মাসুদ উর রহমান
আগের রাজনৈতিক সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকে হস্তান্তর করত এবং পরদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের অমুক মাসের এমপিওর চেক হস্তান্তর শিরোনামে ফলাও করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করত। অনেক শিক্ষক তখন ‘না দেইখা দেখছে, পুঁটি মাছের লেখছে’, এই খনার বচনের ভাবাদর্শে সুখবর সুখবর শিরোনামে সেই খবর ফেসবুকে প্রচার করে পেজের রিচ বাড়াতে পারত। কথিত আছে, সেই চেক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাঁচ-সাত দিন নিজের ব্যাংকে খাটিয়ে তারপর চলতি মাসের ১০-১৫ তারিখের মধ্যে শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিতে পারত। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের খাটানোর মানসিকতায় অধিকাংশ সময় শিক্ষকেরা ঈদের আগে বেতন এবং মূল বেতনের ২৫ ভাগ বোনাস তুলতে পারতেন না। তাতে অবশ্য শিক্ষকদের একধরনের লাভ হতো—‘বেতন-বোনাস পাইনি’ অজুহাতে তাঁরা সন্তানদের কিছু কেনাকাটা করা থেকে নিবৃত্ত রাখতে পারতেন। হেন পরিস্থিতিতে বেশ বিরক্ত হয়ে ২০০৬ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দাফনের পর কাফন’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা? পত্রিকার লেখা এ দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কি পড়ে, না গুরুত্ব দেয়?
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে একটি দারুণ উদ্যোগ নিল! তারা মধ্যস্বত্বভোগী না রেখে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পৌঁছানোর উদ্যোগ নিল এবং জানুয়ারির প্রথম দিনেই ডিসেম্বরের বেতন কতিপয় শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিল। আনন্দে আত্মহারা শিক্ষক ‘জীবনে প্রথমবার মাসের প্রথম দিন বেতন পেলাম’ শিরোনামে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে একেবারে ঝড় তুলে ফেললেন। অন্যরাও আনন্দিত হলেন। ধরে নিলেন, একটু দেরিতে হলেও সবাই হয়তো মাসের প্রথম সপ্তাহেই এবার বেতন পেয়ে যাবেন। কিন্তু না। প্রথম, দ্বিতীয় তো নয়ই, তৃতীয় সপ্তাহ পর আবার কিছু শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে বেতন ট্রান্সফার করতে সক্ষম হলো ইএফটি কর্তৃপক্ষ। এখন মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে অথচ পূর্ববর্তী মাসের বেতন অধিকাংশ শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। তাহলে মধ্যস্বত্বের সুযোগ কি এখানেও থাকবে?
ধরে নিলাম বিষয়টি অনেক জটিল! একসঙ্গে চার-পাঁচ লাখ শিক্ষকের ইএফটি করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় বাকি শিক্ষকদের বেতন কি আগের নিয়মে দেওয়া যেত না? আগে প্রবাদ ছিল ‘শিক্ষক তুমি শ্রেষ্ঠ সবার’ আর এখন হচ্ছে ‘শিক্ষক তুমি সর্বংসহা!’ একজন শিক্ষক কত টাকা মাইনে পান, তা কি এই সমাজের অজানা? অথচ এক মাস ধরে তাঁর পকেট খালি। কেমন করে চলে শিক্ষকের পরিবার, তা কি তাদের ভাবিত করে না? একদল গলা ফাটিয়ে বলবে, ‘শিক্ষক তো কোচিং-বাণিজ্য করে’, ‘প্রাইভেট পড়ায়’ ইত্যাদি ইত্যাদি। আরে বাবা, প্রাইভেট পড়ানো শিক্ষকের সংখ্যা শতকরা কত ভাগ? গণিত, ইংরেজি, পদার্থ, রসায়ন, হিসাববিজ্ঞান—এই কয়টা বিষয়ের শিক্ষকেরা ছাড়া বাকিদের কি সেই সুযোগ আছে? নেই। তারপরও ছোট ক্লাসের শিক্ষার্থীদের হোম টিউশনি, এটা-সেটা করিয়েই তো টিকে আছেন সিংহভাগ শিক্ষক।
অনেক লাভের কথার পর এবার একটু ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করি। ক্ষতিটা এবার ইগোটিক। কাদের? যাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকেন, সেই তাঁদের। আগে তাঁদের স্বাক্ষর ছাড়া বেতন হতো না। সে স্বাক্ষর নিতে যাওয়া অত সহজ ছিল না। মেজাজ-মর্জি বুঝে কাঁচুমাচু করে, এইভাবে-সেইভাবে খুশি করে অনেক প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হতো। যিনি স্বাক্ষর করতেন তিনি স্বাক্ষর শেষ করে সামাজিক মিটিংয়ে গলা উঁচিয়ে বলতে পারতেন আজ তিন-চার লাখ টাকার বেতন দিয়ে আসলাম শিক্ষকদের। সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করত (আসলে বোঝানো হতো) সেই টাকাটা সভাপতি মহোদয় বুঝি নিজের পকেট থেকেই দিয়েছেন! ইএফটি যে এই সুযোগটা নষ্ট করে দিতে যাচ্ছে, এটি এক পক্ষের জন্য ক্ষতি বৈকি।
আগের রাজনৈতিক সরকার অনেক ভুল করেছে। তথাকথিত কাচঘেরা শীতল ঘরে বসে যে শিক্ষাপদ্ধতি তারা চালু করেছিল, তাতে অনেক গলদ ছিল এবং এদেশীয় বাস্তবতায় তা সঠিক ফল বয়ে আনত না। যথাযথ লজিস্টিক সাপোর্ট ছাড়া কোনো পদ্ধতিই কার্যকর হয় না। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। তবে জানুয়ারির প্রথম দিন বই উৎসবের মধ্য দিয়ে সব শিক্ষার্থীই বেশির ভাগ বই আগে পেতে পারত। কিন্তু এবার ফেব্রুয়ারি পার হলেও সব বইয়ের দেখা মিলবে বলে মনে হচ্ছে না। এখানেও লাভ-ক্ষতি আছে। ক্ষতি যা হয়েছে তা ভারতীয় কিছু ছাপাখানার। আনন্দের বিষয় হলো, লাভবান হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ছাপাখানা পেশায় জড়িত ব্যবসায়ীরা। এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ছাপাখানা নিশ্চয়ই বিপুলসংখ্যক বই ছাপানোর সক্ষমতা অর্জন করবে।
তার আগে সংশোধন পরিমার্জন নামে যা হয়েছে তাতে কি নিরপেক্ষ মানদণ্ড বজায় ছিল? রাজনৈতিক অভিপ্রায় কি প্রতিফলিত হয়নি? যেই লাউ সেই কদুই কি রয়ে গেল না? আগে শিশুদের মনোজগৎ বিকশিত হয়েছে একধরনের ইতিহাস পড়ে আর এখন বিকশিত হবে অন্য ইতিহাস পড়ে। এটি ঠিক যে আগেও অতিরঞ্জিত একপেশে ইতিহাস ছিল। কিন্তু এবারও তো ব্যতিক্রম হয়নি। একই শিক্ষার্থীর মননে এই দুই ধরনের বয়ানে যে মিথস্ক্রিয়া তৈরি করবে, তার ফল কি সুখকর হবে? অথচ ঘুরে দাঁড়ানোর এবারই ছিল শ্রেষ্ঠ সময়। যে জন-আকাঙ্ক্ষা, যে পরিমাণ ঐকমত্য জুলাই-আগস্টে তৈরি হয়েছিল, তা কি আমরা ধরে রাখতে পেরেছি? না পারার কারণ একই—রাজনীতির দুষ্টচক্র! যে ছাত্রদের আহ্বানে পুরো দেশ এক হয়েছিল, সেই ছাত্রদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষেই হয়তো তানপুরাতে অনৈক্যের সুর বাজছে। জনপ্রতিনিধি হওয়ার বয়স ২১ বছরে নামিয়ে আনা সংস্কার কমিশনের যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তা যে ছাত্রদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার স্পষ্ট ইঙ্গিত, তা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না। ২১ বছরে জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ নেওয়া শিক্ষার্থী নবম-দশম শ্রেণিতে থাকতেই তো ক্ষমতার রাজনীতি শুরু করে দেবে। শিক্ষাঙ্গনের ছাত্রবান্ধব যে রাজনীতির কথা বলছি, তার কী হবে?
