Ajker Patrika

সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান হতে হবে

আসিফ মুনীর, অভিবাসন বিশেষজ্ঞ
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২১, ০৯: ১৩
সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান হতে হবে

রোহিঙ্গা সমস্যা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধান হবে না। কারণ সমস্যাটি দ্বিপক্ষীয় নয়, এটি আন্তর্জাতিক। অনেক বছর ধরে এটি দ্বিপক্ষীয় ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় ছিল। তবে যখন জনগোষ্ঠী বিতাড়িত হয়েছে এবং দ্বিতীয় দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তখন এটি আন্তর্জাতিক সংকটে রূপ নিয়েছে। ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হলে দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ায় এটি সমাধান করা মুশকিল। ফলে দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ায় নির্ভর করার আর কোনো কারণ নেই। দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনা হয়তো চলবে। এটিকে গুরুত্ব না দিয়ে চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে রেখে দিতে হবে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে কিছু ফাঁক ছিল।        

যেই তালিকা তৈরি করা হলো। সেই তালিকা আদান প্রদান হচ্ছিল। এ তালিকাটি করা হয় ৯০-এর দশকে প্রত্যাবাসনের আদলে। তখন কিছু রোহিঙ্গা ফেরত গেলেও তারা আবার বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। কাজেই যে আদান প্রদানের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে, সেটিই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সেটি মূলত মিয়ানমারের দিক থেকে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবেই এটি তৈরি করা হয়েছে।

মিয়ানমার বলে দিয়েছিল, কী কী পরিপ্রেক্ষিতে সেটি তৈরি করা হবে। যেখানে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারের জায়গাগুলো একেবারেই অস্পষ্ট। কারণ, রোহিঙ্গাদের প্রমাণের জন্য যে ধরনের নথি দেখাতে বলা হয়েছে, সেই কাগজপত্র তাদের জন্য দেখানো সম্ভব নয়। কয়েক দশক ধরে তারা যে নিপীড়নের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, আর সেই নথি কেউ দেখাতে পারলে তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। এ বিষয়গুলো বাংলাদেশ সরকার জানে না বা জানত না, তা কিন্তু নয়।

প্রথম যখন দ্বিপক্ষীয় আলাপ শুরু হয়, তখনের থেকে এখনকার পরিস্থিতি জটিল। কারণ তখন মিয়ানমারে নামে হলেও একটি গণতান্ত্রিক সরকার ছিল। এখন পট পরিবর্তন হয়েছে। শুরুতে প্রত্যাবাসন কার্যকর হওয়ার পথ থাকলেও সেটি বর্তমানে আরও ক্ষীণ হয়ে গেছে।

এ সংকট দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনা নেই। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আলোচনা কতটুকু এগোনো যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

ভাসানচরকে বাংলাদেশ একটি উদাহরণ হিসেবে সৃষ্টি করেছে। সাময়িকভাবে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় একটি দেশে স্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আঞ্চলিকভাবে একটি ভূমিকা রাখতে পারে। ভাসানচরের মতো দ্বীপ ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ আশিয়ান বেশ কয়েকটি দেশে রয়েছে। এদের সঙ্গে আলাপ করে আংশিক রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে জায়গা দেওয়ার বিষয়টিতে রাজি করাতে হবে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হয়েও যা করেছে, আশিয়ানের এই দেশগুলোর জন্য ভাসানচরের মতো একটি দ্বীপ তৈরি করা আরও সহজ।

সরকার দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলাপ চালিয়ে গেলেও এর ওপর পুরো নির্ভর করেনি। গত চার বছরে আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা বিষয়টি আলাপে নিয়ে আসা এবং জবাবদিহির প্রশ্নে আন্তর্জাতিক আদালত আইসিসি এবং আইসিজেতে নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ভূমিকা রয়েছে। এটি বাংলাদেশের সাফল্য। দোষী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে না আসা গেলে প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। আর জবাবদিহি ছাড়া প্রত্যাবাসন হলেও এমন নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা হতে থাকবে। আর আবারও তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের কথা চিন্তা করলে জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে। আইসিজেতে চূড়ান্ত ফলাফল না এলেও আদালতে মিয়ানমারকে নিয়ে যাওয়া গিয়েছে।

প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে ত্রুটিপূর্ণভাবে চিন্তা করা হয়েছে, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষা। কোন কোন বিষয়ে মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতি দরকার এবং প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনটা তারা কতটুকু রাখবে, এত দিনে বাংলাদেশ তা শিখেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের তিন পদে অতিরিক্ত: তিনজনে একজন বাড়তি

ট্রেনের কেবিনের বালিশ, চাদর, কম্বলের ভাড়া দ্বিগুণ করার চিন্তা

ভারতে পোশাকের অর্ডার স্থগিত করছে মার্কিন ক্রেতারা, বাংলাদেশ-ভিয়েতনামে কারখানা স্থানান্তরের পরামর্শ

মোবাইল-টাকা ছিনতাইয়ের পর দুই তরুণীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩

ডোপ টেস্টে পজিটিভ, চবিতে শিক্ষকতা থেকে বাদ দুই প্রার্থী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত