Ajker Patrika

আম জনতার আমের বিচার

মাহববুব সিদ্দিকী
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২২, ২২: ২৯
Thumbnail image

আম নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। উৎকৃষ্টের বিচারে কোন জাতের আম শ্রেষ্ঠ, এ প্রশ্নের কোনো মীমাংসা আজ পর্যন্ত হয়নি। সম্ভবত কোনো দিন হবেও না। এর কারণও আছে। আমকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পৃথিবীতে এতকাল হয়ে এসেছে এবং হয়ে চলেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন আম উৎপাদনকারী দেশ বা অঞ্চলে মানুষের নিজ নিজ এলাকায় উৎপাদিত আম নিয়ে গর্ব ও অহংকারের শেষ নেই। এমন ভাবনা এসেছে আঞ্চলিকতা, জাতীয়তাবোধ কিংবা দেশাত্মবোধ থেকে।

কোনো অঞ্চলের কয়েকটি উৎকৃষ্ট জাতের আমের স্বাদে অভ্যস্ত সেখানকার জনসাধারণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, তাদের এলাকায় উৎপাদিত তৃপ্তিদায়ক আমগুলোই পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ। আবার এমনও দেখা যাবে, একটি দেশের মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ ও সুগন্ধযুক্ত অতি উৎকৃষ্ট মানের আম উৎপন্ন হচ্ছে। সেই অঞ্চলগুলোর জনসাধারণ তাদের এলাকার আমগুলোকেই শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করে।

বাংলাদেশকে দিয়েই উদাহরণ শুরু করা যেতে পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার জনসাধারণের মধ্যে একটি বিশ্বাস ও অহংকার কাজ করে যে তাদের এলাকায় উৎপাদিত আম বিশেষ করে ফজলি, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতি, রানিপছন্দ, গৌরমতি দেশের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। একই বিষয়ে এরা দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করে যে আমের আভিজাত্যের মাপকাঠিতে নবাবগঞ্জের অবস্থানই শীর্ষে।

রাজশাহী মহানগরীর অভিজাত আম ভোক্তাগণ রায়পাড়া বাগানের নির্দিষ্ট কিছু আমকে শ্রেষ্ঠ বলে থাকেন। এই বাগানের আম এরা নাগালের মধ্যে পেলে, আশপাশে আর তাকানোর কোনো প্রয়োজনই মনে করে না। রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট অঞ্চলের লোকজন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তাদের উৎপাদিত ফজলি ও লক্ষণভোগ দেশের মধ্যে সেরা।

অন্যদিকে নাটোর অঞ্চলের মানুষ গোপালভোগ বা কালুয়া নামক আমকে সর্বশ্রেষ্ঠ আম বলে দাবি করে। নওগাঁ অঞ্চলে উৎপাদিত নাক ফজলি আমের মধ্যে গুণ-মানে সর্বশ্রেষ্ঠ, এই বিশ্বাসে অন্ধ নওগাঁ এলাকার মানুষ। এদিকে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার মানুষ তাদের অঞ্চলের বোম্বাই আমের সঙ্গে অন্য কোনো আমের তুলনা করতে নারাজ। একইভাবে সাতক্ষীরার মানুষেরা তাদের ল্যাংড়া ও গোবিন্দভোগ আমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রংপুরের মানুষের এ কথা বোঝানো খুব মুশকিল হবে যে হাঁড়িভাঙা আমের চেয়েও ভালো আম বাংলাদেশে রয়েছে। একইভাবে ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের মানুষ বুঝতেই চাইবে না, সূর্যপুরী আমের চেয়েও ভালো জাতের আম দেশে থাকতে পারে।

Amদিনাজপুর জেলার মানুষ বিশ্বাস করে, ‘কাটারিভোগ চালের ভাতের সঙ্গে দুই জ্বালের খাঁটি গোদুগ্ধ আর তার সঙ্গে সুপক্ব একটি মিশ্রীভোগ আমের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে যে খাদ্যবস্তু প্রস্তুত হবে, নিঃসন্দেহে তা তুলনারহিত।’

বৃহৎ বঙ্গের মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলা শত শত উৎকৃষ্ট জাতের আম উৎপাদনে বরাবরই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। এদের ধমনিতে আম সংস্কৃতির পরম্পরা প্রবহমান। এর প্রধান কারণ হলো মুর্শিদাবাদের নবাব এবং তাঁদের সহযোগী অভিজাত শ্রেণির মানুষের মধ্যে আম সংস্কৃতির দীর্ঘকালীন চর্চা। এদের আম্রকুঞ্জ থেকে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য অতি মনোহর উন্নত জাতের আম। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কোহিতুর, স্বাদওয়ালা, রানিপছন্দ, ক্ষীরশাপাতি, হিমসাগর, বিড়া বা সফদারপছন্দ ইত্যাদি। মুর্শিদাবাদের মানুষ মনে করে এ দেশে আম সংস্কৃতির প্রধান ধারক-বাহক তারাই। কোহিতুর আম নিয়ে তাদের গর্বের সীমা নেই। এদের বিশ্বাস, শুধু এই উপমহাদেশে কেন, সমগ্র বিশ্বে কোহিতুর আমের সঙ্গে অন্য কোনো আমের তুলনা করা নিছক বাতুলতা।

একইভাবে একজন থাইল্যান্ডবাসী বিশ্বাস করে, তাদের দেশে উৎপাদিত ডক মাই নামের আমটি পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ। তেমনিভাবে একজন ফিলিপিনো মনে করে তাদের দেশের শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত ক্যারাবাউ ও পিকো এই দুটি আমের ধারেকাছে পৃথিবীর কোনো আম নেই। একজন পাকিস্তানির ধারণা, তাদের দেশের আনোয়ার রাতাউল, মোহাম্মদওয়ালা, সিন্ধরী এগুলোর স্বাদ ও গন্ধ তুলনাহীন। সাধারণভাবে বাংলাদেশিদের ধারণা, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতি গোপালভোগ ও হিমসাগর এগুলোই হচ্ছে পৃথিবীর সেরা আম।

এ সবকিছুই আমের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, নিজেদের এলাকা তথা দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উৎসারিত। আমসংক্রান্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষার পর আমবিশারদ এবং আমভক্ত মানুষের মতামত হলো, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে উৎপাদিত আমের ভালো ভালো জাতগুলোই পৃথিবীর মানুষকে আকৃষ্ট করেছে সবচেয়ে বেশি।

দক্ষিণ এশিয়ার এই তিনটি দেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতে যে যে জাতের আম উৎপন্ন হচ্ছে, সন্দেহ নেই সেগুলো আকারে বেশ 
বড়, কোনো কোনোটির রং আকর্ষণীয় কিন্তু অধিকাংশই আঁশে ভরা। স্বাদ ও সুগন্ধের মধ্যেও অনেক ফারাক। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বেশির ভাগ উন্নত বাণিজ্যিক জাত স্বাদে অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক।

অধিকাংশ আমের রং আকর্ষণীয় আর পাগল করা সুগন্ধ। এই দেশগুলোর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতের আম বাছাই এবং সেগুলোর গুণাগুণ বিচার করে, ক্রমানুসারে সাজানোর কাজটি কখনোই সঠিক হবে না। সেটি সম্ভবও নয়। আম সব সময়ই ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভরশীল। কারোর কাছে মিষ্টতার পরিমাণ হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি, আবার কারোর কাছে সুগন্ধ, আকর্ষণীয় রং ও রসের পরিমাণ ইত্যাদি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। আমের সৌরভ, স্বাদ, মিষ্টতা, রং, আঁশের পরিমাণ এবং সর্বোপরি বাণিজ্যিক খ্যাতি ইত্যাদি বিচার করে এই তিনটি দেশের শ্রেষ্ঠ আমের জাতগুলোর একটি তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করা যেতে পারে। 

ছবি: হাসান রাজাম্যাঙ্গো সালসা

উপকরণ
কিউব করে কাটা পাকা আম দেড় কাপ, লাল বা সবুজ ক্যাপসিকাম পরিমাণ মতো, লাল পেঁয়াজ ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস স্বাদমতো, কাঁচা মরিচ কুঁচি, ধনেপাতা ও লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি
ওপরের সব উপকরণ একটা পাত্রে ঢেলে নিয়ে আলতো হাতে দুইটি চামচের সাহায্যে মিশিয়ে নিলেই সালসা তৈরি। পাঁপড় বা ট্যাকোসের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে। শুধু সালসাও খেতে দারুণ।

রেসিপি: ফারাহ্‌তানজীন সুবর্ণা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত