জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
বাঙালি মুসলমানের একটি বড় সমস্যা হলো, সে তার দীর্ঘদিনের ইতিহাসে নিজেকে প্রবলভাবে বাঙালি বলে ঘোষণা করেনি। বাংলার অন্য আরেকটি বড় সম্প্রদায় ছিল হিন্দু সম্প্রদায়, তারাও বাঙালি মুসলমানকে শুধুই মুসলমান হিসেবে দেখতে চেয়েছে। এমনকি সাহিত্য রচনায়ও তারা মুসলমানকে বাঙালি নামে পরিচিত করায়নি। বাঙালি মুসলমানকে সে সময় অনায়াসেই জিজ্ঞেস করা যেত, ‘আপনি বাঙালি নাকি মুসলমান?’
বাঙালি মুসলমানের মধ্যে মুসলমানত্বের প্রকাশ যতটা ছিল, বাঙালিত্বের প্রকাশ ততটা ছিল না। ব্রিটিশ আমলে নিছক সংখ্যাধিক্য ভোটের অস্ত্র হাতে না আসা পর্যন্ত বাংলায় বাঙালি মুসলমান রাজনৈতিক প্রাধান্যও বিস্তার করতে পারেনি। অভিজাত মুসলিম শাসকদের আমলে একবারের জন্যও বাঙালি মুসলমান মসনদ দখল করতে পারেনি।
বাঙালি মুসলমান স্বদেশের ইতিহাসের চেয়ে অন্য দেশের মুসলমানদের ইতিহাসকেই সামাজিক জীবনে প্রাধান্য দিয়েছে। নিজস্ব ইতিহাস সৃষ্টির জন্য কাজ করেনি। ফলে নিজেদের স্বতন্ত্র সত্তা গড়ে তোলা হয়নি। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে একটা অদ্ভুত মানসিকতা কাজ করেছে। তারা নিজেদের বাঙালি মনে করে গর্ববোধ করেনি। আরব, ইরানি, তুর্কি, পাঞ্জাবি, পাঠান এবং অনেক মানবগোষ্ঠী যদি নিজেদের একটি বিশেষ মানবগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করতে পারে, তাহলে বাঙালি কেন পারবে না, সে প্রশ্নের জবাব বাঙালির কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
বাঙালি মুসলমানের টনক নড়েছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর। পাকিস্তান আমলেই তারা বুঝতে পেরেছে, আসলে জাতি পরিচয়টা কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় অবাঙালি পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে সহ-অবস্থান করতে গিয়ে বাঙালি মুসলমান দেখল, তাকে বাঙালি মুসলমান হিসেবেই বাঁচতে হবে। দেশভাগের আগের বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। হিন্দুর সঙ্গে সহ-অবস্থান করার সময় তাকে নিজের মুসলমানত্ব নিয়ে সজাগ থাকতে হতো। দেশভাগের পর সেই বাস্তবতা বদলে গেল। এখন তাকে বাঙালি মুসলমান নামে নিজের পরিচয় দিতে হচ্ছে। আমাদের ভাষা আন্দোলন বাঙালির সেই অগ্রযাত্রাকে মহিমান্বিত করেছে।
আরও একটি ব্যাপার এখানে স্মরণে রাখা দরকার। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন ডাকসাইটে নেতা। লক্ষ্ণৌ চুক্তি, বেঙ্গল প্যাক্টের পথ ধরে হিন্দু-মুসলমানের যে মিলনের পথ তৈরি হয়েছিল, তাতে তাঁর সমর্থন ছিল। কিন্তু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ধর্ম-প্রশ্নে তাঁকে কোণঠাসা করে ফেলায় তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতিকে শক্তিশালী করে তোলেন এবং ১৯৪০ থেকে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের আগে পর্যন্ত তিনি দ্বিজাতি তত্ত্বকে তাঁর রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আর দ্বিজাতি তত্ত্বকে প্রশ্রয় দেননি। গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে ভাষণগুলো দিয়েছেন, তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথাই বলেছেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এ সময় থেকে তিনি ‘হিন্দু সম্প্রদায়’ ও ‘মুসলিম সম্প্রদায়’ হিসেবে সম্প্রদায় দুটিকে শনাক্ত করেছেন। সে বিষয়টি নিয়েও একটু আলাপ হওয়া দরকার।
বাঙালি মুসলমানের একটি বড় সমস্যা হলো, সে তার দীর্ঘদিনের ইতিহাসে নিজেকে প্রবলভাবে বাঙালি বলে ঘোষণা করেনি। বাংলার অন্য আরেকটি বড় সম্প্রদায় ছিল হিন্দু সম্প্রদায়, তারাও বাঙালি মুসলমানকে শুধুই মুসলমান হিসেবে দেখতে চেয়েছে। এমনকি সাহিত্য রচনায়ও তারা মুসলমানকে বাঙালি নামে পরিচিত করায়নি। বাঙালি মুসলমানকে সে সময় অনায়াসেই জিজ্ঞেস করা যেত, ‘আপনি বাঙালি নাকি মুসলমান?’
বাঙালি মুসলমানের মধ্যে মুসলমানত্বের প্রকাশ যতটা ছিল, বাঙালিত্বের প্রকাশ ততটা ছিল না। ব্রিটিশ আমলে নিছক সংখ্যাধিক্য ভোটের অস্ত্র হাতে না আসা পর্যন্ত বাংলায় বাঙালি মুসলমান রাজনৈতিক প্রাধান্যও বিস্তার করতে পারেনি। অভিজাত মুসলিম শাসকদের আমলে একবারের জন্যও বাঙালি মুসলমান মসনদ দখল করতে পারেনি।
বাঙালি মুসলমান স্বদেশের ইতিহাসের চেয়ে অন্য দেশের মুসলমানদের ইতিহাসকেই সামাজিক জীবনে প্রাধান্য দিয়েছে। নিজস্ব ইতিহাস সৃষ্টির জন্য কাজ করেনি। ফলে নিজেদের স্বতন্ত্র সত্তা গড়ে তোলা হয়নি। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে একটা অদ্ভুত মানসিকতা কাজ করেছে। তারা নিজেদের বাঙালি মনে করে গর্ববোধ করেনি। আরব, ইরানি, তুর্কি, পাঞ্জাবি, পাঠান এবং অনেক মানবগোষ্ঠী যদি নিজেদের একটি বিশেষ মানবগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করতে পারে, তাহলে বাঙালি কেন পারবে না, সে প্রশ্নের জবাব বাঙালির কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
বাঙালি মুসলমানের টনক নড়েছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর। পাকিস্তান আমলেই তারা বুঝতে পেরেছে, আসলে জাতি পরিচয়টা কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় অবাঙালি পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে সহ-অবস্থান করতে গিয়ে বাঙালি মুসলমান দেখল, তাকে বাঙালি মুসলমান হিসেবেই বাঁচতে হবে। দেশভাগের আগের বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। হিন্দুর সঙ্গে সহ-অবস্থান করার সময় তাকে নিজের মুসলমানত্ব নিয়ে সজাগ থাকতে হতো। দেশভাগের পর সেই বাস্তবতা বদলে গেল। এখন তাকে বাঙালি মুসলমান নামে নিজের পরিচয় দিতে হচ্ছে। আমাদের ভাষা আন্দোলন বাঙালির সেই অগ্রযাত্রাকে মহিমান্বিত করেছে।
আরও একটি ব্যাপার এখানে স্মরণে রাখা দরকার। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন ডাকসাইটে নেতা। লক্ষ্ণৌ চুক্তি, বেঙ্গল প্যাক্টের পথ ধরে হিন্দু-মুসলমানের যে মিলনের পথ তৈরি হয়েছিল, তাতে তাঁর সমর্থন ছিল। কিন্তু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ধর্ম-প্রশ্নে তাঁকে কোণঠাসা করে ফেলায় তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতিকে শক্তিশালী করে তোলেন এবং ১৯৪০ থেকে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের আগে পর্যন্ত তিনি দ্বিজাতি তত্ত্বকে তাঁর রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আর দ্বিজাতি তত্ত্বকে প্রশ্রয় দেননি। গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে ভাষণগুলো দিয়েছেন, তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথাই বলেছেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এ সময় থেকে তিনি ‘হিন্দু সম্প্রদায়’ ও ‘মুসলিম সম্প্রদায়’ হিসেবে সম্প্রদায় দুটিকে শনাক্ত করেছেন। সে বিষয়টি নিয়েও একটু আলাপ হওয়া দরকার।
সাতচল্লিশের দেশভাগকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িকতা ক্রমাগত তীব্র হলো। রক্তপাত ঘটল। পরে যখন স্বাধীন হলো ভারতবর্ষ, তখন একটির জায়গায় দুটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘটল। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার সমস্যার সমাধান হলো না; না পাকিস্তানে, না ভারতে। পাকিস্তানের সব ধর্মাবলম্বীকে বলা হলো রাজনৈতিকভাবে নিজ নিজ ধর্মমত ভুলে
৮ ঘণ্টা আগেআয়মান সোবহ, ওমর মিলাদ এবং আসাদ আসাদ আমরা গাজার তিনটি অলাভজনক বিশ্ববিদ্যালয়—আল-আকসা ইউনিভার্সিটি, আল-আজহার ইউনিভার্সিটি-গাজা এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজার সভাপতি।
৮ ঘণ্টা আগেকেউ যদি আপনাকে ৮০ টাকার খুব ভালো চাল রেখে ৮৫ টাকায় পোকা আর পাথরভর্তি চাল নিতে জোর করে, আপনি কি সেই চাল কিনবেন? নিশ্চয়ই না। কিন্তু সেই ব্যক্তি নাছোড়বান্দা, আপনাকে তার কাছ থেকেই পোকা-পাথরমিশ্রিত চাল বেশি দামে নিতে হবে, নয়তো আপনার ‘ক্ষতি’ হবে! ভাবছেন, তুচ্ছ একটা ব্যাপারে কেউ কাউকে হুমকি দিতে পারে?
৮ ঘণ্টা আগেজোসেফ গোয়েবলস ছিলেন হিটলারের নাৎসি জার্মানির তথ্য ও প্রচারবিষয়ক মন্ত্রী। তিনি ছিলেন মিথ্যাকে ‘সত্য’ বানানোর এক ভয়ংকর কৌশলের রূপকার। গোয়েবলস বিশ্বাস করতেন, ‘একটি বড় মিথ্যাকে বারবার বললে মানুষ একসময় সেটিকে সত্য বলে মেনে নেয়।’ তাঁর এই নীতি দিয়েই নাৎসি জার্মানি কোটি মানুষের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করেছিল...
১ দিন আগে