নের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের কাছে একটি প্রশ্ন ছিল, ‘আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর দেশের রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বিষয়টি আলোচনায় এনেছেন। আপনি কী দেখেন?’
মির্জা ফখরুল জবাবে বলেন, ‘আমিও দেখছি। সে জন্য আমি উদ্বিগ্ন। আমি বাংলাদেশকে সব সময় একটা সত্যিকার অর্থে উদারপন্থী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চাই এবং এখানে গণতন্ত্র হবে সবচেয়ে বড় বিষয়। সেই জায়গায় যদি এখন এমন এমন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হয়, যারা গণতন্ত্রেই বিশ্বাস করে না। পরিষ্কার ঘোষণা দিয়ে করে না। আবার তারা নিজেরা জোর করে চাপিয়ে দিতে চায় মতবাদকে, এটা নিঃসন্দেহে অ্যালার্মিং সিচুয়েশন। কিছু কিছু দলের মধ্যে এমনও কথা আছে যে মহিলাদের তারা কিছুতেই সামনে আনতে চায় না। মহিলাদের তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা তো দূরের কথা, তারা সামাজিক ক্ষমতায়নও করতে চায় না। এসব দলের যদি উত্থান হয় এই দেশে, তাহলে তো পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।’
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে স্পষ্ট যে তিনি দক্ষিণপন্থীদের উত্থানজনিত পরিস্থিতিকে অ্যালার্মিং বা উদ্বেগজনক মনে করছেন। তিনি চান বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকুক, যেখানে নারীর ক্ষমতায়ন ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। যদি এমন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটে; যারা নারী অধিকার মানে না, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই পিছিয়ে পড়বে। আর এই পরিস্থিতির জন্য তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। কারণ, বিরোধী দল দমন করে দীর্ঘমেয়াদি শাসনের চেষ্টাই এমন পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে দক্ষিণপন্থার উত্থানের পেছনে বিএনপির কোনো দায় আছে কি না, সেটা নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দহরম-মহরমের বিষয়টি কোনোমতেই এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।
অবশ্য আওয়ামী শাসনামলে কারও কারও মধ্যে এমন শঙ্কা ও আলোচনা ছিল যে বিএনপি কিংবা অন্য সেন্ট্রিস্ট দলগুলোকে ধ্বংস করে দিলে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হবে, যার সুযোগ নেবে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা। বিষয়টি কখনো খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়েছে বলে মনে হয় না।
এখন পরিস্থিতি কী দাঁড়িয়েছে? গণতন্ত্র ও দুর্নীতি শব্দ দুটি একসঙ্গে উচ্চারণ করে এমন প্রচারণা কোনো কোনো মহল থেকে সুকৌশলে চালানো হচ্ছে, যাতে মানুষের মনে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ওপরই বিরূপতা তৈরি হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনীতি মানে লুটপাট, দুর্নীতি। ফলে জনগণের একাংশ এখন তথাকথিত ‘সৎ শাসক’ বা ধর্মীয় নেতৃত্বকেই বিকল্প হিসেবে ভাবছে বলেও প্রচার করা হচ্ছে।
দেশে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা অনেক দল আছে। এই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে এমনও দল আছে, যারা নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বাসই করে না। তারা এমন এক শাসনব্যবস্থার স্বপ্ন দেখে, যা বাংলাদেশের সংবিধান বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা মূলত ইসলামি শাসনে বিশ্বাস করে। যেই শাসনে গণতন্ত্রের কোনো স্কোপ নেই।
গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডানপন্থীদের উত্থানের বিষয়টি আর আড়ালে নেই। সভা-সমাবেশে কিংবা সংস্কার ও নির্বাচনের মতো ইস্যুগুলোতে বেশ সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে ইসলামপন্থীদের। গত ১৯ জুলাই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী।
সেই সমাবেশে দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘আগামী দিনের জাতীয় সংসদে শুধুমাত্র ইসলাম চলবে। কোরআন এবং সুন্নাহর আইন চলবে। মানুষের তৈরি করা কোনো মতবাদকে জাতীয় সংসদে আর যেতে দেওয়া যাবে না।’
জুন মাসের ২৮ তারিখে একই জায়গায় মহাসমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানায় তারা। ৩ মে নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে মহাসমাবেশ করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। এ ছাড়া সংস্কার, নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্ব পেতে দেখা গেছে ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনগুলোকে।
এর আগে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ইসলামপন্থীরা নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলেও শেখ হাসিনার সরকার তাদের কঠোর হাতে দমন করেছিল। ওই ঘটনায় হত্যা ও গুমের অভিযোগ আছে। এরপর অনেক দিন ইসলামপন্থীরা কণ্ঠস্বর জোরালো করলেও আলোচনায় তেমন একটা স্থান পায়নি।
পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থানের বিষয় আলোচনায় না আসার মতো নেই। জনমনে এমন ধারণা দেওয়া হচ্ছে যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি গণতন্ত্রের নামে লুটপাট করবে, দুর্নীতি করবে, চাঁদাবাজি করবে। সুতরাং আমরা সৎ মানুষের শাসন চাই, ধর্মীয় শাসন চাই। যেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যাঁরা করেন তাঁরা সবাই বুঝি খুবই সৎ মানুষ! দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের বিরুদ্ধে কি চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে না? সুযোগ না পেয়ে সৎ থাকা আর সুযোগ পেয়ে সৎ থাকার মধ্যে পার্থক্য আছে নিশ্চয়ই।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় আওয়ামী লীগ এখন সেভাবে আলোচনায় নেই। ক্ষমতার রাজনীতির আলোচনায় এগিয়ে আছে বিএনপি। এখন বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দুর্নীতির ইস্যুতে ব্র্যাকেটবন্দী করার পেছনে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকাই স্বাভাবিক। দক্ষিণপন্থীদের উত্থান নিয়ে বিএনপির মহাসচিবের উদ্বেগও তাই স্বাভাবিক।
এই উদ্বেগ আরও অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। লেখক, গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে দক্ষিণপন্থীদেরই রাজত্ব চলছে। দক্ষিণপন্থীরাই বাংলাদেশের রাজনীতি কবজা করে রেখেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে দেশে রাজনীতির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়েছিল এবং ভিন্নমত দমিয়ে রেখে একধরনের কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। বিএনপি ছাড়াও জামায়াত ও ইসলামপন্থী অনেক দল সভা-সমাবেশ করতে পারেনি। মামলা-হামলা এবং গ্রেপ্তারে দলগুলো কাবু হয়ে পড়েছিল। মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই একপর্যায়ে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে একধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান এই শূন্যতার কারণেই এত দিন চাপের মুখে থাকা ধর্মাশ্রয়ী দলগুলো অনেক বেশি শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
বাংলা একাডেমির সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচন কমিশনের নামে নানা প্রচার হয়েছে। নির্বাচনপ্রক্রিয়া ঠিক থাকলে দক্ষিণপন্থীদের উত্থানের সুযোগ আসত না। আমরা যদি বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা আনতে পারতাম, রাজনীতি যদি সঠিক ধারায় নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করতে পারতাম, তাহলে এই পরিস্থিতি হতো না। আমাদের রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণেই দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হয়েছে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন, তিন কারণে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হয়েছে। এক. বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতির জন্য মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে মনে করছেন, জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলো তো চাঁদাবাজি বা দুর্নীতি করে না। দুই. ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সরকার রয়েছে। সেটার রিঅ্যাকশন হিসেবে এখানে ইসলামপন্থীদের উত্থান হতে পারে। তিন. বাংলাদেশকে ভারতের আধিপত্যের হাত থেকে বাঁচাতে ইসলামপন্থীদের উত্থান হতে পারে।’
আবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, ‘বিগত সরকারই দক্ষিণপন্থীদের লালনপালন করেছে। ক্ষমতার প্রয়োজনে তারা এর কাঁধে বন্দুক রেখেছিল, আবার ওর কাঁধেও বন্দুক রেখেছিল। হেফাজতের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে সিলেবাস বদল করেছিল। ইসলামী আন্দোলনকে গত ১৫ বছর নির্বিঘ্নে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিল।’
দক্ষিণপন্থীদের উত্থান নিয়ে বিএনপির মহাসচিবের উদ্বেগের বিষয়টি আলোচনায় এলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দক্ষিণপন্থী বলতে আপনি কাকে মিন করবেন? উত্থান শব্দের ব্যাখ্যা কী? এখানে কোনো শক্তি এমন নেই যে নতুন করে এ দেশে জন্ম নিয়েছে। কোনো আনএক্সপেকটেড পাওয়ার (অপ্রত্যাশিত শক্তি) তো এখানে আসেনি। এরা তো সবাই এ দেশে ছিল, এ দেশে রাজনীতি করত। আপনি ১৫ বছর তাকে কথা বলতে দেননি। সে যদি আজকে বড় একটা সমাবেশ
করে, আপনি তাকে কি বলবেন একটা শক্তির উত্থান? বরং সে অধিকার ফিরে পেয়েছে।’
গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে গত ২১ জুলাই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ এগিয়ে নিলেও রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে বাংলাদেশে এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে। এর আগে, গত ১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের খবরের শিরোনামেও বলা হয়, অভ্যুত্থানের পর কট্টরপন্থীরা বাংলাদেশে নতুন করে সুযোগ নিচ্ছে।
আমরা ভুলে যাচ্ছি, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শুরুর দিনগুলোতে কী স্বপ্ন নিয়ে চলা শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন—‘বাংলাদেশ কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্র হবে না’। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ধর্ম থাকুক ব্যক্তিজীবনে, রাষ্ট্র থাকবে ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু আজ এই বক্তব্য কোথায়? আজ যদি কেউ এই কথাগুলো উচ্চারণ করেন, তখন তাঁকে বলা হয় ‘সংবেদনশীল বিষয়ে উসকানি দিচ্ছেন’। ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত আচরণের বিষয়। ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখার কথা বললেই তাকে ‘ধর্মবিরোধী’ তকমা দেওয়া হয়। আর এখানেই বিপদ।
একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ে তোলার প্রথম শর্ত হলো—মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। যুক্তির জায়গা তৈরি করা। ভিন্নমতকে সহ্য করার সাহস অর্জন করা। রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা কেউ যদি এই ন্যূনতম শর্তগুলো পূরণ না করেন, তাহলে তা ‘প্রগতিশীল ফ্যাসিজম’ হয়ে ওঠে—যার মুখে গণতন্ত্র, কিন্তু ভেতরে ভয়ংকর এক জোরজবরদস্তি।
এখন সময় হয়েছে সতর্ক হওয়ার, আবারও প্রশ্ন তোলার এবং সবচেয়ে বেশি দরকার—আমরা যাঁরা এখনো যুক্তিবাদে বিশ্বাস করি, যাঁরা এখনো অসাম্প্রদায়িকতা ও ন্যায়ের পক্ষে আছি, আমাদের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা। মানিয়ে নেওয়া শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাসে যাঁদের নামে আমাদের গর্ব, তাঁরা কেউ মানিয়ে নেননি। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা জেল-জুলুম উপেক্ষা করেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। এখনই সময়, আমরা যদি সত্যিকার অর্থে একটি মানবিক, সহনশীল, বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীল সমাজ গড়তে চাই, তাহলে এই মুহূর্তেই আমাদের জোর গলায় বলতে হবে—উগ্র দক্ষিণপন্থা নয়, মানবতা; দমন নয়, বিতর্ক; ক্ষমতার অন্ধ মোহ নয়, মানুষের অধিকারই হোক রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি।
লেখক: সাংবাদিক
একটি জাতীয় দৈনিকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আরও অনেক প্রশ্নের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের কাছে একটি প্রশ্ন ছিল, ‘আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর দেশের রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বিষয়টি আলোচনায় এনেছেন। আপনি কী দেখেন?’