একের পর এক মব জাস্টিসের শিকার হয়ে কিছু শিক্ষকের জীবন অতিষ্ঠ হয়েছে। তাঁদের সবাই যে ধোয়া তুলসী পাতা ছিল, তা বলছি না। কিন্তু সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াটা নিশ্চিতভাবেই অশোভন ছিল। আর তাতে লাভবান হয়েছেন কেউ কেউ। সেই মব জাস্টিসে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বেপরোয়া বেপথু হয়েছে এবং তাতে সরাসরি ইন্ধন ছিল কিছু শিক্ষক, সমাজপতি তথা ম্যানেজিং কমিটির। আমি নিশ্চিত, এই বেপরোয়া শিক্ষার্থীরা আর শিক্ষার সুস্থ ধারায় ফিরে আসতে পারবে না। এ এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাঙ্গনের সামগ্রিক পরিবেশের জন্য। এই বেপথু ছাত্রদের আস্ফালন, একধরনের বিপরীত দর্শন অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর মননে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
সামগ্রিকভাবে বলতে হয়, লাভ-ক্ষতির এই যোগফলবিশেষ কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মনে হচ্ছে না। শুভবুদ্ধির উদয় হোক সব পক্ষের, শিক্ষাঙ্গনগুলো শিক্ষার বাতিঘর হয়ে উঠুক।
আগের রাজনৈতিক সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকে হস্তান্তর করত এবং পরদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের অমুক মাসের এমপিওর চেক হস্তান্তর শিরোনামে ফলাও করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করত। অনেক শিক্ষক তখন ‘না দেইখা দেখছে, পুঁটি মাছের লেখছে’, এই খনার বচনের ভাবাদর্শে সুখবর সুখবর শিরোনামে সেই খবর ফেসবুকে প্রচার করে পেজের রিচ বাড়াতে পারত। কথিত আছে, সেই চেক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাঁচ-সাত দিন নিজের ব্যাংকে খাটিয়ে তারপর চলতি মাসের ১০-১৫ তারিখের মধ্যে শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিতে পারত। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের খাটানোর মানসিকতায় অধিকাংশ সময় শিক্ষকেরা ঈদের আগে বেতন এবং মূল বেতনের ২৫ ভাগ বোনাস তুলতে পারতেন না। তাতে অবশ্য শিক্ষকদের একধরনের লাভ হতো—‘বেতন-বোনাস পাইনি’ অজুহাতে তাঁরা সন্তানদের কিছু কেনাকাটা করা থেকে নিবৃত্ত রাখতে পারতেন। হেন পরিস্থিতিতে বেশ বিরক্ত হয়ে ২০০৬ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দাফনের পর কাফন’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা? পত্রিকার লেখা এ দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কি পড়ে, না গুরুত্ব দেয়?
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে একটি দারুণ উদ্যোগ নিল! তারা মধ্যস্বত্বভোগী না রেখে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পৌঁছানোর উদ্যোগ নিল এবং জানুয়ারির প্রথম দিনেই ডিসেম্বরের বেতন কতিপয় শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিল। আনন্দে আত্মহারা শিক্ষক ‘জীবনে প্রথমবার মাসের প্রথম দিন বেতন পেলাম’ শিরোনামে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে একেবারে ঝড় তুলে ফেললেন। অন্যরাও আনন্দিত হলেন। ধরে নিলেন, একটু দেরিতে হলেও সবাই হয়তো মাসের প্রথম সপ্তাহেই এবার বেতন পেয়ে যাবেন। কিন্তু না। প্রথম, দ্বিতীয় তো নয়ই, তৃতীয় সপ্তাহ পর আবার কিছু শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে বেতন ট্রান্সফার করতে সক্ষম হলো ইএফটি কর্তৃপক্ষ। এখন মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে অথচ পূর্ববর্তী মাসের বেতন অধিকাংশ শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। তাহলে মধ্যস্বত্বের সুযোগ কি এখানেও থাকবে?
ধরে নিলাম বিষয়টি অনেক জটিল! একসঙ্গে চার-পাঁচ লাখ শিক্ষকের ইএফটি করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় বাকি শিক্ষকদের বেতন কি আগের নিয়মে দেওয়া যেত না? আগে প্রবাদ ছিল ‘শিক্ষক তুমি শ্রেষ্ঠ সবার’ আর এখন হচ্ছে ‘শিক্ষক তুমি সর্বংসহা!’ একজন শিক্ষক কত টাকা মাইনে পান, তা কি এই সমাজের অজানা? অথচ এক মাস ধরে তাঁর পকেট খালি। কেমন করে চলে শিক্ষকের পরিবার, তা কি তাদের ভাবিত করে না? একদল গলা ফাটিয়ে বলবে, ‘শিক্ষক তো কোচিং-বাণিজ্য করে’, ‘প্রাইভেট পড়ায়’ ইত্যাদি ইত্যাদি। আরে বাবা, প্রাইভেট পড়ানো শিক্ষকের সংখ্যা শতকরা কত ভাগ? গণিত, ইংরেজি, পদার্থ, রসায়ন, হিসাববিজ্ঞান—এই কয়টা বিষয়ের শিক্ষকেরা ছাড়া বাকিদের কি সেই সুযোগ আছে? নেই। তারপরও ছোট ক্লাসের শিক্ষার্থীদের হোম টিউশনি, এটা-সেটা করিয়েই তো টিকে আছেন সিংহভাগ শিক্ষক।
অনেক লাভের কথার পর এবার একটু ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করি। ক্ষতিটা এবার ইগোটিক। কাদের? যাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকেন, সেই তাঁদের। আগে তাঁদের স্বাক্ষর ছাড়া বেতন হতো না। সে স্বাক্ষর নিতে যাওয়া অত সহজ ছিল না। মেজাজ-মর্জি বুঝে কাঁচুমাচু করে, এইভাবে-সেইভাবে খুশি করে অনেক প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হতো। যিনি স্বাক্ষর করতেন তিনি স্বাক্ষর শেষ করে সামাজিক মিটিংয়ে গলা উঁচিয়ে বলতে পারতেন আজ তিন-চার লাখ টাকার বেতন দিয়ে আসলাম শিক্ষকদের। সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করত (আসলে বোঝানো হতো) সেই টাকাটা সভাপতি মহোদয় বুঝি নিজের পকেট থেকেই দিয়েছেন! ইএফটি যে এই সুযোগটা নষ্ট করে দিতে যাচ্ছে, এটি এক পক্ষের জন্য ক্ষতি বৈকি।
আগের রাজনৈতিক সরকার অনেক ভুল করেছে। তথাকথিত কাচঘেরা শীতল ঘরে বসে যে শিক্ষাপদ্ধতি তারা চালু করেছিল, তাতে অনেক গলদ ছিল এবং এদেশীয় বাস্তবতায় তা সঠিক ফল বয়ে আনত না। যথাযথ লজিস্টিক সাপোর্ট ছাড়া কোনো পদ্ধতিই কার্যকর হয় না। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। তবে জানুয়ারির প্রথম দিন বই উৎসবের মধ্য দিয়ে সব শিক্ষার্থীই বেশির ভাগ বই আগে পেতে পারত। কিন্তু এবার ফেব্রুয়ারি পার হলেও সব বইয়ের দেখা মিলবে বলে মনে হচ্ছে না। এখানেও লাভ-ক্ষতি আছে। ক্ষতি যা হয়েছে তা ভারতীয় কিছু ছাপাখানার। আনন্দের বিষয় হলো, লাভবান হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ছাপাখানা পেশায় জড়িত ব্যবসায়ীরা। এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ছাপাখানা নিশ্চয়ই বিপুলসংখ্যক বই ছাপানোর সক্ষমতা অর্জন করবে।
তার আগে সংশোধন পরিমার্জন নামে যা হয়েছে তাতে কি নিরপেক্ষ মানদণ্ড বজায় ছিল? রাজনৈতিক অভিপ্রায় কি প্রতিফলিত হয়নি? যেই লাউ সেই কদুই কি রয়ে গেল না? আগে শিশুদের মনোজগৎ বিকশিত হয়েছে একধরনের ইতিহাস পড়ে আর এখন বিকশিত হবে অন্য ইতিহাস পড়ে। এটি ঠিক যে আগেও অতিরঞ্জিত একপেশে ইতিহাস ছিল। কিন্তু এবারও তো ব্যতিক্রম হয়নি। একই শিক্ষার্থীর মননে এই দুই ধরনের বয়ানে যে মিথস্ক্রিয়া তৈরি করবে, তার ফল কি সুখকর হবে? অথচ ঘুরে দাঁড়ানোর এবারই ছিল শ্রেষ্ঠ সময়। যে জন-আকাঙ্ক্ষা, যে পরিমাণ ঐকমত্য জুলাই-আগস্টে তৈরি হয়েছিল, তা কি আমরা ধরে রাখতে পেরেছি? না পারার কারণ একই—রাজনীতির দুষ্টচক্র! যে ছাত্রদের আহ্বানে পুরো দেশ এক হয়েছিল, সেই ছাত্রদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষেই হয়তো তানপুরাতে অনৈক্যের সুর বাজছে। জনপ্রতিনিধি হওয়ার বয়স ২১ বছরে নামিয়ে আনা সংস্কার কমিশনের যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তা যে ছাত্রদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার স্পষ্ট ইঙ্গিত, তা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না। ২১ বছরে জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ নেওয়া শিক্ষার্থী নবম-দশম শ্রেণিতে থাকতেই তো ক্ষমতার রাজনীতি শুরু করে দেবে। শিক্ষাঙ্গনের ছাত্রবান্ধব যে রাজনীতির কথা বলছি, তার কী হবে?
একের পর এক মব জাস্টিসের শিকার হয়ে কিছু শিক্ষকের জীবন অতিষ্ঠ হয়েছে। তাঁদের সবাই যে ধোয়া তুলসী পাতা ছিল, তা বলছি না। কিন্তু সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াটা নিশ্চিতভাবেই অশোভন ছিল। আর তাতে লাভবান হয়েছেন কেউ কেউ। সেই মব জাস্টিসে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বেপরোয়া বেপথু হয়েছে এবং তাতে সরাসরি ইন্ধন ছিল কিছু শিক্ষক, সমাজপতি তথা ম্যানেজিং কমিটির। আমি নিশ্চিত, এই বেপরোয়া শিক্ষার্থীরা আর শিক্ষার সুস্থ ধারায় ফিরে আসতে পারবে না। এ এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাঙ্গনের সামগ্রিক পরিবেশের জন্য। এই বেপথু ছাত্রদের আস্ফালন, একধরনের বিপরীত দর্শন অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর মননে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
সামগ্রিকভাবে বলতে হয়, লাভ-ক্ষতির এই যোগফলবিশেষ কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মনে হচ্ছে না। শুভবুদ্ধির উদয় হোক সব পক্ষের, শিক্ষাঙ্গনগুলো শিক্ষার বাতিঘর হয়ে উঠুক।
২০ বছর আগে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অটিজম শব্দটির অস্তিত্ব প্রায় খুঁজে পাওয়া যেত না। অটিজম বিষয়ে মানুষের ধারণা সীমিত ছিল। ঠিক সেই সময়ে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘কানন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির একটি চারতলা ভাড়া বাড়িতে...
৬ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয় দেশটা বুঝি ট্রায়াল অ্যান্ড এররের ভিত্তিতে চলছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়েও নানা ধরনের পরীক্ষামূলক তত্ত্ব দেখতে পাচ্ছি। প্রথমে নতুন কিছু একটা বলা হয় বা চালু করা হয়। তারপর দেখা হয়—কতটা বিতর্ক হয় সেটা নিয়ে।
১১ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়া ও অস্থায়ী আবাসনসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের ফলে কর্তৃপক্ষ আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার পরও প্রত্যাশিত দাবির বাস্তবায়ন না দেখে আবারও...
১২ ঘণ্টা আগেআকৃষ্ট করেছিল, সে বাণী যেন কথার কথায় পরিণত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ভালো একটি ভবিষ্যতের আশা ক্রমেই ধূসরতার দিকে যাচ্ছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড ও নিউমার্কেট এলাকার মধ্যে থাকা ৫৭টি মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এই মার্কেটগুলো থেকে প্রতি মাসে সেবা খাত...
১২ ঘণ্টা আগে