Ajker Patrika

পুলিশ অফিসারের আত্মহত্যা

রাকিবুল ইসলাম
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পারিবারিক যেকোনো দিবসে যখন আমরা পরিবারের বন্ধন, ভালোবাসা ও সমর্থনের কথা বলি, তখন একটি মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়—একজন পুলিশ অফিসারের আত্মহত্যা। এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং আমাদের সমাজে পারিবারিক কলহের ভয়াবহ পরিণতির একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

পুলিশ অফিসার পলাশ সাহা পারিবারিক কলহের জেরে মানসিক চাপে ভুগছিলেন। তাঁর আত্মহত্যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা, পেশাগত ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা না করার কথাই মনে করিয়ে দেয়। তাঁর কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটটি তাঁর মানসিক অবস্থার কিছু ইঙ্গিত দেয়, যা সম্ভবত পারিবারিক বা ব্যক্তিগত চাপের কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন, অবহেলা বা অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব প্রায়ই এমন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়, যেখানে একজন মানুষ জীবনের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেন। পুলিশ অফিসারদের দায়িত্ব পালনের কারণে এমনিতেই চাপের মধ্যে থাকতে হয়। তাঁরা জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু তাঁদের নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে। এর সঙ্গে যদি পারিবারিক সমর্থনের অভাব যোগ হয়, তবে পরিণতি হতে পারে বিপর্যয়কর।

পরিবার কেবল একসঙ্গে থাকার নাম নয়, এটি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও মানসিক সমর্থনের একটি আশ্রয়স্থল। আমাদের সমাজে এখনো মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে অনেকেই নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে পারেন না, সাহায্য চাইতে পারেন না। এই ঘটনা আমাদের প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়—আমরা কি আমাদের পরিবারের সদস্যদের মানসিক অবস্থার প্রতি যথেষ্ট সচেতন? আমরা কি তাঁদের কথা শোনার জন্য সময় বের করি?

এই দুঃখজনক ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। পারিবারিক কলহ সমাধানের জন্য উন্মুক্ত যোগাযোগ, পরামর্শ গ্রহণ এবং প্রয়োজনে পেশাদার পরামর্শকের সাহায্য নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে, পুলিশ বাহিনীর মতো উচ্চ চাপের পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটার আগে আমরা প্রতিজ্ঞা নিই—আমাদের প্রিয়জনদের পাশে থাকব, তাঁদের কথা শুনব এবং তাঁদের মানসিক সুস্থতার প্রতি যত্নশীল হব। কারণ, একটি সুস্থ পরিবারই একটি সুস্থ সমাজের ভিত্তি। এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা—আমরা যেন কখনো আমাদের প্রিয়জনদের একা না ছাড়ি, যেন কখনো তাঁদের নীরব কষ্ট উপেক্ষিত না হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত