মাসুদ কামাল
মাঝে মাঝে মনে হয় দেশটা বুঝি ট্রায়াল অ্যান্ড এররের ভিত্তিতে চলছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়েও নানা ধরনের পরীক্ষামূলক তত্ত্ব দেখতে পাচ্ছি। প্রথমে নতুন কিছু একটা বলা হয় বা চালু করা হয়। তারপর দেখা হয়—কতটা বিতর্ক হয় সেটা নিয়ে। আপত্তি সহনীয় পর্যায়ে থাকলে তো কোনো কথা নেই, একটু বেশি আপত্তি উঠলে, সেটির সর্বজনগ্রাহ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, ‘সরি’ বলে ফিরে আসা। এরপর কিছুদিন অপেক্ষা। কদিন পর আবার অন্য কিছু নিয়ে নতুন কোনো ট্রায়াল। এভাবেই চলছে।
আগস্টের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখা গেছে সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে কার কী অবদান—সেটা নিয়ে বিতর্ক কিন্তু নতুন নয়। নানা সরকারের আমলে নানা ন্যারেটিভ দেখা গেছে। হাসিনার গত ১৬ বছরে, তাঁর সরকার মুক্তিযুদ্ধকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একক কৃতিত্ব বলে প্রচারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। বিশাল এই গণযুদ্ধে আরও যে অবদান ছিল, এটা হাসিনা সরকার মানতেই রাজি ছিল না। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা বহুবার প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘আমার বাবা এই দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়েছেন!’ তাজউদ্দীন বা অন্য কোনো নেতাকে তিনি এই কৃতিত্বের শেয়ার দিতে রাজি হননি। এমনকি পিতার জন্য ঢোল পেটাতে পেটাতে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছেন যে, লাখো মানুষের আত্মত্যাগও যেন এখানে একেবারে গৌণ হয়ে গিয়েছিল।
বিপরীত দিকে বিএনপির ন্যারেটিভটা ভিন্ন। তারা বঙ্গবন্ধুকে একেবারে বাতিল করে দেয়নি, তবে তারও চেয়ে বড় করে দেখাতে চেয়েছে জিয়াউর রহমানকে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টায় যেহেতু বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন, তাই বিএনপির কোনো কোনো নেতা এমনকি বঙ্গবন্ধুকে ‘প্রথম রাজাকার’ বলেও অভিহিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আদৌ বাংলাদেশের স্বাধীনতা চানইনি।
বিএনপির এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গত মেয়াদের আওয়ামী লীগকে দেখা গেছে খুবই আক্রমণাত্মক অবস্থানে। বলতে বলতে আওয়ামী লীগের একেবারে শীর্ষ নেতারা জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকাকে পর্যন্ত খাটো করে দেখাতে চেয়েছেন। বলেছেন, জিয়া নাকি মুক্তিযুদ্ধই করেননি! খোদ শেখ হাসিনাকে এমনও বলতে শোনা গেছে—জিয়া নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের চর ছিলেন!
এ রকম সব পাল্টাপাল্টি বিতর্কের মধ্যে পুরো সময়ই চুপ করে থাকত জামায়াতে ইসলামী। মুক্তিযুদ্ধে তাদের নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে তারা বরং সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকত। ভাবত, এই বুঝি তাদের প্রসঙ্গটি উঠছে। আর সে প্রসঙ্গ উঠলে, তাদের তো জবাব দেওয়ার মতো কিছু নেই। শেষ দিকে তারা বলার চেষ্টা করত—জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্বের কেউ তো আর মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়সে অতটা বড় ছিল না, মুক্তিযুদ্ধে যোগদান কিংবা বিরোধিতা—কোনোটি করার অবস্থাই তাদের ছিল না। এসব বলত বটে, কিন্তু তার মাধ্যমে মৃদু কিছু আত্মতৃপ্তি ছাড়া আর কিছু মিলত বলে মনে হয় না।
কিন্তু এবার, আগস্ট পটপরিবর্তনের পর জামায়াত-শিবিরের সেই বাস্তবতা যেন হঠাৎ করেই আমূল পাল্টে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা আর আগের মতো রাখঢাক করছে না। এই গণ-আন্দোলনে ছাত্ররা যখন মূল কৃতিত্বের দাবি করছে, তখন সেই ছাত্রদের পেছনের চালিকাশক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থানের কথা বলছে তারা। আন্দোলনের অনেক কৌশল আর কর্মসূচির উদ্যোক্তাই নাকি তারা ছিল বলে দাবি করছে শিবিরের ছেলেরা।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেখানে উপদেষ্টা পরিষদে তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি জায়গা পান। এই তিনজনের কথাবার্তা ও আচরণ বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে অবদান—এসব নিয়ে বেশ বিতর্কের জন্ম দেয়। তাঁরা এমন সব কথা বলতে থাকেন, এমন কিছু কাজ করতে থাকেন, যা কিনা একাত্তরের জামায়াতের রাজনীতিকেই মনে করিয়ে দেয়। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন দিয়েই সম্ভবত এই ধারার শুরু। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে ৭ মার্চকে বাদ দেয়। সব উপদেষ্টা যদিও শপথ নেওয়ার সময় সংবিধানকে সমুন্নত রাখার কথা বলেছিলেন, কিন্তু এর পরপরই বলতে থাকেন যে তাঁরা নাকি এই সংবিধানকে মানেন না। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবেও মানেন না। বঙ্গবন্ধুর ছবি সরকারি অফিসে থাকার কথা বলা হলেও তাঁরা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে সেসব ছবি নামাতে থাকেন।
শুরুতে একবার দেখলাম জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রবীন্দ্রনাথ হিন্দু, ভারতের অধিবাসী, তিনি কেন আমাদের জাতীয় সংগীত লিখবেন? এটা পাল্টাতে হবে। তবে এই আবদার খুব একটা হালে পানি পায়নি। সমর্থনের চেয়ে এ নিয়ে প্রতিবাদই হলো বেশি। ফলে এই ট্রায়ালটা থেমে গেল। কদিন পর এক ছাত্র-উপদেষ্টা দেশের মানচিত্র বৃদ্ধি করতে চাইলেন। বলতে চাইলেন ২০২৪-এর আগস্টে নাকি আংশিক বিজয় হয়েছে। বিজয় সম্পূর্ণ হবে তখন, যখন নাকি পার্শ্ববর্তী দেশের বেশ কিছু অঞ্চল আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে। কল্পিত সেই দেশের একটা মানচিত্রও তিনি দিয়ে দিলেন তাঁর ভেরিফায়েড পেজে। এবার অবশ্য হইচই একটু বেশিই হলো। ট্রায়ালটা ফেল মারল। ধাক্কা খেয়ে তিনি তাঁর সেই স্ট্যাটাসটা তুলে নিলেন।
‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ প্রকল্পের সবশেষ নমুনাটি উপহার দিল জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। তাদের মাসিক প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’-এর ডিসেম্বর সংখ্যায় একটা প্রবন্ধে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মারাত্মক কিছু কথা লেখা হয়েছিল। ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে লেখা হয়—‘সে সময় না বুঝে অনেক মুসলিম মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন।’ প্রবন্ধটি লেখেন আহমেদ আফগানী নামে একজন। এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে আলোচনা শুরু হলে প্রথমে ছাত্রশিবির এর দায় নিতে অস্বীকার করে। বলে—এটা নাকি লেখকের দায়। লেখক আহমেদ আফগানীও একই কথা বলেন। আফগানী নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করতেও রাজি হননি। তিনি বলেন, এটা তাঁর ‘গবেষণালব্ধ’ কাজ। তিনি নাকি ১৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং তা থেকে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন! পরে অবশ্য শিবিরের পক্ষ থেকে প্রবন্ধটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা আসে, সেই সঙ্গে তারা দুঃখও প্রকাশ করে।
এই ঘটনাটিকে কীভাবে দেখবেন? প্রবন্ধটি ‘ছাত্র সংবাদ’-এর সম্পাদকমণ্ডলী কি আগে দেখেনি? নিশ্চয়ই দেখেছে। দেখে-শুনে-বুঝেই তারা এটি ছেপেছে। ছাপা হওয়ার বেশ পরেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। হয়তো তারা আগেই ভেবে রেখেছিল, প্রতিক্রিয়ার মাত্রা দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রতিক্রিয়া তীব্র হওয়াতে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
আমাদের এখন অপেক্ষা করতে হবে—ভবিষ্যতে আরও কোন কোন ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তনের আবদার ওঠে, ইতিহাসের আর কোন কোন নতুন ভাষ্য আমাদের সহ্য করতে হয়। মাঝে মাঝে বিস্মিত হয়ে ভাবি—পৃথিবীতে এমন জাতি আর কয়টা আছে, যাদের ইতিহাস প্রতিটি সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায়! সামনে আনা হয় নতুন বয়ান।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
মাঝে মাঝে মনে হয় দেশটা বুঝি ট্রায়াল অ্যান্ড এররের ভিত্তিতে চলছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়েও নানা ধরনের পরীক্ষামূলক তত্ত্ব দেখতে পাচ্ছি। প্রথমে নতুন কিছু একটা বলা হয় বা চালু করা হয়। তারপর দেখা হয়—কতটা বিতর্ক হয় সেটা নিয়ে। আপত্তি সহনীয় পর্যায়ে থাকলে তো কোনো কথা নেই, একটু বেশি আপত্তি উঠলে, সেটির সর্বজনগ্রাহ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, ‘সরি’ বলে ফিরে আসা। এরপর কিছুদিন অপেক্ষা। কদিন পর আবার অন্য কিছু নিয়ে নতুন কোনো ট্রায়াল। এভাবেই চলছে।
আগস্টের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখা গেছে সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে কার কী অবদান—সেটা নিয়ে বিতর্ক কিন্তু নতুন নয়। নানা সরকারের আমলে নানা ন্যারেটিভ দেখা গেছে। হাসিনার গত ১৬ বছরে, তাঁর সরকার মুক্তিযুদ্ধকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একক কৃতিত্ব বলে প্রচারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। বিশাল এই গণযুদ্ধে আরও যে অবদান ছিল, এটা হাসিনা সরকার মানতেই রাজি ছিল না। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা বহুবার প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘আমার বাবা এই দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়েছেন!’ তাজউদ্দীন বা অন্য কোনো নেতাকে তিনি এই কৃতিত্বের শেয়ার দিতে রাজি হননি। এমনকি পিতার জন্য ঢোল পেটাতে পেটাতে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছেন যে, লাখো মানুষের আত্মত্যাগও যেন এখানে একেবারে গৌণ হয়ে গিয়েছিল।
বিপরীত দিকে বিএনপির ন্যারেটিভটা ভিন্ন। তারা বঙ্গবন্ধুকে একেবারে বাতিল করে দেয়নি, তবে তারও চেয়ে বড় করে দেখাতে চেয়েছে জিয়াউর রহমানকে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টায় যেহেতু বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন, তাই বিএনপির কোনো কোনো নেতা এমনকি বঙ্গবন্ধুকে ‘প্রথম রাজাকার’ বলেও অভিহিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আদৌ বাংলাদেশের স্বাধীনতা চানইনি।
বিএনপির এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গত মেয়াদের আওয়ামী লীগকে দেখা গেছে খুবই আক্রমণাত্মক অবস্থানে। বলতে বলতে আওয়ামী লীগের একেবারে শীর্ষ নেতারা জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকাকে পর্যন্ত খাটো করে দেখাতে চেয়েছেন। বলেছেন, জিয়া নাকি মুক্তিযুদ্ধই করেননি! খোদ শেখ হাসিনাকে এমনও বলতে শোনা গেছে—জিয়া নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের চর ছিলেন!
এ রকম সব পাল্টাপাল্টি বিতর্কের মধ্যে পুরো সময়ই চুপ করে থাকত জামায়াতে ইসলামী। মুক্তিযুদ্ধে তাদের নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে তারা বরং সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকত। ভাবত, এই বুঝি তাদের প্রসঙ্গটি উঠছে। আর সে প্রসঙ্গ উঠলে, তাদের তো জবাব দেওয়ার মতো কিছু নেই। শেষ দিকে তারা বলার চেষ্টা করত—জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্বের কেউ তো আর মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়সে অতটা বড় ছিল না, মুক্তিযুদ্ধে যোগদান কিংবা বিরোধিতা—কোনোটি করার অবস্থাই তাদের ছিল না। এসব বলত বটে, কিন্তু তার মাধ্যমে মৃদু কিছু আত্মতৃপ্তি ছাড়া আর কিছু মিলত বলে মনে হয় না।
কিন্তু এবার, আগস্ট পটপরিবর্তনের পর জামায়াত-শিবিরের সেই বাস্তবতা যেন হঠাৎ করেই আমূল পাল্টে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা আর আগের মতো রাখঢাক করছে না। এই গণ-আন্দোলনে ছাত্ররা যখন মূল কৃতিত্বের দাবি করছে, তখন সেই ছাত্রদের পেছনের চালিকাশক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থানের কথা বলছে তারা। আন্দোলনের অনেক কৌশল আর কর্মসূচির উদ্যোক্তাই নাকি তারা ছিল বলে দাবি করছে শিবিরের ছেলেরা।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেখানে উপদেষ্টা পরিষদে তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি জায়গা পান। এই তিনজনের কথাবার্তা ও আচরণ বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে অবদান—এসব নিয়ে বেশ বিতর্কের জন্ম দেয়। তাঁরা এমন সব কথা বলতে থাকেন, এমন কিছু কাজ করতে থাকেন, যা কিনা একাত্তরের জামায়াতের রাজনীতিকেই মনে করিয়ে দেয়। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন দিয়েই সম্ভবত এই ধারার শুরু। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে ৭ মার্চকে বাদ দেয়। সব উপদেষ্টা যদিও শপথ নেওয়ার সময় সংবিধানকে সমুন্নত রাখার কথা বলেছিলেন, কিন্তু এর পরপরই বলতে থাকেন যে তাঁরা নাকি এই সংবিধানকে মানেন না। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবেও মানেন না। বঙ্গবন্ধুর ছবি সরকারি অফিসে থাকার কথা বলা হলেও তাঁরা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে সেসব ছবি নামাতে থাকেন।
শুরুতে একবার দেখলাম জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রবীন্দ্রনাথ হিন্দু, ভারতের অধিবাসী, তিনি কেন আমাদের জাতীয় সংগীত লিখবেন? এটা পাল্টাতে হবে। তবে এই আবদার খুব একটা হালে পানি পায়নি। সমর্থনের চেয়ে এ নিয়ে প্রতিবাদই হলো বেশি। ফলে এই ট্রায়ালটা থেমে গেল। কদিন পর এক ছাত্র-উপদেষ্টা দেশের মানচিত্র বৃদ্ধি করতে চাইলেন। বলতে চাইলেন ২০২৪-এর আগস্টে নাকি আংশিক বিজয় হয়েছে। বিজয় সম্পূর্ণ হবে তখন, যখন নাকি পার্শ্ববর্তী দেশের বেশ কিছু অঞ্চল আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে। কল্পিত সেই দেশের একটা মানচিত্রও তিনি দিয়ে দিলেন তাঁর ভেরিফায়েড পেজে। এবার অবশ্য হইচই একটু বেশিই হলো। ট্রায়ালটা ফেল মারল। ধাক্কা খেয়ে তিনি তাঁর সেই স্ট্যাটাসটা তুলে নিলেন।
‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ প্রকল্পের সবশেষ নমুনাটি উপহার দিল জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। তাদের মাসিক প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’-এর ডিসেম্বর সংখ্যায় একটা প্রবন্ধে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মারাত্মক কিছু কথা লেখা হয়েছিল। ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে লেখা হয়—‘সে সময় না বুঝে অনেক মুসলিম মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন।’ প্রবন্ধটি লেখেন আহমেদ আফগানী নামে একজন। এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে আলোচনা শুরু হলে প্রথমে ছাত্রশিবির এর দায় নিতে অস্বীকার করে। বলে—এটা নাকি লেখকের দায়। লেখক আহমেদ আফগানীও একই কথা বলেন। আফগানী নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করতেও রাজি হননি। তিনি বলেন, এটা তাঁর ‘গবেষণালব্ধ’ কাজ। তিনি নাকি ১৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং তা থেকে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন! পরে অবশ্য শিবিরের পক্ষ থেকে প্রবন্ধটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা আসে, সেই সঙ্গে তারা দুঃখও প্রকাশ করে।
এই ঘটনাটিকে কীভাবে দেখবেন? প্রবন্ধটি ‘ছাত্র সংবাদ’-এর সম্পাদকমণ্ডলী কি আগে দেখেনি? নিশ্চয়ই দেখেছে। দেখে-শুনে-বুঝেই তারা এটি ছেপেছে। ছাপা হওয়ার বেশ পরেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। হয়তো তারা আগেই ভেবে রেখেছিল, প্রতিক্রিয়ার মাত্রা দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রতিক্রিয়া তীব্র হওয়াতে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
আমাদের এখন অপেক্ষা করতে হবে—ভবিষ্যতে আরও কোন কোন ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তনের আবদার ওঠে, ইতিহাসের আর কোন কোন নতুন ভাষ্য আমাদের সহ্য করতে হয়। মাঝে মাঝে বিস্মিত হয়ে ভাবি—পৃথিবীতে এমন জাতি আর কয়টা আছে, যাদের ইতিহাস প্রতিটি সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায়! সামনে আনা হয় নতুন বয়ান।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
২০ বছর আগে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অটিজম শব্দটির অস্তিত্ব প্রায় খুঁজে পাওয়া যেত না। অটিজম বিষয়ে মানুষের ধারণা সীমিত ছিল। ঠিক সেই সময়ে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘কানন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির একটি চারতলা ভাড়া বাড়িতে...
৩ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়া ও অস্থায়ী আবাসনসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের ফলে কর্তৃপক্ষ আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার পরও প্রত্যাশিত দাবির বাস্তবায়ন না দেখে আবারও...
৯ ঘণ্টা আগেআকৃষ্ট করেছিল, সে বাণী যেন কথার কথায় পরিণত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ভালো একটি ভবিষ্যতের আশা ক্রমেই ধূসরতার দিকে যাচ্ছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড ও নিউমার্কেট এলাকার মধ্যে থাকা ৫৭টি মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এই মার্কেটগুলো থেকে প্রতি মাসে সেবা খাত...
৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ যখন সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী তখন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশে তার ভূমিকা কার্যত পরিত্যাগ করে সে ক্ষেত্রে ঢাকা চীনের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠতে পারে এবং তাহলে বেইজিং নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশকে আরও বেশি অর্থায়ন ও ঋণ দেবে।
২০ ঘণ্টা আগে