রুশা চৌধুরী
মানুষের জীবন এক আশ্চর্য দাঁড়িপাল্লার মতো। এক পাশ কানায় কানায় আনন্দ তো অন্য পাশে সমান সমান বিষাদ।
নাকি কিছু কম-বেশি থাকে তাতে? কিন্তু যদি তাই হতো তবে কি এক আকাশ ভরা রোদ উঠেছে তো আরেক আকাশে শুধু মেঘ-বৃষ্টির খেলা চলত? কিংবা পৃথিবীর এক পাশে আঁধার হলে উল্টো পাশে আলোর রোশনাই ভরে উঠত?
এই যে আলো-আঁধারের খেলা, এর মূল সুর বাঁধা যার হাতে, তার নাম ‘সময়’। খুব ভেবে দেখলে বোঝা যায় এই ‘সময়’ নামের উল্টাপাল্টা ‘প্রাণীটিই’ আমাদের দিয়ে ওর যা ইচ্ছে তাই করিয়ে নিচ্ছে! অদৃশ্য একজন কেউ সময়ের ঘোড়াটার লাগাম ধরে আছে।
সকালের রোদ, দুপুরের আলো, বিকেলের ওম আর রাতের আঁধারের সঙ্গে জীবন মিলিয়ে কোনো মাহেন্দ্রক্ষণে বোকা মানুষ ভেবে নেই, ‘আহা! জীবনটা কেমন কাটিয়ে যাচ্ছি আমরা!’
সত্যি কি তাই? এ জীবন কি শুধুই ভেবে কাটিয়ে দেওয়ার? সেই ছোটবেলায় পড়েছিলাম:
‘পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অন্তর্যামী...’
কী অমোঘ এই বাণী! কী গভীর সত্যি কথা। জীবনের প্রতিটা বাঁকে মানুষ এক অনিত্য খেলা খেলে যাচ্ছে—জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, জীবনযাপন, সংসার, মেতে থাকা এক আপন ভুবনে। সত্যি কি আমরা পুতুলের মতো চলছি না? খেলছি, হাঁটছি আর রোদ-বৃষ্টি-অন্ধকারকে আপন ভেবে যাচ্ছি। সবটায় নিজেকে নিয়েই মেতে থাকা।
পথ খুশি, রথ খুশি, মূর্তিটাও খুশি...জমজমাট ‘রথযাত্রা’ যদি জীবনের খেলা ধরে নিই, তবে সেই ‘জীবনখেলার’ আসল সুতাটা হাতে নিয়ে এক বিরাট শিশু যে আনমনে এক অনন্ত খেলা খেলে যাচ্ছে, তা বোঝার শক্তি পাই না কেন?
এই যে এমন ভাবনা, তা হয়তো এক আশ্চর্য দুর্বল বা শক্তিশালী মুহূর্তে আমাদের মনে হানা দেয়। একটু ভাবায় আবার ভুলিয়ে দেয় কেউ। আর ভুলে থাকা যায় বলেই এত আমার-আমার খেলা! এই খেলা যুদ্ধ বাধায়, মৃত্যু ডেকে আনে, ভেদাভেদ তৈরি করে, হানাহানি আর হিংসায় ডুবিয়ে দেয়। নিজের বাইরে চিন্তা করবার সময়টা সব মানুষের মনে একবারে উদয় হলে হয়তো পৃথিবী অন্য রকম হতো।
খুব আবোলতাবোল কথার পসরা সাজালাম। তবে জীবনের হিসাবটা যে এ রকমটাই মনে হয় আজকাল। এই যে দিনটা খুব নিজের মনে হলো, একটু পরেই সে আর আমার নেই! তার শরীরজুড়ে অন্য দিনের ছায়া! অন্য কারও নাম! ‘তারে আমার আমার মনে করে আমার করে আর পেলেম না!’
এই কি নয় জীবন? ছুটে চলো ছুটে চলো, যতটা জোরে পারা যায়! কেউ পেছনে পড়ে গেল, সে তোমার সঙ্গেই ছিল। আপন আর প্রিয় ছিল, তাতে কী! তোমাকে বা আমাকে পৌঁছে যেতেই হবে সেই গন্তব্যে, যার একটুও আমাদের হাতে নেই। তবু সবার আগে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা—এই তো মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া আছে।
মুক্তির জন্য খুব লড়ে গেলাম। তারপর মুক্তির আনন্দে হাত মেলে দেখলাম হাতের তলায় নানান রকম আঁকিবুঁকি যা শিকল হয়ে আটকে দিতে চাইছে আমাদের সংসার-জগৎ বা মহাজাগতিক কোনো বস্তুর সঙ্গে। এই কি সেই সোনার শিকল যাতে জীবনরহস্য লুকানো আছে? রহস্যের সমাধান খোঁজা মানুষ ক্লান্ত হয় না কখনো। হয়তো তাতেই মুক্তি, তাতেই আলো, তাতেই বেঁচে থাকা। পুরোটা না বুঝে, সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েও আবার সবাইকে নিয়েই একসঙ্গে বেঁচে থাকা।
যুদ্ধ বাধে, রক্ত ঝড়ে, নিজের মতো কারও জয় হয়। কেউ হেরে যায়। আর আড়াল থেকে মুচকি হাসে সময়ের নাটাই হাতে সেই অদৃশ্য একজন! কেউ কেউ আছে যারা শুধু মনে মনে না, সরবেও চায়, ‘অন্তত বেঁচে থাকাগুলো সুন্দর হোক সবার জন্য।’
হাঁটুপানি থেকে অসাবধানে বুকপানিতে চলে গেলে বুকের মাঝে কী সীমাহীন আতঙ্ক চেপে আসে, যখন স্রোতের টান ভাসিয়ে নিতে চায়! কেমন লাগে? কেমন সেই কষ্ট? কতটা সেই যন্ত্রণা? আর প্রিয়জনের একেবারে হারিয়ে যাওয়া!
যার যায় সে ছাড়া আর কেউ কেন বুঝতে পারে না? নাকি বুঝতে চায় না? বুঝতে না চাওয়ার এক ভয়ানক উন্মাদনা!
তবু মানুষ হয়ে জন্মানোর এই অনন্ত টানাপোড়েন ভাবায় মানুষকেই। মানুষই মানুষকে মারে, রক্ত ঝরায় তারপর সেই রক্তের মাঝে কেউ হাসে আবার কেউ ডুবে যায় কান্নার অতলে।
সবচেয়ে সহজ আর কম কষ্টের কাজটুকুই আজও করতে শেখা হলো না আমাদের। যার যতটুকু সাধ্য সবার পাশে থাকা, একটু সাহায্য করা...সরবে বা নীরবে। যেমন করে আকাশ পারে, প্রকৃতি পারে, নিজেদের সৃষ্টির সেরা ভেবে নিয়েও মানুষ আজও এইটুকুন কাজ শিখে উঠতে পারল না।
লেখক: আবৃত্তিশিল্পী
মানুষের জীবন এক আশ্চর্য দাঁড়িপাল্লার মতো। এক পাশ কানায় কানায় আনন্দ তো অন্য পাশে সমান সমান বিষাদ।
নাকি কিছু কম-বেশি থাকে তাতে? কিন্তু যদি তাই হতো তবে কি এক আকাশ ভরা রোদ উঠেছে তো আরেক আকাশে শুধু মেঘ-বৃষ্টির খেলা চলত? কিংবা পৃথিবীর এক পাশে আঁধার হলে উল্টো পাশে আলোর রোশনাই ভরে উঠত?
এই যে আলো-আঁধারের খেলা, এর মূল সুর বাঁধা যার হাতে, তার নাম ‘সময়’। খুব ভেবে দেখলে বোঝা যায় এই ‘সময়’ নামের উল্টাপাল্টা ‘প্রাণীটিই’ আমাদের দিয়ে ওর যা ইচ্ছে তাই করিয়ে নিচ্ছে! অদৃশ্য একজন কেউ সময়ের ঘোড়াটার লাগাম ধরে আছে।
সকালের রোদ, দুপুরের আলো, বিকেলের ওম আর রাতের আঁধারের সঙ্গে জীবন মিলিয়ে কোনো মাহেন্দ্রক্ষণে বোকা মানুষ ভেবে নেই, ‘আহা! জীবনটা কেমন কাটিয়ে যাচ্ছি আমরা!’
সত্যি কি তাই? এ জীবন কি শুধুই ভেবে কাটিয়ে দেওয়ার? সেই ছোটবেলায় পড়েছিলাম:
‘পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অন্তর্যামী...’
কী অমোঘ এই বাণী! কী গভীর সত্যি কথা। জীবনের প্রতিটা বাঁকে মানুষ এক অনিত্য খেলা খেলে যাচ্ছে—জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, জীবনযাপন, সংসার, মেতে থাকা এক আপন ভুবনে। সত্যি কি আমরা পুতুলের মতো চলছি না? খেলছি, হাঁটছি আর রোদ-বৃষ্টি-অন্ধকারকে আপন ভেবে যাচ্ছি। সবটায় নিজেকে নিয়েই মেতে থাকা।
পথ খুশি, রথ খুশি, মূর্তিটাও খুশি...জমজমাট ‘রথযাত্রা’ যদি জীবনের খেলা ধরে নিই, তবে সেই ‘জীবনখেলার’ আসল সুতাটা হাতে নিয়ে এক বিরাট শিশু যে আনমনে এক অনন্ত খেলা খেলে যাচ্ছে, তা বোঝার শক্তি পাই না কেন?
এই যে এমন ভাবনা, তা হয়তো এক আশ্চর্য দুর্বল বা শক্তিশালী মুহূর্তে আমাদের মনে হানা দেয়। একটু ভাবায় আবার ভুলিয়ে দেয় কেউ। আর ভুলে থাকা যায় বলেই এত আমার-আমার খেলা! এই খেলা যুদ্ধ বাধায়, মৃত্যু ডেকে আনে, ভেদাভেদ তৈরি করে, হানাহানি আর হিংসায় ডুবিয়ে দেয়। নিজের বাইরে চিন্তা করবার সময়টা সব মানুষের মনে একবারে উদয় হলে হয়তো পৃথিবী অন্য রকম হতো।
খুব আবোলতাবোল কথার পসরা সাজালাম। তবে জীবনের হিসাবটা যে এ রকমটাই মনে হয় আজকাল। এই যে দিনটা খুব নিজের মনে হলো, একটু পরেই সে আর আমার নেই! তার শরীরজুড়ে অন্য দিনের ছায়া! অন্য কারও নাম! ‘তারে আমার আমার মনে করে আমার করে আর পেলেম না!’
এই কি নয় জীবন? ছুটে চলো ছুটে চলো, যতটা জোরে পারা যায়! কেউ পেছনে পড়ে গেল, সে তোমার সঙ্গেই ছিল। আপন আর প্রিয় ছিল, তাতে কী! তোমাকে বা আমাকে পৌঁছে যেতেই হবে সেই গন্তব্যে, যার একটুও আমাদের হাতে নেই। তবু সবার আগে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা—এই তো মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া আছে।
মুক্তির জন্য খুব লড়ে গেলাম। তারপর মুক্তির আনন্দে হাত মেলে দেখলাম হাতের তলায় নানান রকম আঁকিবুঁকি যা শিকল হয়ে আটকে দিতে চাইছে আমাদের সংসার-জগৎ বা মহাজাগতিক কোনো বস্তুর সঙ্গে। এই কি সেই সোনার শিকল যাতে জীবনরহস্য লুকানো আছে? রহস্যের সমাধান খোঁজা মানুষ ক্লান্ত হয় না কখনো। হয়তো তাতেই মুক্তি, তাতেই আলো, তাতেই বেঁচে থাকা। পুরোটা না বুঝে, সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েও আবার সবাইকে নিয়েই একসঙ্গে বেঁচে থাকা।
যুদ্ধ বাধে, রক্ত ঝড়ে, নিজের মতো কারও জয় হয়। কেউ হেরে যায়। আর আড়াল থেকে মুচকি হাসে সময়ের নাটাই হাতে সেই অদৃশ্য একজন! কেউ কেউ আছে যারা শুধু মনে মনে না, সরবেও চায়, ‘অন্তত বেঁচে থাকাগুলো সুন্দর হোক সবার জন্য।’
হাঁটুপানি থেকে অসাবধানে বুকপানিতে চলে গেলে বুকের মাঝে কী সীমাহীন আতঙ্ক চেপে আসে, যখন স্রোতের টান ভাসিয়ে নিতে চায়! কেমন লাগে? কেমন সেই কষ্ট? কতটা সেই যন্ত্রণা? আর প্রিয়জনের একেবারে হারিয়ে যাওয়া!
যার যায় সে ছাড়া আর কেউ কেন বুঝতে পারে না? নাকি বুঝতে চায় না? বুঝতে না চাওয়ার এক ভয়ানক উন্মাদনা!
তবু মানুষ হয়ে জন্মানোর এই অনন্ত টানাপোড়েন ভাবায় মানুষকেই। মানুষই মানুষকে মারে, রক্ত ঝরায় তারপর সেই রক্তের মাঝে কেউ হাসে আবার কেউ ডুবে যায় কান্নার অতলে।
সবচেয়ে সহজ আর কম কষ্টের কাজটুকুই আজও করতে শেখা হলো না আমাদের। যার যতটুকু সাধ্য সবার পাশে থাকা, একটু সাহায্য করা...সরবে বা নীরবে। যেমন করে আকাশ পারে, প্রকৃতি পারে, নিজেদের সৃষ্টির সেরা ভেবে নিয়েও মানুষ আজও এইটুকুন কাজ শিখে উঠতে পারল না।
লেখক: আবৃত্তিশিল্পী
নেপাল ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কেবল ভৌগোলিক নয়, হাজার বছরের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বন্ধনে আবদ্ধ। উন্মুক্ত সীমান্ত, অভিন্ন হিন্দু ঐতিহ্য এবং ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাব একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল বাস্তবতা।
৫ ঘণ্টা আগেআগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা-সংশয় যা-ই বলি, এত দিন সে বিষয়টির পরিসর সীমিত ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য এবং সাধারণত নির্বাক থাকা দেশের আমজনতার মনোজগতে। কিন্তু এখন যখন সরকারপ্রধান নিজেই সেই শঙ্কার কথা ব্যক্ত করছেন, তখন বিষয়টি যে মোটেই অমূলক নয়, তা স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা থাকতে পারে না
১৭ ঘণ্টা আগেআজ থেকে খুব বেশি দিন না, এই ধরেন, বারো-সাড়ে বারো শ বছর আগের কথা। হীরকরাজ্যে তখনো জ্ঞান-বিজ্ঞান, বিদ্যা-শিক্ষার চর্চা হতো। রীতিমতো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ৩০০ বছর ধরে শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, বরং চীন, তিব্বত, ব্রহ্মদেশ (মিয়ানমার), শ্যামদেশ (থাইল্যান্ড), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়াসহ
১৮ ঘণ্টা আগে৭ সেপ্টেম্বর বদরুদ্দীন উমরের জীবনের প্রস্থান হয়েছে। তাঁর এই প্রস্থানের মধ্য দিয়ে তিন পুরুষের রাজনৈতিক ধারারও সমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর দাদা আবুল কাসেম ছিলেন তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের পার্লামেন্টারিয়ান বোর্ডের সদস্য। বাবা আবুল হাশিম ছিলেন মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আর তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট ধারার নেতা।
১৮ ঘণ্টা আগে