Ajker Patrika

মহাসড়কে ট্রাফিক মামলার ৬৬ শতাংশই নিষিদ্ধ যানবাহন ও বেপরোয়া গতির

রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
মহাসড়কে ট্রাফিক মামলার ৬৬ শতাংশই নিষিদ্ধ যানবাহন ও বেপরোয়া গতির

সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান দুই কারণ নিষিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল এবং যানবাহনের বেপরোয়া গতি। মহাসড়কে মোট মামলার ৬৬ শতাংশই এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে। কিন্তু এরপরও এসব যান চলাচল ও বেপরোয়া গতি থামছে না।

দেশে বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। আইন অনুযায়ী, মহাসড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার। তবে এই গতিসীমা মানেন না অনেক চালক, বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাসের চালকেরা। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে তিন চাকার যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক সব যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও চলছে সবই। গত ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানের
­সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

হাইওয়ে পুলিশের সূত্র জানায়, মহাসড়কে পরিবহনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৬৩৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ যানের বিরুদ্ধে ৪৪ হাজার ৯৭৫টি এবং বেপরোয়া গতির কারণে ৩৪ হাজার ১০৯টি মামলা হয়েছে, যা মোট মামলার ৬৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছর ২ লাখ ৯০৭টি মামলার মধ্যে নিষিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ যানের বিরুদ্ধে ছিল ৭১ হাজার ৩৭১টি এবং বেপরোয়া গতির কারণে ছিল ৫১ হাজার ১৬৮টি, যা মোট মামলার ৬০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০২২ সালে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৬৪টি মামলার মধ্যে নিষিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ যানের বিরুদ্ধে ৭৭ হাজার ৫৪৭টি এবং বেপরোয়া গতির কারণে ছিল ৩৩ হাজার ১১৬টি, যা মোট মামলার ৭৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

হাইওয়ে পুলিশের সূত্র জানায়, হাইওয়ে পুলিশের ৭৩টি থানায় প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২৫০টি মামলা হয়। গত বছর ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬২১টি মামলার নিষ্পত্তি করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এতে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৬৩ কোটি ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫২৫ টাকা।

মহাসড়কে তিন চাকার যান সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালালে ২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানার মামলা দেয় পুলিশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানোর কারণে এমন মামলা করা হয় মো. মোবারক হোসেনকে। তিনি বলেন, এখানে কয়েক শ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলে। না চালালে তাঁরা চলবেন কীভাবে?

মহাসড়কে অতিরিক্ত গতি নির্ণয়ে স্পিডগান ব্যবহার করে হাইওয়ে পুলিশ। স্পিডগানে অতিরিক্ত গতি ধরা পড়লে মামলা করা হয়। এ ক্ষেত্রেও ২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পথে চলাচল করা একটি বাসের চালক মো. শাওন আজকের পত্রিকাকে বলেন, যানজট, ফেরিতে নদী পার হতে বেশি সময় লাগলে সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া থাকে। এতে কখনো কখনো নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে বাস চালাতে হয়।

ময়মনসিংহের ভালুকার ভরাডোবা হাইওয়ে থানার এক কর্মকর্তা জানান, ওই থানায় প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ মামলা হয়। বেশি হয় নিষিদ্ধ যান চলাচল এবং অতিরিক্ত গতির কারণে।

৫ আগস্টের পর রাজধানীর প্রধান অনেক সড়কে দিনেও চলছে নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। বিমানবন্দরের টার্মিনালেও দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। তবে চলতি মাসে ব্যাটারিচালিত এসব যানের মূল সড়কে চলাচল কিছুটা কঠোর করেছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশার সিট জব্দ, ব্যাটারি জব্দ, সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ডাম্পিংসহ মোট ৫৪ হাজার ৭৫৪টি ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। ডাম্পিংয়ে দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৪২৫টি ব্যাটারিচালিত রিকশা। ৬ আগস্ট থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানীতে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের মামলা হয়েছে ১৯ হাজার ৮৬৫টি। এতে জরিমানা করা হয়েছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ ১৮ হাজার ১৪৫ টাকা।

জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, মহাসড়কের সঙ্গে গ্রামীণ সড়কগুলো মিশে যাওয়া, মহাসড়কের পাশে সিএনজি পাম্প, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শিল্পকারখানা থাকায় ও স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতে মহাসড়কে অন্য বাহন না থাকায় ইজিবাইক, অটোরিকশাসহ নিষিদ্ধ যানবাহন চলছে। ফলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তবে এসব যান চলাচলে কড়াকড়ি থাকবে। গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার প্রধান কারণ মাত্রাতিরিক্ত গতি—চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে সজাগ হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত