সম্পাদকীয়
বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি একটি অনন্য মাস। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য যে পথ রচনা করে দিয়েছে, সেই পথই দেশকে পৌঁছে দিয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। প্রকৃতপক্ষে এ দেশের আপামর ছাত্র-শ্রমিক-জনতা রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে সেই পথকে করেছে মসৃণ, প্রশস্ত ও গতিশীল।
বাংলাদেশে এবং এ দেশের মানুষের অন্তরে সেই ফেব্রুয়ারি চিরপথের দিশারি হয়ে আছে এবং থাকবে।
১৯৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির সেই রক্তে ভেজা পথ ধরে ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয় এসেছে। ’৬২ সালে শিক্ষার আন্দোলন, ’৬৬ সালে ৬ দফার আন্দোলন, ’৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, তারপর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এগুলো হলো মাইলফলক। এর মধ্যে মধ্যে আরও কত কী যে হয়েছে, তা ইতিহাসে বিধৃত আছে। মোটকথা পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে এ দেশের মানুষের যা কিছু অর্জন, তার সবই এসেছে ফেব্রুয়ারির পথ ধরে। কারণ এ দেশবাসীর মানসে সংগ্রাম করে মুক্তির বীজ বপন করে দিয়েছে ফেব্রুয়ারি।
স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক উল্টাপাল্টা ঘটনার মধ্য দিয়ে বহুবার বেপথু পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিবার এবং বারবার বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে ওই ফেব্রুয়ারির প্রেরণায়। এবার, এই ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতেও বাংলাদেশ এক রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে উপনীত হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে ঘিরে অনেক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। এসব টানাপোড়েন রাজনৈতিক অঙ্গনে যথেষ্ট উত্তাপও ছড়াতে শুরু করেছে এবং এই ফেব্রুয়ারিতে তা আরও ঘনীভূত হওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই পটভূমিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে এবারের ফেব্রুয়ারি দেশের রাজনীতিতে কী নিয়ে আসছে?
এই ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক অঙ্গনের উত্তাপ ঘনীভূত হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রথমত রয়েছে বিএনপির অবস্থান। ফেব্রুয়ারিতেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে মাঠের আন্দোলন শুরু করার কথা সক্রিয়ভাবে ভাবছে। দ্বিতীয় লক্ষণ—এই ফেব্রুয়ারিতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশের কথা রয়েছে। নতুন দল একাধিক হতে পারে বলেও আলোচনা আছে। তৃতীয় লক্ষণ হলো—জামায়াতে ইসলামী উদ্যোগ নিয়েছে ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ে একটি জোট গঠনের, যারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। চতুর্থ লক্ষণ হলো—আওয়ামী লীগও নাকি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে পারে এই ফেব্রুয়ারিতেই। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উদ্যোগ ও বক্তব্য সম্পর্কে ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে সরকারি তরফের কথা শুনে বিষয়টির যথার্থতা রয়েছে বলে মনে করার কারণ আছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, গণহত্যার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়া এবং বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে কোনো কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না। তার মানে সরকারের কাছে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিষয়ে নিশ্চিত খবর আছে। পঞ্চম লক্ষণ—আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি কিংবা অধিকাংশ বামপন্থী দলের যূথবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ।
গত বছর ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলো ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একধরনের সমঝোতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই ক্রমান্বয়ে তা ভেঙে পড়তে থাকে এবং এখন তার কোনো অস্তিত্ব নেই বললেও চলে। বিএনপি ও তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই তৎপর হয়ে ওঠে অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকাল সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার বিষয়ে। তারা বারবার অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে ন্যূনতম সংস্কার করে, শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একান্ত দরকারি সংস্কার করেই দ্রুত সর্বাগ্রে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। তারা নির্বাচনের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপও দাবি করে এসেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা করেনি। তবে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে এই বছরের শেষভাগ কিংবা আগামী বছরের সময়ের কথা উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের।
এই অবস্থায় বিএনপি এই ফেব্রুয়ারি মাসেই দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে মাঠের আন্দোলন শুরু করার কথা ভাবছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে সে অনুযায়ী প্রথম ধাপে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলাসহ জনজীবনের সমস্যাদি নিয়ে আন্দোলন শুরু করবে। দ্বিতীয় ধাপে আসবে দ্রুত নির্বাচনের দাবি। তবে আন্দোলনের প্রথম ধাপ শেষ হতে না হতে শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। তারপর ঈদ এবং গ্রীষ্ম-বর্ষা। বাংলাদেশে এই সময়টা আন্দোলনের জন্য প্রশস্ত নয়। তবু দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে এই কর্মসূচিতে বিএনপি যাবে বলেই জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন একটি বা একাধিক যে রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য দ্রুত নির্বাচন নয়। রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে সংস্কার সম্পন্ন করার পরে নির্বাচন। একইভাবে জামায়াত নতুন যে ইসলামপন্থী বলয়টি গড়ে তুলতে চাইছে, তাদেরও প্রধান লক্ষ্য সংস্কারের পর নির্বাচন। কারণ, নির্বাচনের মাঠে সুসংহত শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য নবগঠিত দলের যেমন সময় দরকার, তেমনি জামায়াত এবং অন্যান্য ইসলামি দলেরও সময় দরকার। এ ক্ষেত্রে এই দুই শক্তির হিসাব-নিকাশ অভিন্ন, যা বিএনপির সঙ্গে মেলে না। সুতরাং দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন কতটা বড় চাপ সরকারের ওপর সৃষ্টি করতে পারবে, সেটা দেখার বিষয়।
এর পাশাপাশি বামপন্থী শক্তিগুলোও চেষ্টা করছে নিজেদের শক্তি একত্র ও সংহত করে বামগণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট গঠন করে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে মাঠে অবতীর্ণ হতে। বাম জোটও ধর্মীয় শক্তিগুলোকে সুসংহত হওয়ার সুযোগ দিতে চায় না। তাই তারা চায় ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। নির্বাচনী ব্যবস্থার এমন কিছু সংস্কার তারা চায় যাতে জাতীয় সংসদ নতুন কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বৈরাচার বা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের আখড়ায় পরিণত হতে না পারে। সেই উদ্দেশ্যে আনুপাতিক নির্বাচন, ‘না ভোট’-এর বিধান, নির্বাচনী প্রচারে সাম্প্রদায়িকতা বা মৌলবাদী ধর্মীয় অপপ্রচার বন্ধ প্রভৃতি তাদের প্রধান চাওয়া হবে, যাতে প্রকৃতই একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
রাজনৈতিক অঙ্গনের এইসব মেরুকরণের সবই ঘটার কথা এই ফেব্রুয়ারিতে। তাই কার্যত এবারের ফেব্রুয়ারি কী নিয়ে আসছে জাতীয় জীবনে, তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি একটি অনন্য মাস। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য যে পথ রচনা করে দিয়েছে, সেই পথই দেশকে পৌঁছে দিয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। প্রকৃতপক্ষে এ দেশের আপামর ছাত্র-শ্রমিক-জনতা রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে সেই পথকে করেছে মসৃণ, প্রশস্ত ও গতিশীল।
বাংলাদেশে এবং এ দেশের মানুষের অন্তরে সেই ফেব্রুয়ারি চিরপথের দিশারি হয়ে আছে এবং থাকবে।
১৯৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির সেই রক্তে ভেজা পথ ধরে ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয় এসেছে। ’৬২ সালে শিক্ষার আন্দোলন, ’৬৬ সালে ৬ দফার আন্দোলন, ’৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, তারপর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এগুলো হলো মাইলফলক। এর মধ্যে মধ্যে আরও কত কী যে হয়েছে, তা ইতিহাসে বিধৃত আছে। মোটকথা পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে এ দেশের মানুষের যা কিছু অর্জন, তার সবই এসেছে ফেব্রুয়ারির পথ ধরে। কারণ এ দেশবাসীর মানসে সংগ্রাম করে মুক্তির বীজ বপন করে দিয়েছে ফেব্রুয়ারি।
স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক উল্টাপাল্টা ঘটনার মধ্য দিয়ে বহুবার বেপথু পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিবার এবং বারবার বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে ওই ফেব্রুয়ারির প্রেরণায়। এবার, এই ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতেও বাংলাদেশ এক রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে উপনীত হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে ঘিরে অনেক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। এসব টানাপোড়েন রাজনৈতিক অঙ্গনে যথেষ্ট উত্তাপও ছড়াতে শুরু করেছে এবং এই ফেব্রুয়ারিতে তা আরও ঘনীভূত হওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই পটভূমিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে এবারের ফেব্রুয়ারি দেশের রাজনীতিতে কী নিয়ে আসছে?
এই ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক অঙ্গনের উত্তাপ ঘনীভূত হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রথমত রয়েছে বিএনপির অবস্থান। ফেব্রুয়ারিতেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে মাঠের আন্দোলন শুরু করার কথা সক্রিয়ভাবে ভাবছে। দ্বিতীয় লক্ষণ—এই ফেব্রুয়ারিতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশের কথা রয়েছে। নতুন দল একাধিক হতে পারে বলেও আলোচনা আছে। তৃতীয় লক্ষণ হলো—জামায়াতে ইসলামী উদ্যোগ নিয়েছে ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ে একটি জোট গঠনের, যারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। চতুর্থ লক্ষণ হলো—আওয়ামী লীগও নাকি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে পারে এই ফেব্রুয়ারিতেই। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উদ্যোগ ও বক্তব্য সম্পর্কে ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে সরকারি তরফের কথা শুনে বিষয়টির যথার্থতা রয়েছে বলে মনে করার কারণ আছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, গণহত্যার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়া এবং বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে কোনো কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না। তার মানে সরকারের কাছে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিষয়ে নিশ্চিত খবর আছে। পঞ্চম লক্ষণ—আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি কিংবা অধিকাংশ বামপন্থী দলের যূথবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ।
গত বছর ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলো ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একধরনের সমঝোতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই ক্রমান্বয়ে তা ভেঙে পড়তে থাকে এবং এখন তার কোনো অস্তিত্ব নেই বললেও চলে। বিএনপি ও তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই তৎপর হয়ে ওঠে অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকাল সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার বিষয়ে। তারা বারবার অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে ন্যূনতম সংস্কার করে, শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একান্ত দরকারি সংস্কার করেই দ্রুত সর্বাগ্রে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। তারা নির্বাচনের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপও দাবি করে এসেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা করেনি। তবে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে এই বছরের শেষভাগ কিংবা আগামী বছরের সময়ের কথা উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের।
এই অবস্থায় বিএনপি এই ফেব্রুয়ারি মাসেই দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে মাঠের আন্দোলন শুরু করার কথা ভাবছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে সে অনুযায়ী প্রথম ধাপে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলাসহ জনজীবনের সমস্যাদি নিয়ে আন্দোলন শুরু করবে। দ্বিতীয় ধাপে আসবে দ্রুত নির্বাচনের দাবি। তবে আন্দোলনের প্রথম ধাপ শেষ হতে না হতে শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। তারপর ঈদ এবং গ্রীষ্ম-বর্ষা। বাংলাদেশে এই সময়টা আন্দোলনের জন্য প্রশস্ত নয়। তবু দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে এই কর্মসূচিতে বিএনপি যাবে বলেই জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন একটি বা একাধিক যে রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য দ্রুত নির্বাচন নয়। রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে সংস্কার সম্পন্ন করার পরে নির্বাচন। একইভাবে জামায়াত নতুন যে ইসলামপন্থী বলয়টি গড়ে তুলতে চাইছে, তাদেরও প্রধান লক্ষ্য সংস্কারের পর নির্বাচন। কারণ, নির্বাচনের মাঠে সুসংহত শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য নবগঠিত দলের যেমন সময় দরকার, তেমনি জামায়াত এবং অন্যান্য ইসলামি দলেরও সময় দরকার। এ ক্ষেত্রে এই দুই শক্তির হিসাব-নিকাশ অভিন্ন, যা বিএনপির সঙ্গে মেলে না। সুতরাং দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন কতটা বড় চাপ সরকারের ওপর সৃষ্টি করতে পারবে, সেটা দেখার বিষয়।
এর পাশাপাশি বামপন্থী শক্তিগুলোও চেষ্টা করছে নিজেদের শক্তি একত্র ও সংহত করে বামগণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট গঠন করে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে মাঠে অবতীর্ণ হতে। বাম জোটও ধর্মীয় শক্তিগুলোকে সুসংহত হওয়ার সুযোগ দিতে চায় না। তাই তারা চায় ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। নির্বাচনী ব্যবস্থার এমন কিছু সংস্কার তারা চায় যাতে জাতীয় সংসদ নতুন কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বৈরাচার বা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের আখড়ায় পরিণত হতে না পারে। সেই উদ্দেশ্যে আনুপাতিক নির্বাচন, ‘না ভোট’-এর বিধান, নির্বাচনী প্রচারে সাম্প্রদায়িকতা বা মৌলবাদী ধর্মীয় অপপ্রচার বন্ধ প্রভৃতি তাদের প্রধান চাওয়া হবে, যাতে প্রকৃতই একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
রাজনৈতিক অঙ্গনের এইসব মেরুকরণের সবই ঘটার কথা এই ফেব্রুয়ারিতে। তাই কার্যত এবারের ফেব্রুয়ারি কী নিয়ে আসছে জাতীয় জীবনে, তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) যে তদন্ত করেছে, ২৭ জানুয়ারি সে তদন্তের ৫৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে...
৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি একধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নানা বাধা দেখা যাচ্ছে। এসব ঘটনা শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিবন্ধকতা নয়; বরং বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন।
৩ ঘণ্টা আগেআজ থেকে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা শুরু হচ্ছে। মাসব্যাপী এই আয়োজন প্রাণের মেলায় পরিণত হোক, সেই কামনা করি। তবে আজ বইমেলা নিয়ে নয়, বাংলা একাডেমি পুরস্কার নিয়ে যে নাটক অভিনীত হলো, তা নিয়েই কিছু কথা বলা সংগত হবে।
৩ ঘণ্টা আগে২০ বছর আগে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অটিজম শব্দটির অস্তিত্ব প্রায় খুঁজে পাওয়া যেত না। অটিজম বিষয়ে মানুষের ধারণা সীমিত ছিল। ঠিক সেই সময়ে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘কানন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির একটি চারতলা ভাড়া বাড়িতে...
২১ ঘণ্টা আগে