Ajker Patrika

বলে দিলেই হলো, ‘চোর’

সম্পাদকীয়
বলে দিলেই হলো, ‘চোর’

বাসটা ধাক্কা দিয়েছে এক শিক্ষার্থীকে, শিক্ষার্থী করেছে তার প্রতিবাদ। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাসের চালক, চালকের সহকারী ও অন্য কর্মীরা শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়েছে বাসে। ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে পিটিয়েছে। বাসের যাত্রীরা প্রশ্ন করেছে, কিন্তু ‘চোর’কে পেটানো হচ্ছে বলা হলে তারা নির্বিকার বসে থেকেছে আসনে। চোর হলেও যে তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে হয়, সে কথা কারও মনেই আসেনি। অথবা মনে এলেও চেপে গেছে বেমালুম। চোর হলেই যেন ইচ্ছেমতো পেটানো যায়!এই হলো মানসিকতা।

বর্তমান মব সন্ত্রাসের যুগে কেউ যে কারও পক্ষ নিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে, সে ভরসা নেই। মব সন্ত্রাসীরা যে কাউকে যেকোনো তকমা দিয়ে পেটাতে থাকবে, পুলিশ ভয়ে তাদের সামনে আসবে না। মনের খায়েশ মিটিয়ে মারপিট করার পর তারা বীরের বেশে স্থান ত্যাগ করবে। এই যখন অবস্থা, তখন কে আর ‘হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে’ ভালোবাসবে? তার চেয়ে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পারা যাচ্ছে কি না, সেটাই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর যারা অতি উৎসাহী যাত্রী, তাদের কেউ কেউ বাসের কর্মীদের সঙ্গে মিলে ছাত্রটির শরীরে বসিয়ে দেয় কয়েক ঘা!

যে ঘটনার উল্লেখ করা হলো, সেটি ঘটেছে রাজধানীর উত্তরা এলাকায়। ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কে উত্তরার আবদুল্লাহপুরে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এখন উত্তরার আহ্‌ছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ-ও এক প্রতীকী সংবাদ যেন। সামাজিক ক্যানসারের নিরাময় হচ্ছে আক্ষরিক ক্যানসার হাসপাতালে!

এরপর তো আরেক ঘটনা! আইইউবিএটির টেকনিক্যাল বিভাগের ছাত্রকে পিটিয়েছে বাসের কর্মীরা, এই খবর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই তারা আসমানী পরিবহনের চারটি বাস আটক করে ফেলে। ‘অপরাধী’ বাসটি যে আসমানী পরিবহনের ছিল না, সে কথা তাদের কেউ বলেনি। তাই এটাও এক বিচারবোধহীন কাণ্ড! ছাত্ররা খোঁজ নিয়েও দেখল না, কোন পরিবহনের বাসের কর্মীরা এই অকাণ্ড ঘটিয়েছে। পরে যখন জানা গেল, আসমানী নয়, বিকাশ পরিবহনের কর্মীরাই দায়ী, তখন বিকাশ পরিবহনের তিনটি বাস ‘গ্রেপ্তার’ হলো।

সুস্থ আইনি পথে যেন কোনো ঘটনারই সুরাহা হয় না। একটি বাসের কর্মচারীরা রাস্তা থেকে প্রতিবাদকারী ছাত্রকে বেমালুম তুলে নিতে পারে বাসে, মেরে আহত করতে পারে তাকে, তারপর বাস থেকে ছুড়ে ফেলেও দিতে পারে! তারই প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সেই পরিবহনের অন্য বাসগুলো আটক করতে পারে! এতে কি ঠিক বিচার হয়ে গেল? বরং, এর কোনো জায়গাতেই আইনকে সচল দেখা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযোগ পেয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হবে—এমন গ্যারান্টি কে দেবে?

হিংস্রতা বেড়ে চলেছে। অন্যকে সম্মান করার কোনো সংস্কৃতি যেন থাকবে না আর। যেকোনো ছোট্ট একটি ঘটনায় যেন বারুদে আগুন লাগছে। একটু ধৈর্য, একটু সহনশীলতা, একটু ন্যায়বোধ অনেক ধরনের সংঘাত থেকে আমাদের বাঁচিয়ে দিতে পারে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোমাদের যে কিছু করিনি, তা-ই ভাগ্য—ডাকাতির সময় দুই কিশোরীকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা

গাজীপুরে সাংবাদিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

সাধুর বেশে এসে সাবেক স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

ইরানে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা জানত রাশিয়া, তেহরানে বিতর্ক তুঙ্গে

গাজীপুরে ইট দিয়ে সাংবাদিকের পা থেঁতলে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত