Ajker Patrika

পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি কমলেও ঝুঁকির শঙ্কা

  • দিনে গড়ে ২৮-৩০ হাজার পাসপোর্টের আবেদন।
  • আবেদনকারীরা যথাসময়ে পাচ্ছেন পাসপোর্ট।
  • আগারগাঁওয়ে কাগজ যাচাইয়ে এখনো দীর্ঘ অপেক্ষা।
রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি কমলেও ঝুঁকির শঙ্কা

আগে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো অনেক আবেদনকারীকে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশ ভেরিফিকেশন বা তথ্যের ঘাটতিসহ নানা অজুহাতে পাসপোর্ট দিতে দেরি করা হতো। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা তুলে দেওয়ায় ভোগান্তির একটা বড় অংশ কমেছে। তবে এখনো রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে অন্যান্য কাগজপত্র যাচাইয়ে দীর্ঘ সময় লাগার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা উঠে যাওয়ায় অপরাধী বা বিদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞজনেরা এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আগের নির্দেশনা অনুযায়ী, পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করে নির্ধারিত তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আঙুলের ছাপ দিতে হতো। আবেদনকারীর কাগজপত্র ভেরিফিকেশনের (যাচাই) জন্য পুলিশের এসবি অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। পুলিশ আবেদনকারীর এলাকায় গিয়ে কাগজপত্র যাচাই করে রিপোর্ট দিত। এভাবে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার পর আবেদনকারীকে পাসপোর্ট দেওয়া হতো। সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, অতিজরুরি পাসপোর্টের জন্য দুই, জরুরি পাসপোর্টের জন্য সাত ও সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ১৫ কর্মদিবস সময় লাগত।

অভিযোগ ছিল, অতীতে পুলিশ আবেদনে তথ্যের ঘাটতিসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করত। আবেদনকারীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে ঘোরা দালালেরা এর অন্যতম মধ্যস্বত্বভোগী। কর্তৃপক্ষের নানা কড়াকড়িতে সাম্প্রতিককালে দালালের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমে আসে। সর্বশেষ পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় জানানো হয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যের ভিত্তিতে পাসপোর্ট দেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পাসপোর্টের নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইনে যাচাই করা জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট দেওয়া হবে। পাসপোর্ট পুনঃ ইস্যুর ক্ষেত্রে বিদ্যমান পাসপোর্টে থাকা মৌলিক তথ্যের পরিবর্তন হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের ১ কোটিরও বেশি নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৩০ হাজার মানুষ বিদেশে যান। অর্থাৎ এই নতুন ঘোষণা বিপুলসংখ্যক নাগরিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে দেশে ও বিদেশের পাসপোর্ট অফিসগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ২৮-৩০ হাজার মানুষ আবেদন করেন। এর মধ্যে মাসে ২৫-২৮ হাজার পাসপোর্ট প্রিন্ট করা হয়।

২৫ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বক্তব্যে জানান, পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা বাতিলের পর তখন পর্যন্ত আবেদনকারীর হাতে ৭০ হাজার নতুন পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

স্বস্তির পরও যে অভিযোগ

সম্প্রতি কয়েকবার রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের স্বস্তির কথা জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, দিনজুড়ে পাসপোর্ট নিতে আসেন কয়েক শ ব্যক্তি। তাঁদের কাগজপত্র যাচাই করার পর কর্মকর্তারা আঙুলের ছাপ দেওয়ার কক্ষে পাঠান। কয়েকজন আবেদনকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশ ভেরিফিকেশনের শর্ত তুলে দেওয়ায় এখন আর তাঁদেরকে ঘুষ দিতে বা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। কথা বলে জানা গেল, আঙুলের ছাপ দেওয়ায় প্রক্রিয়া শেষে যাঁরা পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে এসেছেন, তাঁরাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তা হাতে পেয়েছেন। শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের ওপর ভিত্তি করে যাঁরা পাসপোর্ট পেয়েছেন, তাঁদের কেউ অপরাধী বা অন্য দেশের নাগরিক কি না, তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কেউ কেউ উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আবেদনকারী অপরাধী বা অন্য কোনো দেশের নাগরিক কি না তা যাচাই করার জন্য অধিদপ্তরে আলাদা কোনো কর্তৃপক্ষ বা জনবল নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের ভিত্তিতে কাগজপত্র যাচাই করে আবেদনকারীদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। এরপর আর কোনো ধাপ নেই। পাসপোর্ট প্রিন্ট হলেই তা আবেদনকারীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

গত ৯ মার্চ মিরপুর থেকে পাসপোর্ট নিতে আসা আল-আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনলাইনে আবেদন করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও কাগজপত্র জমা দেই। এরপর পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়ার মেসেজ পাই। ১৫ কার্যদিবসের আগেই হাতে পেলাম। বাড়তি কোনো ঝামেলা হয়নি।’

রাজধানীর টিকাটুলি থেকে আসা মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো ভোগান্তি ছাড়া যথাসময়েই পাসপোর্ট পেয়েছি। পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে যাওয়ার পর তাঁরাই নিয়ে যাওয়ার জন্য মেসেজ দেন। সেই মেসেজ পেয়েই নিতে এসেছি।’

আবেদনকারীরা অবশ্য আঙুলের ছাপ দেওয়ার আগে কাগজপত্র যাচাই করতে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন। নির্ধারিত অফিস সময়ের মধ্যে শতাধিক আবেদনকারীর কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য রয়েছে মাত্র দুটি কাউন্টার। সিরিয়াল অনুযায়ী সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও মাঝেমধ্যেই দালাল চক্রের সদস্য ও পাসপোর্ট অফিসের লোকজন লাইনের বাইরের কারও কাজ করিয়ে নেন।

৯ মার্চ রাজধানীর মাটিকাটা থেকে আবেদনপত্রসহ কাগজপত্র জমা দিতে আসা এক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর দেখি সামনে আরও ৩০ জন। এর মধ্যে আবার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য বা অফিসের লোকজন অন্যদের নিয়ে আসেন। তাই কতক্ষণ লাগবে জানি না।’

পাসপোর্ট নিতে আসা মো. নাজমুল হাসান সাহাবী বলেন, ‘কাগজ ভেরিফিকেশনের জন্য ৩ ঘণ্টা লাইনে থাকতে হয়েছিল। অথচ ফিঙ্গারপ্রিন্টের ওখানে লোকজনের চাপ কম।’

ভেরিফিকেশন না থাকায় শঙ্কা

আবেদনকারীদের কাগজ যাচাইয়ের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার ভোগান্তি এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা না থাকায় অপরাধী বা বিদেশি নাগরিকদেরও পাসপোর্ট পাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিশেষ করে প্রতিবেশী মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গা এ দেশে বাস করা এবং তাদের অনেকের বাংলাদেশের পাসপোর্টে বিদেশে যাওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ারের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে পাসপোর্টের আবেদনকারীদের নানাভাবে হয়রানি করা হতো। তবে পাসপোর্ট অফিসগুলোতে যাচাই করার জন্য কোনো আলাদা সংস্থা বা ব্যবস্থা না থাকায় অপরাধীরা সুযোগ নিতে পারে। অপরাধ করে বিদেশে পালানো এবং ভুল তথ্য দিয়ে বিদেশি কারও পাসপোর্ট করার ঝুঁকি থাকে। অপরাধ করে কেউ যেন বিদেশে পালানোর জন্য পাসপোর্ট না পায়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’

দুর্নীতি বা হয়রানির কারণে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ভেরিফিকেশনের পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল দুর্নীতি নজরদারি সংস্থা টিআইবি। ভেরিফিকেশন বাতিলের কারণে সম্ভাব্য নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভেরিফিকেশন তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিরাপত্তার দিক থেকে বিবেচনা করা যুক্তিসংগত নয়। কারণ, অপরাধীদের চিহ্নিত করা এবং পাসপোর্ট না করার জন্য অন্য আইন আছে। এ ব্যবস্থা আসলে ছিল সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার জন্য। সরকার আমাদের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে সিইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন।

বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক প্রস্তুতি ও তফসিল ঘোষণা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করতে বঙ্গভবনে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সিইসি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান।

এর আগে ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অবসরপ্রাপ্ত), তাহমিদা বেগম, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ।

উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তফসিল-সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করতে ইতিমধ্যে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারকে চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইউনেসকোর স্বীকৃতি

বাসস, ঢাকা  
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক

টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। সভায় প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছরে এটি দ্বিতীয় নিবন্ধন।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং ইউনেসকো সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীর নিত্য পরিধেয়, যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’

এই অর্জনকে বাংলাদেশের সকল তাঁতি ও নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা।

বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রিক সুরক্ষায় এই স্বীকৃতি নতুন মাত্রা যোগ করবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি অর্জনের মতো বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে।

নথি প্রস্তুত করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কনভেনশন সংক্রান্ত অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করার মাধ্যমে আরও অনেক ঐতিহ্যের ইউনেসকো-স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেসকোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল. এনানি উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ সংবাদ সম্মেলনে আসছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৪
ভারতকে হারানোর পর ২ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।ছবি: ফাইল ছবি
ভারতকে হারানোর পর ২ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।ছবি: ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

সমসাময়িক বিষয়ে আজ বুধবার বেলা ৩টায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আসিফ মাহমুদের সংবাদ সম্মেলন হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

সমসাময়িক কোন বিষয়ে আসিফ মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন, মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণপত্রে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।

আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ভাষণের রেকর্ড করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আজ সন্ধ্যায় বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও আজ পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।

উপদেষ্টার পদে থেকে নির্বাচন করতে আইনি বাধা না থাকলেও তফসিল ঘোষণার আগে সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ। তাঁদের আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে রূপ নেয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ওই বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন আসিফ মাহমুদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব মেনেও মনবদল ইয়াহিয়ার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১৮
ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব মেনেও মনবদল ইয়াহিয়ার

মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক অবস্থানের পতনে মুক্ত হচ্ছিল বাংলাদেশের একেকটি অঞ্চল। এগিয়ে আসছিল স্বাধীনতার মুহূর্তটি। যদিও ঠিক কখন, কীভাবে সেদিনটি আসবে, তখনো তা স্পষ্ট নয় সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছিল।

সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় ১০ ডিসেম্বর রায়পুরা অঞ্চলে ১৪টি হেলিকপ্টারের সাহায্যে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর অগ্রবর্তী অংশ তখনকার বিশাল, প্রশস্ত মেঘনা পার হয়। স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় শত শত নৌকার সাহায্যে অবশিষ্ট সেনা ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম পরিবহনে সহায়তা করে।

প্রচণ্ড চাপে পড়ে আগের দিন ঢাকায় পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ও গভর্নর মালেক সৈন্যসহ পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেদিন দাউদকান্দির পতনের পর তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, ঢাকাই যৌথ বাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্য। পাকিস্তানিদের সম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পূর্ণ অনুমোদন লাভ করে।

সহায়তাকারী ভারতীয় বাহিনীর রায়পুরায় অবতরণের পর প্রায় ৩ ঘণ্টা ঢাকার পাকিস্তানি সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর বিমান হামলা চলে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা, গণহত্যার অন্যতম সহযোগী রাও ফরমান আলী ঢাকায় অবস্থানকারী জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব পল মার্ক হেনরিকে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আয়োজন করার আবেদন জানান। বাঙালিদের ওপর ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চলার পর এত দিনে এসে তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এবং এই অঞ্চলে থাকা পাকিস্তানি বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এ প্রস্তাব জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেন।

নিরাপত্তা পরিষদে রাও ফরমান আলীর এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ চলার সময় হঠাৎ খবর আসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন। ঘটনা হচ্ছে, খবরটি ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার ইয়াহিয়াকে জানান, পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য সপ্তম নৌবহর ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হয়েছে। এ কারণেই ইয়াহিয়ার মত বদলে যায়। পাকিস্তান নিজে থেকে ‘সম্মানজনকভাবে’ সেনা প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগী হলেও সেই উদ্যোগকে সমর্থন না করে মার্কিন সরকার বরং তা রদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তার ওপর ভারতকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত করানোর তাগিদ দিয়ে ৯ ও ১০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সন সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভকে দুই দফা বার্তা পাঠান। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যাপারে ভারতকে সম্মত করতে ব্রেজনেভের ওপর চাপের মাত্রা বাড়ানো হয়। তাঁকে জানানো হয়, ভারত যদি এরপরও সম্মত না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র নিজে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।

উপমহাদেশের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ‘শক্ত ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে পারে, তা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভালো করেই জানা ছিল। সোভিয়েত সরকার তাদের নৌবাহিনীকে সতর্ক রাখে। মার্কিন সপ্তম নৌবহরের যাত্রারম্ভের আগেই সোভিয়েতরা তাদের ভারত মহাসাগরীয় নৌবহরের শক্তি বৃদ্ধি শুরু করে।

১০ ডিসেম্বর মার্কিন সপ্তম নৌবহর চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরকে সংযোগকারী পাঁচ শ’ মাইল দীর্ঘ মালাক্কা প্রণালির ওপারে ছিল। ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌবহরের সমাবেশ তখন সম্পূর্ণ হয়নি। এই অবস্থায় জানা যায়, মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি জানার জন্যই সোভিয়েত সরকার কসমস নামের নজরদারি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে।

এদিকে চূড়ান্ত পর্বের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের আশঙ্কায় ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে থাকেন অনেক সাধারণ মানুষ। আগের দিন সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, রাস্তায় রাস্তায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লড়াই হবে বলে মুক্তিযোদ্ধারা লোকজনকে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। অনেক লোককে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন, পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে রিকশা বা বেবিট্যাক্সিতে (সিএনজি অটোর আগের সংস্করণ) করে শহর থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ লটবহর মাথায় নিয়ে হেঁটেই চলেছেন। এ যেন ২৫ মার্চের গণহত্যার পর ঢাকা ছাড়ার যে ঢল নেমেছিল কিছুটা প্রতিচ্ছবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত