Ajker Patrika

স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স: ঠিকাদার পাচ্ছে না বিআরটিএ, অপেক্ষায় ১০ লাখ মানুষ

  • চার মাস ধরে স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট বন্ধ।
  • জুলাইয়ে ভারতীয় ঠিকাদারের চুক্তি শেষে দরপত্রে সাড়া নেই।
  • ৫৪ আবেদন বিক্রি হলেও জমা পড়ে ৪টি, শর্ত পূরণে ব্যর্থ।
  • দু-এক দিনের মধ্যে নতুন দরপত্র, এবার ই-জিপিতে।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৫
স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স: ঠিকাদার পাচ্ছে না বিআরটিএ, অপেক্ষায় ১০ লাখ মানুষ

চার মাস ধরে স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট বন্ধ থাকায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না প্রায় ১০ লাখ আবেদনকারী। ভারতীয় ঠিকাদারের সঙ্গে স্মার্ট কার্ড প্রিন্টের চুক্তি গত জুলাইয়ে শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করতে না পারায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। কবে স্মার্ট কার্ড পাবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রত্যাশীরা।

বিআরটিএর সূত্র জানায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং-সংক্রান্ত কাজের জন্য ভারতীয় ঠিকাদার মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের (এমএসপি) সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ২৮ জুলাই। এর পরই লাইসেন্স প্রিন্টিং কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দেয়। তখন প্রায় ৭ লাখ লাইসেন্স কার্ড ঝুলে ছিল। এরপর গত চার মাসে আরও ৩ লাখ নতুন আবেদন যুক্ত হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন, পরীক্ষা, ফিঙ্গার প্রিন্টসহ সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করলেও স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড পাচ্ছেন না তাঁরা।

বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড প্রিন্টের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য ২১ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে। প্রথমে দরপত্র বিক্রির শেষ সময় ২৪ সেপ্টেম্বর থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ১৩ অক্টোবর করা হয়। মোট ৫৪ দরপত্র বিক্রি হলেও মাত্র ৪টি আবেদন জমা পড়ে। বিআরটিএর একাধিক কর্মকর্তা জানান, আবেদন জমা দেওয়া চার প্রতিষ্ঠানের কেউই দরপত্রের শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গতকাল রোববার সভা করেছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আবার দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে।

আগের দরপত্রে দেখা যায়, দরপত্রদাতার জন্য নির্ধারিত যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এর মধ্যে রয়েছে সরবরাহকারী হিসেবে পণ্য ও সংশ্লিষ্ট সেবা সরবরাহে ন্যূনতম পাঁচ বছরের সাধারণ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে; গত ২০ বছরের মধ্যে অনুরূপ পণ্য সরবরাহে সর্বোচ্চ তিনটি সফল চুক্তি সম্পন্ন করার অভিজ্ঞতা, যার মোট চুক্তি মূল্য কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকা হতে হবে; দরপত্রদাতার পণ্য সরবরাহ বা উৎপাদন ক্ষমতা থাকতে হবে।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, কঠিন শর্তের কারণে আবেদন কম পড়েছে এবং আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলো সেই শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

বিআরটিএর ড্রাইভিং লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তারা জানান, নতুন ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট কার্যত বন্ধ থাকবে। লাইসেন্স প্রত্যাশীদের চলাচলের সুবিধার্থে অস্থায়ীভাবে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে সীমিতসংখ্যক স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট করা হচ্ছে।

তবে বিআরটিএর কার্ডের মজুত শেষ হলে এটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে লাইসেন্স না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন আবেদনকারীরা। বিশেষ করে বিদেশগামী শিক্ষার্থী, পেশাজীবী চালক এবং নতুন চাকরিপ্রত্যাশী চালকেরা। তাঁদের একজন চালকের সহকারী হিসেবে কর্মরত জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পেয়েছি বলে রসিদ আছে। কিন্তু স্মার্ট কার্ড ছাড়া কোনো গাড়ির মালিক আমাকে চাকরি দিচ্ছেন না। সবাই একই কথা বলেন, আগে কার্ড আনেন।’

জাপানগামী শিক্ষার্থী নাসরিন সুলতানা বলেন, জাপানি ভাষা শেখার স্কুলে ভর্তির পর ড্রাইভিং লাইসেন্স জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু স্মার্ট কার্ড না পাওয়ায় সব কাগজপত্রের কাজ আটকে আছে। প্রতিদিন বিআরটিএতে খোঁজ নিয়ে জবাব আসে ‘এখনো কার্ড হয়নি’। এতে সময় ও টাকা নষ্ট হচ্ছে।

এ ছাড়া রাইডশেয়ারিংয়ের চালক, প্রাইভেট কারচালক ও কোম্পানির চালকদের অভিযোগ, স্মার্ট কার্ড না থাকায় পুলিশের চেকপোস্টে নানান প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। জরিমানার আশঙ্কায় থাকতে হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগের দরপত্রে প্রয়োজনীয় আবেদন পাওয়া যায়নি। তাই আমরা আবার দরপত্রে যাচ্ছি এবং এবার ই-জিপি প্ল্যাটফর্মে করছি, যাতে দুই মাসের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন করা যায়। যা ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় চার মাস লাগে। নতুন প্রক্রিয়ায় আবেদন পেলেই দ্রুত কাজ এগোবে। ঠিকাদার নিয়োগ হলেই আটকে থাকা সব ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হবে। আপাতত ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এটি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, সক্ষমতা ও যোগ্যতা—দুটিরই ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও বিআরটিএর হাতে বিশাল দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে। লাইসেন্স ইস্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা প্রমাণ করে, এত বছরেও বিআরটিএ নিজস্ব কোনো সক্ষম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেনি। এর ফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু দায় নিচ্ছে না কেউ, বিআরটিএ-ও নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...