Ajker Patrika

আত্মহত্যার প্রবণতা

বাসব রায়
বাসব রায়। ছবি: সংগৃহীত
বাসব রায়। ছবি: সংগৃহীত

দিন দিন আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক বিড়ম্বনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ধারণাটা হয়তো এ রকম যে, মরতে যখন হবেই তখন আজই কী আর কালইবা কী! স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা যখন নেই, তখন অস্বাভাবিক মৃত্যু যেকোনো সময় হতেই পারে। তবে মৃত্যুর প্রস্তুতিটা সহজ নয়; বেশ কঠিন। মরণকে যখন কেউ শেষ আশ্রয় ভাবে, তখন সে কোনো প্রকার বাছবিচার ছাড়া মৃত্যুকেই গুরুত্ব দেয় বেশি। মনে করে তার মৃত্যুতে হয়তো সে বেঁচে যাবে। বাবা-মা বকাঝকা করবে না, বিরহ সইতে হবে না, দাম্পত্য কলহ হবে না, পাওনাদারেরা আর ধরবে না, আর লাঞ্ছিত হতে হবে না; অদ্ভুত সব ভাবনা মানসপটে জেগে ওঠে এবং তখন সে একা হয়ে যায়; কেউ তাকে সান্ত্বনা দিতেও এগিয়ে আসে না। এরূপ মানসিক বিপর্যয়ে সে ভেঙে পড়ে এবং মৃত্যুকে যেভাবেই হোক বরণ করে নিতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।

দুর্বলেরা মরতে চায়। মরেও বেশি নিয়ন্ত্রিত নয় যারা তাদের মরাই উচিত। কারণ পৃথিবী বা সংসারের বোঝা হয়ে থাকবার অধিকার তো তার নেই! জীবদ্দশায় যে তার চারপাশকে বিষাক্ত করে ফেলে তার মরণে পৃথিবী জঞ্জালমুক্ত হয়। এমন মৃত্যুতে কেউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে না, একবিন্দু চোখের জলও নয়। বেচারা ‘ফালতু’ জীবন নিয়ে এসে জগাখিচুড়ি কারবার করে গেল! মানসম্মান যেতে যেতে যখন আর অবশিষ্ট বলে কিঞ্চিৎ পরিমাণও থাকে না তখন আত্মঘাতী হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। জীবন থেকে পালিয়ে মুক্তির স্বাদ পেতে চায়; কী বিচিত্র মানুষের ভাবনা! মরে গেলে আবার মুক্তির স্বাদ-অস্বাদে কী আসে যায়।

বস্তুত অকালকুষ্মাণ্ড জাতের লোকেরাই এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। সংসারকে জলাঞ্জলি দিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী না হয়ে জীবনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভেবে নিজেকেই শেষ করে ফেলে। এরা সত্যিকার অর্থেই জগৎ সংসারের বড় আপদ! এমন সব আপদের বিদেয় হওয়াটাও জরুরি। এদের ভারে ভারাক্রান্ত পৃথিবী কলঙ্কিত হয়, নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে। তাই কোনো না কোনোভাবে এসব মানুষের সরে পড়াই উত্তম।

আত্মহননের বিবিধ পন্থা আছে। বাসে, ট্রেনে বা মোটরবাইকে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে মরতে পারে। তবে এটি হতে হবে গতিতে বেপরোয়া এবং যাচ্ছেতাই গোছের। ভয়ানক বিষপান একটি ভালো সিস্টেম। শক্তিশালী রশি এবং রশিটা যদি ফিলিপাইনের রশি হয় তাহলে তো কোনো কথা হবে না। এসব পদ্ধতির জুতসই কোনো একটা বেছে নিলেই এবং কায়মনোবাক্যে সেটি বাস্তবায়নে উৎসাহী হলে আত্মাহুতিতে সমস্যা হবে না বা হয় না। শুধু মনে রাখতে হবে, যেন কোনোভাবেই আধমরা হয়ে থাকা চলবে না। এটিও এক ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা। অনেকেই কথায় কথায় আত্মহত্যার হুমকি দেখায় কিন্তু বাস্তবে সেটা কথার কথা; তার সাধ্য নেই যে আত্মহত্যা করে দেখাতে পারে।

প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে আত্মহত্যা; পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হলে আত্মহত্যা, স্বামী-স্ত্রীতে মনোমালিন্যের কারণে সুইসাইড, বাবা-মায়ের ওপর অভিমানে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যা, ঋণে কাবু হয়ে আত্মহত্যা প্রভৃতি বহু কিসিমের প্রক্রিয়া ও কারণ আত্মহত্যার পেছনে কলকাঠি নাড়ে যার বেশির ভাগ আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। সম্প্রতি ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীও বেছে নিয়েছে এই পথ। শাস্ত্রসম্মতভাবে আত্মহত্যা প্রক্রিয়াটি খুবই পাপের এবং সরাসরি নরকবাসের অর্ডার আছে এটাতে। আসলেও ‘যে জীবন তুমি ধারণ করতে পারোনি সে জীবন নষ্ট করবার অধিকার তো তোমার থাকতে পারে না।’ যুক্তি বটে!

এতসব যুক্তিবুদ্ধি থেকেও মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এত বড় একটা সাংঘাতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মানুষ আসলে কতটুকু ভাবে তা বোধকরি জানা যায়নি। তবে এটি একটি মানসিক অসুস্থতা এবং এ ধরনের মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে দরকার ভালো কাউন্সিলিংয়ের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

উদ্দীপনের ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সচিব মিহির কান্তির বিরুদ্ধে ৬ মামলা

ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি: প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা: আইন উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত