অর্ণব সান্যাল
প্রথমে একটি বিষয় একটু জেনে নিই। মন হালকা করে উত্তর দেবেন কিন্তু। শৈশবে চকলেট–চিপস বা কোল্ড ড্রিংকস কি খুব ভালো লাগত?
উত্তর হ্যাঁ হলে, বলুন তো—বড়দের কাছে চকলেট–চিপসের আবদার করার পর কখনো কি তাঁরা জানতে চেয়েছেন যে, ‘এই আজকে কয়টা খেয়েছিস?’ সঠিক উত্তর দিতেন, নাকি ঢপ? এই যেমন, সরল মুখে হয়তো দিব্যি কেটে বলে দিতেন, ‘আজ তো মুখেই ওঠেনি!’
অর্থাৎ, যেখানেই ধরা খাওয়ার ভয় আছে বা মনমাফিক জিনিস না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেখানে সত্যি বলায় গড়িমসি করা মানুষের আশৈশব স্বভাব। কারণ আমরা শিশু বয়সেই জানতাম যে ওটি জানালে যে কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি আর হাতে বা মুখে আসবে না। তবে শৈশবের সেই অভ্যস্ততা বুড়ো বয়সেও প্রবলভাবে থেকে গেলে কিন্তু ব্যাপক সমস্যা।
এই যে এত বড় ভূমিকা লেখা হলো, তার একটি উদ্দেশ্য আছে। আমাদের দেশে কারও কারও মধ্যে শৈশবের সেই সত্য লুকিয়ে হাসিমুখে চকলেট–চিপস চাওয়ার অভ্যাস রয়ে গেছে। আগে যা কয়েকজনের একটি ছোট্ট পরিবারের মধ্যে আলোচিত বা সমালোচিত হতো, এখন তার পরিসর দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বেশি।
আজকের পত্রিকার খবরে প্রকাশ, সরকারি চাকরিজীবীদের সিংহভাগই নাকি সম্পদের হিসাব জমা দিচ্ছেন না। অথচ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে ৪২ বছর আগে। কিন্তু কেউ সেই নিয়ম মানেন না। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রায় ছয় মাস আগে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ৩১ ডিসেম্বর দাখিলের শেষ সময়। জানা গেছে, এখনো বেশির ভাগ (শতভাগের কাছাকাছি আর কি!) সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরাই সম্পদের হিসাব জমা দেননি। আর অনেকে নাকি জানেনই না যে, সম্পদের হিসাব দিতে হয়!
খবর পড়ে বোঝা গেল, এ বিষয়ে জানতে গিয়ে প্রতিবেদককে বেশ ‘অদ্ভুত’ বক্তব্য শুনতে হয়েছে। যেমন: কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্তা জানেনই না যা, সম্পদের হিসাব দিতে হবে! কোনো অতিরিক্ত সচিব আবার এ বিষয়ে প্রশ্ন শুনেই এড়িয়ে গেছেন ‘ব্যস্ত আছি’ বলে, উত্তরই দেননি। আবার কেউ জানিয়েছেন, কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারীর সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়ার কথা। কেউ কেউ অবশ্য গুটিকয়েকের সম্পদের হিসাব পেয়েছেন, তবে তা সংখ্যার আকৃতিতে এতটাই রুগ্ণ যে, হিসাবে তোলাই মান–ইজ্জতের ব্যাপার।
অথচ এই সম্পদের হিসাব দেওয়ার নিয়ম আছে দশকের পর দশক ধরে। সরকারি নিয়মকানুন বজায় রাখা ও তা নাগরিকদের মেনে চলার বিষয়টি দেখভাল করা সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। তাতেই একটা দেশে ন্যায় ও ন্যায্য বিষয়গুলো বজায় থাকে। এখন যাঁদের কাছে আমজনতার মুরগি রাখার কথা, তাঁরাই যদি ডিমনেশিয়ায় ভুগে শেয়াল বনে যান, তবে চলবে কীভাবে? অন্তত একজন সাধারণ নাগরিক কি তখন আইন বা নিয়মকানুন মেনে চলতে উৎসাহিত হবেন? আরে তিনি তো জানেনই যে, যাঁর কাছ থেকে নিয়ম শেখার কথা, তিনিই যে নিয়ম না মানতে আগ্রহী!
শিশুরা যে কারণে চকলেট–চিপস খাওয়ার সঠিক পরিমাণ বলতে উৎসাহিত থাকে না, এখানেও কি বিষয়টি তেমনই?
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সরকারি চাকরির বিধিমালাতে থাকার পরও এটি না মানার কারণ হলো অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা। আর সেই কারণেই সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখাচ্ছেন।
সম্পদের হিসাব না দেওয়ার অর্থ এমন দাঁড়াচ্ছে মূলত ওই চূড়ান্ত অনীহার কারণেই। ধরুন, আপনার একটি মনোহারী দোকান আছে। মাস শেষে দোকানের কর্মচারীর কাছে বিকিকিনির হিসাব চাইলেন। আর উনি তা দিতে চাইলেন না। তখন আপনার মনে সন্দেহ তো জাগবেই, কর্মচারী চুরি করছে না তো!
এবার এ দেশের সাধারণ জনগণও যদি তেমনটা ভাবতে ভাবতে মনে বদ্ধমূল ধারণা বানিয়ে ফেলে, তবে কি দোষ দেওয়া যায়? যে দেশে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ না ডাকলে এবং পুরোপুরি বিনয়াবনত না হলে তিরস্কার শুনতে হয় মাঝে মাঝেই, সে দেশে নাগরিকদের মনে এমন ভাবনা এসে যেতেই পারে।
আচ্ছা, এ দেশের বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী করদাতারা কি প্রতি বছরের আয়করের রিটার্ন জমা না দিয়ে থাকতে পারেন? নিজে দিই বলেই বুঝি, এসব নিয়ে নিয়ম কতটা কড়া। এবং তা হওয়াই উচিত। কিন্তু যাঁদের কাছে আমি বা আপনি নিজেদের আয়–ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে গিয়ে ব্যতিব্যস্ত, তাঁরা কেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকবেন? নাকি দেশে নাগরিকদের শ্রেণিকরণ হচ্ছে? প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি ইত্যাদি ইত্যাদি!
আমাদের দেশ দীর্ঘদিন রাজশাসনে ছিল। জমিদার ছিল একসময়। তখন রাজকর্তাদের প্রভাব ছিল সীমাহীন, অসাধারণ। প্রজারা ছিল ‘সাধারণ’। এরপর ব্রিটিশ শাসনে তার খোলনলচে বদলালেও রাজকর্মচারীর দাপট একই রকমের ছিল। স্বাধীন দেশে সেই স্বভাবই কি অবিকৃত থেকে গেল? হতেই পারে। পূর্বসূরির সব স্বভাব কি আর ধুয়েমুছে সাফ করা যায়! আর ইচ্ছাও তো থাকা লাগে।
সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে ইচ্ছা না থাকার অন্যতম অনুপ্রেরণা হতে পারে খোদ সরকারের কিছু আচরণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় টাকা পাচারের হিসাবের কথা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত (২০১৪ সালের হিসাব বাদে) ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৯০ টাকা ধরা হলে স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।
তবে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ২০১৮ সাল পর্যন্ত হিসাব দেওয়া হলেও বাংলাদেশের দেওয়া আছে ২০১৫ সালের আগের। কারণ এ সময়ের পর থেকে জাতিসংঘকে বৈদেশিক বাণিজ্যের কোনো তথ্য দেয়নি বাংলাদেশ। এই তথ্যটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করল, নাকি অনুজ্জ্বল—সেটি পাঠক নিজ বিবেচনায় ভেবে দেখুন। কেন তথ্য দেওয়া হলো না, তার সঙ্গে বাচ্চাদের চকলেট–চিপস খাওয়ার ঘটনা বা সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব না দেওয়ায় ওঠা সন্দেহ মিলে গেলে দোষ কিন্তু আমার নয়। ডালে ‘কালা’ কিছু তো এভাবেই আবিষ্কৃত হয়, তাই না?
কর্মকর্তা–কর্মচারীরা যদি দেখেন তাঁদের সরকারেরই আচরণ ‘সন্দেহজনক’ এবং সেই পথ বেয়ে তাঁরাও যদি চলতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁদেরই বা দোষ কী? মানুষ তো দেখেই শেখে, নাকি!
এই দেখে শেখার দুষ্টচক্র যদি বন্ধ না হয় এবং সরকার ও সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির আওতায় পুরোপুরি না আনা যায়, তবে শেষতক কবিগুরুর গানের কলির মতোই অবস্থা হবে বারংবার।
বিশ্বকবির এক গানে ছিল, ‘ও যে মানে না মানা।’ আমরা হয়তো কিছুদিন পর পর এভাবে সম্পদের হিসাব ও অন্যান্য নানা বিষয়ে ‘আঁখি’ মেলব, আর ওপাশ থেকে জবাব মিলবে, ‘না, না, না’! তখন আমাদেরও বাধ্য হয়ে ‘আঁখি ফিরাইতে’ হবে অন্য কোনো দিকশূন্যপুরে।
তবে সব নাগরিক যদি কোনো দিন সহ্যের সীমা পার করে ‘না, না, না’ বলতে শুরু করে, তখন কর্তৃপক্ষ আঁখি ফিরিয়ে সইতে পারবে তো?
প্রথমে একটি বিষয় একটু জেনে নিই। মন হালকা করে উত্তর দেবেন কিন্তু। শৈশবে চকলেট–চিপস বা কোল্ড ড্রিংকস কি খুব ভালো লাগত?
উত্তর হ্যাঁ হলে, বলুন তো—বড়দের কাছে চকলেট–চিপসের আবদার করার পর কখনো কি তাঁরা জানতে চেয়েছেন যে, ‘এই আজকে কয়টা খেয়েছিস?’ সঠিক উত্তর দিতেন, নাকি ঢপ? এই যেমন, সরল মুখে হয়তো দিব্যি কেটে বলে দিতেন, ‘আজ তো মুখেই ওঠেনি!’
অর্থাৎ, যেখানেই ধরা খাওয়ার ভয় আছে বা মনমাফিক জিনিস না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেখানে সত্যি বলায় গড়িমসি করা মানুষের আশৈশব স্বভাব। কারণ আমরা শিশু বয়সেই জানতাম যে ওটি জানালে যে কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি আর হাতে বা মুখে আসবে না। তবে শৈশবের সেই অভ্যস্ততা বুড়ো বয়সেও প্রবলভাবে থেকে গেলে কিন্তু ব্যাপক সমস্যা।
এই যে এত বড় ভূমিকা লেখা হলো, তার একটি উদ্দেশ্য আছে। আমাদের দেশে কারও কারও মধ্যে শৈশবের সেই সত্য লুকিয়ে হাসিমুখে চকলেট–চিপস চাওয়ার অভ্যাস রয়ে গেছে। আগে যা কয়েকজনের একটি ছোট্ট পরিবারের মধ্যে আলোচিত বা সমালোচিত হতো, এখন তার পরিসর দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বেশি।
আজকের পত্রিকার খবরে প্রকাশ, সরকারি চাকরিজীবীদের সিংহভাগই নাকি সম্পদের হিসাব জমা দিচ্ছেন না। অথচ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে ৪২ বছর আগে। কিন্তু কেউ সেই নিয়ম মানেন না। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রায় ছয় মাস আগে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ৩১ ডিসেম্বর দাখিলের শেষ সময়। জানা গেছে, এখনো বেশির ভাগ (শতভাগের কাছাকাছি আর কি!) সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরাই সম্পদের হিসাব জমা দেননি। আর অনেকে নাকি জানেনই না যে, সম্পদের হিসাব দিতে হয়!
খবর পড়ে বোঝা গেল, এ বিষয়ে জানতে গিয়ে প্রতিবেদককে বেশ ‘অদ্ভুত’ বক্তব্য শুনতে হয়েছে। যেমন: কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্তা জানেনই না যা, সম্পদের হিসাব দিতে হবে! কোনো অতিরিক্ত সচিব আবার এ বিষয়ে প্রশ্ন শুনেই এড়িয়ে গেছেন ‘ব্যস্ত আছি’ বলে, উত্তরই দেননি। আবার কেউ জানিয়েছেন, কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারীর সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়ার কথা। কেউ কেউ অবশ্য গুটিকয়েকের সম্পদের হিসাব পেয়েছেন, তবে তা সংখ্যার আকৃতিতে এতটাই রুগ্ণ যে, হিসাবে তোলাই মান–ইজ্জতের ব্যাপার।
অথচ এই সম্পদের হিসাব দেওয়ার নিয়ম আছে দশকের পর দশক ধরে। সরকারি নিয়মকানুন বজায় রাখা ও তা নাগরিকদের মেনে চলার বিষয়টি দেখভাল করা সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। তাতেই একটা দেশে ন্যায় ও ন্যায্য বিষয়গুলো বজায় থাকে। এখন যাঁদের কাছে আমজনতার মুরগি রাখার কথা, তাঁরাই যদি ডিমনেশিয়ায় ভুগে শেয়াল বনে যান, তবে চলবে কীভাবে? অন্তত একজন সাধারণ নাগরিক কি তখন আইন বা নিয়মকানুন মেনে চলতে উৎসাহিত হবেন? আরে তিনি তো জানেনই যে, যাঁর কাছ থেকে নিয়ম শেখার কথা, তিনিই যে নিয়ম না মানতে আগ্রহী!
শিশুরা যে কারণে চকলেট–চিপস খাওয়ার সঠিক পরিমাণ বলতে উৎসাহিত থাকে না, এখানেও কি বিষয়টি তেমনই?
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সরকারি চাকরির বিধিমালাতে থাকার পরও এটি না মানার কারণ হলো অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা। আর সেই কারণেই সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখাচ্ছেন।
সম্পদের হিসাব না দেওয়ার অর্থ এমন দাঁড়াচ্ছে মূলত ওই চূড়ান্ত অনীহার কারণেই। ধরুন, আপনার একটি মনোহারী দোকান আছে। মাস শেষে দোকানের কর্মচারীর কাছে বিকিকিনির হিসাব চাইলেন। আর উনি তা দিতে চাইলেন না। তখন আপনার মনে সন্দেহ তো জাগবেই, কর্মচারী চুরি করছে না তো!
এবার এ দেশের সাধারণ জনগণও যদি তেমনটা ভাবতে ভাবতে মনে বদ্ধমূল ধারণা বানিয়ে ফেলে, তবে কি দোষ দেওয়া যায়? যে দেশে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ না ডাকলে এবং পুরোপুরি বিনয়াবনত না হলে তিরস্কার শুনতে হয় মাঝে মাঝেই, সে দেশে নাগরিকদের মনে এমন ভাবনা এসে যেতেই পারে।
আচ্ছা, এ দেশের বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী করদাতারা কি প্রতি বছরের আয়করের রিটার্ন জমা না দিয়ে থাকতে পারেন? নিজে দিই বলেই বুঝি, এসব নিয়ে নিয়ম কতটা কড়া। এবং তা হওয়াই উচিত। কিন্তু যাঁদের কাছে আমি বা আপনি নিজেদের আয়–ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে গিয়ে ব্যতিব্যস্ত, তাঁরা কেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকবেন? নাকি দেশে নাগরিকদের শ্রেণিকরণ হচ্ছে? প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি ইত্যাদি ইত্যাদি!
আমাদের দেশ দীর্ঘদিন রাজশাসনে ছিল। জমিদার ছিল একসময়। তখন রাজকর্তাদের প্রভাব ছিল সীমাহীন, অসাধারণ। প্রজারা ছিল ‘সাধারণ’। এরপর ব্রিটিশ শাসনে তার খোলনলচে বদলালেও রাজকর্মচারীর দাপট একই রকমের ছিল। স্বাধীন দেশে সেই স্বভাবই কি অবিকৃত থেকে গেল? হতেই পারে। পূর্বসূরির সব স্বভাব কি আর ধুয়েমুছে সাফ করা যায়! আর ইচ্ছাও তো থাকা লাগে।
সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে ইচ্ছা না থাকার অন্যতম অনুপ্রেরণা হতে পারে খোদ সরকারের কিছু আচরণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় টাকা পাচারের হিসাবের কথা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত (২০১৪ সালের হিসাব বাদে) ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৯০ টাকা ধরা হলে স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।
তবে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ২০১৮ সাল পর্যন্ত হিসাব দেওয়া হলেও বাংলাদেশের দেওয়া আছে ২০১৫ সালের আগের। কারণ এ সময়ের পর থেকে জাতিসংঘকে বৈদেশিক বাণিজ্যের কোনো তথ্য দেয়নি বাংলাদেশ। এই তথ্যটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করল, নাকি অনুজ্জ্বল—সেটি পাঠক নিজ বিবেচনায় ভেবে দেখুন। কেন তথ্য দেওয়া হলো না, তার সঙ্গে বাচ্চাদের চকলেট–চিপস খাওয়ার ঘটনা বা সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব না দেওয়ায় ওঠা সন্দেহ মিলে গেলে দোষ কিন্তু আমার নয়। ডালে ‘কালা’ কিছু তো এভাবেই আবিষ্কৃত হয়, তাই না?