মির্জা ফখরুল জবাবে বলেন, ‘আমিও দেখছি। সে জন্য আমি উদ্বিগ্ন। আমি বাংলাদেশকে সব সময় একটা সত্যিকার অর্থে উদারপন্থী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চাই এবং এখানে গণতন্ত্র হবে সবচেয়ে বড় বিষয়। সেই জায়গায় যদি এখন এমন এমন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হয়, যারা গণতন্ত্রেই বিশ্বাস করে না। পরিষ্কার ঘোষণা দিয়ে করে না। আবার তারা নিজেরা জোর করে চাপিয়ে দিতে চায় মতবাদকে, এটা নিঃসন্দেহে অ্যালার্মিং সিচুয়েশন। কিছু কিছু দলের মধ্যে এমনও কথা আছে যে মহিলাদের তারা কিছুতেই সামনে আনতে চায় না। মহিলাদের তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা তো দূরের কথা, তারা সামাজিক ক্ষমতায়নও করতে চায় না। এসব দলের যদি উত্থান হয় এই দেশে, তাহলে তো পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।’
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে স্পষ্ট যে তিনি দক্ষিণপন্থীদের উত্থানজনিত পরিস্থিতিকে অ্যালার্মিং বা উদ্বেগজনক মনে করছেন। তিনি চান বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকুক, যেখানে নারীর ক্ষমতায়ন ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। যদি এমন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটে; যারা নারী অধিকার মানে না, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই পিছিয়ে পড়বে। আর এই পরিস্থিতির জন্য তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। কারণ, বিরোধী দল দমন করে দীর্ঘমেয়াদি শাসনের চেষ্টাই এমন পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে দক্ষিণপন্থার উত্থানের পেছনে বিএনপির কোনো দায় আছে কি না, সেটা নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দহরম-মহরমের বিষয়টি কোনোমতেই এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।
অবশ্য আওয়ামী শাসনামলে কারও কারও মধ্যে এমন শঙ্কা ও আলোচনা ছিল যে বিএনপি কিংবা অন্য সেন্ট্রিস্ট দলগুলোকে ধ্বংস করে দিলে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হবে, যার সুযোগ নেবে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা। বিষয়টি কখনো খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়েছে বলে মনে হয় না।
এখন পরিস্থিতি কী দাঁড়িয়েছে? গণতন্ত্র ও দুর্নীতি শব্দ দুটি একসঙ্গে উচ্চারণ করে এমন প্রচারণা কোনো কোনো মহল থেকে সুকৌশলে চালানো হচ্ছে, যাতে মানুষের মনে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ওপরই বিরূপতা তৈরি হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনীতি মানে লুটপাট, দুর্নীতি। ফলে জনগণের একাংশ এখন তথাকথিত ‘সৎ শাসক’ বা ধর্মীয় নেতৃত্বকেই বিকল্প হিসেবে ভাবছে বলেও প্রচার করা হচ্ছে।
দেশে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা অনেক দল আছে। এই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে এমনও দল আছে, যারা নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বাসই করে না। তারা এমন এক শাসনব্যবস্থার স্বপ্ন দেখে, যা বাংলাদেশের সংবিধান বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা মূলত ইসলামি শাসনে বিশ্বাস করে। যেই শাসনে গণতন্ত্রের কোনো স্কোপ নেই।
গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডানপন্থীদের উত্থানের বিষয়টি আর আড়ালে নেই। সভা-সমাবেশে কিংবা সংস্কার ও নির্বাচনের মতো ইস্যুগুলোতে বেশ সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে ইসলামপন্থীদের। গত ১৯ জুলাই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী।
সেই সমাবেশে দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘আগামী দিনের জাতীয় সংসদে শুধুমাত্র ইসলাম চলবে। কোরআন এবং সুন্নাহর আইন চলবে। মানুষের তৈরি করা কোনো মতবাদকে জাতীয় সংসদে আর যেতে দেওয়া যাবে না।’
জুন মাসের ২৮ তারিখে একই জায়গায় মহাসমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানায় তারা। ৩ মে নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে মহাসমাবেশ করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। এ ছাড়া সংস্কার, নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্ব পেতে দেখা গেছে ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনগুলোকে।
এর আগে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ইসলামপন্থীরা নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলেও শেখ হাসিনার সরকার তাদের কঠোর হাতে দমন করেছিল। ওই ঘটনায় হত্যা ও গুমের অভিযোগ আছে। এরপর অনেক দিন ইসলামপন্থীরা কণ্ঠস্বর জোরালো করলেও আলোচনায় তেমন একটা স্থান পায়নি।
পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থানের বিষয় আলোচনায় না আসার মতো নেই। জনমনে এমন ধারণা দেওয়া হচ্ছে যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি গণতন্ত্রের নামে লুটপাট করবে, দুর্নীতি করবে, চাঁদাবাজি করবে। সুতরাং আমরা সৎ মানুষের শাসন চাই, ধর্মীয় শাসন চাই। যেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যাঁরা করেন তাঁরা সবাই বুঝি খুবই সৎ মানুষ! দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের বিরুদ্ধে কি চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে না? সুযোগ না পেয়ে সৎ থাকা আর সুযোগ পেয়ে সৎ থাকার মধ্যে পার্থক্য আছে নিশ্চয়ই।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় আওয়ামী লীগ এখন সেভাবে আলোচনায় নেই। ক্ষমতার রাজনীতির আলোচনায় এগিয়ে আছে বিএনপি। এখন বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দুর্নীতির ইস্যুতে ব্র্যাকেটবন্দী করার পেছনে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকাই স্বাভাবিক। দক্ষিণপন্থীদের উত্থান নিয়ে বিএনপির মহাসচিবের উদ্বেগও তাই স্বাভাবিক।
এই উদ্বেগ আরও অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। লেখক, গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে দক্ষিণপন্থীদেরই রাজত্ব চলছে। দক্ষিণপন্থীরাই বাংলাদেশের রাজনীতি কবজা করে রেখেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে দেশে রাজনীতির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়েছিল এবং ভিন্নমত দমিয়ে রেখে একধরনের কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। বিএনপি ছাড়াও জামায়াত ও ইসলামপন্থী অনেক দল সভা-সমাবেশ করতে পারেনি। মামলা-হামলা এবং গ্রেপ্তারে দলগুলো কাবু হয়ে পড়েছিল। মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই একপর্যায়ে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে একধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান এই শূন্যতার কারণেই এত দিন চাপের মুখে থাকা ধর্মাশ্রয়ী দলগুলো অনেক বেশি শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
বাংলা একাডেমির সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচন কমিশনের নামে নানা প্রচার হয়েছে। নির্বাচনপ্রক্রিয়া ঠিক থাকলে দক্ষিণপন্থীদের উত্থানের সুযোগ আসত না। আমরা যদি বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা আনতে পারতাম, রাজনীতি যদি সঠিক ধারায় নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করতে পারতাম, তাহলে এই পরিস্থিতি হতো না। আমাদের রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণেই দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হয়েছে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন, তিন কারণে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হয়েছে। এক. বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতির জন্য মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে মনে করছেন, জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলো তো চাঁদাবাজি বা দুর্নীতি করে না। দুই. ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সরকার রয়েছে। সেটার রিঅ্যাকশন হিসেবে এখানে ইসলামপন্থীদের উত্থান হতে পারে। তিন. বাংলাদেশকে ভারতের আধিপত্যের হাত থেকে বাঁচাতে ইসলামপন্থীদের উত্থান হতে পারে।’
আবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, ‘বিগত সরকারই দক্ষিণপন্থীদের লালনপালন করেছে। ক্ষমতার প্রয়োজনে তারা এর কাঁধে বন্দুক রেখেছিল, আবার ওর কাঁধেও বন্দুক রেখেছিল। হেফাজতের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে সিলেবাস বদল করেছিল। ইসলামী আন্দোলনকে গত ১৫ বছর নির্বিঘ্নে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিল।’
দক্ষিণপন্থীদের উত্থান নিয়ে বিএনপির মহাসচিবের উদ্বেগের বিষয়টি আলোচনায় এলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দক্ষিণপন্থী বলতে আপনি কাকে মিন করবেন? উত্থান শব্দের ব্যাখ্যা কী? এখানে কোনো শক্তি এমন নেই যে নতুন করে এ দেশে জন্ম নিয়েছে। কোনো আনএক্সপেকটেড পাওয়ার (অপ্রত্যাশিত শক্তি) তো এখানে আসেনি। এরা তো সবাই এ দেশে ছিল, এ দেশে রাজনীতি করত। আপনি ১৫ বছর তাকে কথা বলতে দেননি। সে যদি আজকে বড় একটা সমাবেশ
করে, আপনি তাকে কি বলবেন একটা শক্তির উত্থান? বরং সে অধিকার ফিরে পেয়েছে।’
গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে গত ২১ জুলাই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ এগিয়ে নিলেও রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে বাংলাদেশে এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে। এর আগে, গত ১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের খবরের শিরোনামেও বলা হয়, অভ্যুত্থানের পর কট্টরপন্থীরা বাংলাদেশে নতুন করে সুযোগ নিচ্ছে।
আমরা ভুলে যাচ্ছি, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শুরুর দিনগুলোতে কী স্বপ্ন নিয়ে চলা শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন—‘বাংলাদেশ কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্র হবে না’। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ধর্ম থাকুক ব্যক্তিজীবনে, রাষ্ট্র থাকবে ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু আজ এই বক্তব্য কোথায়? আজ যদি কেউ এই কথাগুলো উচ্চারণ করেন, তখন তাঁকে বলা হয় ‘সংবেদনশীল বিষয়ে উসকানি দিচ্ছেন’। ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত আচরণের বিষয়। ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখার কথা বললেই তাকে ‘ধর্মবিরোধী’ তকমা দেওয়া হয়। আর এখানেই বিপদ।
একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ে তোলার প্রথম শর্ত হলো—মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। যুক্তির জায়গা তৈরি করা। ভিন্নমতকে সহ্য করার সাহস অর্জন করা। রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা কেউ যদি এই ন্যূনতম শর্তগুলো পূরণ না করেন, তাহলে তা ‘প্রগতিশীল ফ্যাসিজম’ হয়ে ওঠে—যার মুখে গণতন্ত্র, কিন্তু ভেতরে ভয়ংকর এক জোরজবরদস্তি।
এখন সময় হয়েছে সতর্ক হওয়ার, আবারও প্রশ্ন তোলার এবং সবচেয়ে বেশি দরকার—আমরা যাঁরা এখনো যুক্তিবাদে বিশ্বাস করি, যাঁরা এখনো অসাম্প্রদায়িকতা ও ন্যায়ের পক্ষে আছি, আমাদের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা। মানিয়ে নেওয়া শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাসে যাঁদের নামে আমাদের গর্ব, তাঁরা কেউ মানিয়ে নেননি। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা জেল-জুলুম উপেক্ষা করেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। এখনই সময়, আমরা যদি সত্যিকার অর্থে একটি মানবিক, সহনশীল, বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীল সমাজ গড়তে চাই, তাহলে এই মুহূর্তেই আমাদের জোর গলায় বলতে হবে—উগ্র দক্ষিণপন্থা নয়, মানবতা; দমন নয়, বিতর্ক; ক্ষমতার অন্ধ মোহ নয়, মানুষের অধিকারই হোক রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি।
লেখক: সাংবাদিক
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী আফগান মাটি থেকে বিদায় নেওয়ার পর দেশজুড়ে দ্রুতগতিতে বিস্তার ঘটে তালেবান আন্দোলনের এবং অবশেষে কোনো যুদ্ধ ছাড়াই তালেবান কাবুল দখল করে নেয়। এর পরের সময়টা পশ্চিমা গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের
৫ ঘণ্টা আগেরাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামে সাঁওতালপাড়ায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বাবলু নামে স্থানীয় বিএনপির এক কর্মীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ৫ আগস্ট আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, রাজশাহীর পবা উপজেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বারনই নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের
৫ ঘণ্টা আগেআজকাল সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের ছোট ছোট ভিডিও থাকে। কিছু থাকে নিছক হাসির, কিছু থাকে সামাজিক বক্তব্যনির্ভর। ছেলে-বুড়ো অনেককেই দেখি সেইসব রিলস বা শর্টসে বুঁদ হয়ে থাকতে।
১ দিন আগেজিম্বাবুয়ের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে রবার্ট গাব্রিয়েল মুগাবে ছিলেন একসময়ের মহানায়ক। তবে স্বাধীনতার পর ক্ষমতার মোহ ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে তিনি নিজ জাতির মানুষের কাছে ঘৃণিত এক শাসকে পরিণত হন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে।
১ দিন আগে