Ajker Patrika

নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ করল কানাডা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৯
নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবে হাজারো পরিবারের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবে হাজারো পরিবারের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

কানাডা সরকার দেশের নাগরিকত্ব আইনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের পথে হাঁটছে। নতুন আইনটি বিল সি-৩ নামে পরিচিত। এটি কার্যকর হলে বিদেশে জন্ম নেওয়া হাজার হাজার কানাডীয় বংশোদ্ভূত পরিবার ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কানাডার অভিবাসন মন্ত্রী লেনা মেটলেজ ডিয়াব এই আইন সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘বিল সি-৩ আমাদের নাগরিকত্ব আইনের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাধান করবে এবং বিদেশে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া শিশুদের পরিবারের জন্য ন্যায্যতা আনবে। এই সংস্কার পুরোনো আইনের কারণে বাদ পড়া মানুষকে নাগরিকত্ব দেবে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য সুস্পষ্ট নিয়ম তৈরি করবে, যা আধুনিক পরিবারগুলোর জীবনযাত্রাকে বিবেচনা করে। এই পরিবর্তন কানাডার নাগরিকত্বকে শক্তিশালী ও সুরক্ষিত করবে।’

অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব কানাডা (আইআরসিসি) ব্যাখ্যা করেছে, ২০০৯ সালে চালু হওয়া ‘ফার্স্ট-জেনারেশন লিমিট’ একটি বড় সমস্যা তৈরি করেছিল। এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী, বিদেশে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া কোনো শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে কানাডার নাগরিকত্ব পাবে না, যদি তার মা-বাবা কানাডার বাইরে জন্ম নেন বা তাদের দত্তক নেওয়া হয়ে থাকে। তবে বাবা-মায়ের মধ্যে অন্তত একজন যদি কানাডায় জন্মগ্রহণ করে থাকেন বা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব পেয়ে থাকেন, তখন ওই সন্তান সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী নাগরিকত্ব পেতে পারে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অন্টারিও সুপিরিয়র কোর্ট এই বিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। ফেডারেল সরকার আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় এবং কোনো আপিল না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিধিনিষেধের কারণে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হওয়া মানুষ, যারা ভুল করে নিজেদের নাগরিক ভাবতেন, তাদের প্রায়শই ‘হারানো কানাডিয়ান’ নামে উল্লেখ করা হতো।

বিল সি-৩ পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরোনো বিধিনিষেধের শিকার হওয়া ‘হারানো কানাডীয়দের’ নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বিদেশে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য একটি নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যার নাম ‘সাবস্ট্যানশিয়াল কানেকশন টেস্ট’।

এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কানাডীয় বংশোদ্ভূত অভিভাবক যাঁরা বিদেশে জন্মেছেন বা যাদের দত্তক নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের বিদেশে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া সন্তান নাগরিকত্ব পাবেন। তবে, শর্ত হলো ওই কানাডীয় অভিভাবককে সন্তানের জন্ম বা দত্তক নেওয়ার আগে কানাডায় কমপক্ষে ১ হাজার ৯৫ দিন (মোট তিন বছর) অবস্থান করার প্রমাণ দেখাতে হবে।

এই কঠোরতা বা মানদণ্ডটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের নাগরিকত্ব নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে।

আইনটি কার্যকর করার জন্য আদালত ২০২৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েছে, যাতে আইআরসিসি প্রস্তুত হতে পারে। কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন এই সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকত্বের আবেদনের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৬ সালের কানাডিয়ান নাগরিকত্ব আইনের আওতায় অসংখ্য মানুষ নাগরিকত্ব হারিয়েছে বা নাগরিকত্বের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ২০০৯ এবং ২০১৫ সালের সংশোধনীতে বেশির ভাগের নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার করা হলেও, ২০০৯ সালের ‘ফার্স্ট-জেনারেশন লিমিট’ বিদেশে জন্ম নেওয়া কানাডীয় বংশোদ্ভূত পিতামাতার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে রেখেছিল। নতুন বিল সি-৩ সেই পুরোনো জটিলতার অবসান ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানে আধাসামরিক বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে আত্মঘাতী হামলা, নিহত ৬

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের পেশোয়ারে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের পেশোয়ারে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পেশোয়ারে আধাসামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে তিন আত্মঘাতী হামলাকারী হামলা চালিয়েছিল। এতে অন্তত তিন নিরাপত্তাকর্মীসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে এমনটাই জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় আজ সোমবার ভোরে ফেডারেল কনস্ট্যাবুলারি (এফসি) সদর দপ্তরের প্রধান ফটকে প্রথম হামলাকারী নিজের বিস্ফোরক ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। অন্য দুই হামলাকারী ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা সদস্যরা তাদের গুলি করে হত্যা করেন।

পেশোয়ার ক্যাপিটাল সিটি পুলিশ অফিসার মিয়া সাঈদ আহমদ ডনকে বলেন, ‘শুরুতে তিনজন অস্ত্রধারী সদর দপ্তরে ঢোকার চেষ্টা করে। একজন গেটে নিজেকে উড়িয়ে দেয়, আর দুজন ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে এফসি সদস্যরা গুলি চালিয়ে তাদের ঠেকায়।’

দুনিয়া নিউজ সাঈদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, গেটে অবস্থানরত তিন এফসি সদস্য বিস্ফোরণে নিহত হন। পেশোয়ার পুলিশপ্রধান সাঈদ আহমদ বলেন, হামলার সময় সদর দপ্তরের ভেতরের খোলা মাঠে সকালের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতিতে অনেক নিরাপত্তাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আজকের হামলাকারীরা পায়ে হেঁটে এসেছিল। তারা কুচকাওয়াজের জায়গা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। আমাদের সদস্যদের দ্রুত পদক্ষেপে আরও বড় বিপর্যয় ঠেকানো গেছে।’

এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হামলার পরপরই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত এ সদর দপ্তর ঘিরে ফেলা হয়। ডনের বরাতে জানা যায়, অন্তত ছয় বেসামরিক লোক আহত হয়েছে। তাদের পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের এক মুখপাত্র ডনকে জানান, আহত সবাই স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন।

দ্য ডন আরও জানায়, লেডি রিডিং হাসপাতাল ও খাইবার টিচিং হাসপাতালে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তান তালেবান বা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর আগে এ ধরনের হামলার জন্য দায়ী ছিল। দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে এমন হামলা বেড়েছে। আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানের মিত্র হলেও টিটিপি আলাদা একটি সংগঠন।

এই হামলার দুই সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের একটি আদালতের বাইরে এক আত্মঘাতী হামলাকারী বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে সে বিস্ফোরণ ঘটালে ১২ জন নিহত হয়।

ক্রমবর্ধমান সহিংসতা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মধ্যে টানাপোড়েনও বাড়িয়েছে। ইসলামাবাদ বলছে, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে টিটিপি সদস্যরা আফগানিস্তানের ভেতরে আশ্রয় পাচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পেশোয়ার হামলার নিন্দা জানিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ‘সময়োপযোগী’ প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যারা পাকিস্তানের অখণ্ডতায় আঘাত হানতে চায়, তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেওয়া হবে।’ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিও হামলার তীব্র নিন্দা জানান। এক্সে তিনি ‘গভীর সমবেদনা’ জানান এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয় নারীকে আটকে রাখল সাংহাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, অরুণাচল প্রদেশকে চীনের অংশ দাবি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দা  পেমা ওয়াং থংডক। ছবি: এক্স
অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দা পেমা ওয়াং থংডক। ছবি: এক্স

ট্রানজিট বিরতির সময় সাংহাই বিমানবন্দরে অরুণাচল প্রদেশের এক ভারতীয় নারীকে ১৮ ঘণ্টা আটক ও হয়রানি করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। চীনা কর্তৃপক্ষ ওই নারীর ভারতীয় পাসপোর্ট অবৈধ বলেছে, তারা দাবি করেছে, ওই নারী তাঁর জন্মস্থান অরুণাচল প্রদেশে, যে ভূখণ্ড প্রকৃতপক্ষে চীনের অংশ।

গতকাল রোববার এক্স হ্যান্ডলে এমন অভিযোগ করে পোস্ট করেছেন পেমা ওয়াং থংডক নামে ওই নারী।

তিনি জানিয়েছেন, ২১ নভেম্বর লন্ডন থেকে জাপানে যাচ্ছিলেন। সাংহাই পুডং বিমানবন্দরে তাঁর তিন ঘণ্টার ট্রানজিট বিরতি ছিল। এক্স-এ একাধিক পোস্টে তিনি জানান, চীনা অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এবং চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস করপোরেশন লিমিটেড তাঁর ভারতীয় পাসপোর্টকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করে ২১ নভেম্বর তাঁকে ১৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে রাখে।

থংডক অভিযোগ করেন, অভিবাসন ডেস্কের কর্মকর্তারা সরাসরি তাঁকে জানান, তিনি অরুণাচল প্রদেশে জন্মগ্রহণ করায় তাঁর ‘ভারতীয় পাসপোর্ট অবৈধ’। তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করা হয় এবং বৈধ জাপানি ভিসা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে পরবর্তী ফ্লাইটে উঠতে বাধা দেওয়া হয়।

থংডকের দাবি, একাধিক অভিবাসন কর্মকর্তা এবং চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের কর্মীরা তাঁকে অপমান ও উপহাস করেন। এমনকি তাঁকে চীনা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পরামর্শও দেওয়া হয়। এই পুরো সময় তাঁকে খাবার, বিমানবন্দর সুবিধা বা তাঁর স্ট্যাটাস সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও জানান, নির্ধারিত জাপানগামী ফ্লাইটে তাঁকে উঠতে না দিয়ে শুধু চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের একটি নতুন টিকিট কিনতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে তাঁর বড় আর্থিক ক্ষতি হয়, কারণ তাঁকে ফ্লাইট এবং হোটেল বুকিং বাতিল করতে হয়। বিমানবন্দর ট্রানজিট এলাকায় আটকে থাকা অবস্থায়, দিশেহারা থংডক শেষমেশ যুক্তরাজ্যে থাকা এক বন্ধুর মাধ্যমে সাংহাইয়ে ভারতীয় কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কনস্যুলার হস্তক্ষেপে গভীর রাতে তিনি বিমানবন্দর ত্যাগ করতে সক্ষম হন।

এই ঘটনাকে ‘ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি অপমান’ বলে অভিহিত করেছেন থংডক। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে বেইজিংয়ের কাছে বিষয়টি উত্থাপনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত সরকার যেন জবাবদিহি নিশ্চিত করে, ক্ষতিপূরণ চায় এবং অরুণাচল প্রদেশের সমস্ত ভারতীয় নাগরিক যাতে বিদেশে ভ্রমণের সময় এই ধরনের বৈষম্যের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করে।

উল্লেখ্য, অরুণাচল প্রদেশকে চীন ‘জাংনান’ বা তিব্বতের দক্ষিণাংশ বলে অভিহিত করে। এমনকি চীন এই অংশের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করে আসছে। ভারত বারবার চীনের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

চলতি বছরের মে মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ ব্যাপারে বলেন, ভারতীয় ভূখণ্ডের নাম পরিবর্তন করলে এই ‘অস্বীকার করার অযোগ্য’ বাস্তবতা পরিবর্তিত হবে না যে, অরুণাচল প্রদেশ ‘ছিল, আছে এবং সর্বদা’ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসির প্রতিবেদন /সিয়েরা লিওনে কালো জাদুর নামে নরবলি, নেপথ্যে ক্ষমতার নেশা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৬
আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনে এখনো রয়ে গেছে কালো জাদুর মতো কুসংস্কারের প্রভাব। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনে এখনো রয়ে গেছে কালো জাদুর মতো কুসংস্কারের প্রভাব। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনে একাধিক পরিবারে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা তথাকথিত কালো জাদুর সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে মানবদেহের অংশের অবৈধ ব্যবসার রহস্য উন্মোচন করেছে বিবিসি আফ্রিকা আই।

চার বছর আগে পাপায়ো নামে ১১ বছরের এক কিশোরকে হত্যা করা হয়, কালো জাদুর নামে। তার মা এখনো আশা করে আছেন, একদিন তাঁর ছেলের হত্যার বিচার হবে। সাল্লাই কালোকা নামে ওই নারী বিবিসিকে বলেন, ‘আমি কষ্টে আছি। তারা আমার সন্তানকে হত্যা করেছে, আর এখন শুধু নীরবতা।’

সাল্লাই কালোকা জানান, তাঁর ছেলে মাছ বিক্রির জন্য বাজারে গিয়েছিল, কিন্তু আর ফিরে আসেনি। তিনি আরও বলেন, তাঁর ছেলে পাপায়োকে যখন পাওয়া যায়, তখন দেখা গেছে—শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, চোখ এবং এক হাত কেটে নেওয়া হয়েছিল।

পাপায়ো নিখোঁজ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর্যন্ত খুঁজেও কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। পরে তাঁর ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ এক পরিত্যক্ত কুয়া থেকে উদ্ধার করা হয়। সাল্লাই কালোকা বলেন, ‘আমরা সব সময় আমাদের সন্তানদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিই। বিক্রি করতে গেলে কোনো কোনায় যেয়ো না, অজানা কারও দেওয়া উপহার নেওয়ার আগে ভাব। আমাদের দেশে এটা প্রায়ই ঘটে।’

সাল্লাই বলেন, আমার নিজ শহর মাকেনিতে এ ধরনের হত্যা প্রায়ই ঘটে। এরপর আমাদের কালো জাদু বা জুজুর ভয় দেখানো হয়। কিন্তু যথাযথ তদন্ত হয় না। এর উদাহরণ পাপায়োর হত্যাকাণ্ডকে পুলিশ ‘রিচুয়াল কিলিং’ বা কালো জাদুসংক্রান্ত হত্যা হিসেবেও নিশ্চিতও করেনি। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে একজন ব্যক্তির দেহের কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশ জুজু অনুশীলনকারীরা তাবিজ বা অন্য জাদুবিদ্যার জন্য ব্যবহার করে।

তারা বড় অঙ্কের অর্থ প্রদানকারী গ্রাহকদের ধন-সম্পদ বা ক্ষমতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এসব তান্ত্রিকেরা মূলত তাদের ভুল বোঝায় যে, মানবদেহের অংশ এই তাবিজকে আরও কার্যকর করে। কিন্তু পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ সীমিত সম্পদের কারণে প্রায়ই অপরাধীদের খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়। দেশে ৮৯ লাখ মানুষের জন্য শুধু একজন প্যাথলজিস্ট আছে।

সিয়েরা লিওনে কালো জাদুসংক্রান্ত বিশ্বাস এতটা গভীর যে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যেও অনেকেই এই ধরনের মামলা অনুসরণ করতে ভয় পান। ফলে অধিকাংশ অপরাধ অনুসন্ধানহীন থাকে। তবে বিবিসি আফ্রিকা আই এমন দুজনকে খুঁজে পেয়েছে, যারা নিজেদের জুজু অনুশীলনকারী হিসেবে পরিচয় দেয় এবং হত্যার করা ব্যক্তির দেহ থেকে নির্দিষ্ট অংশ সরবরাহ করতে রাজি ছিলেন।

উভয়ই বলেছিলেন যে, তারা বড় এক নেটওয়ার্কের অংশ। একজন দাবি করেন যে, পশ্চিম আফ্রিকার নানা দেশে তাদের শক্তিশালী গ্রাহক আছে। বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের একজন সদস্য ওসমান নাম ব্যবহার করে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, যিনি মানব বলি দিয়ে ক্ষমতা অর্জন করতে চান। সেই মতে, তিনি গিনি সীমান্তে কাম্বিয়া জেলার এক প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে একটি গোপন মন্দিরে জুজু অনুশীলনকারীর সঙ্গে দেখা করেন।

সেই জুজু অনুশীলনকারী নিজেকে কানু বলে পরিচয় দিলেন এবং রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে বলেন জানালেন। পুরো সময় লাল রঙের গামছায় তার মুখ ঢাকা ছিল। কানু বলেন, ‘আমি গিনি, সেনেগাল এবং নাইজেরিয়ার কিছু বড় বড় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কাজ করেছি। আমাদের একটি দল আছে। কখনো কখনো নির্বাচনের সময়, রাতে এখানে মানুষ ভিড় করে।’

নির্বাচনের সময়কে অনেকেই বিপজ্জনক মনে করেন। সে সময় অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। কারণ, অপহরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎকারে সময় কানু আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে তাঁর ব্যবসার প্রমাণ দেখান। এ সময় তাঁর হাতে একটি মাথার খুলি দেখান। তিনি ওসমানকে বলেন, ‘দেখছ? এটা কোনো একজনের। আমি এটি শুকিয়েছি। এটি একজন মহিলার খুলি। আমি আশা করছি, দু–একদিনের মধ্যেই কেউ এটি নেবে।’

তিনি তাঁর মন্দিরের পেছনের একটি গর্তও দেখিয়ে বললেন, ‘এখানেই আমরা মানবদেহের বিভিন্ন অংশ ঝুলিয়ে রাখি। এখানে হত্যা করি এবং রক্ত নিচে চলে যায়...বড় বড় নেতারা, যখন ক্ষমতা চায়, এখানে আসে। আমি, তারা যা চায় তাদের দেই।’ ওসমান জানান, তিনি নারীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করতে চান রীতি অনুযায়ী। কানু জবাবে বললেন, ‘নারী অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দাম ৭ কোটি লিওঁ বা ৩ হাজার ডলার।’ পরে বিবিসি আফ্রিকা আই আর কানুর সঙ্গে দেখা করেনি। কারণ, তাঁরা চায়নি দলের কোনো সদস্য বিপদে পড়ুক। এ ছাড়া, কানু প্রতারক হতে পারে—এমন আশঙ্কাও ছিল। তবে বিবিসি সংগৃহীত যাবতীয় প্রমাণাদি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

কিছু জুজু অনুশীলনকারী নিজেদের হার্বালিস্ট বা ভেষজ ওষুধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সিয়েরা লিওনে ২০২২ সালে মাত্র ১ হাজার নিবন্ধিত ডাক্তার ছিল, কিন্তু আনুমানিক ৪৫ হাজার প্রচলিত ভেষজ চিকিৎসক ছিলেন। দেশের প্রায় সবাই এই ভেষজবিদদের ওপর নির্ভর করেন। তারা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাতেও সাহায্য করে। এসব বিশেষজ্ঞ নিজ নিজ মন্দিরে রোগীদের চিকিৎসা করেন, যেখানে মায়াজাল ও আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া থাকে।

সিয়েরা লিওনের কাউন্সিল অব ট্র্যাডিশনাল হিলারসের প্রেসিডেন্ট শেকু তারাওয়ালি নিশ্চিত করেছেন যে, কানুর মতো ‘কালো শক্তির’ জুজু অনুশীলনকারীরা সাধারণ ভেষজ চিকিৎসকদের খ্যাতিকে কলঙ্কিত করছেন।

