Ajker Patrika

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানতে চাইল দলগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ০৮: ০১
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গতকাল বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গতকাল বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি ও সমমনারা। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ডিসেম্বর থেকে আগামী এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ চেয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এদিন আশা প্রকাশ করেছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘চমৎকার’ জুলাই সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে।

গতকাল বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর হেয়ার রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হয়। এতে প্রথমে বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস; এরপর এই কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এতে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের ৩৪ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবিসহ ২৭টি দলের নেতারা বক্তব্য দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রথম দিনের সংলাপ শেষ হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সংবিধানের আলোচিত-বিতর্কিত ৭০ অনুচ্ছেদ, দুই কক্ষের সংসদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং সংরক্ষিত মহিলা আসন নিয়ে সুপারিশের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।

কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা তো বিভক্তকরণের প্রক্রিয়ার রাজনীতি সৃষ্টি করিনি; আমরা সৃষ্টি করেছি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য, দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য। আশা করি, আমরা সেই পর্বে ঢুকতে পারব। চমৎকার একটা জুলাই সনদ তৈরি করতে পারব।’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্বের সংলাপে অনেকগুলো বিষয়ে একমত হওয়া এবং দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে কাছাকাছি থাকা আরও কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার চেষ্টার কথা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এখানে সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করা হচ্ছে।

সংলাপের দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় আছে, (যা) কাছাকাছি এসে গেছে। আরেকটু হলেই আমাদের ঐকমত্যের তালিকায় আরেকটা সুপারিশ যুক্ত হয়। এই সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি।’

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবি

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অবশ্যই মনে করি ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব। এর আগেই জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচনমুখী যে সংস্কার, সেগুলো চিহ্নিত করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করি। এমন কোনো সংস্কার নেই, যা এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। শুধু সংবিধান ব্যতীত অন্যান্য যে সংস্কার আছে, তা নির্বাহী আদেশে বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যেটা আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি। সুতরাং নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার একটি কারণও নেই।’

বৈঠকে অংশ নেওয়া অধিকাংশ দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা। সমমনা ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিমও সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, বক্তব্য দেওয়া ২৬ নেতার মধ্যে ২৩ জনই ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট চেয়েছেন। তবে সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, আমজনতার দল, লেবার পার্টি, এনডিএম, বাংলাদেশ জাসদ ও বিএলডিপি—এ আটটি দল জোর দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বৈঠকে অধিকাংশ দলই ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা সেটি বিবেচনা করবেন। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন।’

সংলাপে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে তিনটি বক্তব্য এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুন। কিছু রাজনৈতিক দল ডিসেম্বর চেয়েছে। আমরা বলেছি, মে ও জুন মাস নির্বাচন করার জন্য উপযুক্ত সময় নয়। সে অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার রাখতে গেলে জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়।...আমরা বলেছি, এর মাঝে একটা তারিখ ঘোষণা করুক।’

এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের গড়া দল এনসিপি বলেছে, জুলাই সনদের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলে সংস্কারপ্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা আহ্বান জানিয়েছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেন জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়িত হয়। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার, নির্বাচন কমিশন আইন সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা উচিত।’

নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে কোনো কারণে যদি নির্বাচন পেছায়, তাহলে বাড়তি সময় কেন লাগবে, তা সরকারকেই ব্যাখ্যা করতে হবে।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমেদ বলেন, তাঁরা কোন সংস্কারে কত দিন লাগবে, তার রোডম্যাপ দেওয়া; শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসরদের বিচার দৃশ্যমান করা এবং ঠিক কোন মাসে নির্বাচন করা হবে, তার রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছেন।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন কী অর্জন করতে চায়, তার লিখিত কাঠামো থাকা দরকার। অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মাসে কী কী করেছে, তার আমলনামা বা খতিয়ান জনগণের কাছে দেওয়া দরকার।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে ভোট চেয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আগামী জুনের মধ্যে জুলাই সনদ বা জাতীয় সনদের কাছ শেষ করতে আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি বিতর্কিত পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছি।’

জাতীয় গণফ্রন্ট নির্বাচন চেয়েছে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

প্রথম ধাপের সংলাপে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নমনীয়তা লক্ষ করা গেছে উল্লেখ করেছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে যে নমনীয়তা রাজনৈতিক দলগুলো দেখিয়েছে, তা আমার কাছে মনে হয়েছে অভূতপূর্ব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত