সুমন্ত গুপ্ত
সকাল সাতটা, নেপালের সময়।
মোবাইল ফোনের অ্যালার্ম জানান দিচ্ছে, এবার ঘুম থেকে উঠতে হবে। কিন্তু এত ঠান্ডা! রুমে হিটার চলছে; সঙ্গে দুটো লেপ গায়ে দেওয়ার পরেও ঠান্ডা কমছে না। আড় চোখে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে তাপমাত্রা দেখে চোখ মাথায় ওঠার জোগাড়। থামেল, ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস! ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও লেপের নিচ থেকে উঠতে মন চাইছিল না।
কিছু সময় পর অভিনবের ফোন, 'আর ঘুমিয়ো না। এবার উঠে তৈরি হয়ে নাও।'
আজ আমার ও সানন্দার নেপাল ভ্রমণের তৃতীয় দিন। হিমালয়কন্যা নেপালের সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিশ্ববাসী। এ জন্যই দূর-দুরন্ত থেকে পর্যটকেরা নেপাল ভ্রমণে যান। মাউন্ট এভারেস্ট, শত বছরের পুরোনো মন্দির, আকাশচুম্বী পর্বতমালা, জলপ্রপাত, নির্মল প্রকৃতি, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আর বিভিন্ন উৎসব রয়েছে দেশটিতে। পৃথিবীর যেসব দেশে সহজে একা ভ্রমণ করা যায়, তার মধ্যে নেপাল অন্যতম। বৈশ্বিক স্তরে পর্বতারোহীদের পছন্দের দেশ নেপাল। অন্নপূর্ণা কিংবা এভারেস্ট জয়ের জন্য সারা বছরই তারা ভিড় করে।
পর্বতারোহীরাই নয়, একেবারে সাধারণ পর্যটেরাও হিমালয়ের পাশ থেকে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে যায় নেপাল। অন্নপূর্ণা পর্বতের শুভ্র চূড়া দেখতেও কেউ কেউ ভিড় করে সেখানে। প্রত্যেক বছর হাজারো পর্যটক ভ্রমণ করে এই পাহাড়ি দেশে। সার্কের সদস্যদের মধ্যে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর একটি নেপাল। এর কোনো সমুদ্র নেই, সমুদ্র পথে যাওয়ার সুযোগও নেই। নেপাল বিখ্যাত হিমালয়ের সৌন্দর্যের দরজা হিসেবে।
কাঠমান্ডু নেপালের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। সেখানে বাস করছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। নেপাল ঘুরতে হলে কাঠমান্ডুতে আসাই ভালো। অনেকেই পাহাড় দেখার আসায় কাঠমান্ডুর মতো শহরকে ঘুরবার তালিকায় প্রাধান্য প্রথমে দিতে চায় না। কিন্তু ঐতিহ্য, বাণিজ্য, নানাবিধ আর্কিটেকচারাল নিদর্শন নিয়ে কাঠমান্ডু আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে।
নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে নিলাম নতুন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। আমাদের আজকের ভ্রমণ গন্তব্য চন্দ্রগিরি হিল। ঢাকার মতো যানজট আছে, রাস্তার হাল আরও খারাপ কাঠমান্ডুর। দিনভর বেশ তাপ। তবে শেষ রাতে গা কিছুটা শির শির করে। সূর্য উঠেছে। উঁচু নিচু পথ পেড়িয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। দূরের পাহাড় চূড়ায় সাদা বরফের রূপ আমাদের মুগ্ধ করছিল। চলতি পথে আমাদের ঢাকা শহরের মতো যানজটে মন অতিষ্ঠ হওয়ার জোগাড়। সকালে ঠান্ডার প্রকোপ লক্ষ্য করে কয়েক প্রস্থ কাপড় পরেছিলাম। কিন্তু এবার ঘেমে উঠছি। এ অবস্থা দেখে অভিনব বললেন, ‘একটু অপেক্ষা কর। ঠান্ডায় কাঁপবে।’ কাঠমান্ডু শহর থেকে দেড় ঘণ্টার পথ চন্দ্রগিরি। সেখানেই এত শীত হবে! ঠিক বিশ্বাস হলো না। মেঘেদের দেশে এসে অনেকরই আবদার ছিল মেঘ ছোঁয়ার। স্বল্প সময়ে এভারেস্টের কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই সেই মেঘের ছোঁয়া পেতে অভিনব আমাদের নিয়ে চন্দ্রগিরি যাওয়ার প্রয়াস করছেন।
আমার ভ্রমণ সঙ্গী সানন্দা আগে থেকে চন্দ্রগিরি হিলের ট্রাভেল ব্লগ দেখিয়েছিল। কিন্তু উচ্চতাভীতি আছে বলে যাব না বলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত তার জোরাজুরিতে যেতেই হলো। শেষপর্যন্ত সবাই মিলে চন্দ্রগিরির পথ ধরলাম।
কাঠমান্ডু মূলত একটি উপত্যকা। এর চারপাশ ঘিরে আছে পাহাড়। প্রায় দুই ঘণ্টা মাইক্রোবাসে চেপে নামলাম থানকোট নামে একটি জায়গায়। সেখান থেকে শুরু হলো পাহাড়ি পথ। এরপর পাহাড় কেটে তৈরি শক্ত কংক্রিটের সুদৃশ্য পথ এঁকেবেঁকে গিয়ে থামল চন্দ্রগিরি কেবল কার স্টেশনে। বিশাল এই এলাকা থেকে নিচের থানকোট শহর স্পষ্ট দেখা যায়। একটি পাহাড় ডিঙিয়ে কাঠমান্ডু। সেটা খুব একটা স্পষ্ট নয়। এই চন্দ্রগিরিতে এসে রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেছি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় সাড়ে আট হাজার ফুট। কাঁপুনি তো ধরবেই। এত উঁচু পাহাড়ে উঠে আসার পথটাও রোমাঞ্চকর। সময় এখন দিনের দ্বিতীয় প্রহর। আমরা এসে পৌঁছালাম চন্দ্রগিরির প্রবেশ পথে। গাড়ি থেকে নেমে পদব্রজে এগিয়ে যেতে লাগলাম। হিমশীতল বাতাসে একটু পর পর শরীর কেঁপে উঠছিল।
আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন চন্দ্রগিরি দর্শনে। দেখা পেলাম দর্শনীয় ফোয়ারার। আমরা এগিয়ে যেতে লাগলাম কেবল কারের পানে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও— আমার উচ্চতায় ভয়! সিঁড়ি বেয়ে উঁচু একটি ভবনে কেবল কারের মূল স্টেশনে পৌঁছালাম। এর আগে টিকিট কাটতে হলো। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য মাথাপিছু টিকিটের দাম ১ হাজার ১০০ নেপালি রুপি। ভবনের ভেতরে প্রবেশের পর সহস্রাধিক মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখতে পেলাম। আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। অভিনব জানালেন, চন্দ্রগিরি হিলের পৌরাণিক তাৎপর্য বিবেচনা করে নেপাল সরকার এটি দর্শনে কেবল কার নির্মাণ করে। এর উচ্চতা ৮ হাজার ২৬৮ ফুট। পৌরাণিক যুগে এই উচ্চতা কীভাবে পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের মাথায় ভালেশ্বর মন্দির গড়ে উঠেছিল, সে তথ্য অজ্ঞাত। যেমন অজ্ঞাত মিসরের সুউচ্চ পিরামিডগুলোয় বিশাল বিশাল পাথর স্থাপন হয়েছিল কীভাবে। সে যাই হোক, কেবল কারের যাত্রাটি মোটামুটি আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ। পাহাড়ের উচ্চতায় যেতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। সেটি আবার নির্ভর করে বাতাসের গতির ওপর।
কেবল কার থেকে কাঠমান্ডু উপত্যকা, প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং অন্নপূর্ণা থেকে এভারেস্ট পর্যন্ত চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। কেবল ওয়ে সিস্টেমে ৩৪টি গন্ডোলা রয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় ১ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষম। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর আমরা উঠে বসলাম কেবল কারে। কারের দুই পাশে মুখোমুখি আমরা মোট ছয়জন বসে আছি। যাঁরা নিচের দৃশ্য দেখতে চান না, তাঁরা উল্টো দিকে বসলেন। সরসর করে উঠছে কেবল কার। যত ওপরে উঠছি, নিচের শহর তত ছোট হয়ে যাচ্ছে। নিচে ঘন সবুজ বন কালচে হচ্ছে। খানিকটা উঠেছি, এরই মধ্যে কোত্থেকে এক দল মেঘ এসে লাগল কারের গায়ে। ভিজিয়ে দিয়ে গেল গ্লাস। মেঘের ছোঁয়ায় বিন্দু বিন্দু জলকণা জমে আছে সেখানে। আমাদের গায়ে লাগল হিমেল পরশ। একটু ঠান্ডা লাগছে। নিচের দিকে তাকাতেই পিলে চমকে উঠল। আমার অবস্থা তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। অন্য দিকে, কেবল কার ‘ওয়াও’, ‘কী সুন্দর’, ‘বাহ’ ধ্বনিতে মুখরিত।
মাঝেমধ্যে একটি দুটি কার চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। কিছু দূর উঠে নিচে শুধু মেঘের খেলা চোখে পড়ল। এখন বনও অদৃশ্য। কালচে মেঘের চাদর ঢেকে দিয়েছে সবুজ। ঠান্ডা আরও বাড়ছে। মেঘের খেলা দেখতে দেখতে, ভয়মিশ্রিত তীব্র ভালো লাগায় ভাসতে ভাসতে, অনেক ভাসা মেঘের পরশ গায়ে মেখে তারের ওপর দিয়ে চলা আমাদের ছোট গাড়িটি গিয়ে থামল চন্দ্রগিরি স্টেশনে। আড়াই কিলোমিটারের কেবল কার ভ্রমণ শেষ হলো। আমরা কার থেকে নেমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। চারপাশের শীতল বন্য ফুলের সুবাসিত স্নিগ্ধ বাতাসে মন প্রফুল্ল হবে যে কারও। এ যেন চারদিকের দূষিত জঞ্জাল ও যান্ত্রিকতা থেকে স্বর্গে পৌঁছে যাওয়া! চোখ বন্ধ করে অনুভবে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যাওয়া। মাঝে মাঝে মেঘ আমাদের ছুঁয়ে গেল। ঠান্ডা শীতল পরশ আমাদের চোখে মুখে দোলা দিয়ে গেল। আমি একের পর এক ছবি তুলতে লাগলাম। চোখ তখনো বিশ্বাস করতে পারছিল না স্রষ্টার এ সৃষ্টি। সৌন্দর্যের সীমা থাকা দরকার! মনে মনে ভাবলাম, উচ্চতার ভয়ে এখানে না এলে অনেক কিছু অদেখা থেকে যেত। নেপালের সৌন্দর্য ও রোমাঞ্চের দেখা পাওয়া যেত না।
একটু পরে দেখা পেলাম মেঘেদের। ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকল তীব্র শীত। কাঁপতে লাগলাম রীতিমতো। এ ঠান্ডা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে অর্ডার দিলাম গরম চায়ের, সঙ্গে নিলাম পপকর্ন। গরম চা পানের ফলে শরীর বেশ খানিকটা উষ্ণ হলো। একটি নয়, দুটি নয়, তিনটি রেস্তোরাঁ এখানে। আছে নিরামিষ ও আমিষ খাবারের ভিন্ন ব্যবস্থা। কেউ অর্ডার দিলে সামনাসামনি রান্না করে দেওয়ার বন্দোবস্ত আছে। এখানে এখন তৈরি হচ্ছে একটি রিসোর্ট। আছে শিশুদের জন্য ছোট একটি পার্ক, ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ি পথে চলার ব্যবস্থা। বেলা গড়িয়ে এল। এবার নামতে হবে। আবার স্টেশনে গিয়ে চড়লাম কারে। এবার ভয় খানিকটা কমে গেছে। আবারও বিস্ময় জাগল মনে। মেঘ ছোঁয়ার আনন্দ নিয়ে ফিরে এলাম।
যাঁরা যেতে চান চন্দ্রগিরি, তাঁদের জন্য কিছু তথ্য
সপ্তাহের সাত দিনই যাওয়া যায় কাঠমান্ডু থেকে চন্দ্রগিরি। সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে চলে কেবল কার। ছুটির দিন চলে সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। ভাড়া প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ১ হাজার ১০০ নেপালি রুপি। তিন ফুটের কম উচ্চতার শিশুদের কোনো ভাড়া দিতে হবে না। তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার শিশুরা ৪০ শতাংশ কম ভাড়ায় ভ্রমণ করত পারবে।
সকাল সাতটা, নেপালের সময়।
মোবাইল ফোনের অ্যালার্ম জানান দিচ্ছে, এবার ঘুম থেকে উঠতে হবে। কিন্তু এত ঠান্ডা! রুমে হিটার চলছে; সঙ্গে দুটো লেপ গায়ে দেওয়ার পরেও ঠান্ডা কমছে না। আড় চোখে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে তাপমাত্রা দেখে চোখ মাথায় ওঠার জোগাড়। থামেল, ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস! ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও লেপের নিচ থেকে উঠতে মন চাইছিল না।
কিছু সময় পর অভিনবের ফোন, 'আর ঘুমিয়ো না। এবার উঠে তৈরি হয়ে নাও।'
আজ আমার ও সানন্দার নেপাল ভ্রমণের তৃতীয় দিন। হিমালয়কন্যা নেপালের সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিশ্ববাসী। এ জন্যই দূর-দুরন্ত থেকে পর্যটকেরা নেপাল ভ্রমণে যান। মাউন্ট এভারেস্ট, শত বছরের পুরোনো মন্দির, আকাশচুম্বী পর্বতমালা, জলপ্রপাত, নির্মল প্রকৃতি, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আর বিভিন্ন উৎসব রয়েছে দেশটিতে। পৃথিবীর যেসব দেশে সহজে একা ভ্রমণ করা যায়, তার মধ্যে নেপাল অন্যতম। বৈশ্বিক স্তরে পর্বতারোহীদের পছন্দের দেশ নেপাল। অন্নপূর্ণা কিংবা এভারেস্ট জয়ের জন্য সারা বছরই তারা ভিড় করে।
পর্বতারোহীরাই নয়, একেবারে সাধারণ পর্যটেরাও হিমালয়ের পাশ থেকে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে যায় নেপাল। অন্নপূর্ণা পর্বতের শুভ্র চূড়া দেখতেও কেউ কেউ ভিড় করে সেখানে। প্রত্যেক বছর হাজারো পর্যটক ভ্রমণ করে এই পাহাড়ি দেশে। সার্কের সদস্যদের মধ্যে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর একটি নেপাল। এর কোনো সমুদ্র নেই, সমুদ্র পথে যাওয়ার সুযোগও নেই। নেপাল বিখ্যাত হিমালয়ের সৌন্দর্যের দরজা হিসেবে।
কাঠমান্ডু নেপালের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। সেখানে বাস করছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। নেপাল ঘুরতে হলে কাঠমান্ডুতে আসাই ভালো। অনেকেই পাহাড় দেখার আসায় কাঠমান্ডুর মতো শহরকে ঘুরবার তালিকায় প্রাধান্য প্রথমে দিতে চায় না। কিন্তু ঐতিহ্য, বাণিজ্য, নানাবিধ আর্কিটেকচারাল নিদর্শন নিয়ে কাঠমান্ডু আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে।
নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে নিলাম নতুন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। আমাদের আজকের ভ্রমণ গন্তব্য চন্দ্রগিরি হিল। ঢাকার মতো যানজট আছে, রাস্তার হাল আরও খারাপ কাঠমান্ডুর। দিনভর বেশ তাপ। তবে শেষ রাতে গা কিছুটা শির শির করে। সূর্য উঠেছে। উঁচু নিচু পথ পেড়িয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। দূরের পাহাড় চূড়ায় সাদা বরফের রূপ আমাদের মুগ্ধ করছিল। চলতি পথে আমাদের ঢাকা শহরের মতো যানজটে মন অতিষ্ঠ হওয়ার জোগাড়। সকালে ঠান্ডার প্রকোপ লক্ষ্য করে কয়েক প্রস্থ কাপড় পরেছিলাম। কিন্তু এবার ঘেমে উঠছি। এ অবস্থা দেখে অভিনব বললেন, ‘একটু অপেক্ষা কর। ঠান্ডায় কাঁপবে।’ কাঠমান্ডু শহর থেকে দেড় ঘণ্টার পথ চন্দ্রগিরি। সেখানেই এত শীত হবে! ঠিক বিশ্বাস হলো না। মেঘেদের দেশে এসে অনেকরই আবদার ছিল মেঘ ছোঁয়ার। স্বল্প সময়ে এভারেস্টের কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই সেই মেঘের ছোঁয়া পেতে অভিনব আমাদের নিয়ে চন্দ্রগিরি যাওয়ার প্রয়াস করছেন।
আমার ভ্রমণ সঙ্গী সানন্দা আগে থেকে চন্দ্রগিরি হিলের ট্রাভেল ব্লগ দেখিয়েছিল। কিন্তু উচ্চতাভীতি আছে বলে যাব না বলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত তার জোরাজুরিতে যেতেই হলো। শেষপর্যন্ত সবাই মিলে চন্দ্রগিরির পথ ধরলাম।
কাঠমান্ডু মূলত একটি উপত্যকা। এর চারপাশ ঘিরে আছে পাহাড়। প্রায় দুই ঘণ্টা মাইক্রোবাসে চেপে নামলাম থানকোট নামে একটি জায়গায়। সেখান থেকে শুরু হলো পাহাড়ি পথ। এরপর পাহাড় কেটে তৈরি শক্ত কংক্রিটের সুদৃশ্য পথ এঁকেবেঁকে গিয়ে থামল চন্দ্রগিরি কেবল কার স্টেশনে। বিশাল এই এলাকা থেকে নিচের থানকোট শহর স্পষ্ট দেখা যায়। একটি পাহাড় ডিঙিয়ে কাঠমান্ডু। সেটা খুব একটা স্পষ্ট নয়। এই চন্দ্রগিরিতে এসে রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেছি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় সাড়ে আট হাজার ফুট। কাঁপুনি তো ধরবেই। এত উঁচু পাহাড়ে উঠে আসার পথটাও রোমাঞ্চকর। সময় এখন দিনের দ্বিতীয় প্রহর। আমরা এসে পৌঁছালাম চন্দ্রগিরির প্রবেশ পথে। গাড়ি থেকে নেমে পদব্রজে এগিয়ে যেতে লাগলাম। হিমশীতল বাতাসে একটু পর পর শরীর কেঁপে উঠছিল।
আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন চন্দ্রগিরি দর্শনে। দেখা পেলাম দর্শনীয় ফোয়ারার। আমরা এগিয়ে যেতে লাগলাম কেবল কারের পানে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও— আমার উচ্চতায় ভয়! সিঁড়ি বেয়ে উঁচু একটি ভবনে কেবল কারের মূল স্টেশনে পৌঁছালাম। এর আগে টিকিট কাটতে হলো। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য মাথাপিছু টিকিটের দাম ১ হাজার ১০০ নেপালি রুপি। ভবনের ভেতরে প্রবেশের পর সহস্রাধিক মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখতে পেলাম। আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। অভিনব জানালেন, চন্দ্রগিরি হিলের পৌরাণিক তাৎপর্য বিবেচনা করে নেপাল সরকার এটি দর্শনে কেবল কার নির্মাণ করে। এর উচ্চতা ৮ হাজার ২৬৮ ফুট। পৌরাণিক যুগে এই উচ্চতা কীভাবে পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের মাথায় ভালেশ্বর মন্দির গড়ে উঠেছিল, সে তথ্য অজ্ঞাত। যেমন অজ্ঞাত মিসরের সুউচ্চ পিরামিডগুলোয় বিশাল বিশাল পাথর স্থাপন হয়েছিল কীভাবে। সে যাই হোক, কেবল কারের যাত্রাটি মোটামুটি আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ। পাহাড়ের উচ্চতায় যেতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। সেটি আবার নির্ভর করে বাতাসের গতির ওপর।
কেবল কার থেকে কাঠমান্ডু উপত্যকা, প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং অন্নপূর্ণা থেকে এভারেস্ট পর্যন্ত চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। কেবল ওয়ে সিস্টেমে ৩৪টি গন্ডোলা রয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় ১ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষম। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর আমরা উঠে বসলাম কেবল কারে। কারের দুই পাশে মুখোমুখি আমরা মোট ছয়জন বসে আছি। যাঁরা নিচের দৃশ্য দেখতে চান না, তাঁরা উল্টো দিকে বসলেন। সরসর করে উঠছে কেবল কার। যত ওপরে উঠছি, নিচের শহর তত ছোট হয়ে যাচ্ছে। নিচে ঘন সবুজ বন কালচে হচ্ছে। খানিকটা উঠেছি, এরই মধ্যে কোত্থেকে এক দল মেঘ এসে লাগল কারের গায়ে। ভিজিয়ে দিয়ে গেল গ্লাস। মেঘের ছোঁয়ায় বিন্দু বিন্দু জলকণা জমে আছে সেখানে। আমাদের গায়ে লাগল হিমেল পরশ। একটু ঠান্ডা লাগছে। নিচের দিকে তাকাতেই পিলে চমকে উঠল। আমার অবস্থা তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। অন্য দিকে, কেবল কার ‘ওয়াও’, ‘কী সুন্দর’, ‘বাহ’ ধ্বনিতে মুখরিত।
মাঝেমধ্যে একটি দুটি কার চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। কিছু দূর উঠে নিচে শুধু মেঘের খেলা চোখে পড়ল। এখন বনও অদৃশ্য। কালচে মেঘের চাদর ঢেকে দিয়েছে সবুজ। ঠান্ডা আরও বাড়ছে। মেঘের খেলা দেখতে দেখতে, ভয়মিশ্রিত তীব্র ভালো লাগায় ভাসতে ভাসতে, অনেক ভাসা মেঘের পরশ গায়ে মেখে তারের ওপর দিয়ে চলা আমাদের ছোট গাড়িটি গিয়ে থামল চন্দ্রগিরি স্টেশনে। আড়াই কিলোমিটারের কেবল কার ভ্রমণ শেষ হলো। আমরা কার থেকে নেমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। চারপাশের শীতল বন্য ফুলের সুবাসিত স্নিগ্ধ বাতাসে মন প্রফুল্ল হবে যে কারও। এ যেন চারদিকের দূষিত জঞ্জাল ও যান্ত্রিকতা থেকে স্বর্গে পৌঁছে যাওয়া! চোখ বন্ধ করে অনুভবে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যাওয়া। মাঝে মাঝে মেঘ আমাদের ছুঁয়ে গেল। ঠান্ডা শীতল পরশ আমাদের চোখে মুখে দোলা দিয়ে গেল। আমি একের পর এক ছবি তুলতে লাগলাম। চোখ তখনো বিশ্বাস করতে পারছিল না স্রষ্টার এ সৃষ্টি। সৌন্দর্যের সীমা থাকা দরকার! মনে মনে ভাবলাম, উচ্চতার ভয়ে এখানে না এলে অনেক কিছু অদেখা থেকে যেত। নেপালের সৌন্দর্য ও রোমাঞ্চের দেখা পাওয়া যেত না।
একটু পরে দেখা পেলাম মেঘেদের। ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকল তীব্র শীত। কাঁপতে লাগলাম রীতিমতো। এ ঠান্ডা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে অর্ডার দিলাম গরম চায়ের, সঙ্গে নিলাম পপকর্ন। গরম চা পানের ফলে শরীর বেশ খানিকটা উষ্ণ হলো। একটি নয়, দুটি নয়, তিনটি রেস্তোরাঁ এখানে। আছে নিরামিষ ও আমিষ খাবারের ভিন্ন ব্যবস্থা। কেউ অর্ডার দিলে সামনাসামনি রান্না করে দেওয়ার বন্দোবস্ত আছে। এখানে এখন তৈরি হচ্ছে একটি রিসোর্ট। আছে শিশুদের জন্য ছোট একটি পার্ক, ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ি পথে চলার ব্যবস্থা। বেলা গড়িয়ে এল। এবার নামতে হবে। আবার স্টেশনে গিয়ে চড়লাম কারে। এবার ভয় খানিকটা কমে গেছে। আবারও বিস্ময় জাগল মনে। মেঘ ছোঁয়ার আনন্দ নিয়ে ফিরে এলাম।
যাঁরা যেতে চান চন্দ্রগিরি, তাঁদের জন্য কিছু তথ্য
সপ্তাহের সাত দিনই যাওয়া যায় কাঠমান্ডু থেকে চন্দ্রগিরি। সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে চলে কেবল কার। ছুটির দিন চলে সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। ভাড়া প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ১ হাজার ১০০ নেপালি রুপি। তিন ফুটের কম উচ্চতার শিশুদের কোনো ভাড়া দিতে হবে না। তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার শিশুরা ৪০ শতাংশ কম ভাড়ায় ভ্রমণ করত পারবে।
‘বোঝে না সে বোঝে না’ ধারাবাহিকের পাখির কথা মনে আছে? পাখি এখন বড় হয়ে গেছেন। টেলিভিশন ধারাবাহিকের চৌহদ্দি পেরিয়ে তিনি এখন চলচ্চিত্র ও ওটিটিও মাতাচ্ছেন। ‘পরিবর্তন’, ‘লাভ আজ কাল পরশু’, ‘চিনি’, ‘দিলখুশ’, ‘সূর্য’, ‘কুলের আচার’ এর মতো একাধিক সিনেমা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
১৪ মিনিট আগেশিশুকে রোজ কোন খাবার টিফিন হিসেবে দেবেন, এই ভাবনা সব মেয়েদেরই থাকে। কোনো দিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলে টিফিন নিয়ে ভাববেন না। খুব সহজে ও কম সময়ে তৈরি করে ফেলা যায় নাটি স্যামোলিনা। খাবারটি এক কথায় যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক।
৫ ঘণ্টা আগেজোয়ান মারা যাওয়ার পর টম ঠিক করেন, তিনি জোয়ানের স্মৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান জানিয়ে কিছু করবেন। সঙ্গে জোয়ান যে হসপিটালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, সেই সেন্ট অ্যান’স হসপিটালের জন্যও যদি কিছু করা যায়, মন্দ কি। এই চিন্তা থেকে তিনি অংশ নেন ১১ হাজার ফুট উচ্চতার স্কাই ডাইভ চ্যালেঞ্জে।
২১ ঘণ্টা আগেবাজারে আমড়া উঠেছে। ভর্তা করে বা ডালে আমড়া দিয়ে তো খাবেনই, আচারও বানাবেন নিশ্চয়ই। কিন্তু আমড়ার ঝাল রসগোল্লা? আপনাদের জন্য আস্ত আমড়ার ঝাল রসগোল্লার রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
১ দিন আগে