শেকু তারাওয়ালি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাবমূর্তি পরিষ্কার করতে প্রাণপণ চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষ বোঝে না, তাই তারা আমাদের সবাইকে খারাপ ওঝা-গুনিন বলে ধরে নেয়। একটি পচা মাছ পুরো ঝাঁকটাকে নষ্ট করে ফেলে...আমরা চিকিৎসক, খুনে নই।’

তারাওয়ালি সরকার এবং আরেকটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন, যাতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটি প্রথাগত চিকিৎসা ক্লিনিক খোলা যায়। তাঁর বিশ্বাস, ক্ষমতা ও টাকার লোভেই এসব আচারগত হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা মানুষগুলো প্রভাবশালী। তিনি বলেন, ‘যখন কেউ নেতা হতে চায়...তখন তারা মানুষের শরীর থেকে অঙ্গ কেটে নেয়। ওটাকেই তারা উৎসর্গ হিসেবে ব্যবহার করে। মানুষকে পুড়িয়ে ফেলে, তারপর ছাই দিয়ে শক্তি অর্জন করে। মানুষের চর্বি থেকেও শক্তি নেয়।’

সিয়েরা লিওনে এমন কালো জাদুর কারণে কী পরিমাণ মানুষকে হত্যা করা হয়, তার সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। দেশটির বেশির ভাগ মানুষ নিজেদের মুসলিম বা খ্রিষ্টান হিসেবে পরিচয় দেন। যুক্তরাজ্যের অ্যাবারিস্টউইথ ইউনিভার্সিটির গবেষক ইমানুয়েল সারপং ওউসু বলেন, ‘বেশির ভাগ আফ্রিকান দেশেই এমন খুনকে আলাদা কোনো বিভাগ বা উপবিভাগ হিসেবে সরকারি খতিয়ানে নথিভুক্ত করা হয় না। অনেক ঘটনাকে দুর্ঘটনা, বন্য প্রাণীর হামলায় মৃত্যু, আত্মহত্যা বা স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে ভুলভাবে নথিভুক্ত করা হয়...অধিকাংশ অপরাধী, সম্ভবত ৯০ শতাংশের মতো, ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।’

বিবিসি আফ্রিকা আই সিয়েরা লিওনের ফ্রি টাউনের উপশহর ওয়াটারলুতে এমন আরেক সন্দেহভাজন দেহাংশ সরবরাহকারীর খোঁজ পায়। ইদারা ছদ্মনামের ওই ব্যক্তি ওসমানকে বলেন, ‘আমি একা নই, আমার অধীনে ২৫০ জনের মতো ওঝা-গুনিন কাজ করে।’

ইদারা আরও বলেন, ‘মানুষের এমন কোনো অঙ্গ নেই, যা আমরা ব্যবহার করি না। আমরা যখন কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গ চাই, তখন তারা সেটা এনে দেয়। আমরা কাজ ভাগ করে করি।’ তিনি আরও জানান, তার দলে এমন লোক আছে যারা মানুষ ধরে আনতে খুব পারদর্শী।

ওসমান যখন দ্বিতীয়বা ইদারার সঙ্গে দেখা করেন, তখন তিনি ওসমানকে একটি ভয়েস নোট শোনান। যেখানে ইদারার এক সহযোগীকে বলতে শোনা যায়, তারা প্রতিদিন রাতে শিকার খুঁজতে বেরোতে প্রস্তুত। ওসমান তখন তাকে বলেছিলেন, কাজটা এখনই না করতে। তবে পরে যখন ইদারা ফোন করে জানায় যে, তারা একজন সম্ভাব্য ভিকটিম চিহ্নিত করেছে, তখন বিবিসি বিষয়টি পুলিশ কমিশনার ইব্রাহিম সামাকে জানায়।

কমিশনার ইব্রাহিম সামা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। তবে জানিয়ে দেন, তারাওয়ালিকে ছাড়া তাঁর বাহিনী অভিযান চালাবে না। কারণ, তারাওয়ালি এমন অভিযানে প্রায়ই পুলিশকে সহায়তা করেন। অভিযানে থাকা সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট আলিউ জালো বলেন, ‘যখন আমরা খবর পাই যে কোনো বিপজ্জনক ওঝা একটি মন্দির চালাচ্ছে, তখন আমরা প্রথাগত চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করি।’ তিনি আরও জানান, কিছু পুলিশ সদস্যের মনে এসব ‘অভিশপ্ত’ ওঝাদের নিয়ে কুসংস্কার আছে। ইদারাকে গ্রেপ্তার করার পর, তারাওয়ালি পুরো জায়গায় তল্লাশি শুরু করেন। তিনি বলেন, সেখানে মানুষের হাড়, মানুষের চুল এবং অন্যান্য হাড় পাওয়া যায়।

দুই বছর আগে ফ্রিটাউনে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিখোঁজ হন। পরে তাঁর লাশ পাওয়া যায় ওয়াটারলুর এক গুণিনের মন্দিরের ভেতর পুঁতে রাখা অবস্থায়। ২০২৩ সালের আগস্টে মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে হাই কোর্টে পাঠানো হয়। কিন্তু দুটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, মামলাটি এরপর আর এগোয়নি এবং আটক ব্যক্তিরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

বিবিসি আফ্রিকা আই যখন, এই প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করছিল, ঠিক সে সময় ২৮ বছর বয়সী কাজিন ফাতমাটা কন্তে নামের এক নারী মাকেনিতে খুন হন। দুই সন্তানের মা ও পেশায় হেয়ারড্রেসার ফাতমাটার লাশ তাঁর জন্মদিনের পরদিনই রাস্তার পাশে ফেলে রাখা অবস্থায় পাওয়া যায়। এক বাসিন্দা জানান, সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে ওই এলাকায় আরও দুজনের লাশ পাওয়া গিয়েছিল।

ফাতমাটার সামনের বেশ কয়েকটি দাঁত ছিল ওপড়ানো। এতে স্থানীয়দের বিশ্বাস দৃঢ় হয় যে এটা কালো জাদু চর্চা সংক্রান্ত হত্যাকাণ্ড। ফাতমাটার হত্যার আসল কারণ হয়তো কোনো দিনই জানতে পারা সম্ভব হবে না। পরিবার নিজ খরচে তাঁর লাশ ফ্রিটাউনে পাঠিয়ে ময়নাতদন্ত করায়, কারণ সরকার সেটা বহন করতে পারেনি। কিন্তু ময়নাতদন্তেও কিছু স্পষ্ট বের হয়নি। এখনো কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি।

পাপায়োর মায়ের মতোই, সঠিক বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণা এবং পুলিশের উদাসীনতা মাকেনির মতো দরিদ্র এলাকায় ভয়ের আবহ আরও গাঢ় করে তুলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টিপু সুলতানের পরিবার থেকে ব্রিটিশ গুপ্তচর, নূরের মুখ ফরাসি ডাকটিকিটে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নূর ইনায়াত খান। ছবি: সংগৃহীত
নূর ইনায়াত খান। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে অবদান রাখা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ গুপ্তচর নূর ইনায়াত খানকে সম্মান জানাতে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে ফ্রান্স সরকার। ১৮ শতকের মাইসোরের শাসক টিপু সুলতানের বংশধর নূর ইনায়াত খানই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত কোনো নারী যিনি ফ্রান্সে এমন সম্মান পেলেন।

ফরাসি ডাক বিভাগ লা পোস্তে এ মাসে যোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে ‘ফিগারস অব দ্য রেজিস্ট্যান্স’ নামের যে সিরিজের ডাকটিকিট প্রকাশ করে। যাদের নামে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়, নূর তাদেরই একজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেছে নেওয়া হয় এই বীর নারী ও পুরুষদের।

