অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
একজন গর্ভবতী তাঁর অনাগত সন্তানের আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে প্রস্তুতি নেন। এ সময় তিনি সঙ্গীর কাছ থেকে ভালোবাসা, সাহায্য ও সহমর্মিতা আশা করেন। এসব পাওয়ার পরিবর্তে যদি তিনি আবিষ্কার করেন, তাঁর সঙ্গী পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন; তাহলে তার ফলাফল তাঁর শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য ও দম্পতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কের মধ্যেও তা হুমকি হয়ে ওঠে।
স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় পরকীয় কতটা সাধারণ
কিছু পুরুষ ঘনিষ্ঠতার পরিবর্তন, আসন্ন দায়িত্বের ভয় অথবা ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে লড়াই করেন। এ সময় কোনো পথ বের করতে না পেরে সাময়িক মানসিক শান্তির জন্য অন্য়ের কাছে যান। সামাজিক জীবন ঠিক রেখে নিজের মানসিক আনন্দের জন্য তাঁরা মূলত প্রতারণা করেন। আর ঠিক এ কারণেই পতিতালয়ে যত পুরুষ যাতায়াত করেন, তাঁদের বিরাট অংশ বিবাহিত। অন্যদিকে প্রায় ৭০ ভাগ পরকীয়ার ঘটনা ঘটে স্ত্রীর গর্ভকালে। পরবর্তীতে সন্তান হওয়ার পর তাঁরা আবার ঘরের মানুষ হয়ে ওঠেন। কিন্তু এর ভুক্তভোগী সাধারণত গর্ভবতী স্ত্রী ও অনাগত সন্তান।
একজন গর্ভবতী নারী প্রতারণার স্বীকার হলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
মানসিক যন্ত্রণা, উদ্বেগ ও দীর্ঘমেয়াদি বিষণ্নতা
একজন নারী যখন গর্ভবতী এবং সেই সন্তান জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন স্বাভাবিকভাবে নিজের, অনাগত সন্তান ও সঙ্গীর প্রতি যত্ন আরও বাড়িয়ে দেন। ফলে তিনি যদি কখনো সঙ্গীর বিশ্বাসঘাতকতা আবিষ্কার করেন তখন তা তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় পরিণত হয়। দুঃখ, রাগ ও মূল্য হীনতার অনুভূতি তীব্রভাবে তাঁর মধ্য়ে কাজ করে। এই যন্ত্রণা দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ বা বিষণ্নতায় পরিণত হতে পারে। এ অবস্থা গর্ভবতীর ক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্য ও শিশুর সুস্থতার ওপর মনোযোগ দেওয়া কঠিন করে তোলে।
বর্ধিত চাপের মাত্রা গর্ভাবস্থার ক্ষতি করতে পারে
গর্ভাবস্থায় চাপ কেবল মানসিক বোঝা নয়, এর পরিণতি শারীরিকও। উচ্চ মানসিক চাপের মাত্রা অকাল প্রসব, কম ওজনের সন্তান প্রসব ও উচ্চ রক্তচাপের মতো জটিলতার সঙ্গে যুক্ত। এর সবই শিশুর বিকাশে নিতেবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস ও আত্ম মূল্যে আঘাত
গর্ভাবস্থা অনেক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এ সময়ে প্রতারিত হলে একজন নারী নিজেকে অবাঞ্ছিত বা অযোগ্য ভাবতে শুরু করেন। আত্মসম্মানের এই আঘাত স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুর জন্মের পরেও সম্পর্কের প্রতি তাঁর আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব থেকে যেতে পারে। এ অবস্থা পরবর্তীতে আর কখনো ঠিক নাও হতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে
বিশ্বাস ভেঙে যাওয়ায় বা প্রতারিত হওয়ার ফলে একজন নারীর বর্তমান বা ভবিষ্যতের সম্পর্কগুলোতে নিরাপদ বোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার বিশ্বাসঘাতকতার ভয় মানসিকভাবে প্রত্যাহার, নিরাপত্তাহীনতা বা গভীর সংযোগ তৈরিতে অসুবিধার কারণ হতে পারে।
ঘুম ও ক্ষুধার ব্যাঘাত মাতৃস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে
প্রতারক সঙ্গীর বিশ্বাসঘাতকতার ফলে রাতের ঘুম না হওয়া, ক্ষুধা কমে যাওয়া বা মানসিক যন্ত্রণার কারণে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। কম ঘুম ও পুষ্টি মা-শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, জটিলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সম্পর্ক ভাঙনের দিকে যেতে পারে
গর্ভাবস্থায় প্রতারণা দম্পতিকে বিবাহবিচ্ছেদের দিকে পরিচালিত করে প্রায়শই। এর ফলে গর্ভবতীকে একক মাতৃত্বের পথ বেছে নিতে হয়। একক পিতামাতা হওয়া অনেক ক্ষেত্রেই তৃপ্তিদায়ক হতে পারে। তবে এটি খুব একটা সহজ নয়।
পুরুষ কেন তাঁদের গর্ভবতী স্ত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে
গর্ভাবস্থা নারী-পুরুষ উভয়ের জীবন বদলে দেয়। এখানে মানসিক ও শারীরিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষের দিক থেকে যত পরকীয়ার ঘটনা ঘটে তাঁর ৭০ শতাংশই স্ত্রীর গর্ভাবস্থায়। কিন্তু কেন?
দায়িত্বের ভয় ও মানসিক চাপ থেকে সাময়িক অব্যাহতির আশা
বাবা হওয়া একটি জীবন বদলে দেওয়া ঘটনা। তবে কিছু পুরুষ আসন্ন দায়িত্বে বেশ মানসিক চাপ বোধ করেন। তাঁরা বাস্তবতা থেকে পালানোর উপায় হিসেবে বেপরোয়া সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারেন।
ঘনিষ্ঠতার অভাব
গর্ভাবস্থা প্রায়শই হরমোনের পরিবর্তন, অস্বস্তি বা চিকিৎসকের পরামর্শে সীমাবদ্ধতার কারণে শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় পরিবর্তন আনে। যদি কোনো পুরুষ এই পরিবর্তনগুলির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে লড়াই করেন, তবে তিনি নিজের চাহিদা প্রকাশ করার পরিবর্তে অন্য কোথাও শারীরিক বা মানসিক তৃপ্তি খুঁজতে পারেন।
বৈধতার প্রয়োজনে
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর মনোযোগ স্বাভাবিকভাবেই তাঁর স্বাস্থ্য ও শিশুর সুস্থতার দিকে চলে যায়। এ জন্য কিছু পুরুষ অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে নিজের আবেগের বৈধতা পাওয়ার আশায় ছুটে যান। কেউ কেউ নিজের মানসিক চাপের কথা কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে নিতেই শারীরিক ও মানসিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এদের অনেকেরই পরবর্তীতে তীব্র অপরাধবোধ হয়।
মানসিক অপরিপক্বতা
যেসব পুরুষের মানসিক পরিপক্বতার অভাব থাকে তাঁরা গর্ভাবস্থায় সম্পর্কের পরিবর্তনগুলো মোকাবিলা করতে হিমশিম খান। সহায়তা প্রদানের পরিবর্তে, তাঁরা স্বার্থপর আচরণ করে এমন আচরণে লিপ্ত হন যা স্বল্পমেয়াদে আনন্দ নিয়ে আসলেও দীর্ঘ মেয়াদে করুণ পরিণতি ডেকে আনে।
যেভাবে বুঝবেন সঙ্গী পরকীয়ায় যুক্ত
মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত গোপনীয়তা
নারীর গর্ভাবস্থায় পুরুষ সঙ্গীর মোবাইল ফোন বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা, কল লগ মুছে ফেলা, ঘন ঘন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, গভীর রাতে টেক্সটিং, পাশের ঘরে গিয়ে কথা বলা ইত্যাদি পরকীয়ার লক্ষণ হতে পারে।
মানসিক দূরত্ব ও সম্পৃক্ততার অভাব
প্রতারক সঙ্গী আবেগ গতভাবে বিচ্ছিন্ন থাকেন। স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনে আগ্রহী নন অথবা গর্ভাবস্থা ও এ সময়ের চিকিৎসা সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিষয়গুলোতে উদাসীন থাকেন। এসব লক্ষণ সাধারণত কোনো হবু বাবার মধ্য়ে থাকার কথা নয়। যদি এমন হয় তাহলে খোলাখুলি কথা বলে নিতে হবে।
অনুপস্থিতি ও অস্বাভাবিক অজুহাত
যদি আপনার সঙ্গী হঠাৎ করে আরও বেশি দেরিতে কাজ করে বাড়ি ফেরেন, অপ্রত্যাশিত ভ্রমণে যান এবং আপনাকে সঙ্গী করতেও অজুহাত দেন অথবা তিনি কখন কোথা আছেন সে বিষয়ে অস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকে, তাহলে এটি অসততার ইঙ্গিত হতে পারে।
অপরাধবোধ চালিত উদারতা ও অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ
কিছু সঙ্গী প্রতারণা করে কিন্তু স্ত্রীকে অতিরিক্ত উপহার, প্রশংসা বা স্নেহ দিয়ে অপরাধবোধ কমানোর চেষ্টা করে। যদিও দয়া স্বাভাবিক, কিন্তু কারণ ছাড়া এমন আচরণ পরিবর্তন সন্দেহজনক হতে পারে।
আত্মরক্ষামূলক মনোভাব ও প্রশ্নের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া
একজন সঙ্গী যদি অতিরিক্ত আত্মরক্ষামূলক হয়ে ওঠেন, উল্টো আপনাকে অযৌক্তিক বলে অভিযুক্ত করেন অথবা আপনার উদ্বেগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, তাহলে ভেবে নেওয়া যেতে পারে তিনি আপনার সন্দেহ দূর করতে চাচ্ছেন।
স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা থেকে নিজেকে সামলে নিতে যা করা যেতে পারে
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। এ সময় পরকীয়া এড়াতে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্য়ে আবেগীয় বন্ধন শক্তিশালী করা, গর্ভকালজনিত উদ্বেগের সুরাহা করা এবং প্রতিটি সমস্যার খোলামেলা আলোচনার চর্চা থাকা জরুরি। এ সময় কিছু বিষয় মেনে চলা যেতে পারে।
খোলামেলা আলোচনা করুন
গর্ভাবস্থা জীবনের অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে। গর্ভবতী নারী ও তাঁর স্বামী দুজনেরই ভয়, উদ্বেগ ও প্রত্যাশা থাকতে পারে। দুজনেই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভুগতে পারেন। ফলে দুজন দুজনের কথা বলা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করার নিরাপদ স্থান হয়ে উঠুন। এতে অন্যের কাছে নিজের কষ্টের কথা বলার ও সান্ত্বনা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমে যাবে। প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একে অপরের সঙ্গে সারা দিনের সবকিছু ঘটনা শেয়ার করতে পারেন। পাশাপাশি সামনের দিনগুলোয় নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারেন। এতে দুজনেরই কর্টিসল লেভল কমবে।
নতুন উপায়ে শারীরিক ঘনিষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিন
হরমোনের পরিবর্তন ও চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে গর্ভাবস্থায় শারীরিক ঘনিষ্ঠতা প্রায়শই পরিবর্তিত হয়। তবে ঘনিষ্ঠতা মানেই কিন্তু যৌনতা নয়। এর মধ্যে স্নেহ, স্পর্শ ও মানসিক বন্ধনও জড়িত।
হাতে হাত রাখা, আলিঙ্গন করা, মনোযোগ সহকারে একে অপরের কথা শোনা ইত্যাদিও কিন্তু সঙ্গীর প্রতি প্রেম বাড়িয়ে তুলতে পারে। সপ্তাহে একদিন নিয়ম করে সিনেমা দেখতে পারেন। কখনো গর্ভবতী স্ত্রীর হাতে, পায়ে, পেটে হট অয়েল ম্যাসাজ করে দিতে পারেন। এতে গর্ভজনিত শরীরে পানি আসা, ব্যথার মতো উপসর্গ কমবেই। সেই সঙ্গে অনাগত সন্তানের সঙ্গেও বাবার একটা যোগসূত্র তৈরি হবে।
পেশাদার সাইকোথেরাপিস্টের সাহায্য নিন
যদি গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত চাপ সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাহলে কাপল থেরাপি নিতে পারেন। একজন অভিজ্ঞ থেরাপিস্ট গর্ভধারণকারী দম্পতিকে আরও কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে, ভয় মোকাবিলা করতে এবং তাঁদের মানসিক সংযোগ শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারেন।
লেখক: চিকিৎসক ও কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ
একজন গর্ভবতী তাঁর অনাগত সন্তানের আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে প্রস্তুতি নেন। এ সময় তিনি সঙ্গীর কাছ থেকে ভালোবাসা, সাহায্য ও সহমর্মিতা আশা করেন। এসব পাওয়ার পরিবর্তে যদি তিনি আবিষ্কার করেন, তাঁর সঙ্গী পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন; তাহলে তার ফলাফল তাঁর শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য ও দম্পতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কের মধ্যেও তা হুমকি হয়ে ওঠে।
স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় পরকীয় কতটা সাধারণ
কিছু পুরুষ ঘনিষ্ঠতার পরিবর্তন, আসন্ন দায়িত্বের ভয় অথবা ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে লড়াই করেন। এ সময় কোনো পথ বের করতে না পেরে সাময়িক মানসিক শান্তির জন্য অন্য়ের কাছে যান। সামাজিক জীবন ঠিক রেখে নিজের মানসিক আনন্দের জন্য তাঁরা মূলত প্রতারণা করেন। আর ঠিক এ কারণেই পতিতালয়ে যত পুরুষ যাতায়াত করেন, তাঁদের বিরাট অংশ বিবাহিত। অন্যদিকে প্রায় ৭০ ভাগ পরকীয়ার ঘটনা ঘটে স্ত্রীর গর্ভকালে। পরবর্তীতে সন্তান হওয়ার পর তাঁরা আবার ঘরের মানুষ হয়ে ওঠেন। কিন্তু এর ভুক্তভোগী সাধারণত গর্ভবতী স্ত্রী ও অনাগত সন্তান।
একজন গর্ভবতী নারী প্রতারণার স্বীকার হলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
মানসিক যন্ত্রণা, উদ্বেগ ও দীর্ঘমেয়াদি বিষণ্নতা
একজন নারী যখন গর্ভবতী এবং সেই সন্তান জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন স্বাভাবিকভাবে নিজের, অনাগত সন্তান ও সঙ্গীর প্রতি যত্ন আরও বাড়িয়ে দেন। ফলে তিনি যদি কখনো সঙ্গীর বিশ্বাসঘাতকতা আবিষ্কার করেন তখন তা তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় পরিণত হয়। দুঃখ, রাগ ও মূল্য হীনতার অনুভূতি তীব্রভাবে তাঁর মধ্য়ে কাজ করে। এই যন্ত্রণা দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ বা বিষণ্নতায় পরিণত হতে পারে। এ অবস্থা গর্ভবতীর ক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্য ও শিশুর সুস্থতার ওপর মনোযোগ দেওয়া কঠিন করে তোলে।
বর্ধিত চাপের মাত্রা গর্ভাবস্থার ক্ষতি করতে পারে
গর্ভাবস্থায় চাপ কেবল মানসিক বোঝা নয়, এর পরিণতি শারীরিকও। উচ্চ মানসিক চাপের মাত্রা অকাল প্রসব, কম ওজনের সন্তান প্রসব ও উচ্চ রক্তচাপের মতো জটিলতার সঙ্গে যুক্ত। এর সবই শিশুর বিকাশে নিতেবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস ও আত্ম মূল্যে আঘাত
গর্ভাবস্থা অনেক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এ সময়ে প্রতারিত হলে একজন নারী নিজেকে অবাঞ্ছিত বা অযোগ্য ভাবতে শুরু করেন। আত্মসম্মানের এই আঘাত স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুর জন্মের পরেও সম্পর্কের প্রতি তাঁর আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব থেকে যেতে পারে। এ অবস্থা পরবর্তীতে আর কখনো ঠিক নাও হতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে
বিশ্বাস ভেঙে যাওয়ায় বা প্রতারিত হওয়ার ফলে একজন নারীর বর্তমান বা ভবিষ্যতের সম্পর্কগুলোতে নিরাপদ বোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার বিশ্বাসঘাতকতার ভয় মানসিকভাবে প্রত্যাহার, নিরাপত্তাহীনতা বা গভীর সংযোগ তৈরিতে অসুবিধার কারণ হতে পারে।
ঘুম ও ক্ষুধার ব্যাঘাত মাতৃস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে
প্রতারক সঙ্গীর বিশ্বাসঘাতকতার ফলে রাতের ঘুম না হওয়া, ক্ষুধা কমে যাওয়া বা মানসিক যন্ত্রণার কারণে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। কম ঘুম ও পুষ্টি মা-শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, জটিলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সম্পর্ক ভাঙনের দিকে যেতে পারে
গর্ভাবস্থায় প্রতারণা দম্পতিকে বিবাহবিচ্ছেদের দিকে পরিচালিত করে প্রায়শই। এর ফলে গর্ভবতীকে একক মাতৃত্বের পথ বেছে নিতে হয়। একক পিতামাতা হওয়া অনেক ক্ষেত্রেই তৃপ্তিদায়ক হতে পারে। তবে এটি খুব একটা সহজ নয়।
পুরুষ কেন তাঁদের গর্ভবতী স্ত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে
গর্ভাবস্থা নারী-পুরুষ উভয়ের জীবন বদলে দেয়। এখানে মানসিক ও শারীরিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষের দিক থেকে যত পরকীয়ার ঘটনা ঘটে তাঁর ৭০ শতাংশই স্ত্রীর গর্ভাবস্থায়। কিন্তু কেন?
দায়িত্বের ভয় ও মানসিক চাপ থেকে সাময়িক অব্যাহতির আশা
বাবা হওয়া একটি জীবন বদলে দেওয়া ঘটনা। তবে কিছু পুরুষ আসন্ন দায়িত্বে বেশ মানসিক চাপ বোধ করেন। তাঁরা বাস্তবতা থেকে পালানোর উপায় হিসেবে বেপরোয়া সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারেন।
ঘনিষ্ঠতার অভাব
গর্ভাবস্থা প্রায়শই হরমোনের পরিবর্তন, অস্বস্তি বা চিকিৎসকের পরামর্শে সীমাবদ্ধতার কারণে শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় পরিবর্তন আনে। যদি কোনো পুরুষ এই পরিবর্তনগুলির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে লড়াই করেন, তবে তিনি নিজের চাহিদা প্রকাশ করার পরিবর্তে অন্য কোথাও শারীরিক বা মানসিক তৃপ্তি খুঁজতে পারেন।
বৈধতার প্রয়োজনে
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর মনোযোগ স্বাভাবিকভাবেই তাঁর স্বাস্থ্য ও শিশুর সুস্থতার দিকে চলে যায়। এ জন্য কিছু পুরুষ অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে নিজের আবেগের বৈধতা পাওয়ার আশায় ছুটে যান। কেউ কেউ নিজের মানসিক চাপের কথা কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে নিতেই শারীরিক ও মানসিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এদের অনেকেরই পরবর্তীতে তীব্র অপরাধবোধ হয়।
মানসিক অপরিপক্বতা
যেসব পুরুষের মানসিক পরিপক্বতার অভাব থাকে তাঁরা গর্ভাবস্থায় সম্পর্কের পরিবর্তনগুলো মোকাবিলা করতে হিমশিম খান। সহায়তা প্রদানের পরিবর্তে, তাঁরা স্বার্থপর আচরণ করে এমন আচরণে লিপ্ত হন যা স্বল্পমেয়াদে আনন্দ নিয়ে আসলেও দীর্ঘ মেয়াদে করুণ পরিণতি ডেকে আনে।
যেভাবে বুঝবেন সঙ্গী পরকীয়ায় যুক্ত
মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত গোপনীয়তা
নারীর গর্ভাবস্থায় পুরুষ সঙ্গীর মোবাইল ফোন বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা, কল লগ মুছে ফেলা, ঘন ঘন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, গভীর রাতে টেক্সটিং, পাশের ঘরে গিয়ে কথা বলা ইত্যাদি পরকীয়ার লক্ষণ হতে পারে।
মানসিক দূরত্ব ও সম্পৃক্ততার অভাব
প্রতারক সঙ্গী আবেগ গতভাবে বিচ্ছিন্ন থাকেন। স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনে আগ্রহী নন অথবা গর্ভাবস্থা ও এ সময়ের চিকিৎসা সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিষয়গুলোতে উদাসীন থাকেন। এসব লক্ষণ সাধারণত কোনো হবু বাবার মধ্য়ে থাকার কথা নয়। যদি এমন হয় তাহলে খোলাখুলি কথা বলে নিতে হবে।
অনুপস্থিতি ও অস্বাভাবিক অজুহাত
যদি আপনার সঙ্গী হঠাৎ করে আরও বেশি দেরিতে কাজ করে বাড়ি ফেরেন, অপ্রত্যাশিত ভ্রমণে যান এবং আপনাকে সঙ্গী করতেও অজুহাত দেন অথবা তিনি কখন কোথা আছেন সে বিষয়ে অস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকে, তাহলে এটি অসততার ইঙ্গিত হতে পারে।
অপরাধবোধ চালিত উদারতা ও অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ
কিছু সঙ্গী প্রতারণা করে কিন্তু স্ত্রীকে অতিরিক্ত উপহার, প্রশংসা বা স্নেহ দিয়ে অপরাধবোধ কমানোর চেষ্টা করে। যদিও দয়া স্বাভাবিক, কিন্তু কারণ ছাড়া এমন আচরণ পরিবর্তন সন্দেহজনক হতে পারে।
আত্মরক্ষামূলক মনোভাব ও প্রশ্নের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া
একজন সঙ্গী যদি অতিরিক্ত আত্মরক্ষামূলক হয়ে ওঠেন, উল্টো আপনাকে অযৌক্তিক বলে অভিযুক্ত করেন অথবা আপনার উদ্বেগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, তাহলে ভেবে নেওয়া যেতে পারে তিনি আপনার সন্দেহ দূর করতে চাচ্ছেন।
স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা থেকে নিজেকে সামলে নিতে যা করা যেতে পারে
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। এ সময় পরকীয়া এড়াতে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্য়ে আবেগীয় বন্ধন শক্তিশালী করা, গর্ভকালজনিত উদ্বেগের সুরাহা করা এবং প্রতিটি সমস্যার খোলামেলা আলোচনার চর্চা থাকা জরুরি। এ সময় কিছু বিষয় মেনে চলা যেতে পারে।
খোলামেলা আলোচনা করুন
গর্ভাবস্থা জীবনের অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে। গর্ভবতী নারী ও তাঁর স্বামী দুজনেরই ভয়, উদ্বেগ ও প্রত্যাশা থাকতে পারে। দুজনেই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভুগতে পারেন। ফলে দুজন দুজনের কথা বলা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করার নিরাপদ স্থান হয়ে উঠুন। এতে অন্যের কাছে নিজের কষ্টের কথা বলার ও সান্ত্বনা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমে যাবে। প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একে অপরের সঙ্গে সারা দিনের সবকিছু ঘটনা শেয়ার করতে পারেন। পাশাপাশি সামনের দিনগুলোয় নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারেন। এতে দুজনেরই কর্টিসল লেভল কমবে।
নতুন উপায়ে শারীরিক ঘনিষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিন
হরমোনের পরিবর্তন ও চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে গর্ভাবস্থায় শারীরিক ঘনিষ্ঠতা প্রায়শই পরিবর্তিত হয়। তবে ঘনিষ্ঠতা মানেই কিন্তু যৌনতা নয়। এর মধ্যে স্নেহ, স্পর্শ ও মানসিক বন্ধনও জড়িত।
হাতে হাত রাখা, আলিঙ্গন করা, মনোযোগ সহকারে একে অপরের কথা শোনা ইত্যাদিও কিন্তু সঙ্গীর প্রতি প্রেম বাড়িয়ে তুলতে পারে। সপ্তাহে একদিন নিয়ম করে সিনেমা দেখতে পারেন। কখনো গর্ভবতী স্ত্রীর হাতে, পায়ে, পেটে হট অয়েল ম্যাসাজ করে দিতে পারেন। এতে গর্ভজনিত শরীরে পানি আসা, ব্যথার মতো উপসর্গ কমবেই। সেই সঙ্গে অনাগত সন্তানের সঙ্গেও বাবার একটা যোগসূত্র তৈরি হবে।
পেশাদার সাইকোথেরাপিস্টের সাহায্য নিন
যদি গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত চাপ সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাহলে কাপল থেরাপি নিতে পারেন। একজন অভিজ্ঞ থেরাপিস্ট গর্ভধারণকারী দম্পতিকে আরও কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে, ভয় মোকাবিলা করতে এবং তাঁদের মানসিক সংযোগ শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারেন।
লেখক: চিকিৎসক ও কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ
অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই তড়িঘড়ি—দাওয়াতে যেতে হবে। ওদিকে সারা দিনের স্ট্রেসে ত্বক নিষ্প্রভ দেখাচ্ছে। বেশ সময় নিয়ে ত্বকচর্চা করার উপায়ও তো নেই, তাহলে? ঝটপট ত্বকের ক্লান্তি দূর করতে কয়েকটা টোটকা জেনে নিলেই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
১ ঘণ্টা আগেপ্রতিদিন কি আর আয়োজন করে রাঁধতে ভালো লাগে? কোনো দিন যদি বেলা গড়িয়ে যায় তাহলে কী রান্না করবেন, তা ভাবতে না বসে চুলায় চড়িয়ে দিন ভাত। আর সঙ্গে বানিয়ে ফেলুন চিংড়ি শুঁটকির ভর্তা। আপনাদের জন্য এই রেসিপিটি দিয়েছেন ওমাম’স এর স্বত্বাধিকারী ওমাম রায়হান।
৫ ঘণ্টা আগে‘বোঝে না সে বোঝে না’ ধারাবাহিকের পাখির কথা মনে আছে? পাখি এখন বড় হয়ে গেছেন। টেলিভিশন ধারাবাহিকের চৌহদ্দি পেরিয়ে তিনি এখন চলচ্চিত্র ও ওটিটিও মাতাচ্ছেন। ‘পরিবর্তন’, ‘লাভ আজ কাল পরশু’, ‘চিনি’, ‘দিলখুশ’, ‘সূর্য’, ‘কুলের আচার’ এর মতো একাধিক সিনেমা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
৭ ঘণ্টা আগেনেপালের পর্যটন গন্তব্য চন্দ্রগিরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ফুটের বেশি উঁচুতে অবস্থিত এই জায়গা। যেতে হয় কেবল কারে। রোমাঞ্চ আর প্রাকৃতিক পরিবেশের দারুণ মেলবন্ধন এখানে। চন্দ্রগিরির অভিজ্ঞতা লিখেছেন সুমন্ত গুপ্ত। যারা সেখানে যেতে চান তাদের জন্য প্রচুর তথ্য আছে এ লেখায়।
১১ ঘণ্টা আগে