কর্মকর্তা–কর্মচারীরা যদি দেখেন তাঁদের সরকারেরই আচরণ ‘সন্দেহজনক’ এবং সেই পথ বেয়ে তাঁরাও যদি চলতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁদেরই বা দোষ কী? মানুষ তো দেখেই শেখে, নাকি!
এই দেখে শেখার দুষ্টচক্র যদি বন্ধ না হয় এবং সরকার ও সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির আওতায় পুরোপুরি না আনা যায়, তবে শেষতক কবিগুরুর গানের কলির মতোই অবস্থা হবে বারংবার।
বিশ্বকবির এক গানে ছিল, ‘ও যে মানে না মানা।’ আমরা হয়তো কিছুদিন পর পর এভাবে সম্পদের হিসাব ও অন্যান্য নানা বিষয়ে ‘আঁখি’ মেলব, আর ওপাশ থেকে জবাব মিলবে, ‘না, না, না’! তখন আমাদেরও বাধ্য হয়ে ‘আঁখি ফিরাইতে’ হবে অন্য কোনো দিকশূন্যপুরে।
তবে সব নাগরিক যদি কোনো দিন সহ্যের সীমা পার করে ‘না, না, না’ বলতে শুরু করে, তখন কর্তৃপক্ষ আঁখি ফিরিয়ে সইতে পারবে তো?
জুলাইয়ের শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়। এই আন্দোলন কেবল রাজপথের ঘটনা ছিল না; এর পেছনে ছিল এক গভীর সাংস্কৃতিক জাগরণ। অথচ আজ, এই ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে আমরা এক বিষণ্ন চিত্র দেখছি। যে রাষ্ট্র এই আন্দোলনের ফসল, সেই রাষ্ট্রই যেন বই, লেখক আর পাঠকের অস্তিত্বক
৯ ঘণ্টা আগেসাতচল্লিশের দেশভাগকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িকতা ক্রমাগত তীব্র হলো। রক্তপাত ঘটল। পরে যখন স্বাধীন হলো ভারতবর্ষ, তখন একটির জায়গায় দুটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘটল। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার সমস্যার সমাধান হলো না; না পাকিস্তানে, না ভারতে। পাকিস্তানের সব ধর্মাবলম্বীকে বলা হলো রাজনৈতিকভাবে নিজ নিজ ধর্মমত ভুলে
১৮ ঘণ্টা আগেআয়মান সোবহ, ওমর মিলাদ এবং আসাদ আসাদ আমরা গাজার তিনটি অলাভজনক বিশ্ববিদ্যালয়—আল-আকসা ইউনিভার্সিটি, আল-আজহার ইউনিভার্সিটি-গাজা এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজার সভাপতি।
১৯ ঘণ্টা আগেকেউ যদি আপনাকে ৮০ টাকার খুব ভালো চাল রেখে ৮৫ টাকায় পোকা আর পাথরভর্তি চাল নিতে জোর করে, আপনি কি সেই চাল কিনবেন? নিশ্চয়ই না। কিন্তু সেই ব্যক্তি নাছোড়বান্দা, আপনাকে তার কাছ থেকেই পোকা-পাথরমিশ্রিত চাল বেশি দামে নিতে হবে, নয়তো আপনার ‘ক্ষতি’ হবে! ভাবছেন, তুচ্ছ একটা ব্যাপারে কেউ কাউকে হুমকি দিতে পারে?
১৯ ঘণ্টা আগে