নূর ইনায়াত খানের জীবনের ওপর লিখিত ‘স্পাই প্রিন্সেস: দ্য লাইফ অব নূর ইনায়াত খান’—বইয়ের লন্ডনভিত্তিক লেখিকা শ্রাবণী বসু বলেন, ‘এই বিশেষ সময়ে ফ্রান্স নূর ইনায়াত খানকে সম্মান জানিয়েছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। প্যারিসে বড় হয়েছেন, যুদ্ধের সময় ইংল্যান্ডে গিয়ে যোগ দিয়েছেন যুদ্ধ প্রচেষ্টায়। এখন তাঁর মুখ ডাকটিকিটে দেখা যাবে, এটি সত্যিই ঐতিহাসিক।’

প্রতিটি ডাকটিকিটে ব্যবহার করা হয়েছে পুরোনো ছবির ভিত্তিতে তৈরি নকশা। নূরের ডাকটিকিটে দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশ উইমেন্স অক্সিলিয়ারি এয়ার ফোর্সের (ডব্লিউএএফ) ইউনিফর্মে তাঁর প্রতিকৃতি। শ্রাবণী বসু আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে ব্রিটেন তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁকে সম্মান জানিয়েছিল। এখন ব্রিটেন ও ফ্রান্স—দুই দেশেই তাঁর নামে ডাকটিকিট ছাপা হয়েছে। ভারতেরও উচিত তাঁর পূর্বপুরুষের দেশ হিসেবে নূরের নামে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা।’

নূর-উন-নিসা ইনায়াত খান ১৯১৪ সালে রাশিয়ার মস্কোতে জন্ম নেন। তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয় সুফি সাধক, মা আমেরিকান। শিশু বয়সে তাঁর পরিবার লন্ডনে চলে আসে। পরে নূর বড় হন প্যারিসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্স পতনের পর নূরের পরিবার ইংল্যান্ডে পালিয়ে যায়, আর নূর যোগ দেন ডব্লিউএএএফ-এ।

১৯৪৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নূর ইনায়াত খানকে নিয়োগ দেওয়া হয় ব্রিটিশ বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল অপারেশনস এক্সিকিউটিভে (এসওই)। এ সংস্থার দায়িত্ব ছিল গুপ্তচরবৃত্তি, ধ্বংসাত্মক অভিযান ও জার্মান অধিকৃত অঞ্চলে তথ্য সংগ্রহ।

নূর ১৯৪৩ সালের জুনে জার্মান অধিকৃত ফ্রান্সে পাঠানো প্রথম নারী রেডিও অপারেটর হিসেবে সেখানে কাজ শুরু করেন। একই বছর তিনি নাৎসিদের হাতে ধরা পড়েন। পরে তাঁকে দাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়, যেখানে ভয়াবহ নির্যাতনের পর ১৯৪৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩০ বছর বয়সে তাঁকে হত্যা করা হয়।

তাঁর অসামান্য সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে নূর ইনায়াত খান পেয়েছেন ফরাসি রেজিস্ট্যান্স মেডেল, ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ক্রোয়া দ্য গেরে এবং ১৯৪৯ সালে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে মরণোত্তর জর্জ ক্রস।

ফ্রান্সের সর্বশেষ এই ডাকটিকিট সিরিজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি প্রতিরোধ আন্দোলনে অবদান রাখা নূরদেরই স্মরণ করছে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘এই মানুষগুলোই “না” বলেছিল। তারা জড়িয়েছিল গোয়েন্দা নেটওয়ার্কে, উদ্ধার মিশনে, ধ্বংসাত্মক অভিযানে...নিজের জীবন বাজি রেখে তারা দেশের সম্মান রক্ষা করেছে এবং তাকে বিজয়ের পক্ষে দাঁড় করিয়েছে।’

এই সিরিজের ডাকটিকিটে আছেন আরও অনেকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ‘ফ্রঁস লিবেরে’ প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা জাঁ-পিয়ের লেভি এবং ব্রিটিশ-ফরাসি এসওই এজেন্ট ভায়োলেট স্যাবো, যিনি র‍্যাভেন্সব্রুক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত