Ajker Patrika

‘যথেষ্ট উন্নতি হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি’

রিপন চন্দ্র রায়
‘যথেষ্ট উন্নতি হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৬ জুলাই। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। গবেষক তৈরি, দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির খ্যাতি আছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনের ভাবনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রিপন চন্দ্র রায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের করে আনতে কী কী পরিকল্পনা নিয়েছেন?
মানুষ যখন কোনো কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে একটু সময় লাগে। চাইলেই এ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী যারা শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। তবে এর জন্য একটা জাতীয় পরিকল্পনা প্রয়োজন। তাহলে প্রচলিত এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদে গবেষণা বাড়ানোর জন্য বর্তমান প্রশাসন কী কী উদ্যোগ নিয়েছে? 
আমাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজের মধ্যে এটি একটি। এটি ঐচ্ছিক নয়, আবশ্যিক একটি কাজ। আমাদের সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদের শিক্ষকদের মধ্যে গবেষণার ঘাটতি রয়েছে। তবে আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করেছি। যেখানে প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকদের গবেষণা সংযুক্ত করা হয়েছে। গবেষণা বৃদ্ধির জন্য এবার আমরা শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা পরিবর্তন করে গবেষণার বিষয়টি সংযুক্ত করেছি। এখন সব অনুষদের শিক্ষকদের গবেষণা করতে হবে। এ জন্য প্রতিটি অনুষদের অধিকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়ে কী ভাবছেন?
আমাদের গবেষণার বরাদ্দ হয়তো এক কোটি টাকার—কোনো গবেষণা করার জন্য অপ্রতুল। কিন্তু দুই লাখ, পাঁচ লাখ টাকার গবেষণা তো আমরা করতেই পারি। এর জন্য সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আমাদের যথেষ্ট বরাদ্দ দিচ্ছে। আর এই অনুদান নিয়েই কিন্তু বহু শিক্ষক গবেষণা করছেন। তবে আমরা সর্বোচ্চ বরাদ্দ নিয়ে সর্বাধিক সংখ্যক গবেষণা করার চেষ্টা করছি।

দীর্ঘদিন রাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। এ বিষয়ে বর্তমান প্রশাসনের পরিকল্পনা কী?
রাকসুর বিষয়ে ভেতরে-ভেতরে আলোচনা চলছে। কিছু কাজও চলছে। রাকসু নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার। তাঁরা ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। আমরা সবাই চাই রাকসু নির্বাচন হোক। তবে দুঃখের বিষয়, আমরা এমন কোনো ছাত্রনেতা পাচ্ছি না যারা সামান্য হলের খাবারের সমস্যা নিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে বিষয়টি সমাধান করবে।

তাহলে আমরা যদি হঠাৎ করেই রাকসু নির্বাচন দিই, সেখান থেকে নেতা বেরিয়ে আসবে, আমি এমনটা মনে করি না। তবে আমরা মনেপ্রাণে চাই আগের মতো রাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত।  

অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলামবিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট কার্যকরে আপনারা কী ভাবছেন?
এটা ঠিক যে দীর্ঘদিন সিনেট অকার্যকর হয়ে আছে। আমরা সিনেট নির্বাচন করার জন্য ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। কারণ সিনেট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। সিনেটের মাধ্যমে অনেক বিষয় আইনে পরিণত হয় কিংবা আইনসিদ্ধ হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেটি চালু করার লক্ষ্যে কাজ করছি।

ভর্তি পরীক্ষায় কোটার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে। কোটা নিয়ে বর্তমান প্রশাসন কী ভাবছে?
কোটার বিষয়টি আসলে দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস। তাই এটা হঠাৎ করে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা এবার কোটায় ভর্তির আসন ১ শতাংশ কমিয়েছি। কোটার আসনগুলো মূল আসনের বাইরে রেখেছি, যাতে কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত না হয়। আশা করছি, ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও কমিয়ে আনতে পারব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশ আগের মতো নেই বলে মনে করেন বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। আপনার কী মনে হয়? 
আমি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলতে পারি, বহু বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যতগুলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে, এর চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক অনুষ্ঠান এই প্রশাসনের গত দুই বছরে হয়েছে। তবে নানান কারণে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের জন্য একটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কয়েক দফা সভা করে সেই বিরোধ নিরসনের চেষ্টা করেছি। আমরা চাইব, ব্যক্তির মতানৈক্যকে প্রাধান্য না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা চিন্তা করে সবাই সব ভেদাভেদ ভুলে একই ছাতার নিচে এসে সংস্কৃতিচর্চা করতে পারি তাহলে এই সংকট নিরসন হবে।

প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে কি না? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার কী মনে হয়? 
এটা সত্য যে ১৯৫৩ সালে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটা সবারই প্রত্যাশা যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ কিংবা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্বটুকু পালন করতে হবে। তবে সার্বিক বিবেচনায় যথেষ্ট উন্নতি হলেও আমরা এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা পেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত