বিভুরঞ্জন সরকার
সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করার ঘটনা শুধু তাৎক্ষণিক উদ্বেগের বিষয় নয়, বরং এটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ও ভাবমূর্তির জন্য একটি বড় ধাক্কা। সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ এখন বৈশ্বিক এক অভিশাপ। কিন্তু যখন শান্তিপ্রিয় ও পরিশ্রমী একটি জাতির নাগরিকেরা এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে বিদেশে গ্রেপ্তার হন, তখন এই প্রশ্নই বড় হয়ে সামনে আসে এটা কি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি এর পেছনে আছে বড় কোনো পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র?
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য জীবন-জীবিকার এক বড় উৎস। বাংলাদেশিরা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত—এটা প্রমাণ হলে যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি হবে তাতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত ৩ জুলাই জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার অধিকাংশ ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো হতে পারে এবং দেশে ফিরলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের বিষয়ে তদন্ত করবে। এটা অবশ্যই একটি দায়িত্বশীল পদক্ষেপ। তবে প্রশ্ন হলো, এতসংখ্যক বাংলাদেশি যদি সত্যিই কোনোভাবে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন, তাহলে তাঁরা কীভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করলেন, সেখানে কাদের সহায়তায় উগ্রবাদী কার্যকলাপে অংশ নিলেন এবং বাংলাদেশের ভেতর থেকেই তাঁদের এই পথচলার পেছনে কোনো মদদ ছিল কিনা—এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেসব তথ্য দিয়েছেন, সেগুলো নিছক রাজনৈতিক বার্তা নয়, আদালতে পেশ করা চার্জশিটের আওতায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনও করা হয়েছে। আরও ১৬ জনের বিষয়ে তদন্ত চলছে। অর্থাৎ এই ঘটনাকে ‘সাজানো নাটক’ বা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হিসেবে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। বরং বাংলাদেশ সরকার, বিশেষত স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উচিত, মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে পুরো বিষয়টি খোলাসা করা এবং দেশের জনগণকে এ বিষয়ে স্বচ্ছভাবে অবহিত করা।
মালয়েশিয়ার মতো দেশ, যেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ, কৃষি, রেস্তোরাঁ ও সেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন, সেখানে এতজন বাংলাদেশি সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি হালকাভাবে দেখা ঠিক হবে না। কারণ এর আগেও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
২০১৫-১৬ সালে সিঙ্গাপুরে ২৭ জন বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয় আইএস-এর অনুরূপ এক সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পনার অভিযোগে। তাঁদের কেউ কেউ বলেছিলেন, তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সিঙ্গাপুর সরকার ব্যাপারটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেশে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কঠোরতা বাড়ায়।
ভারতেও সময়-সময় সীমান্ত এলাকা ও শহরাঞ্চলে কিছু বাংলাদেশি নাগরিককে হুজি, জেএমবি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশেষ করে বর্ধমান বিস্ফোরণ (২০১৪) মামলায় জেএমবির বাংলাদেশি সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।
তুরস্কে সিরিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করার সময় বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, তাঁরা সিরিয়ার রাকা শহরে আইএস-এর নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে যাচ্ছিলেন।
এ ছাড়া, যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও দ্বিতীয় প্রজন্মের কিছু তরুণ-তরুণী আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য সিরিয়া চলে গিয়েছিলেন। শামীমা বেগম নামের এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণী ২০১৫ সালে ১৫ বছর বয়সে লন্ডন থেকে সিরিয়া গিয়ে আইএস সদস্যকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিতর্কের জন্ম দেয় এবং ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাগরিকত্বহীন ঘোষণা করে।
এসব ঘটনা বলে দেয়, বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র অংশ, বিশেষ করে প্রবাসে থাকা বা দেশ থেকে পাড়ি দেওয়া কিছু তরুণ, উগ্রবাদী নেটওয়ার্কের খপ্পরে পড়ে যাচ্ছে। তারা ধর্মের নামে বিকৃত আদর্শে দীক্ষিত হচ্ছে এবং সেই আদর্শকে বাস্তবায়নে কাজ করছে, এমনকি বিদেশি ভূমিতেও। প্রশ্ন হলো, কেন?
বিদেশে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি শ্রমিকই দরিদ্র, প্রান্তিক, শিক্ষায় দুর্বল এবং সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন। তাঁদের একঘেয়ে জীবন, প্রবাসে নিঃসঙ্গতা ও অনিশ্চয়তা সহজেই চরমপন্থীদের জন্য উর্বর মাটি তৈরি করে। বিশেষ করে কেউ যখন ধর্মীয় আদর্শের মোড়কে ‘তুমি একজন বীর’ এই প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়ে কেউ কেউ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তেই পারে।
দেশে চরমপন্থী ইসলামি সংগঠনের পুনরুত্থানের নানা চিহ্ন সময়-সময় প্রকাশ পেয়েছে। কখনো অনলাইন মাধ্যমে, কখনো মাদ্রাসা বা ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রের আড়ালে, কখনো আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণদের উগ্র আদর্শে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা হয়েছে।
এই বাস্তবতা সামনে রেখেই বলা যায়, মালয়েশিয়ার ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার মতো। আমরা যদি এ বাস্তবতা স্বীকার না করি, তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমবাজার শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হবে না, দেশের নিরাপত্তাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
প্রশ্ন আসতেই পারে—এটি কি তাহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’? কোনো পক্ষ কি সচেতনভাবে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমবাজার ধ্বংস করতে চায়? দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এই প্রবাহের প্রতি ঈর্ষাকাতর শক্তি থাকতেই পারে।
তবে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা থাকলেও, এ ধরনের পরিকল্পনা সফল হতে পারে কেবল তখনই, যখন আমাদের ভেতরে দুর্বলতা থাকে। দুর্বল নীতিমালা, যাচাই-বাছাইহীন অভিবাসন ব্যবস্থা, শিক্ষা ও ধর্মীয় দিক থেকে বিপথগামী তরুণদের প্রতি অবহেলা—এসবই একটি ষড়যন্ত্রের মাঠ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ, ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হয় অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনার ফাঁক গলে।
এই অবস্থায় বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের তথ্যভান্ডার হালনাগাদ করতে হবে। ধর্মীয় গোষ্ঠীর নামে সংগঠিত ব্যক্তিদের কার্যক্রমে নজরদারি করতে হবে। দূতাবাসগুলোকে গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। শুধু ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ নয়, বিদেশে যাওয়ার আগে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। ধর্মচর্চার আড়ালে কেউ জঙ্গি মতবাদ প্রচার করছে কিনা, তা নিরীক্ষা করতে হবে।
দেশের ভেতরেও দরকার ‘ডি-র্যাডিকালাইজেশন’ প্রোগ্রাম। যারা বিপথে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে কাউন্সেলিং, সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন ও নজরদারি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—ভুয়া পরিচয়পত্র, জাল পাসপোর্ট এবং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করা।
মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ৩৬ বাংলাদেশির ঘটনাকে আমরা যদি এখনই গুরুত্ব দিয়ে না দেখি, তাহলে হয়তো আগামীতে আরও বড় সংকট অপেক্ষা করতে পারে। শুধু বিদেশি সরকারকে দোষারোপ করে কাজ হবে না। বাংলাদেশের সমাজ, শিক্ষা, ধর্ম ও রাজনীতির ভেতর থেকে যেসব উপাদান চরমপন্থাকে উসকে দেয়, সেগুলোকে আমূল সংস্কারের দিকে না গেলে আমাদের শ্রমবাজার, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি—সবই ধসে পড়তে পারে। তাই গড়িমসি না করে বিষয়টি চোখ খুলে দেখার সময় এখনই। দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মান রক্ষা করতে হলে আমাদের নিজেদের ভেতরেই শক্ত জবাবদিহি ও প্রকৃত অনুসন্ধান চালাতে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করার ঘটনা শুধু তাৎক্ষণিক উদ্বেগের বিষয় নয়, বরং এটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ও ভাবমূর্তির জন্য একটি বড় ধাক্কা। সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ এখন বৈশ্বিক এক অভিশাপ। কিন্তু যখন শান্তিপ্রিয় ও পরিশ্রমী একটি জাতির নাগরিকেরা এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে বিদেশে গ্রেপ্তার হন, তখন এই প্রশ্নই বড় হয়ে সামনে আসে এটা কি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি এর পেছনে আছে বড় কোনো পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র?
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য জীবন-জীবিকার এক বড় উৎস। বাংলাদেশিরা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত—এটা প্রমাণ হলে যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি হবে তাতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত ৩ জুলাই জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার অধিকাংশ ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো হতে পারে এবং দেশে ফিরলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের বিষয়ে তদন্ত করবে। এটা অবশ্যই একটি দায়িত্বশীল পদক্ষেপ। তবে প্রশ্ন হলো, এতসংখ্যক বাংলাদেশি যদি সত্যিই কোনোভাবে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন, তাহলে তাঁরা কীভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করলেন, সেখানে কাদের সহায়তায় উগ্রবাদী কার্যকলাপে অংশ নিলেন এবং বাংলাদেশের ভেতর থেকেই তাঁদের এই পথচলার পেছনে কোনো মদদ ছিল কিনা—এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেসব তথ্য দিয়েছেন, সেগুলো নিছক রাজনৈতিক বার্তা নয়, আদালতে পেশ করা চার্জশিটের আওতায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনও করা হয়েছে। আরও ১৬ জনের বিষয়ে তদন্ত চলছে। অর্থাৎ এই ঘটনাকে ‘সাজানো নাটক’ বা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হিসেবে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। বরং বাংলাদেশ সরকার, বিশেষত স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উচিত, মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে পুরো বিষয়টি খোলাসা করা এবং দেশের জনগণকে এ বিষয়ে স্বচ্ছভাবে অবহিত করা।
মালয়েশিয়ার মতো দেশ, যেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ, কৃষি, রেস্তোরাঁ ও সেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন, সেখানে এতজন বাংলাদেশি সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি হালকাভাবে দেখা ঠিক হবে না। কারণ এর আগেও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
২০১৫-১৬ সালে সিঙ্গাপুরে ২৭ জন বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয় আইএস-এর অনুরূপ এক সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পনার অভিযোগে। তাঁদের কেউ কেউ বলেছিলেন, তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সিঙ্গাপুর সরকার ব্যাপারটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেশে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কঠোরতা বাড়ায়।
ভারতেও সময়-সময় সীমান্ত এলাকা ও শহরাঞ্চলে কিছু বাংলাদেশি নাগরিককে হুজি, জেএমবি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশেষ করে বর্ধমান বিস্ফোরণ (২০১৪) মামলায় জেএমবির বাংলাদেশি সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।
তুরস্কে সিরিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করার সময় বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, তাঁরা সিরিয়ার রাকা শহরে আইএস-এর নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে যাচ্ছিলেন।
এ ছাড়া, যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও দ্বিতীয় প্রজন্মের কিছু তরুণ-তরুণী আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য সিরিয়া চলে গিয়েছিলেন। শামীমা বেগম নামের এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণী ২০১৫ সালে ১৫ বছর বয়সে লন্ডন থেকে সিরিয়া গিয়ে আইএস সদস্যকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিতর্কের জন্ম দেয় এবং ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাগরিকত্বহীন ঘোষণা করে।
এসব ঘটনা বলে দেয়, বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র অংশ, বিশেষ করে প্রবাসে থাকা বা দেশ থেকে পাড়ি দেওয়া কিছু তরুণ, উগ্রবাদী নেটওয়ার্কের খপ্পরে পড়ে যাচ্ছে। তারা ধর্মের নামে বিকৃত আদর্শে দীক্ষিত হচ্ছে এবং সেই আদর্শকে বাস্তবায়নে কাজ করছে, এমনকি বিদেশি ভূমিতেও। প্রশ্ন হলো, কেন?
বিদেশে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি শ্রমিকই দরিদ্র, প্রান্তিক, শিক্ষায় দুর্বল এবং সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন। তাঁদের একঘেয়ে জীবন, প্রবাসে নিঃসঙ্গতা ও অনিশ্চয়তা সহজেই চরমপন্থীদের জন্য উর্বর মাটি তৈরি করে। বিশেষ করে কেউ যখন ধর্মীয় আদর্শের মোড়কে ‘তুমি একজন বীর’ এই প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়ে কেউ কেউ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তেই পারে।
দেশে চরমপন্থী ইসলামি সংগঠনের পুনরুত্থানের নানা চিহ্ন সময়-সময় প্রকাশ পেয়েছে। কখনো অনলাইন মাধ্যমে, কখনো মাদ্রাসা বা ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রের আড়ালে, কখনো আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণদের উগ্র আদর্শে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা হয়েছে।
এই বাস্তবতা সামনে রেখেই বলা যায়, মালয়েশিয়ার ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার মতো। আমরা যদি এ বাস্তবতা স্বীকার না করি, তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমবাজার শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হবে না, দেশের নিরাপত্তাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
প্রশ্ন আসতেই পারে—এটি কি তাহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’? কোনো পক্ষ কি সচেতনভাবে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমবাজার ধ্বংস করতে চায়? দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এই প্রবাহের প্রতি ঈর্ষাকাতর শক্তি থাকতেই পারে।
তবে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা থাকলেও, এ ধরনের পরিকল্পনা সফল হতে পারে কেবল তখনই, যখন আমাদের ভেতরে দুর্বলতা থাকে। দুর্বল নীতিমালা, যাচাই-বাছাইহীন অভিবাসন ব্যবস্থা, শিক্ষা ও ধর্মীয় দিক থেকে বিপথগামী তরুণদের প্রতি অবহেলা—এসবই একটি ষড়যন্ত্রের মাঠ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ, ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হয় অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনার ফাঁক গলে।
এই অবস্থায় বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের তথ্যভান্ডার হালনাগাদ করতে হবে। ধর্মীয় গোষ্ঠীর নামে সংগঠিত ব্যক্তিদের কার্যক্রমে নজরদারি করতে হবে। দূতাবাসগুলোকে গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। শুধু ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ নয়, বিদেশে যাওয়ার আগে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। ধর্মচর্চার আড়ালে কেউ জঙ্গি মতবাদ প্রচার করছে কিনা, তা নিরীক্ষা করতে হবে।
দেশের ভেতরেও দরকার ‘ডি-র্যাডিকালাইজেশন’ প্রোগ্রাম। যারা বিপথে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে কাউন্সেলিং, সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন ও নজরদারি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—ভুয়া পরিচয়পত্র, জাল পাসপোর্ট এবং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করা।
মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ৩৬ বাংলাদেশির ঘটনাকে আমরা যদি এখনই গুরুত্ব দিয়ে না দেখি, তাহলে হয়তো আগামীতে আরও বড় সংকট অপেক্ষা করতে পারে। শুধু বিদেশি সরকারকে দোষারোপ করে কাজ হবে না। বাংলাদেশের সমাজ, শিক্ষা, ধর্ম ও রাজনীতির ভেতর থেকে যেসব উপাদান চরমপন্থাকে উসকে দেয়, সেগুলোকে আমূল সংস্কারের দিকে না গেলে আমাদের শ্রমবাজার, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি—সবই ধসে পড়তে পারে। তাই গড়িমসি না করে বিষয়টি চোখ খুলে দেখার সময় এখনই। দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মান রক্ষা করতে হলে আমাদের নিজেদের ভেতরেই শক্ত জবাবদিহি ও প্রকৃত অনুসন্ধান চালাতে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জোসেফ গোয়েবলস ছিলেন হিটলারের নাৎসি জার্মানির তথ্য ও প্রচারবিষয়ক মন্ত্রী। তিনি ছিলেন মিথ্যাকে ‘সত্য’ বানানোর এক ভয়ংকর কৌশলের রূপকার। গোয়েবলস বিশ্বাস করতেন, ‘একটি বড় মিথ্যাকে বারবার বললে মানুষ একসময় সেটিকে সত্য বলে মেনে নেয়।’ তাঁর এই নীতি দিয়েই নাৎসি জার্মানি কোটি মানুষের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করেছিল...
২১ ঘণ্টা আগেগত বছর জুলাইয়ের আন্দোলনে একটি স্লোগান শুনে আমি পুলকিত বোধ করেছিলাম। স্লোগানটা ছিল—‘কোটা না মেধা মেধা, মেধা মেধা’। এই স্লোগানের আরেকটি সমার্থক প্রবাদ বাক্য আছে আমাদের সমাজে—‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো’। আপনি কার ছেলে বা মেয়ে, কার নাতি বা নাতনি অর্থাৎ পিতা-মাতা বা দাদা-দাদির পরিচয় সূত্রে আপনি...
২১ ঘণ্টা আগেসেই উনিশ শ সাতাশি সালের এক শীতের সকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রাসনাদার শহরে ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হয়েছিল একদল বিদেশি শিক্ষার্থী। কুবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল এরা। ছুটির দিনে ভ্রমণে যাচ্ছিল। দুটো বাস প্রস্তুত। কয়েকজন শিক্ষক আর অনেকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে বাস ছুটল তাগানরোগের দিকে...
২১ ঘণ্টা আগেরাজধানী ঢাকায় সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধপ্রবণতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধি জনমনে গভীর দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করেছে। ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে খুন, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮২.৫ শতাংশ বেশি। এ নিয়ে ১৩ জুলাই আজকের পত্রিকায় একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
২১ ঘণ্টা আগে