Ajker Patrika

শারীরিক-মানসিক চাপে বাড়ছে ব্রণ ও একজিমা, জেনে নিন করণীয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২১: ৩০
স্ট্রেস বা শারীরিক—মানসিক চাপ যখন বেড়ে যায়, তখন এর প্রভাব ত্বকেও পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্ট্রেস বা শারীরিক—মানসিক চাপ যখন বেড়ে যায়, তখন এর প্রভাব ত্বকেও পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

অফিসের ইনক্রিমেন্ট হচ্ছে না, বাড়ছে বাড়িভাড়া, সন্তানের স্কুল খরচ। প্রতি রাতে দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে দেরি হয়ে যায় বেসরকারি চাকরিজীবী শারমিন আহমেদের। সকালে সারা দিনের রান্না শেষে স্বামী-সন্তানসহ তৈরি হয়ে বের হওয়ার এক কর্মযজ্ঞ চলে। ঠিকমতো আয়নায় নিজেকে দেখার সুযোগ মেলে না। কাজের স্ট্রেস নিয়েই যখন অফিসের রেস্ট রুমে গেলেন, তখন আয়নায় তাকিয়ে গালে, কপালে ব্রণের উঁকি দেওয়া চোখে পড়ল। আর চোখের নিচের কালি তো পুরোনো সঙ্গী।

স্ট্রেস বা শারীরিক-মানসিক চাপ যখন বেড়ে যায়, তখন এর প্রভাব ত্বকেও পড়ে। ব্রণের উপদ্রব বেড়ে যায়। আবার অনেক সময় একজিমার মতো চর্মরোগেরও আবির্ভাব হয়। সহজভাবে বললে, আপনি যা অনুভব করেন, তা প্রায়ই আপনার ত্বকে প্রকাশ পায়। বলা যায়, আমাদের ত্বক আমাদের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটায়।

মানসিক চাপের প্রভাব

ত্বকে ব্রণ বা চর্মরোগ দেখা দিলে সেটি লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। আর এগুলো থেকে মানসিক অস্বস্তি, লজ্জা এবং শেষ পর্যন্ত সামাজিক জীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় অনেকে। মেগান ক্লার্কের মতো অনেকে লজ্জিত বা বিব্রত বোধ করেন, ফলে ধীরে ধীরে সামাজিক অনুষ্ঠান বা মানুষের সঙ্গে মেলামেশা এড়িয়ে চলেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড মিস প্যালেটেবলের স্বত্বাধিকারী মুক্তা তেওয়ানি বলছিলেন, ‘স্ট্রেস আর উদ্বেগ ত্বকের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যদি কারও একজিমা, সোরায়াসিস বা সংবেদনশীল ত্বক থাকে। আমার ত্বক খুব সেনসিটিভ। আমার হাতে কেরাটোসিস পিলারিস (ত্বকে শুকনো, খসখসে দাগ আর ছোট ছোট ফুসকুড়ি) হয়। অনেক সময় যখন আমি মানসিক চাপে থাকি, তখন দেখি আমার কেরাটোসিস বেড়ে যায়।’

একজিমা বা ব্রণের মতো সমস্যাগুলোতে শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি মানসিক অবস্থাও এমন অবস্থানে দাঁড়ায়, যেখানে মানুষ নিজেকে সমাজ থেকে সরিয়ে নেয়। আর যদি এই পরিস্থিতি চলতেই থাকে, তবে তাতে আত্মসম্মানবোধ কমে যাওয়া, হতাশা বা নিজের প্রতি বিকৃত ধারণা তৈরি হওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

মার্কিন অধ্যাপক মোহাম্মদ জাফারনি তাঁর বই হ্যান্ডবুক অব সাইকোডার্মাটোলজিতে দেখিয়েছেন, কীভাবে মানসিক চাপ আমাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে দুর্বল করে তোলে। ফলে ত্বকের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে যায়। এই দুর্বলতা নতুন জীবাণুর অনুপ্রবেশ এবং আগে থেকে শরীরে থাকা নিষ্ক্রিয় জীবাণুগুলোর আবার সক্রিয় হয়ে ওঠার পথ তৈরি করে।

তিনি লেখেন, কয়েক দশক ধরে মানসিক চাপ ও ত্বকের রোগের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা হয়েছে। ত্বক আমাদের শরীরের ভেতরের ও বাইরের চাপের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে যখন এসব সিস্টেমের মধ্যে যোগাযোগ ও ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় বা ভেঙে পড়ে, তখনই নানা ধরনের রোগ দেখা দিতে শুরু করে।

স্ট্রেস বা শারীরিক—মানসিক চাপ যখন বেড়ে যায়, তখন এর প্রভাব ত্বকেও পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্ট্রেস বা শারীরিক—মানসিক চাপ যখন বেড়ে যায়, তখন এর প্রভাব ত্বকেও পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্বকের সমস্যাগুলো হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ

দুবাইয়ের এক বিক্রয়কর্মী মেগান ক্লার্ক তাঁর এই সমস্যার কথা বলতে গিয়ে জানান, চাপ আসলেই তাঁর শরীরে চুলকানি শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘এটা ভীষণ অস্বস্তিকর অনুভূতি। হয়তো সামনে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সমস্যা, আর তখনই হাত-পা চুলকাতে শুরু করে। কখনো কখনো একজিমাও বেড়ে যায় আর তখন আঙুলের চামড়া উঠতে থাকে। কখনো কখনো মলম আর ব্যান্ড-এইড নিয়েই আমার দিন কাটে।’

দুবাইয়ের মনোবিজ্ঞানী মায়া গেরা বলেন, দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের রোগগুলো শরীরে এমন একধরনের চাপ সৃষ্টি করে, যা অটোইমিউন (স্ব-রোগপ্রতিরোধী) ও অ্যালার্জি-সংক্রান্ত রোগগুলোর জন্য ট্রিগার বা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করতে পারে।

যখন আপনি উদ্বিগ্ন বা মানসিক চাপে থাকেন, তখন শরীর কর্টিসোল নামক একটি স্ট্রেস হরমোন বেশি পরিমাণে তৈরি করে। কর্টিসোল মস্তিষ্কের এক বিশেষ অংশ হাইপোথ্যালামাসকে উদ্দীপ্ত করে, যা আবার কর্টিকোট্রফিন-রিলিজিং হরমোন (সিআরএইচ) তৈরি করে। এই হরমোন চুলের গোড়ার চারপাশে থাকা সেবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে তেল নিঃসরণ বাড়িয়ে তোলে। অতিরিক্ত তেল ত্বকের ছিদ্র বা পোর বন্ধ করে দেয়, ফলে ব্রণ দেখা দেয়।

স্ট্রেস বা শারীরিক—মানসিক চাপ যখন বেড়ে যায়, তখন এর প্রভাব ত্বকেও পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্ট্রেস বা শারীরিক—মানসিক চাপ যখন বেড়ে যায়, তখন এর প্রভাব ত্বকেও পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসোলের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে তোলে, যা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। দীর্ঘদিন এই ধরনের মানসিক অবসাদে ত্বকের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। কর্টিসোল শ্বেতরক্তকণিকার কার্যক্ষমতাও কমিয়ে দেয়, ফলে শরীর আরও সহজে সংক্রমণ বা ভাইরাসের আক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে।

এ ছাড়া স্ট্রেসের কারণে অ্যালোপেশিয়ার (চুল পড়ে যাওয়া) মতো অটোইমিউন রোগও শুরু হতে পারে।

ত্বক রক্ষা করবেন কীভাবে

এ ক্ষেত্রে ত্বকের চিকিৎসার আগে মনের যত্ন নিতে হবে। যাঁরা তীব্র উদ্বেগ বা বিষণ্নতায় ভোগেন, তাঁদের জন্য পেশাদার মানসিক সহায়তা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনোবিজ্ঞানী মায়া গেরা বলেন, আমরা ধীরে ধীরে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকেও মনোযোগ দিতে পারি। কারণ, স্ট্রেস থাকলে অনেক সময় আমরা ঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া করি না।

তিনি আরও বলেন, জাঙ্ক ফুড তখন সহজে গ্রহণযোগ্য খাবার মনে হলেও এটি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। জাঙ্ক ফুডে গ্লাইসেমিক লোড (রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ানোর ক্ষমতা) অনেক বেশি থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে শরীরে প্রদাহ বেড়ে যায় এবং কিছু নির্দিষ্ট রোগ হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়। সুতরাং ত্বকের সমস্যা কমাতে শুধু মলম বা স্কিন কেয়ার নয়; মানসিক স্বাস্থ্য ও খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখাও সমানভাবে প্রয়োজন।

মায়া গেরা বলেন, যখন আপনি মানসিক সুস্থতার দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করবেন, তখন ধীরে ধীরে আপনার দৈনন্দিন জীবনে মেডিটেশন (ধ্যান) ও রিল্যাক্সেশনের (অবকাশ যাপন) মতো অভ্যাসগুলো যোগ করতে পারেন। আর যদি আপনি নিজেই বুঝতে না পারেন, কোথা থেকে শুরু করবেন বা কীভাবে নিজের রুটিন তৈরি করবেন, তাহলে ডার্মাটোলজিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ত্বক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার সহজ কিছু কৌশল

মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে আনুন

১. রিল্যাক্সেশন অভ্যাস গড়ে তুলুন: নিয়মিত গভীর শ্বাস নেওয়া, ধ্যান, যোগব্যায়াম (ইয়োগা) বা মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করুন। এসব অভ্যাস কর্টিসোল হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কর্টিসোল হরমোন কম বা নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্ট্রেস এবং একজিমা বা ব্রণের মতো ত্বকের সমস্যাগুলো কমে যাবে।

২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম শুধু স্ট্রেস কমায় না, ত্বকের রক্তসঞ্চালনও বাড়ায়। যার প্রভাবে ত্বক উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর দেখায়।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: ঘুমের ঘাটতি ও স্ট্রেসের প্রভাবে ত্বকের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। প্রতিদিন রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ভালোমতো ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

ত্বকের যত্ন করতে রুটিন তৈরি করুন

১. ত্বককে হাইড্রেট রাখুন: স্ট্রেসের কারণে শরীর ও ত্বক খুব দ্রুত শুষ্ক বা পানিশূন্য (ডিহাইড্রেটেড) হয়ে পড়ে, ফলে ত্বক নিস্তেজ বা খসখসে লাগে। সারা দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পাশাপাশি ত্বকের উপযোগী একটি ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

২. কঠিন উপাদানযুক্ত প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলুন: স্ট্রেসের সময় ত্বক আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাই এমন সময় মাইল্ড প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন; যেগুলো ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি করে না। বিশেষ করে অ্যালোভেরা বা ক্যামোমাইলের মতো উপকারী উপাদানযুক্ত পণ্য ব্যবহার করতে পারেন।

৩. স্ট্রেসজনিত ত্বকের সমস্যা বুঝে পণ্য নিন: যদি আপনার ব্রণ বা ত্বকে লালচে ভাব হওয়ার প্রবণতা থাকে, তবে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা নিয়াসিনামাইড-যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন

১. স্ট্রেস কমায় এমন খাবার খান: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর খাবার; যেমন বেরি, শাকসবজি, বাদাম খেতে পারেন। এগুলো স্ট্রেসের কারণে ত্বকের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা স্যামন বা তেলযুক্ত মাছে পাওয়া যায়—প্রদাহ কমাতে এবং ত্বককে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।

২. স্ট্রেস বা ত্বকের প্রদাহ বাড়াতে পারে এমন খাবার শনাক্ত করুন: অনেকের ক্ষেত্রে ক্যাফেইন, চিনি বা দুগ্ধজাত খাবার ত্বকের সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়। কোন খাবার আপনার ত্বকের জন্য খারাপ প্রভাব ফেলছে, তা শনাক্ত করে সেগুলো খাওয়া কমিয়ে দিন।

৩. ত্বকে হাত দেওয়া এড়িয়ে চলুন: মানসিক চাপের সময় অনেকে মুখে বা ত্বকে হওয়া ব্রণ কিংবা চুলকানির স্থানে ঘষতে থাকেন। অনেকে ব্রণ নখ দিয়ে খোঁটেন। যে কারণে যা দাগ, ক্ষত এমনকি ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে। যতটা সম্ভব মুখে হাত না দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

সূত্র: গালফ নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বে পরিচ্ছন্ন পাঁচ গ্রাম

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বালির ব্যাংলি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম পেংলিপুরান। ছবি: লাভ বালি ডট বালি পিআরওভি ডট জিও ডট আইডি
বালির ব্যাংলি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম পেংলিপুরান। ছবি: লাভ বালি ডট বালি পিআরওভি ডট জিও ডট আইডি

বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এই গ্রামগুলো শুধু সুন্দর নয়, একই সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতার অনন্য উদাহরণ।

পেংলিপুরান, ইন্দোনেশিয়া

বালির ব্যাংলি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম পেংলিপুরান। এখানে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাড়ি, পাথরের রাস্তা, ফুল-বাগানসহ গ্রামীণ পরিবেশ অত্যন্ত যত্নসহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। গ্রামটির প্রতিটি পরিবারের সবাই পরিবেশ বিষয়ে সচেতন। তারা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং জৈব বর্জ্য সার ব্যবহার করে। সেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। গ্রামটিতে গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ। এর পাশাপাশি পর্যটকের সংখ্যা সীমিত রাখার কারণে সেখানকার পরিবেশ ও শান্তি ঠিক নির্বিঘ্ন আছে। পেংলিপুরান গ্রামের অধিবাসীদের ঐতিহ্যের অংশ পেনজোর ও বান্টেন উৎসব। এসব গ্রামের হোমস্টেগুলোতে থাকলে স্থানীয়দের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। সুযোগ পাওয়া যায় তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারা দেখার। সব মিলিয়ে পরিচ্ছন্নতা ধরে রাখায় পেংলিপুরান গ্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

গিয়েথুর্ন, নেদারল্যান্ডস

‘উত্তরের ভেনিস’ বলে খ্যাত নেদারল্যান্ডসের গিয়েথুর্ন গ্রাম। ছবি: উইকিপিডিয়া
‘উত্তরের ভেনিস’ বলে খ্যাত নেদারল্যান্ডসের গিয়েথুর্ন গ্রাম। ছবি: উইকিপিডিয়া

‘উত্তরের ভেনিস’ বলে খ্যাত নেদারল্যান্ডসের গিয়েথুর্ন গ্রাম। সেখানে পাওয়া যায় না গাড়ির শব্দ, নেই রাস্তাঘাটে ব্যস্ততা। আছে শুধু শান্ত পানিপথ, ফুলে ভরা বাগান আর ছোট ছোট বাড়ি। গ্রামটিতে চলাচলের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় নৌকার ওপর। আরেকটি ব্যবস্থা আছে, সেটা হলো হাঁটা। স্থানীয়রা পরিবেশ রক্ষায় বেশ সচেতন। গ্রামটির খালে পানিও থাকে বারো মাস। পুরো গ্রাম ঘুরেও কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য চোখে পড়বে না। এ গ্রামের মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট না করতে পর্যটকদের অনুরোধ করে থাকে সব সময়। শীতকালে বরফে জমে যাওয়া খালে জমে ওঠে স্থানীয় মানুষদের স্কেটিং। গিয়েথুর্ন যেন আধুনিক সভ্যতার কোলাহলের বাইরে প্রকৃতির কোলে শান্ত জীবনের এক নিদর্শন।

মাওলাইনং, ভারত

এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে খ্যাত মাওলাইনং। গ্রামটিতে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্যবহার করা হয় বাঁশের ডাস্টবিন। স্থানীয়রা নিয়মিত গ্রামের সবকিছু পরিষ্কার রাখে। গ্রামের প্রতিটি রাস্তা দেখলেই সেখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতার কথা উপলব্ধি করা যায়। গ্রামীণ সৌন্দর্যের উপভোগের পাশাপাশি সেখানকার পরিবেশ-সচেতনতা দেখতেও পর্যটকেরা ভিড় জমায় প্রতিবছর।

এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে খ্যাত মাওলিননং। গ্রামটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলায় অবস্থিত। ছবি: উইকিপিডিয়া
এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে খ্যাত মাওলিননং। গ্রামটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলায় অবস্থিত। ছবি: উইকিপিডিয়া

ইয়ানা, ভারত

দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের আছে ইয়ানা নামের এই গ্রাম। ঘন জঙ্গলের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা কালো চুনাপাথরের বিশাল শিলাখণ্ড ভৈরবেশ্বর ও মহাশক্তি শিখর গ্রামটির প্রধান আকর্ষণ। এখানের বাতাসে ভেসে বেড়ায় আসে বৃষ্টির গন্ধ আর পাখির ডাক। ইয়ানার বাসিন্দারা পরিচ্ছন্নতা ও প্রকৃতি রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। গ্রামটিতে প্লাস্টিক ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্যটকদেরও বর্জ্য নিজের সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয়রা পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিত করে, যাতে গ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক থাকে। গ্রামজুড়ে হাঁটার পথগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার। আশপাশের ঝরনা ও পাহাড়ের দৃশ্য মিলিয়ে ইয়ানা ভ্রমণ বেশ উপভোগ্য অভিজ্ঞতা দেয়।

খোনোমা, ভারত

‘গ্রিন ভিলেজ’ নামে পরিচিত ভারতের নাগাল্যান্ডের খোনোমা গ্রাম। ছবি: উইকিপিডিয়া
‘গ্রিন ভিলেজ’ নামে পরিচিত ভারতের নাগাল্যান্ডের খোনোমা গ্রাম। ছবি: উইকিপিডিয়া

‘গ্রিন ভিলেজ’ নামে পরিচিত ভারতের নাগাল্যান্ডের খোনোমা গ্রাম। এটি ভারতের প্রথম পরিবেশবান্ধব গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পাহাড় ঘেরা এই গ্রামের জনগণ একসময় শিকারনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত ছিল। এখন গ্রামজুড়ে পরিষ্কার রাস্তা, কাঠের ছাদের ঐতিহ্যবাহী ঘর আর সবুজ ধানখেত মিলে তৈরি করেছে পোস্টকার্ডের মতো দৃশ্য। গ্রামটির মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করে, তারা অতিথিপরায়ণ এবং নিজেদের সংস্কৃতি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে।

এই গ্রামগুলো শুধু ভ্রমণের জন্যই পরিচিতি পায়নি। এসব গ্রাম আমাদের শিখিয়েছে, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শুধু সরকারের নির্দেশ থাকলেই হয় না। কমিউনিটি উদ্যোগ, সচেতনতা ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে পরিবেশ ও জীবনধারা পরিচ্ছন্ন তো বটেই, উন্নত করাও সম্ভব।

সূত্র: ট্রিপ অ্যাডভাইজার, ফোর্বস, ইন্ডিয়া ট্রাভেল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুই বাংলার হেঁশেলে হেমন্তের সুঘ্রাণ

ছন্দা ব্যানার্জি
ছবি: আফরোজা খানম মুক্তা
ছবি: আফরোজা খানম মুক্তা

এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত। এই রূপ শুধু প্রকৃতিতেই নয়, বাঙালির খাবারের ঐতিহ্যেও ফুটে উঠেছে।

হেমন্তের খাবার বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এই সময় নতুন ফসলের আমেজ নিয়ে আসে নতুন স্বাদ ও গন্ধ। নতুন চালের ভাত বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এখন যে সবজির ফলন হয়, ফুল ফোটে, ফল হয়, তা দুই বাংলার মানুষের বিশেষ আকর্ষণ আর ঐতিহ্যেরও বটে।

বাংলায় হেমন্তের খাদ্য উৎসব শুরু হয় আশ্বিনের সংক্রান্তি থেকে। কথায় আছে, আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায়। কেউ কেউ বলেন ডাকসংক্রান্তি, আবার কেউ নলসংক্রান্তি। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে রাঢ়বঙ্গের দেশঘরে, ব্রত আর পার্বণের দিন শুরু হয় সে সময় থেকে। কৃষিজীবন আর অ-কৃষিজাত শাকসবজি, আনাজের কাছে ফিরে যাওয়ার দিন শুরু হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসের মধ্যে ভেসে ওঠে খানিকটা খড়কুটোর মতো—গাডুর ডাল, সজলান্ন কিংবা ব্রতের ভাত।

গোলাভরা আউশের আশ্বাস আর খেতভরা আমনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গর্ভিণী ধানের সাধভক্ষণ—নলসংক্রান্তি। এই ধান্য লক্ষ্মীর পূজা আসলে পৃথিবীর কাছে ফিরে যাওয়ার দিন। গ্রাম-বাংলার অ-কৃষিজাত কন্দমূল ও গাছগাছালিকে চিনে নেওয়ার সময়ও হেমন্তকাল। বাংলাদেশে কত রকমের যে কচু ছিল, সেই সব দিয়ে, শালুকের গোড়া, মটর বা খেসারির ডাল দিয়ে যে গাডুর ডাল রান্না হয়, সেই ডালকে মানুষ বলে ‘আসমবারি’।

এই হেমন্তের শুরুতে আসে ধন্বন্তরি বা অশ্বিনী দেবের পূজা। এদের ডাকপুরুষও বলে। সেই পূজার উপোস ভাঙতে এই ডাল আর ব্রতের ভাত খাওয়া হয়। ব্রতের ভাত রান্না হয় শ্যামা চালে। রেসিপি আলাদা। এই ভাতের সঙ্গে ডাল, নারকেল, পাকা কলা, গুড়, গ্রাম-বাংলার চালের পিঠা সব দেবতাকে নিবেদন করে তারপর খাওয়া হয়। আসলে হেমন্ত ঋতুতে এই পূজাগুলো আমাদের শেখায়, কোন শস্য কখন খেতে হয়, কোন শস্য বিষাক্ত কোন সময়ে।

হেমন্ত ঋতুতে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব এই নবান্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর তা থেকে চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব এটি। কাঁচা দুধ, ছোট-বড় ছোলা, মটর, গোটা মটর, গোটা সবুজ মুগসহ ভেজানো ডালজাতীয় সব শস্যদানা, কামরাঙা, পানিফল, পেয়ারা, কমলালেবু, নারকেল ইত্যাদি হেমন্তে উৎপাদিত নানান ফলের টুকরা আর আমন ধান থেকে হওয়া নতুন চাল দিয়ে নবান্ন উৎসব হয়।

বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরের দিনেই নতুন চালের পায়েস, ক্ষীর, পিঠা আত্মীয়স্বজন এবং পড়শিদের ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। হেমন্ত ঋতুর শুরুতে খেজুর ও তালগাছের রস গ্রাম-বাংলার অত্যন্ত প্রিয় পানীয়। ভোরে সূর্যের তেজ বাড়ার আগেই তা করতে হয় এই পানীয়। এই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় খেজুর বা তালের গুড়।

হেমন্তে নতুন চাল থেকে তৈরি হয় খই। নতুন গুড় ও খই তৈরি হয় মোয়া, খেজুরের নতুন গুড়ের পায়েস, ক্ষীর, পিঠের আয়োজনে উৎসব শুরু হয়ে যায় পৌষ পার্বণের আগেই। এ ছাড়া হেমন্তকালের শুরুতে নদী, নালা, পুকুর, খাল, বিল—এসবের জল শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এই সময় অন্যান্য পরিচিত মাছের সঙ্গে পুঁটি, চাঁদা, খলসে, গেঁড়ি গুগলি এবং কাঁকড়া পাওয়া যায় প্রচুর। তাই সাধারণ বাঙালি ঘরে এসব দিয়ে রান্না করা হয় বিভিন্ন পদ। এসব খাবার শরীরে পুষ্টি ও প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে পুরো বছরের জন্য।

এই সবকিছু মিলিয়ে হেমন্তের সুঘ্রাণ দুই বাংলায় ছড়িয়ে থাকে।

ছন্দা ব্যানার্জি, রন্ধনশিল্পী ও খাদ্যবিষয়ক লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

মেষ

আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্‌ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন। যদি ভাবা সম্ভব না হয়, তবে ভাবুন, ‘হতে পারে এটা আমার জীবনের সেরা কেনাকাটা!’ জ্যোতিষীরা বলছেন, প্রিয়জনের কুকর্মের জন্য বাড়িতে বিবাদ হতে পারে। সম্ভবত আপনার প্রিয়জন লুকিয়ে রাখা চকলেট বা রিমোট কন্ট্রোল চুরি করেছে—এর চেয়ে বড় কুকর্ম আর কী হতে পারে! কেউ যদি ‘বিনিয়োগ করুন, দ্বিগুণ হবে’ বলে, তবে দৌড়ে পালান। দৌড়াতে না পারলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকুন।

বৃষ

অফিসে কোনো সহকর্মীর সঙ্গে বিবাদ হতে পারে। মনে রাখবেন, বৃষ রাশির জাতক হিসেবে আপনার জেদ বা একগুঁয়েমি ষাঁড়ের মতোই খ্যাত! অফিসের ঝগড়াটা সম্ভবত বড় কোনো বিষয় নিয়ে হবে না—হতে পারে কে এসির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি কমিয়েছিল, অথবা কে শেষ বিস্কুটটা খেলো। যদি কেউ কোনো ‘অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে অধিক চর্চা’ করতে নিষেধ করে, তবে ধরে নিন সে আপনার নতুন প্রতিভাবান সহকর্মী, যে আপনার কফির বয়াম চুরি করতে পারে। অবসাদ এড়াতে, দুপুরে একটা শর্ট ন্যাপ নিন। যদি বস ধরে ফেলে, বলুন—ধ্যান করছিলাম, নক্ষত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছিলাম। আজ শান্ত থাকুন। যদি খুব রাগ হয়, তবে চেঁচানোর বদলে মনে মনে রবীন্দ্রসংগীত শুনুন।

মিথুন

নতুন প্রকল্পে কাজ শুরুর আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে নিন। আপনার শত্রু আজ সক্রিয় থাকবে, কিন্তু আর্থিক লাভের সম্ভাবনাও রয়েছে। আপনার ‘নতুন প্রকল্প’ যদি হয় ফ্রিজের পুরোনো খাবার পরিষ্কার করা, তবে সত্যিই ভালোভাবে চিন্তা করুন—গ্যাস মাস্ক লাগবে কি না। বন্ধুরা আজ আপনার সঙ্গে ভালো সময় কাটাবে, কারণ আপনার নতুন আয়ের খবর তারা জেনে গেছে। শত্রু সক্রিয় মানে এই নয় যে কেউ আপনার ক্ষতি করবে; হতে পারে সে শুধু আপনার ফেসবুক পোস্টগুলোতে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়ে যাবে। এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক আর কী আছে! আজ দ্বৈত-চরিত্রটি কাজে লাগান। এক মিথুন কাজ করবে, অন্য মিথুন হিসাব রাখবে।

কর্কট

দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে এবং প্রায় সব কাজই পূর্ণ হবে। তবে কথা বলার সময় সাবধান থাকুন। আপনার দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে কারণ...সম্ভবত সঙ্গী আজ সারা দিন ব্যস্ত থাকবেন এবং রিমোট কন্ট্রোলটির ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য পাবেন। আপনার সব কাজ পূর্ণ হবে, এমনকি সেই কাজটিও—যেটা গত তিন সপ্তাহ ধরে ‘পরে করব’ বলে ফেলে রেখেছিলেন। সাবধানতা অবলম্বন করে কথা বলুন—বিশেষ করে যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে, ‘তুমি কি আমার জন্য কিছু কিনেছ?’ মিথ্যা বলা বারণ। যাত্রা শুভ।

সিংহ

পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। আয় বাড়বে। আয় বাড়ার সুসংবাদ শুনেছেন, তাই আজ নিজেকে রাজা বা রানির মতো অনুভব করবেন। তবে অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। কারণ, যেই মুহূর্তে মাঝখানে মধ্যস্থতা করতে যাবেন, সবাই আপনার বিরুদ্ধেই জোট বাঁধবে—সিংহ মশাই, সাবধান! ‘সামাজিক কাজে অংশ নিতে পারেন’ মানে সম্ভবত পাড়ার কোনো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর খাবার খেতে পারেন। আপনার মনোমুগ্ধকর মনোভাব আজ কাজে লাগান—কিন্তু বিল মেটানোর সময় ভেজা বিড়াল হয়ে থাকুন।

কন্যা

আলস্য করবেন না। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন। ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ পূর্ণ হবে। গ্রহরা যেন আজ আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে শাসিয়ে গেছে—‘আলস্য নৈব নৈব চ!’ যদি সকালে অ্যালার্ম বাজানোর পরও বিছানায় থাকার চেষ্টা করেন, তবে ধরে নিন, গ্রহদের কাছ থেকে কড়া বার্তা আসবে। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন, কারণ আজকের দিনে আপনার সবচেয়ে অচেনা ব্যক্তিটি হতে পারে সেই যিনি নিজেকে ‘ডায়েট চার্ট’ বা ‘ব্যালেন্স শিট’ বলে দাবি করছেন। আলস্য না করে অন্তত একবার টেবিল গুছিয়ে নিন—সেটাই আজ আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য। পরিবারে আনন্দের পরিবেশ থাকবে, কারণ আপনি অবশেষে কাজ শুরু করেছেন!

তুলা

চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। ঝুঁকি নেবেন না। চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন, যেমন—বস অবশেষে আপনার পাঠানো ই-মেলের রিপ্লাই দিয়েছেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন, কিন্তু সাবধান—সেটা যেন টিভি দেখার প্রতিযোগিতা না হয়। ‘ঝুঁকি নেবেন না’ মানে হলো, আজ কোনোমতেই সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করবেন না যে তার ওজন বেড়েছে কিনা। নতুন মানুষদের সঙ্গে দেখা হতে পারে, কিন্তু তারা আপনাকে নতুন দায়িত্বের ফাঁদে ফেলতে পারে—তাই হাসি-খুশি থাকুন, কিন্তু নীরব। আনন্দে দিন কাটবে, যদি আপনি মনের ভেতরের বিচারপতিকে আজ ছুটি দিতে পারেন।

বৃশ্চিক

আবেগগত যোগাযোগে আরও ভালো থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে এবং শুভ সংবাদ পাবেন। আজ আবেগগতভাবে এত ভালো থাকবেন যে পথে কুকুর দেখলেও তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতে পারে! আপনার ‘শুভ সংবাদ’ সম্ভবত এটাই যে আপনি পুরোনো প্যান্টের পকেটে কিছু টাকা খুঁজে পেয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে—যেমন ধরুন, আপনি ইউটিউবের শর্টস দেখা শেষ করে অবশেষে মূল বা লং ভিডিও দেখা শুরু করবেন। অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য কথা বলার সময় সুন্দর থাকুন। তবে সুন্দর কথাগুলো যেন লোন বা ধার চাওয়ার জন্য ব্যবহার না হয়। আর্থিক বিষয়গুলো গতি পাবে, তাই আজই পুরোনো লোনগুলো পরিশোধ করার কথা ভাবুন...যদি পকেটে কিছু থাকে।

ধনু

নিজেকে অস্বস্তিকর ও চাপের মধ্যে অনুভব করতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকুন এবং খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। আপনি অস্বস্তিকর বোধ করবেন কারণ আপনার মন আপনাকে সারা বিশ্বে ঘোরার জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘরে বসে নেটফ্লিক্স দেখতে বলছে। ‘খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন’ এই পরামর্শটি আপনার জন্য আজ সম্পূর্ণ হাস্যকর। গ্রহরা কি জানে না যে, পৃথিবীতে এত মুখরোচক খাবার থাকতে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব? নেতিবাচক আবেগ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, যেমন ধরুন—অন্যের খাবার শেষ হয়ে গেলেও আপনার প্লেটে আরও আছে, এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। ইতিবাচক থাকুন! আজ আপনি যা কিছু খাবেন, সেটাই আপনার জন্য শক্তি—এই সহজ সত্যিটা মেনে নিন।

মকর

লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে। কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। মকর রাশির জাতক হিসেবে আপনার লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে—বিশেষ করে, যদি লক্ষ্যটি হয় সময়মতো রাতের খাবার খাওয়া। আর আপনি কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন! সম্ভবত কোনো প্রিয় রেস্টুরেন্টে বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি-এর অফার। কাজের গতি কার্যকর থাকবে, যার ফলে অফিস থেকে সবার আগে বেরোনোর সুযোগ পাবেন। পেশাগত স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে— চেয়ারটা আজ আপনাকে সবচেয়ে বেশি আরাম দেবে। ব্যক্তিগত জীবনে ধৈর্য ও ধর্ম নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে—বিশেষ করে যখন কেউ আপনাকে কাজ শেখাতে আসে।

কুম্ভ

কাজের ব্যস্ততা বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন এবং পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন। কাজের ব্যস্ততা বাড়বে, কারণ সমস্ত কাজ ফেলে রেখে নতুন করে কাজ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আজ যোগব্যায়াম করুন। যদি যোগব্যায়াম করতে আলস্য লাগে, তবে অন্তত ফ্রিজ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেটাও একপ্রকার ব্যায়াম। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন—কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হন যে, তাদের টিভি সিরিয়ালের সময়টা নষ্ট করছেন না। আজকের দিনটি স্বাভাবিক হতে চলেছে, মানে কোনো অলৌকিক ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। ক্যারিয়ারে রাজনীতির শিকার হওয়া এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ, বসের কানের কাছে কোনো গসিপ করতে যাবেন না।

মীন

প্রেমের জীবনে আজ একটি চমকের সম্মুখীন হতে পারেন। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো। শরীরকে বিশ্রাম দিন। প্রেমের জীবনে ‘চমক’ হয়তো এটাই যে, আপনার সঙ্গী আজ নিজেই শেষ চকলেটটি না খেয়ে আপনার জন্য রেখে দিয়েছে। আপনার আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, কিন্তু সেটার ব্যবহার করে একটা লটারি না কেটে বরং নিজের জন্য একটা ভালো কফি কিনুন। শরীরকে বিশ্রাম দিন—কিন্তু বিশ্রাম নিতে নিতে যদি ঘুমিয়ে পড়েন, তবে গ্রহরা আপনাকে দোষ দেবে না। কর্মক্ষেত্রের কাজ দ্রুত শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন। জ্যোতিষীরা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে পার্কে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। যদি সিনেমা দেখতে ভালো না লাগে, তবে একাই বারান্দায় বসে প্রকৃতির নাটক দেখতে পারেন! আপনার নেওয়া একটি দৃঢ় পদক্ষেপ আজ ইতিবাচক ফল দেবে। হয়তো অবশেষে জামাকাপড় কাচার কাজটা শুরু করে দিয়েছেন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইলিশের উল্লাস

ফিচার ডেস্ক
ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা
ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

উপকরণ

ইলিশের রিং পিস ৫ থেকে ৬ টুকরা, হলুদগুঁড়া এক চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৭ থেকে ৮টি, রসুনের কোয়া ১২ থেকে ১৪টি, সিরকা ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ, সরিষাবাটা ৪ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ।

প্রণালি

রিং পিস করা ইলিশ মাছ লবণ মাখিয়ে নেওয়ার পর ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর শুকনা মরিচ, রসুনের কোয়া, সরিষাবাটা, লবণ, হলুদগুঁড়া, সিরকা দিয়ে ব্লেন্ডারে অথবা পাটায় পেস্ট করে নিন। এবার হাঁড়িতে সরিষার তেল দিন। তারপর পেস্ট করা মিশ্রণটি দিয়ে নেড়ে নিন। এরপর লবণ দিয়ে মাখা মাছ দিয়ে এপিঠ-ওপিঠ করে হালকা ভেজে ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে রান্না করুন ১০ মিনিট। তারপর নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন ইলিশের উল্লাস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত