Ajker Patrika

কৃষি গবেষণায় তরুণেরা

মো. রুবাইয়াদ ইসলাম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ২৭
Thumbnail image

যা খাচ্ছি, সেই সব খাদ্যশস্য বিষমুক্ত কি না—এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রায় সবাই। আপনি যখন দোকানির সঙ্গে এ নিয়ে বাহাসে লিপ্ত, তখন একদল তরুণ বিষমুক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনের চেষ্টা করে চলেছেন দিনরাত। সম্প্রতি তাঁরা ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদনের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন! 
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের একদল শিক্ষার্থী কাজটি করেছেন। তাঁদের পথ দেখিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা।

বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদনে গবেষণাদলটি বায়ো ফার্টিলাইজার নামে এন্ডো ফাইটিক ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করেছিলেন। এটি প্রয়োগের মাধ্যমে তিন থেকে চার গুণ বেশি এবং প্রায় শতভাগ বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করার পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন দলটির সদস্যরা। গবেষণা প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আজিজুল হক হেলাল।

গবেষণা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জমিতে সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করেছিলেন তাঁরা। দলটির গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, সাধারণত একজন কৃষক জমিতে প্রতি শতাংশে যতটুকু ইউরিয়া সার ব্যবহার করেন তার ৭০ শতাংশ ব্যবহার কমানো সম্ভব। আবার বেগুন নষ্ট করতে আসা পোকাকেও বাধা দেয় বায়ো ফার্টিলাইজার ব্যাকটেরিয়া। গবেষণাদলটি এই ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগের ফলে জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এর ব্যবহারে বেগুনের ফলন ও আকারের পরিবর্তনও লক্ষণীয় মাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে গ্রোথ মিডিয়া তৈরি করে এজাতীয় ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ড. আজিজুল হক হেলাল।

এর আগে হাবিপ্রবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের পিএইচডি গবেষক ফররুখ আহমেদের গবেষণায় করলার দুটি নতুন জাত উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। জাত দুটির নাম রাখা হয়েছে যথাক্রমে ‘এইচএসটিইউ-১’ ও ‘এইচএসটিইউ-২’। গবেষণাটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান ও অধ্যাপক ড. ভবেন্দ্র কুমার বিশ্বাস।

এসব গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষি গবেষণায় বেশ খানিক এগিয়ে গেছে হাবিপ্রবি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কৃষি গবেষণায় বেশি আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীদের মাঝে। তাঁদের নিরলস পরিশ্রম চোখে পড়ার মতো। শিক্ষকদের নির্দেশনায় মাঠে বীজ রোপণ থেকে শুরু করে সার্বিক দেখাশোনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তাঁরা। রিসার্চ ফিল্ডে গেলে সব সময় দেখা যায় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। তাঁদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে একেকটি ফসলের মাঠ যেন ভরে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান কৃষি গবেষণাকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণায় সমৃদ্ধ করার জন্য ‘জিন ব্যাংক’ ও ‘প্রযুক্তি গ্রাম’ প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছেন।

অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে ধান, পেঁপে, মুলা, হলুদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের শস্যের উন্নত জাত তৈরির জন্য গবেষণা চলমান রয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে দায়িত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত