Ajker Patrika

ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ত্বকে যেসব সমস্যা হতে পারে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
সামান্য ওজন কমালেও ত্বকের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়। ছবি: পেক্সেলস
সামান্য ওজন কমালেও ত্বকের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়। ছবি: পেক্সেলস

একটু খেয়াল করলে দেখবেন, অনিয়ন্ত্রিত ওজনের অধিকারীরা ত্বকের কোনো না কোনো সমস্যায় ভোগেন। ওজন বাড়ার সঙ্গে হাঁটুব্যথা, হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে। তেমনি ত্বকেও দেখা দেয় সোরিয়াসিস, ব্রণ এমনকি ক্যানসারসহ নানান সমস্যা ও রোগ। অতিরিক্ত ওজনের কারণে ত্বকে যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে—

ত্বকের ভাঁজে ছত্রাকের সংক্রমণ

যাঁদের ওজন তুলনামূলক বেশি, তাঁদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে ত্বকের অনেক জায়গায় গভীর ভাঁজ তৈরি হয়। গলা, তলপেটের নিচে, কোমর, কনুই, হাঁটু—এসব ভাঁজে ঘাম জমে। বারবার ঘষা লেগে এসব জায়গায় ক্ষত সৃষ্টি হয়। যাঁরা অতিরিক্ত ঘামেন, তাঁদের শরীরের এসব জায়গায় ছত্রাকের সংক্রমণ, লালচে ভাব ও চুলকানি দেখা দেয়।

ওজন কমানো একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। এটি করার আগে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। অনলাইনে পাওয়া কোনো ডায়েট চার্ট অন্ধভাবে অনুসরণ করবেন না।

রোমকূপ বন্ধ হয়ে ব্রণের উদ্রেক ঘটায়

অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়ার কারণে শরীরে স্বাভাবিকভাবে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে ত্বকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদিত হয়। এই তেল নিঃসরণের কারণে রোমকূপে ময়লা জমে এবং সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে।

একজিমায় আক্রান্ত হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে

মুটিয়ে যাওয়ার সঙ্গে একজিমায় আক্রান্ত হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। মেদবহুলদের শরীরে যদি পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তাহলে ত্বকের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়ে। এ ধরনের ত্বকে একজিমার মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হতে দেখা যায়। একজিমা একবার হলে সহজে সারে না। সারলেও বারবার হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়।

মুটিয়ে যাওয়ার সঙ্গে একজিমায় আক্রান্ত হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। ছবি: পেক্সেলস
মুটিয়ে যাওয়ার সঙ্গে একজিমায় আক্রান্ত হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। ছবি: পেক্সেলস

স্থূল ব্যক্তিদের সোরিয়াসিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি

এটি দীর্ঘস্থায়ী অটো ইমিউন রোগ। যেখানে ত্বকে লালচে ও মোটা স্কেলি প্যাচ তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, স্থূলতা এই রোগ শুরু বা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। সোরিয়াসিসের চিকিৎসাও দীর্ঘমেয়াদি। খুব ভালো চিকিৎসা হলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে একেবারে নির্মূল প্রায় অসম্ভব।

স্থায়ী স্ট্রেচমার্ক

হঠাৎ মুটিয়ে যাওয়া এবং ওজন কমাতে না পারলে ত্বকের বিভিন্ন জায়গায়; যেমন আন্ডারআর্ম, ঊরু ও পেটে স্থায়ী স্ট্রেচমার্ক পড়তে পারে। ত্বকের উপরিভাগের এই স্ট্রেচমার্ক এর স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়।

ওজন কমাতে জিম, জগিং নাকি ইয়োগা করবেন সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ওজন কমাতে জিম, জগিং নাকি ইয়োগা করবেন সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে নিজের ইচ্ছেমতো উপায়ে ওজন কমানোর বিপত্তিও রয়েছে। স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষতিও হতে পারে। প্রথমে বোঝার চেষ্টা করতে হবে, কেন মুটিয়ে যাচ্ছেন। হরমোনজনিত কারণ, বিষণ্নতা বা যেকোনো অসুখের কারণেও মুটিয়ে যেতে পারে মানুষ। ফলে প্রথমে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে মুটিয়ে যাওয়ার কারণ জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সামান্য ওজন কমালেও ত্বকের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়। সোরিয়াসিস, ব্রণ ইত্যাদি ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকিও কমে যায়। তবে সেই ওজন কমাতে জিমে যাবেন, জগিং করবেন, নাকি ইয়োগাতে অভ্যস্ত হবেন, তা আপনার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নিয়ে জিমে গিয়ে ভারী ব্যায়াম করবেন না।

ব্যায়ামের সিদ্ধান্ত এ ক্ষেত্রে অন্তত নেবেন না। সাধারণভাবে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটাহাঁটি করুন। এটি একটি সাধারণ ও কার্যকর ব্যায়াম। এসব ব্যায়াম যেকোনো জায়গায় করতে পারেন। এ ছাড়া সাঁতার একটি চমৎকার ব্যায়াম, যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গের জন্য উপকারী। এটি ওজন কমানোর পাশাপাশি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও কমায়।

শুধু ব্যায়াম করলেই যে সব হয়ে যাবে, তেমন নয়। ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এতে ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় থাকে, এ কথা সবাই জানি। এ ছাড়া পানি শরীর থেকে যাবতীয় বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়। শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে গেলে ত্বক এমনিতেই ভালো দেখায়। পানি পানের পাশাপাশি পানিবহুল মৌসুমি ফল ও শাকসবজি খেতে হবে। এর বাইরে ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনিকেও কড়াভাবে ‘না’ বলতে শিখতে হবে।

সূত্র: স্কিনসাইট, হেলথলাইন ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত