অলাত এহ্সান

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ।
বহুল প্রচার, আর ফেসবুকে মুহুর্মুহু মুখ দেখানো তো আছেই। রয়েছে অনলাইন জরিপ, মুহূর্তেই যা বদলে দিতে পারে যেকোনো হিসাব। এমনকি লেখালেখি হয়ে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত সুবিধা আদায়ের মাধ্যম। এর ভেতর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী করে স্মরণ করা যায়?
গত শতাব্দীর ত্রিশ–চল্লিশের দশক বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে যেমন, সাহিত্যের ইতিহাসেও তেমনি ঘটনাবহুল ও অবিস্মরণীয় কাল। বাংলা সাহিত্যেও এ কথা সমান সত্য। এ সময় বাংলা কবিতায় যেমন ‘আধুনিক’ ধারা সূচিত হয়, কথাসাহিত্যে তেমনি আবির্ভূত হয় ঈপ্সিত আধুনিকতা।
কবিতায় অনুবাদনির্ভর আধুনিকতার তুলনায় কথাসাহিত্য অনেক বেশি প্রাচুর্যময় ছিল। আসলে একই সময়ে কোনো একটি ভাষায় এতজন কর্মচঞ্চল ও শক্তিশালী লেখক-কবির উপস্থিতি বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিশ্বস্বীকৃত ও বিপুল কর্মরাজীর মহাপুরুষ সচল থাকার পরও সে সময় রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিকতা বিস্তার লাভ করে।
বিশেষত তাঁর ভাব নির্ভরতার বিপরীতে মানুষের বহির্জীবন ও অন্তর্জীবনের বৈচিত্র্য এবং সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। আর এই ক্ষেত্রেই দক্ষতা দেখিয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাত্র ৪৮ বছরের সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কাল। এর মধ্যে ৩৭টি উপন্যাস, দুই শতাধিক গল্প, কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছেন মানিক। এগুলো বিশ্বের যেকোনো সৃষ্টিবহুল লেখকের সমৃদ্ধ সম্ভারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তা ছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর শতাধিক সম্পূর্ণ-অসম্পূর্ণ কবিতা ও খসড়া পাওয়া যায়। অবশ্য এগুলো তাঁর যুবক বয়সেই (১৬–২১ বছর) রচিত। মৃত্যুর পরও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক অপ্রকাশিত সাহিত্য পাওয়া গেছে। তা ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পত্রিকায় লিখতেন। যদিও লেখাগুলো পরে আর সংগ্রহ করা যায়নি। তাতেই ‘জীবনঘনিষ্ঠ কথাশিল্পী’ অভিধা তাঁর নামের সঙ্গে স্থায়ী হয়ে গেছে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০৮ সালের ১৯ মে, বঙ্গাব্দ ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৩১৫। বাবা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মস্থল ভারতের সাঁওতাল পরগণার দুমকা শহরে তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকার তৎকালীন বিক্রমপুর মহকুমার (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা) মালদপিয়া গ্রামে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তাঁদের পরিবার দেশ ত্যাগ করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি খুঁজে পাওয়া নিয়ে চমৎকার গল্প আছে প্রয়াত কথাশিল্পী কায়েস আহমেদের; নাম—‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে ও মালদপিয়ার রমণী মুখুজ্জে’। গল্পের কোথাও সাম্প্রদায়িকতার কথা নেই। তবু গল্পটা পড়লেই বোঝা যায় তাঁরা কেন দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।
সাহিত্যের সূচনা বিচারে এ তথ্য সত্য যে, কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে প্রথম গল্প ‘অতসীমামী’ লিখেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই বাজিমাত। প্রথম গল্প গ্রন্থভুক্ত ‘মহাসংগম’ গল্পটি সম্পর্কে অধ্যাপক নির্মাল্য আচার্য বলেন, ‘এর তুল্য গল্প বিশ্বসাহিত্যে কদাচিৎ মিলবে।’ এই শুরুর গল্পটি ইঙ্গিত দেয়—সাহিত্যের জগতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চলা হঠাৎ করেই শুরু হয়েছিল। সাধারণ্যে অন্তত এমন ধারণা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। প্রশ্ন হলো—সত্যি কি হঠাৎ করে লেখকের জন্ম হয়? এই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন মানিক। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে তিনি লেখেন—‘আমি বলব, না, এ রকম হঠাৎ কোনো লেখকই গজান না। রাতারাতি লেখক পরিণত হওয়ার ম্যাজিকে আমি বিশ্বাস করি না। অনেক কাল আগে থেকেই প্রস্তুতি চলে। লেখক হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আসলেই কেবল একজনের পক্ষে হঠাৎ একদিন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব।’
‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাসটি ধারাবাহিক প্রকাশের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক মানিকের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩৪ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাসটি সম্পর্কে আরেক অগ্রগণ্য ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য কিছু নন, তিনি ঔপন্যাসিক।’ পরের বছর ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি। ১৯৩৫ সালে ‘জননী’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাস এবং ‘অতসীমামী ও অন্যান্য গল্প’ গল্পগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর গ্রন্থকার হিসেবে যাত্রা শুরু হয়।
মনে রাখা দরকার, গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক সাহিত্যের মতো ভারতবর্ষে রাজনীতিরও উত্থান–পতনের সময়। তখনই প্রকাশ হয় মানিকের প্রথম উপন্যাস। এর অন্তত একটি দিক তাঁর ‘নিজস্ব ধরন’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তা হলো, সমসাময়িক ইতিহাস ও সমাজের সঙ্গে তাঁর সাহিত্যের নিবিড় যোগ। সমাজের তল খুঁজতে গিয়ে, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তাঁর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ছিল প্রায় অবধারিত। এর একটা উত্তর পাওয়া যাবে তাঁর ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে। তিনি লেখেন, ‘মার্কসবাদ যেটুকু বুঝেছি তাতেই আমার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে যে, আমার সৃষ্টিতে কত মিথ্যা, বিভ্রান্তি আর আবর্জনা আমি আমদানি করেছি– জীবন ও সাহিত্য এগিয়ে নেবার উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও।’
আজকের দিনে রাষ্ট্রের বিরাজনীতিকরণ প্রকল্প (বলা যায়, রাজনীতিহীনতার রাজনীতি) কিংবা রাজনীতিবিমুখ নৈনাগরিকের সময়ে দাঁড়িয়ে মানিকের এই উপলব্ধির অনুধাবন খানিকটা কঠিন। তবে অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, সেই সময় রাজনীতির ভেতরই মানুষের মুক্তির দিশা ছিল। তা ছিল মানবমুক্তি-সমাজ প্রগতির রাজনীতি। তাই রাজনৈতিক সংস্রব তাঁর সাহিত্যের মান কমিয়েছে, নিন্দুকের এমন প্রচার সত্য নয়। বরং তাঁর লেখনী এতটা উর্বর ছিল যে, সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি সাবলীল সাড়া দিতে পেরেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁর সাহিত্যে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষাতত্ত্ব ও মার্কসীয় বিশ্ববীক্ষা সফলভাবে যুক্ত হয়েছে। সাহিত্যে উঠে এসেছে সেসব মানুষের জীবন ও সংগ্রাম।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখক হিসেবে, সাহিত্যের প্রতি ‘সৎ’ থেকেই কমিউনিজমে আস্থাশীল হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক চর্চা তাঁর সাহিত্যকে দলীয় প্রচারপত্রে নামিয়ে আনেনি। চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে তিনি ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’-এ যুক্ত হন। ১৯৪৪ সালের শেষের দিকে যুক্ত হন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে। যুগপৎ লেখক ও রাজনীতিক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। তিনি পরবর্তীতে ‘প্রগতি লেখক সংঘ’–এর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
মূলত শ্রমিক ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে দু–খণ্ডের ‘শহরতলি’ উপন্যাসটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী মহলে তাঁর সাড়া পড়ে। দাঙ্গার পটভূমিতে কলকাতার বেহাল নগরজীবন নিয়ে তাঁর প্রখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাস ‘স্বাধীনতার স্বাদ’। বাঙালি সমাজের হতাশা, গ্রামীণ জীবনের অবহেলা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অসারতা নিয়ে লেখেন শ্লেষাত্মক উপন্যাস ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’।
শব্দ নির্বাচন, উপমা ও ভাষাশৈলীর কারণে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। ‘ভিটেমাটি’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক। যুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা বিধ্বস্ত অবস্থা নিয়ে রচিত ‘আজ কাল পরশুর গল্প’ গল্পগ্রন্থটি তাঁর বিপ্লবী চেতনার অনন্য দলিল। কোনো কোনো গল্পে তাঁর জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা ও মানসের সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর অনেক উপন্যাস, গল্পই পরে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। জানিয়ে রাখা যেতে পারে, তাঁর জীবদ্দশাতেই ১৯৪৮ সালে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র তৈরি হয়।
বিএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এবং লেখক হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কারণে পরিবারের সঙ্গে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর কারণে দ্রুতই তাঁকে পেশাজীবন বেছে নিতে হয়। ১৯৩৫ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকায় সম্পাদকীয় পদে পাঁচ বছর যুক্ত থাকেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটা ছেড়ে দিয়ে পরে ভাইয়ের সঙ্গে প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। যদিও আড়াই বছরের মাথায় তা গোটাতে হয়। পরে স্বল্পকালীন নানা পেশায় যুক্ত হলেও কোনোটাই আর স্থায়ী হয়নি। লেখক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই কেটেছে তাঁর আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাঁর এই জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে পড়ল। একদিকে অর্থ সংস্থানের জন্য প্রচুর পরিশ্রম, অন্যদিকে বিদ্যমান বাস্তবতায় পার্টির কাচের ক্রমবর্ধমান চাপ; সব মিলিয়ে মানিক এক ত্রিশঙ্কু দশায় পড়লেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দশা থেকে তাঁর মুক্তি মেলেনি। বলা যায়, চিকিৎসার অভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়। দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর। বঙ্গাব্দ ১৭ অগ্রহায়ণ ১৩৬৩।
এমনকি এই মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত মানিকের পার্টি কমরেড ও লেখকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি অর্থাভাবে। শুনতে যেমনই লাগুক এটাই সত্য। মানিকের মৃত্যুর খবর প্রথম পেয়েছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনি মানিকের স্ত্রী কমলার (ডলি) কাছে জানতে চান, তাঁকে কেন ফোন করে আগে জানানো হয়নি? কমলার উত্তর ছিল—‘তাতেও যে পাঁচ আনা লাগাত দাদা।’
এই বঙ্গে যে শুধু লিখে বাঁচা যায় না, তা কি সমাজঘনিষ্ঠ মানিক জানতেন না? জানতেন নিশ্চয়। তারপরও তিনি এই লেখালিখির জীবনই বেছে নিয়েছিলেন। কমিউনিস্ট রাজনীতিতে আস্থাশীল মানিকের কলম–শ্রমিকের জীবন বেছে নেওয়া তো স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু শুধু এটুকুই কি? না, আরও কিছু তাড়না ছিল। কী সেই তাড়না? উত্তর জানতে মানিকেরই শরণ নেওয়া যাক। ‘লেখকের কথা ও প্রগতি সাহিত্যের আত্মকথা’ শীর্ষক তাঁর প্রবন্ধ সংকলনে থাকা ‘কেন লিখি’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি, অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি। আমি যা জেনেছি, এ জগতে কেউ তা জানে না (জল পড়ে পাতা নড়ে জানা নয়)। কিন্তু সকলের সে আমার জানার এক শব্দার্থক ব্যাপক সম ভিত্তি আছে। তাকে আশ্রয় করে আমার খানিকটা উপলব্ধি অন্যকে দান করি।’
এবার ফেরা যাক শুরুর প্রসঙ্গে। এই সময়ে কেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করা? এর উত্তর আছে ‘এই সময়’ শব্দের ভেতর। ‘এই সময়’ ও সাহিত্যকে আমরা কীভাবে দেখি, তার মীমাংসার ওপরই আসলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা ও তাঁর স্মরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, ‘এই সময়’ প্রতিটি মানুষ প্রচণ্ড মানসিক দ্বন্দ্বের ভেতর বাস করেন। বাজার সংস্কৃতির প্রভাব, পুঁজির প্রবল চাপ, রাষ্ট্রের দুঃশাসন, বৈষম্যের ক্ষমতা চর্চা, প্রতিষ্ঠার ইঁদুর দৌড়, পণ্যের ভিড়ে বিপন্ন জীবনে স্বস্তির কোনো সুযোগ নেই। সমাজের উচ্চকোটি থেকে নিম্নকোটির সবার ভেতর এই দ্বন্দ্ব আছে। ভেতরে-ভেতরে সবাই পুড়ে খাক হয়ে গেলেও প্রকাশ্যে শ্রেণিবৈষম্য বাড়ছে। মানুষের নির্বুদ্ধিতা, শঠতা, প্রতারণা, লোভে খোদ মানবতাই আজ বিপন্ন। যাদের সঙ্গে মিশছে, থাকছে, তাকেও মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারে না।
বিষয়টির চমৎকার তাত্ত্বিক ভিত্তি দিয়েছেন ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো তাঁর ‘ধ্রুপদি যুগে উন্মাদনার ইতিহাস’ বইয়ে। বইটির আলোচনায় অমল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘উত্তর আধুনিক চিন্তা ও কয়েকজন ফরাসি ভাবুক’ বইতে বলছেন: ‘আমরা যাকে প্রাতিস্বিকতা বলতে অভ্যস্ত, যাকে আমরা ধরে নিই মানুষের অনড়, ধ্রুব চরিত্র বলে, সেটি মূলত কিছু সামাজিক ও নৈতিক বিধিনিষেধের প্রত্যাদেশে আমাদের ওপর আরোপিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মুহূর্তে, একজন সামাজিক প্রাণী তার নিজের কাছে বিদেশি ও বিচ্ছিন্ন।’
সেই পথ ধরে মিশেল ফুকো রীতিমতো ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের চিন্তার কাঠামো খুব সহজেই বলে দেয় যে, মানুষ সাম্প্রতিক সময়ের এক আবিষ্কার। আর যা সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।’
এই বাস্তবতায় আমাদের তথাকথিত ‘বেস্ট সেলার’ সাহিত্যের লেখকেরা কী দিচ্ছেন? এই বাস্তবতা কি তাঁরা ধরতে পারছেন? মনে হয় না। এর কিছুই তাঁরা ব্যাখ্যা করার সাধ্য রাখেন না। তাঁরা বিদ্যমান বাস্তবতাকে উদ্যাপন করছেন। এই সাহিত্য আরও সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে চিন্তাকে। তা ছাড়া আমাদের সাহিত্য ঘুরপাক খাচ্ছে মধ্যবিত্তীয় সংকটে। যে কারণে গল্পের চরিত্রগুলো আবর্তিত হয় পলাতক ধরনের ফ্যান্টাসিতে। আর এখানেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব। তিনি এই ব্যবস্থা ও বাস্তবতা ব্যাখ্যা করেন। সাহিত্যের কাজ যে নিছক আনন্দ দেওয়া নয়, বরং মনকে সমৃদ্ধ করা, চিন্তাকে জাগ্রত করা—সেই কাজ করে মানিকের সাহিত্য।
শেষটা হোক মানিকেরই ভাষ্যে। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভদ্র জীবনকে ভালোবাসি, ভদ্র আপনজনদেরই আপন হতে চাই, বন্ধুত্ব করি ভদ্র ঘরের ছেলেদের সঙ্গেই, এই জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বপ্নকে নিজস্ব করে রাখি, অথচ এই জীবনের সংকীর্ণতা, কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতা, প্রকাশ্য ও মুখোশ পরা হীনতা, স্বার্থপরতা প্রভৃতি মনটাকে বিষিয়ে তুলেছে। এই জীবন আমার আপন অথচ এই জীবন থেকেই মাঝে মাঝে পালিয়ে ছোটলোক চাষা-ভূষাদের মধ্যে গিয়ে যেন নিশ্বাস ফেলে বাঁচি। আবার ওই ছোটলোকদের অমার্জিত রিক্ত জীবনের রুক্ষ কঠোর নগ্ন বাস্তবতার চাপে অস্থির হয়ে নিজের জীবনে ফিরে এসে হাঁফ ছাড়ি।’
অলাত এহ্সান: গল্পকার ও সমালোচক

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ।
বহুল প্রচার, আর ফেসবুকে মুহুর্মুহু মুখ দেখানো তো আছেই। রয়েছে অনলাইন জরিপ, মুহূর্তেই যা বদলে দিতে পারে যেকোনো হিসাব। এমনকি লেখালেখি হয়ে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত সুবিধা আদায়ের মাধ্যম। এর ভেতর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী করে স্মরণ করা যায়?
গত শতাব্দীর ত্রিশ–চল্লিশের দশক বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে যেমন, সাহিত্যের ইতিহাসেও তেমনি ঘটনাবহুল ও অবিস্মরণীয় কাল। বাংলা সাহিত্যেও এ কথা সমান সত্য। এ সময় বাংলা কবিতায় যেমন ‘আধুনিক’ ধারা সূচিত হয়, কথাসাহিত্যে তেমনি আবির্ভূত হয় ঈপ্সিত আধুনিকতা।
কবিতায় অনুবাদনির্ভর আধুনিকতার তুলনায় কথাসাহিত্য অনেক বেশি প্রাচুর্যময় ছিল। আসলে একই সময়ে কোনো একটি ভাষায় এতজন কর্মচঞ্চল ও শক্তিশালী লেখক-কবির উপস্থিতি বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিশ্বস্বীকৃত ও বিপুল কর্মরাজীর মহাপুরুষ সচল থাকার পরও সে সময় রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিকতা বিস্তার লাভ করে।
বিশেষত তাঁর ভাব নির্ভরতার বিপরীতে মানুষের বহির্জীবন ও অন্তর্জীবনের বৈচিত্র্য এবং সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। আর এই ক্ষেত্রেই দক্ষতা দেখিয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাত্র ৪৮ বছরের সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কাল। এর মধ্যে ৩৭টি উপন্যাস, দুই শতাধিক গল্প, কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছেন মানিক। এগুলো বিশ্বের যেকোনো সৃষ্টিবহুল লেখকের সমৃদ্ধ সম্ভারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তা ছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর শতাধিক সম্পূর্ণ-অসম্পূর্ণ কবিতা ও খসড়া পাওয়া যায়। অবশ্য এগুলো তাঁর যুবক বয়সেই (১৬–২১ বছর) রচিত। মৃত্যুর পরও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক অপ্রকাশিত সাহিত্য পাওয়া গেছে। তা ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পত্রিকায় লিখতেন। যদিও লেখাগুলো পরে আর সংগ্রহ করা যায়নি। তাতেই ‘জীবনঘনিষ্ঠ কথাশিল্পী’ অভিধা তাঁর নামের সঙ্গে স্থায়ী হয়ে গেছে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০৮ সালের ১৯ মে, বঙ্গাব্দ ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৩১৫। বাবা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মস্থল ভারতের সাঁওতাল পরগণার দুমকা শহরে তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকার তৎকালীন বিক্রমপুর মহকুমার (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা) মালদপিয়া গ্রামে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তাঁদের পরিবার দেশ ত্যাগ করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি খুঁজে পাওয়া নিয়ে চমৎকার গল্প আছে প্রয়াত কথাশিল্পী কায়েস আহমেদের; নাম—‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে ও মালদপিয়ার রমণী মুখুজ্জে’। গল্পের কোথাও সাম্প্রদায়িকতার কথা নেই। তবু গল্পটা পড়লেই বোঝা যায় তাঁরা কেন দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।
সাহিত্যের সূচনা বিচারে এ তথ্য সত্য যে, কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে প্রথম গল্প ‘অতসীমামী’ লিখেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই বাজিমাত। প্রথম গল্প গ্রন্থভুক্ত ‘মহাসংগম’ গল্পটি সম্পর্কে অধ্যাপক নির্মাল্য আচার্য বলেন, ‘এর তুল্য গল্প বিশ্বসাহিত্যে কদাচিৎ মিলবে।’ এই শুরুর গল্পটি ইঙ্গিত দেয়—সাহিত্যের জগতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চলা হঠাৎ করেই শুরু হয়েছিল। সাধারণ্যে অন্তত এমন ধারণা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। প্রশ্ন হলো—সত্যি কি হঠাৎ করে লেখকের জন্ম হয়? এই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন মানিক। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে তিনি লেখেন—‘আমি বলব, না, এ রকম হঠাৎ কোনো লেখকই গজান না। রাতারাতি লেখক পরিণত হওয়ার ম্যাজিকে আমি বিশ্বাস করি না। অনেক কাল আগে থেকেই প্রস্তুতি চলে। লেখক হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আসলেই কেবল একজনের পক্ষে হঠাৎ একদিন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব।’
‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাসটি ধারাবাহিক প্রকাশের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক মানিকের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩৪ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাসটি সম্পর্কে আরেক অগ্রগণ্য ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য কিছু নন, তিনি ঔপন্যাসিক।’ পরের বছর ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি। ১৯৩৫ সালে ‘জননী’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাস এবং ‘অতসীমামী ও অন্যান্য গল্প’ গল্পগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর গ্রন্থকার হিসেবে যাত্রা শুরু হয়।
মনে রাখা দরকার, গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক সাহিত্যের মতো ভারতবর্ষে রাজনীতিরও উত্থান–পতনের সময়। তখনই প্রকাশ হয় মানিকের প্রথম উপন্যাস। এর অন্তত একটি দিক তাঁর ‘নিজস্ব ধরন’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তা হলো, সমসাময়িক ইতিহাস ও সমাজের সঙ্গে তাঁর সাহিত্যের নিবিড় যোগ। সমাজের তল খুঁজতে গিয়ে, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তাঁর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ছিল প্রায় অবধারিত। এর একটা উত্তর পাওয়া যাবে তাঁর ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে। তিনি লেখেন, ‘মার্কসবাদ যেটুকু বুঝেছি তাতেই আমার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে যে, আমার সৃষ্টিতে কত মিথ্যা, বিভ্রান্তি আর আবর্জনা আমি আমদানি করেছি– জীবন ও সাহিত্য এগিয়ে নেবার উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও।’
আজকের দিনে রাষ্ট্রের বিরাজনীতিকরণ প্রকল্প (বলা যায়, রাজনীতিহীনতার রাজনীতি) কিংবা রাজনীতিবিমুখ নৈনাগরিকের সময়ে দাঁড়িয়ে মানিকের এই উপলব্ধির অনুধাবন খানিকটা কঠিন। তবে অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, সেই সময় রাজনীতির ভেতরই মানুষের মুক্তির দিশা ছিল। তা ছিল মানবমুক্তি-সমাজ প্রগতির রাজনীতি। তাই রাজনৈতিক সংস্রব তাঁর সাহিত্যের মান কমিয়েছে, নিন্দুকের এমন প্রচার সত্য নয়। বরং তাঁর লেখনী এতটা উর্বর ছিল যে, সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি সাবলীল সাড়া দিতে পেরেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁর সাহিত্যে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষাতত্ত্ব ও মার্কসীয় বিশ্ববীক্ষা সফলভাবে যুক্ত হয়েছে। সাহিত্যে উঠে এসেছে সেসব মানুষের জীবন ও সংগ্রাম।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখক হিসেবে, সাহিত্যের প্রতি ‘সৎ’ থেকেই কমিউনিজমে আস্থাশীল হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক চর্চা তাঁর সাহিত্যকে দলীয় প্রচারপত্রে নামিয়ে আনেনি। চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে তিনি ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’-এ যুক্ত হন। ১৯৪৪ সালের শেষের দিকে যুক্ত হন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে। যুগপৎ লেখক ও রাজনীতিক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। তিনি পরবর্তীতে ‘প্রগতি লেখক সংঘ’–এর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
মূলত শ্রমিক ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে দু–খণ্ডের ‘শহরতলি’ উপন্যাসটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী মহলে তাঁর সাড়া পড়ে। দাঙ্গার পটভূমিতে কলকাতার বেহাল নগরজীবন নিয়ে তাঁর প্রখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাস ‘স্বাধীনতার স্বাদ’। বাঙালি সমাজের হতাশা, গ্রামীণ জীবনের অবহেলা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অসারতা নিয়ে লেখেন শ্লেষাত্মক উপন্যাস ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’।
শব্দ নির্বাচন, উপমা ও ভাষাশৈলীর কারণে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। ‘ভিটেমাটি’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক। যুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা বিধ্বস্ত অবস্থা নিয়ে রচিত ‘আজ কাল পরশুর গল্প’ গল্পগ্রন্থটি তাঁর বিপ্লবী চেতনার অনন্য দলিল। কোনো কোনো গল্পে তাঁর জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা ও মানসের সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর অনেক উপন্যাস, গল্পই পরে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। জানিয়ে রাখা যেতে পারে, তাঁর জীবদ্দশাতেই ১৯৪৮ সালে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র তৈরি হয়।
বিএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এবং লেখক হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কারণে পরিবারের সঙ্গে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর কারণে দ্রুতই তাঁকে পেশাজীবন বেছে নিতে হয়। ১৯৩৫ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকায় সম্পাদকীয় পদে পাঁচ বছর যুক্ত থাকেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটা ছেড়ে দিয়ে পরে ভাইয়ের সঙ্গে প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। যদিও আড়াই বছরের মাথায় তা গোটাতে হয়। পরে স্বল্পকালীন নানা পেশায় যুক্ত হলেও কোনোটাই আর স্থায়ী হয়নি। লেখক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই কেটেছে তাঁর আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাঁর এই জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে পড়ল। একদিকে অর্থ সংস্থানের জন্য প্রচুর পরিশ্রম, অন্যদিকে বিদ্যমান বাস্তবতায় পার্টির কাচের ক্রমবর্ধমান চাপ; সব মিলিয়ে মানিক এক ত্রিশঙ্কু দশায় পড়লেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দশা থেকে তাঁর মুক্তি মেলেনি। বলা যায়, চিকিৎসার অভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়। দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর। বঙ্গাব্দ ১৭ অগ্রহায়ণ ১৩৬৩।
এমনকি এই মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত মানিকের পার্টি কমরেড ও লেখকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি অর্থাভাবে। শুনতে যেমনই লাগুক এটাই সত্য। মানিকের মৃত্যুর খবর প্রথম পেয়েছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনি মানিকের স্ত্রী কমলার (ডলি) কাছে জানতে চান, তাঁকে কেন ফোন করে আগে জানানো হয়নি? কমলার উত্তর ছিল—‘তাতেও যে পাঁচ আনা লাগাত দাদা।’
এই বঙ্গে যে শুধু লিখে বাঁচা যায় না, তা কি সমাজঘনিষ্ঠ মানিক জানতেন না? জানতেন নিশ্চয়। তারপরও তিনি এই লেখালিখির জীবনই বেছে নিয়েছিলেন। কমিউনিস্ট রাজনীতিতে আস্থাশীল মানিকের কলম–শ্রমিকের জীবন বেছে নেওয়া তো স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু শুধু এটুকুই কি? না, আরও কিছু তাড়না ছিল। কী সেই তাড়না? উত্তর জানতে মানিকেরই শরণ নেওয়া যাক। ‘লেখকের কথা ও প্রগতি সাহিত্যের আত্মকথা’ শীর্ষক তাঁর প্রবন্ধ সংকলনে থাকা ‘কেন লিখি’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি, অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি। আমি যা জেনেছি, এ জগতে কেউ তা জানে না (জল পড়ে পাতা নড়ে জানা নয়)। কিন্তু সকলের সে আমার জানার এক শব্দার্থক ব্যাপক সম ভিত্তি আছে। তাকে আশ্রয় করে আমার খানিকটা উপলব্ধি অন্যকে দান করি।’
এবার ফেরা যাক শুরুর প্রসঙ্গে। এই সময়ে কেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করা? এর উত্তর আছে ‘এই সময়’ শব্দের ভেতর। ‘এই সময়’ ও সাহিত্যকে আমরা কীভাবে দেখি, তার মীমাংসার ওপরই আসলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা ও তাঁর স্মরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, ‘এই সময়’ প্রতিটি মানুষ প্রচণ্ড মানসিক দ্বন্দ্বের ভেতর বাস করেন। বাজার সংস্কৃতির প্রভাব, পুঁজির প্রবল চাপ, রাষ্ট্রের দুঃশাসন, বৈষম্যের ক্ষমতা চর্চা, প্রতিষ্ঠার ইঁদুর দৌড়, পণ্যের ভিড়ে বিপন্ন জীবনে স্বস্তির কোনো সুযোগ নেই। সমাজের উচ্চকোটি থেকে নিম্নকোটির সবার ভেতর এই দ্বন্দ্ব আছে। ভেতরে-ভেতরে সবাই পুড়ে খাক হয়ে গেলেও প্রকাশ্যে শ্রেণিবৈষম্য বাড়ছে। মানুষের নির্বুদ্ধিতা, শঠতা, প্রতারণা, লোভে খোদ মানবতাই আজ বিপন্ন। যাদের সঙ্গে মিশছে, থাকছে, তাকেও মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারে না।
বিষয়টির চমৎকার তাত্ত্বিক ভিত্তি দিয়েছেন ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো তাঁর ‘ধ্রুপদি যুগে উন্মাদনার ইতিহাস’ বইয়ে। বইটির আলোচনায় অমল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘উত্তর আধুনিক চিন্তা ও কয়েকজন ফরাসি ভাবুক’ বইতে বলছেন: ‘আমরা যাকে প্রাতিস্বিকতা বলতে অভ্যস্ত, যাকে আমরা ধরে নিই মানুষের অনড়, ধ্রুব চরিত্র বলে, সেটি মূলত কিছু সামাজিক ও নৈতিক বিধিনিষেধের প্রত্যাদেশে আমাদের ওপর আরোপিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মুহূর্তে, একজন সামাজিক প্রাণী তার নিজের কাছে বিদেশি ও বিচ্ছিন্ন।’
সেই পথ ধরে মিশেল ফুকো রীতিমতো ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের চিন্তার কাঠামো খুব সহজেই বলে দেয় যে, মানুষ সাম্প্রতিক সময়ের এক আবিষ্কার। আর যা সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।’
এই বাস্তবতায় আমাদের তথাকথিত ‘বেস্ট সেলার’ সাহিত্যের লেখকেরা কী দিচ্ছেন? এই বাস্তবতা কি তাঁরা ধরতে পারছেন? মনে হয় না। এর কিছুই তাঁরা ব্যাখ্যা করার সাধ্য রাখেন না। তাঁরা বিদ্যমান বাস্তবতাকে উদ্যাপন করছেন। এই সাহিত্য আরও সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে চিন্তাকে। তা ছাড়া আমাদের সাহিত্য ঘুরপাক খাচ্ছে মধ্যবিত্তীয় সংকটে। যে কারণে গল্পের চরিত্রগুলো আবর্তিত হয় পলাতক ধরনের ফ্যান্টাসিতে। আর এখানেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব। তিনি এই ব্যবস্থা ও বাস্তবতা ব্যাখ্যা করেন। সাহিত্যের কাজ যে নিছক আনন্দ দেওয়া নয়, বরং মনকে সমৃদ্ধ করা, চিন্তাকে জাগ্রত করা—সেই কাজ করে মানিকের সাহিত্য।
শেষটা হোক মানিকেরই ভাষ্যে। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভদ্র জীবনকে ভালোবাসি, ভদ্র আপনজনদেরই আপন হতে চাই, বন্ধুত্ব করি ভদ্র ঘরের ছেলেদের সঙ্গেই, এই জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বপ্নকে নিজস্ব করে রাখি, অথচ এই জীবনের সংকীর্ণতা, কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতা, প্রকাশ্য ও মুখোশ পরা হীনতা, স্বার্থপরতা প্রভৃতি মনটাকে বিষিয়ে তুলেছে। এই জীবন আমার আপন অথচ এই জীবন থেকেই মাঝে মাঝে পালিয়ে ছোটলোক চাষা-ভূষাদের মধ্যে গিয়ে যেন নিশ্বাস ফেলে বাঁচি। আবার ওই ছোটলোকদের অমার্জিত রিক্ত জীবনের রুক্ষ কঠোর নগ্ন বাস্তবতার চাপে অস্থির হয়ে নিজের জীবনে ফিরে এসে হাঁফ ছাড়ি।’
অলাত এহ্সান: গল্পকার ও সমালোচক
অলাত এহ্সান

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ।
বহুল প্রচার, আর ফেসবুকে মুহুর্মুহু মুখ দেখানো তো আছেই। রয়েছে অনলাইন জরিপ, মুহূর্তেই যা বদলে দিতে পারে যেকোনো হিসাব। এমনকি লেখালেখি হয়ে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত সুবিধা আদায়ের মাধ্যম। এর ভেতর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী করে স্মরণ করা যায়?
গত শতাব্দীর ত্রিশ–চল্লিশের দশক বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে যেমন, সাহিত্যের ইতিহাসেও তেমনি ঘটনাবহুল ও অবিস্মরণীয় কাল। বাংলা সাহিত্যেও এ কথা সমান সত্য। এ সময় বাংলা কবিতায় যেমন ‘আধুনিক’ ধারা সূচিত হয়, কথাসাহিত্যে তেমনি আবির্ভূত হয় ঈপ্সিত আধুনিকতা।
কবিতায় অনুবাদনির্ভর আধুনিকতার তুলনায় কথাসাহিত্য অনেক বেশি প্রাচুর্যময় ছিল। আসলে একই সময়ে কোনো একটি ভাষায় এতজন কর্মচঞ্চল ও শক্তিশালী লেখক-কবির উপস্থিতি বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিশ্বস্বীকৃত ও বিপুল কর্মরাজীর মহাপুরুষ সচল থাকার পরও সে সময় রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিকতা বিস্তার লাভ করে।
বিশেষত তাঁর ভাব নির্ভরতার বিপরীতে মানুষের বহির্জীবন ও অন্তর্জীবনের বৈচিত্র্য এবং সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। আর এই ক্ষেত্রেই দক্ষতা দেখিয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাত্র ৪৮ বছরের সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কাল। এর মধ্যে ৩৭টি উপন্যাস, দুই শতাধিক গল্প, কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছেন মানিক। এগুলো বিশ্বের যেকোনো সৃষ্টিবহুল লেখকের সমৃদ্ধ সম্ভারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তা ছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর শতাধিক সম্পূর্ণ-অসম্পূর্ণ কবিতা ও খসড়া পাওয়া যায়। অবশ্য এগুলো তাঁর যুবক বয়সেই (১৬–২১ বছর) রচিত। মৃত্যুর পরও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক অপ্রকাশিত সাহিত্য পাওয়া গেছে। তা ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পত্রিকায় লিখতেন। যদিও লেখাগুলো পরে আর সংগ্রহ করা যায়নি। তাতেই ‘জীবনঘনিষ্ঠ কথাশিল্পী’ অভিধা তাঁর নামের সঙ্গে স্থায়ী হয়ে গেছে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০৮ সালের ১৯ মে, বঙ্গাব্দ ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৩১৫। বাবা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মস্থল ভারতের সাঁওতাল পরগণার দুমকা শহরে তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকার তৎকালীন বিক্রমপুর মহকুমার (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা) মালদপিয়া গ্রামে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তাঁদের পরিবার দেশ ত্যাগ করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি খুঁজে পাওয়া নিয়ে চমৎকার গল্প আছে প্রয়াত কথাশিল্পী কায়েস আহমেদের; নাম—‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে ও মালদপিয়ার রমণী মুখুজ্জে’। গল্পের কোথাও সাম্প্রদায়িকতার কথা নেই। তবু গল্পটা পড়লেই বোঝা যায় তাঁরা কেন দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।
সাহিত্যের সূচনা বিচারে এ তথ্য সত্য যে, কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে প্রথম গল্প ‘অতসীমামী’ লিখেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই বাজিমাত। প্রথম গল্প গ্রন্থভুক্ত ‘মহাসংগম’ গল্পটি সম্পর্কে অধ্যাপক নির্মাল্য আচার্য বলেন, ‘এর তুল্য গল্প বিশ্বসাহিত্যে কদাচিৎ মিলবে।’ এই শুরুর গল্পটি ইঙ্গিত দেয়—সাহিত্যের জগতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চলা হঠাৎ করেই শুরু হয়েছিল। সাধারণ্যে অন্তত এমন ধারণা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। প্রশ্ন হলো—সত্যি কি হঠাৎ করে লেখকের জন্ম হয়? এই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন মানিক। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে তিনি লেখেন—‘আমি বলব, না, এ রকম হঠাৎ কোনো লেখকই গজান না। রাতারাতি লেখক পরিণত হওয়ার ম্যাজিকে আমি বিশ্বাস করি না। অনেক কাল আগে থেকেই প্রস্তুতি চলে। লেখক হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আসলেই কেবল একজনের পক্ষে হঠাৎ একদিন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব।’
‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাসটি ধারাবাহিক প্রকাশের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক মানিকের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩৪ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাসটি সম্পর্কে আরেক অগ্রগণ্য ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য কিছু নন, তিনি ঔপন্যাসিক।’ পরের বছর ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি। ১৯৩৫ সালে ‘জননী’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাস এবং ‘অতসীমামী ও অন্যান্য গল্প’ গল্পগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর গ্রন্থকার হিসেবে যাত্রা শুরু হয়।
মনে রাখা দরকার, গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক সাহিত্যের মতো ভারতবর্ষে রাজনীতিরও উত্থান–পতনের সময়। তখনই প্রকাশ হয় মানিকের প্রথম উপন্যাস। এর অন্তত একটি দিক তাঁর ‘নিজস্ব ধরন’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তা হলো, সমসাময়িক ইতিহাস ও সমাজের সঙ্গে তাঁর সাহিত্যের নিবিড় যোগ। সমাজের তল খুঁজতে গিয়ে, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তাঁর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ছিল প্রায় অবধারিত। এর একটা উত্তর পাওয়া যাবে তাঁর ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে। তিনি লেখেন, ‘মার্কসবাদ যেটুকু বুঝেছি তাতেই আমার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে যে, আমার সৃষ্টিতে কত মিথ্যা, বিভ্রান্তি আর আবর্জনা আমি আমদানি করেছি– জীবন ও সাহিত্য এগিয়ে নেবার উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও।’
আজকের দিনে রাষ্ট্রের বিরাজনীতিকরণ প্রকল্প (বলা যায়, রাজনীতিহীনতার রাজনীতি) কিংবা রাজনীতিবিমুখ নৈনাগরিকের সময়ে দাঁড়িয়ে মানিকের এই উপলব্ধির অনুধাবন খানিকটা কঠিন। তবে অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, সেই সময় রাজনীতির ভেতরই মানুষের মুক্তির দিশা ছিল। তা ছিল মানবমুক্তি-সমাজ প্রগতির রাজনীতি। তাই রাজনৈতিক সংস্রব তাঁর সাহিত্যের মান কমিয়েছে, নিন্দুকের এমন প্রচার সত্য নয়। বরং তাঁর লেখনী এতটা উর্বর ছিল যে, সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি সাবলীল সাড়া দিতে পেরেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁর সাহিত্যে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষাতত্ত্ব ও মার্কসীয় বিশ্ববীক্ষা সফলভাবে যুক্ত হয়েছে। সাহিত্যে উঠে এসেছে সেসব মানুষের জীবন ও সংগ্রাম।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখক হিসেবে, সাহিত্যের প্রতি ‘সৎ’ থেকেই কমিউনিজমে আস্থাশীল হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক চর্চা তাঁর সাহিত্যকে দলীয় প্রচারপত্রে নামিয়ে আনেনি। চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে তিনি ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’-এ যুক্ত হন। ১৯৪৪ সালের শেষের দিকে যুক্ত হন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে। যুগপৎ লেখক ও রাজনীতিক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। তিনি পরবর্তীতে ‘প্রগতি লেখক সংঘ’–এর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
মূলত শ্রমিক ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে দু–খণ্ডের ‘শহরতলি’ উপন্যাসটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী মহলে তাঁর সাড়া পড়ে। দাঙ্গার পটভূমিতে কলকাতার বেহাল নগরজীবন নিয়ে তাঁর প্রখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাস ‘স্বাধীনতার স্বাদ’। বাঙালি সমাজের হতাশা, গ্রামীণ জীবনের অবহেলা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অসারতা নিয়ে লেখেন শ্লেষাত্মক উপন্যাস ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’।
শব্দ নির্বাচন, উপমা ও ভাষাশৈলীর কারণে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। ‘ভিটেমাটি’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক। যুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা বিধ্বস্ত অবস্থা নিয়ে রচিত ‘আজ কাল পরশুর গল্প’ গল্পগ্রন্থটি তাঁর বিপ্লবী চেতনার অনন্য দলিল। কোনো কোনো গল্পে তাঁর জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা ও মানসের সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর অনেক উপন্যাস, গল্পই পরে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। জানিয়ে রাখা যেতে পারে, তাঁর জীবদ্দশাতেই ১৯৪৮ সালে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র তৈরি হয়।
বিএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এবং লেখক হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কারণে পরিবারের সঙ্গে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর কারণে দ্রুতই তাঁকে পেশাজীবন বেছে নিতে হয়। ১৯৩৫ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকায় সম্পাদকীয় পদে পাঁচ বছর যুক্ত থাকেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটা ছেড়ে দিয়ে পরে ভাইয়ের সঙ্গে প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। যদিও আড়াই বছরের মাথায় তা গোটাতে হয়। পরে স্বল্পকালীন নানা পেশায় যুক্ত হলেও কোনোটাই আর স্থায়ী হয়নি। লেখক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই কেটেছে তাঁর আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাঁর এই জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে পড়ল। একদিকে অর্থ সংস্থানের জন্য প্রচুর পরিশ্রম, অন্যদিকে বিদ্যমান বাস্তবতায় পার্টির কাচের ক্রমবর্ধমান চাপ; সব মিলিয়ে মানিক এক ত্রিশঙ্কু দশায় পড়লেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দশা থেকে তাঁর মুক্তি মেলেনি। বলা যায়, চিকিৎসার অভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়। দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর। বঙ্গাব্দ ১৭ অগ্রহায়ণ ১৩৬৩।
এমনকি এই মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত মানিকের পার্টি কমরেড ও লেখকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি অর্থাভাবে। শুনতে যেমনই লাগুক এটাই সত্য। মানিকের মৃত্যুর খবর প্রথম পেয়েছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনি মানিকের স্ত্রী কমলার (ডলি) কাছে জানতে চান, তাঁকে কেন ফোন করে আগে জানানো হয়নি? কমলার উত্তর ছিল—‘তাতেও যে পাঁচ আনা লাগাত দাদা।’
এই বঙ্গে যে শুধু লিখে বাঁচা যায় না, তা কি সমাজঘনিষ্ঠ মানিক জানতেন না? জানতেন নিশ্চয়। তারপরও তিনি এই লেখালিখির জীবনই বেছে নিয়েছিলেন। কমিউনিস্ট রাজনীতিতে আস্থাশীল মানিকের কলম–শ্রমিকের জীবন বেছে নেওয়া তো স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু শুধু এটুকুই কি? না, আরও কিছু তাড়না ছিল। কী সেই তাড়না? উত্তর জানতে মানিকেরই শরণ নেওয়া যাক। ‘লেখকের কথা ও প্রগতি সাহিত্যের আত্মকথা’ শীর্ষক তাঁর প্রবন্ধ সংকলনে থাকা ‘কেন লিখি’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি, অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি। আমি যা জেনেছি, এ জগতে কেউ তা জানে না (জল পড়ে পাতা নড়ে জানা নয়)। কিন্তু সকলের সে আমার জানার এক শব্দার্থক ব্যাপক সম ভিত্তি আছে। তাকে আশ্রয় করে আমার খানিকটা উপলব্ধি অন্যকে দান করি।’
এবার ফেরা যাক শুরুর প্রসঙ্গে। এই সময়ে কেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করা? এর উত্তর আছে ‘এই সময়’ শব্দের ভেতর। ‘এই সময়’ ও সাহিত্যকে আমরা কীভাবে দেখি, তার মীমাংসার ওপরই আসলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা ও তাঁর স্মরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, ‘এই সময়’ প্রতিটি মানুষ প্রচণ্ড মানসিক দ্বন্দ্বের ভেতর বাস করেন। বাজার সংস্কৃতির প্রভাব, পুঁজির প্রবল চাপ, রাষ্ট্রের দুঃশাসন, বৈষম্যের ক্ষমতা চর্চা, প্রতিষ্ঠার ইঁদুর দৌড়, পণ্যের ভিড়ে বিপন্ন জীবনে স্বস্তির কোনো সুযোগ নেই। সমাজের উচ্চকোটি থেকে নিম্নকোটির সবার ভেতর এই দ্বন্দ্ব আছে। ভেতরে-ভেতরে সবাই পুড়ে খাক হয়ে গেলেও প্রকাশ্যে শ্রেণিবৈষম্য বাড়ছে। মানুষের নির্বুদ্ধিতা, শঠতা, প্রতারণা, লোভে খোদ মানবতাই আজ বিপন্ন। যাদের সঙ্গে মিশছে, থাকছে, তাকেও মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারে না।
বিষয়টির চমৎকার তাত্ত্বিক ভিত্তি দিয়েছেন ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো তাঁর ‘ধ্রুপদি যুগে উন্মাদনার ইতিহাস’ বইয়ে। বইটির আলোচনায় অমল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘উত্তর আধুনিক চিন্তা ও কয়েকজন ফরাসি ভাবুক’ বইতে বলছেন: ‘আমরা যাকে প্রাতিস্বিকতা বলতে অভ্যস্ত, যাকে আমরা ধরে নিই মানুষের অনড়, ধ্রুব চরিত্র বলে, সেটি মূলত কিছু সামাজিক ও নৈতিক বিধিনিষেধের প্রত্যাদেশে আমাদের ওপর আরোপিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মুহূর্তে, একজন সামাজিক প্রাণী তার নিজের কাছে বিদেশি ও বিচ্ছিন্ন।’
সেই পথ ধরে মিশেল ফুকো রীতিমতো ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের চিন্তার কাঠামো খুব সহজেই বলে দেয় যে, মানুষ সাম্প্রতিক সময়ের এক আবিষ্কার। আর যা সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।’
এই বাস্তবতায় আমাদের তথাকথিত ‘বেস্ট সেলার’ সাহিত্যের লেখকেরা কী দিচ্ছেন? এই বাস্তবতা কি তাঁরা ধরতে পারছেন? মনে হয় না। এর কিছুই তাঁরা ব্যাখ্যা করার সাধ্য রাখেন না। তাঁরা বিদ্যমান বাস্তবতাকে উদ্যাপন করছেন। এই সাহিত্য আরও সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে চিন্তাকে। তা ছাড়া আমাদের সাহিত্য ঘুরপাক খাচ্ছে মধ্যবিত্তীয় সংকটে। যে কারণে গল্পের চরিত্রগুলো আবর্তিত হয় পলাতক ধরনের ফ্যান্টাসিতে। আর এখানেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব। তিনি এই ব্যবস্থা ও বাস্তবতা ব্যাখ্যা করেন। সাহিত্যের কাজ যে নিছক আনন্দ দেওয়া নয়, বরং মনকে সমৃদ্ধ করা, চিন্তাকে জাগ্রত করা—সেই কাজ করে মানিকের সাহিত্য।
শেষটা হোক মানিকেরই ভাষ্যে। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভদ্র জীবনকে ভালোবাসি, ভদ্র আপনজনদেরই আপন হতে চাই, বন্ধুত্ব করি ভদ্র ঘরের ছেলেদের সঙ্গেই, এই জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বপ্নকে নিজস্ব করে রাখি, অথচ এই জীবনের সংকীর্ণতা, কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতা, প্রকাশ্য ও মুখোশ পরা হীনতা, স্বার্থপরতা প্রভৃতি মনটাকে বিষিয়ে তুলেছে। এই জীবন আমার আপন অথচ এই জীবন থেকেই মাঝে মাঝে পালিয়ে ছোটলোক চাষা-ভূষাদের মধ্যে গিয়ে যেন নিশ্বাস ফেলে বাঁচি। আবার ওই ছোটলোকদের অমার্জিত রিক্ত জীবনের রুক্ষ কঠোর নগ্ন বাস্তবতার চাপে অস্থির হয়ে নিজের জীবনে ফিরে এসে হাঁফ ছাড়ি।’
অলাত এহ্সান: গল্পকার ও সমালোচক

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ।
বহুল প্রচার, আর ফেসবুকে মুহুর্মুহু মুখ দেখানো তো আছেই। রয়েছে অনলাইন জরিপ, মুহূর্তেই যা বদলে দিতে পারে যেকোনো হিসাব। এমনকি লেখালেখি হয়ে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত সুবিধা আদায়ের মাধ্যম। এর ভেতর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী করে স্মরণ করা যায়?
গত শতাব্দীর ত্রিশ–চল্লিশের দশক বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে যেমন, সাহিত্যের ইতিহাসেও তেমনি ঘটনাবহুল ও অবিস্মরণীয় কাল। বাংলা সাহিত্যেও এ কথা সমান সত্য। এ সময় বাংলা কবিতায় যেমন ‘আধুনিক’ ধারা সূচিত হয়, কথাসাহিত্যে তেমনি আবির্ভূত হয় ঈপ্সিত আধুনিকতা।
কবিতায় অনুবাদনির্ভর আধুনিকতার তুলনায় কথাসাহিত্য অনেক বেশি প্রাচুর্যময় ছিল। আসলে একই সময়ে কোনো একটি ভাষায় এতজন কর্মচঞ্চল ও শক্তিশালী লেখক-কবির উপস্থিতি বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিশ্বস্বীকৃত ও বিপুল কর্মরাজীর মহাপুরুষ সচল থাকার পরও সে সময় রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিকতা বিস্তার লাভ করে।
বিশেষত তাঁর ভাব নির্ভরতার বিপরীতে মানুষের বহির্জীবন ও অন্তর্জীবনের বৈচিত্র্য এবং সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। আর এই ক্ষেত্রেই দক্ষতা দেখিয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাত্র ৪৮ বছরের সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কাল। এর মধ্যে ৩৭টি উপন্যাস, দুই শতাধিক গল্প, কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছেন মানিক। এগুলো বিশ্বের যেকোনো সৃষ্টিবহুল লেখকের সমৃদ্ধ সম্ভারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তা ছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর শতাধিক সম্পূর্ণ-অসম্পূর্ণ কবিতা ও খসড়া পাওয়া যায়। অবশ্য এগুলো তাঁর যুবক বয়সেই (১৬–২১ বছর) রচিত। মৃত্যুর পরও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক অপ্রকাশিত সাহিত্য পাওয়া গেছে। তা ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পত্রিকায় লিখতেন। যদিও লেখাগুলো পরে আর সংগ্রহ করা যায়নি। তাতেই ‘জীবনঘনিষ্ঠ কথাশিল্পী’ অভিধা তাঁর নামের সঙ্গে স্থায়ী হয়ে গেছে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০৮ সালের ১৯ মে, বঙ্গাব্দ ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৩১৫। বাবা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মস্থল ভারতের সাঁওতাল পরগণার দুমকা শহরে তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকার তৎকালীন বিক্রমপুর মহকুমার (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা) মালদপিয়া গ্রামে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তাঁদের পরিবার দেশ ত্যাগ করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি খুঁজে পাওয়া নিয়ে চমৎকার গল্প আছে প্রয়াত কথাশিল্পী কায়েস আহমেদের; নাম—‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে ও মালদপিয়ার রমণী মুখুজ্জে’। গল্পের কোথাও সাম্প্রদায়িকতার কথা নেই। তবু গল্পটা পড়লেই বোঝা যায় তাঁরা কেন দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।
সাহিত্যের সূচনা বিচারে এ তথ্য সত্য যে, কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে প্রথম গল্প ‘অতসীমামী’ লিখেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই বাজিমাত। প্রথম গল্প গ্রন্থভুক্ত ‘মহাসংগম’ গল্পটি সম্পর্কে অধ্যাপক নির্মাল্য আচার্য বলেন, ‘এর তুল্য গল্প বিশ্বসাহিত্যে কদাচিৎ মিলবে।’ এই শুরুর গল্পটি ইঙ্গিত দেয়—সাহিত্যের জগতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চলা হঠাৎ করেই শুরু হয়েছিল। সাধারণ্যে অন্তত এমন ধারণা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। প্রশ্ন হলো—সত্যি কি হঠাৎ করে লেখকের জন্ম হয়? এই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন মানিক। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে তিনি লেখেন—‘আমি বলব, না, এ রকম হঠাৎ কোনো লেখকই গজান না। রাতারাতি লেখক পরিণত হওয়ার ম্যাজিকে আমি বিশ্বাস করি না। অনেক কাল আগে থেকেই প্রস্তুতি চলে। লেখক হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আসলেই কেবল একজনের পক্ষে হঠাৎ একদিন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব।’
‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাসটি ধারাবাহিক প্রকাশের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক মানিকের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩৪ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাসটি সম্পর্কে আরেক অগ্রগণ্য ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য কিছু নন, তিনি ঔপন্যাসিক।’ পরের বছর ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি। ১৯৩৫ সালে ‘জননী’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাস এবং ‘অতসীমামী ও অন্যান্য গল্প’ গল্পগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর গ্রন্থকার হিসেবে যাত্রা শুরু হয়।
মনে রাখা দরকার, গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক সাহিত্যের মতো ভারতবর্ষে রাজনীতিরও উত্থান–পতনের সময়। তখনই প্রকাশ হয় মানিকের প্রথম উপন্যাস। এর অন্তত একটি দিক তাঁর ‘নিজস্ব ধরন’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তা হলো, সমসাময়িক ইতিহাস ও সমাজের সঙ্গে তাঁর সাহিত্যের নিবিড় যোগ। সমাজের তল খুঁজতে গিয়ে, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তাঁর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ছিল প্রায় অবধারিত। এর একটা উত্তর পাওয়া যাবে তাঁর ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে। তিনি লেখেন, ‘মার্কসবাদ যেটুকু বুঝেছি তাতেই আমার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে যে, আমার সৃষ্টিতে কত মিথ্যা, বিভ্রান্তি আর আবর্জনা আমি আমদানি করেছি– জীবন ও সাহিত্য এগিয়ে নেবার উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও।’
আজকের দিনে রাষ্ট্রের বিরাজনীতিকরণ প্রকল্প (বলা যায়, রাজনীতিহীনতার রাজনীতি) কিংবা রাজনীতিবিমুখ নৈনাগরিকের সময়ে দাঁড়িয়ে মানিকের এই উপলব্ধির অনুধাবন খানিকটা কঠিন। তবে অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, সেই সময় রাজনীতির ভেতরই মানুষের মুক্তির দিশা ছিল। তা ছিল মানবমুক্তি-সমাজ প্রগতির রাজনীতি। তাই রাজনৈতিক সংস্রব তাঁর সাহিত্যের মান কমিয়েছে, নিন্দুকের এমন প্রচার সত্য নয়। বরং তাঁর লেখনী এতটা উর্বর ছিল যে, সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি সাবলীল সাড়া দিতে পেরেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁর সাহিত্যে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষাতত্ত্ব ও মার্কসীয় বিশ্ববীক্ষা সফলভাবে যুক্ত হয়েছে। সাহিত্যে উঠে এসেছে সেসব মানুষের জীবন ও সংগ্রাম।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখক হিসেবে, সাহিত্যের প্রতি ‘সৎ’ থেকেই কমিউনিজমে আস্থাশীল হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক চর্চা তাঁর সাহিত্যকে দলীয় প্রচারপত্রে নামিয়ে আনেনি। চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে তিনি ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’-এ যুক্ত হন। ১৯৪৪ সালের শেষের দিকে যুক্ত হন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে। যুগপৎ লেখক ও রাজনীতিক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। তিনি পরবর্তীতে ‘প্রগতি লেখক সংঘ’–এর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
মূলত শ্রমিক ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে দু–খণ্ডের ‘শহরতলি’ উপন্যাসটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী মহলে তাঁর সাড়া পড়ে। দাঙ্গার পটভূমিতে কলকাতার বেহাল নগরজীবন নিয়ে তাঁর প্রখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাস ‘স্বাধীনতার স্বাদ’। বাঙালি সমাজের হতাশা, গ্রামীণ জীবনের অবহেলা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অসারতা নিয়ে লেখেন শ্লেষাত্মক উপন্যাস ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’।
শব্দ নির্বাচন, উপমা ও ভাষাশৈলীর কারণে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। ‘ভিটেমাটি’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক। যুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা বিধ্বস্ত অবস্থা নিয়ে রচিত ‘আজ কাল পরশুর গল্প’ গল্পগ্রন্থটি তাঁর বিপ্লবী চেতনার অনন্য দলিল। কোনো কোনো গল্পে তাঁর জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা ও মানসের সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর অনেক উপন্যাস, গল্পই পরে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। জানিয়ে রাখা যেতে পারে, তাঁর জীবদ্দশাতেই ১৯৪৮ সালে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র তৈরি হয়।
বিএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এবং লেখক হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কারণে পরিবারের সঙ্গে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর কারণে দ্রুতই তাঁকে পেশাজীবন বেছে নিতে হয়। ১৯৩৫ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকায় সম্পাদকীয় পদে পাঁচ বছর যুক্ত থাকেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটা ছেড়ে দিয়ে পরে ভাইয়ের সঙ্গে প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। যদিও আড়াই বছরের মাথায় তা গোটাতে হয়। পরে স্বল্পকালীন নানা পেশায় যুক্ত হলেও কোনোটাই আর স্থায়ী হয়নি। লেখক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই কেটেছে তাঁর আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাঁর এই জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে পড়ল। একদিকে অর্থ সংস্থানের জন্য প্রচুর পরিশ্রম, অন্যদিকে বিদ্যমান বাস্তবতায় পার্টির কাচের ক্রমবর্ধমান চাপ; সব মিলিয়ে মানিক এক ত্রিশঙ্কু দশায় পড়লেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দশা থেকে তাঁর মুক্তি মেলেনি। বলা যায়, চিকিৎসার অভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়। দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর। বঙ্গাব্দ ১৭ অগ্রহায়ণ ১৩৬৩।
এমনকি এই মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত মানিকের পার্টি কমরেড ও লেখকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি অর্থাভাবে। শুনতে যেমনই লাগুক এটাই সত্য। মানিকের মৃত্যুর খবর প্রথম পেয়েছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনি মানিকের স্ত্রী কমলার (ডলি) কাছে জানতে চান, তাঁকে কেন ফোন করে আগে জানানো হয়নি? কমলার উত্তর ছিল—‘তাতেও যে পাঁচ আনা লাগাত দাদা।’
এই বঙ্গে যে শুধু লিখে বাঁচা যায় না, তা কি সমাজঘনিষ্ঠ মানিক জানতেন না? জানতেন নিশ্চয়। তারপরও তিনি এই লেখালিখির জীবনই বেছে নিয়েছিলেন। কমিউনিস্ট রাজনীতিতে আস্থাশীল মানিকের কলম–শ্রমিকের জীবন বেছে নেওয়া তো স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু শুধু এটুকুই কি? না, আরও কিছু তাড়না ছিল। কী সেই তাড়না? উত্তর জানতে মানিকেরই শরণ নেওয়া যাক। ‘লেখকের কথা ও প্রগতি সাহিত্যের আত্মকথা’ শীর্ষক তাঁর প্রবন্ধ সংকলনে থাকা ‘কেন লিখি’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি, অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি। আমি যা জেনেছি, এ জগতে কেউ তা জানে না (জল পড়ে পাতা নড়ে জানা নয়)। কিন্তু সকলের সে আমার জানার এক শব্দার্থক ব্যাপক সম ভিত্তি আছে। তাকে আশ্রয় করে আমার খানিকটা উপলব্ধি অন্যকে দান করি।’
এবার ফেরা যাক শুরুর প্রসঙ্গে। এই সময়ে কেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করা? এর উত্তর আছে ‘এই সময়’ শব্দের ভেতর। ‘এই সময়’ ও সাহিত্যকে আমরা কীভাবে দেখি, তার মীমাংসার ওপরই আসলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা ও তাঁর স্মরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, ‘এই সময়’ প্রতিটি মানুষ প্রচণ্ড মানসিক দ্বন্দ্বের ভেতর বাস করেন। বাজার সংস্কৃতির প্রভাব, পুঁজির প্রবল চাপ, রাষ্ট্রের দুঃশাসন, বৈষম্যের ক্ষমতা চর্চা, প্রতিষ্ঠার ইঁদুর দৌড়, পণ্যের ভিড়ে বিপন্ন জীবনে স্বস্তির কোনো সুযোগ নেই। সমাজের উচ্চকোটি থেকে নিম্নকোটির সবার ভেতর এই দ্বন্দ্ব আছে। ভেতরে-ভেতরে সবাই পুড়ে খাক হয়ে গেলেও প্রকাশ্যে শ্রেণিবৈষম্য বাড়ছে। মানুষের নির্বুদ্ধিতা, শঠতা, প্রতারণা, লোভে খোদ মানবতাই আজ বিপন্ন। যাদের সঙ্গে মিশছে, থাকছে, তাকেও মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারে না।
বিষয়টির চমৎকার তাত্ত্বিক ভিত্তি দিয়েছেন ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো তাঁর ‘ধ্রুপদি যুগে উন্মাদনার ইতিহাস’ বইয়ে। বইটির আলোচনায় অমল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘উত্তর আধুনিক চিন্তা ও কয়েকজন ফরাসি ভাবুক’ বইতে বলছেন: ‘আমরা যাকে প্রাতিস্বিকতা বলতে অভ্যস্ত, যাকে আমরা ধরে নিই মানুষের অনড়, ধ্রুব চরিত্র বলে, সেটি মূলত কিছু সামাজিক ও নৈতিক বিধিনিষেধের প্রত্যাদেশে আমাদের ওপর আরোপিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মুহূর্তে, একজন সামাজিক প্রাণী তার নিজের কাছে বিদেশি ও বিচ্ছিন্ন।’
সেই পথ ধরে মিশেল ফুকো রীতিমতো ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের চিন্তার কাঠামো খুব সহজেই বলে দেয় যে, মানুষ সাম্প্রতিক সময়ের এক আবিষ্কার। আর যা সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।’
এই বাস্তবতায় আমাদের তথাকথিত ‘বেস্ট সেলার’ সাহিত্যের লেখকেরা কী দিচ্ছেন? এই বাস্তবতা কি তাঁরা ধরতে পারছেন? মনে হয় না। এর কিছুই তাঁরা ব্যাখ্যা করার সাধ্য রাখেন না। তাঁরা বিদ্যমান বাস্তবতাকে উদ্যাপন করছেন। এই সাহিত্য আরও সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে চিন্তাকে। তা ছাড়া আমাদের সাহিত্য ঘুরপাক খাচ্ছে মধ্যবিত্তীয় সংকটে। যে কারণে গল্পের চরিত্রগুলো আবর্তিত হয় পলাতক ধরনের ফ্যান্টাসিতে। আর এখানেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব। তিনি এই ব্যবস্থা ও বাস্তবতা ব্যাখ্যা করেন। সাহিত্যের কাজ যে নিছক আনন্দ দেওয়া নয়, বরং মনকে সমৃদ্ধ করা, চিন্তাকে জাগ্রত করা—সেই কাজ করে মানিকের সাহিত্য।
শেষটা হোক মানিকেরই ভাষ্যে। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভদ্র জীবনকে ভালোবাসি, ভদ্র আপনজনদেরই আপন হতে চাই, বন্ধুত্ব করি ভদ্র ঘরের ছেলেদের সঙ্গেই, এই জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বপ্নকে নিজস্ব করে রাখি, অথচ এই জীবনের সংকীর্ণতা, কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতা, প্রকাশ্য ও মুখোশ পরা হীনতা, স্বার্থপরতা প্রভৃতি মনটাকে বিষিয়ে তুলেছে। এই জীবন আমার আপন অথচ এই জীবন থেকেই মাঝে মাঝে পালিয়ে ছোটলোক চাষা-ভূষাদের মধ্যে গিয়ে যেন নিশ্বাস ফেলে বাঁচি। আবার ওই ছোটলোকদের অমার্জিত রিক্ত জীবনের রুক্ষ কঠোর নগ্ন বাস্তবতার চাপে অস্থির হয়ে নিজের জীবনে ফিরে এসে হাঁফ ছাড়ি।’
অলাত এহ্সান: গল্পকার ও সমালোচক

অনেকে শখ করে বাড়িতে বিড়াল, কুকুর, পাখি, মাছ বা খরগোশ পোষেন। যদি আপনি শিখতে চান, তাহলে এই প্রাণীগুলোর সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাসের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারেন। কীভাবে শান্ত থাকতে হয়, কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং কীভাবে দিন উপভোগ করতে হয়—পোষা প্রাণীর দিকে গভীর মনোযোগ দিলে এগুলো শেখা যায়। কিন্তু আপনি কি...
৪২ মিনিট আগে
ধ্যান বা মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি আনে, শরীরের স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এক দিনে বা এক সপ্তাহে অর্থাৎ কম সময়ে এটি আয়ত্ত করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে আয়ত্ত করুন এবং দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকুন।...
২ ঘণ্টা আগে
আজ আপনার ভেতরের অ্যাড্রেনালিন ডাবল ডোজ নিয়ে নেমেছে। আজ এত দ্রুত কাজ করবেন যে সহকর্মীরা ভাববে আপনি কফি-মেশিনের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করছেন। কিন্তু সাবধান! সব এনার্জি যেন বেলা ২টার পর শেষ না হয়ে যায়।
৩ ঘণ্টা আগে
বাজারে মিলছে চালতা। প্রতিদিনই ডালে কয়েক টুকরা চালতা দিচ্ছেন অনেকে। এবার বানিয়ে ফেলুন আচার। আপনাদের জন্য চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচারের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
৪ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

অনেকে শখ করে বাড়িতে বিড়াল, কুকুর, পাখি, মাছ বা খরগোশ পোষেন। যদি আপনি শিখতে চান, তাহলে এই প্রাণীগুলোর সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাসের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারেন। কীভাবে শান্ত থাকতে হয়, কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং কীভাবে দিন উপভোগ করতে হয়—পোষা প্রাণীর দিকে গভীর মনোযোগ দিলে এগুলো শেখা যায়। কিন্তু আপনি কি শিখছেন?
সুস্থ শরীর ও মনের পাঠ
বাড়ির পোষা প্রাণীর কাছ থেকে শরীর ও মন সতেজ রাখা শেখাটা খুব সহজ। তাদের আচরণ দেখলেই বুঝবেন, শরীর ও মন ভালো রাখতে বিশেষ কিছু করার দরকার নেই। এর জন্য প্রয়োজন শুধু ধারাবাহিকতা এবং প্রকৃতির নিয়ম অনুসরণ করা।
খেয়াল করবেন, আপনার বাড়ির পোষা প্রাণীটি দিনের বেলা ঝিমিয়ে নেয়। যাকে বলা হয় পাওয়ার ন্যাপ। এরপর তারা ছোটাছুটি করে বেড়ায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে। বিষয়টি আসলে পাওয়ার ন্যাপের শক্তি। ন্যাপ কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং সতর্কতা বৃদ্ধি করে—এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। শহরের রাস্তায় দেখে থাকবেন, অনেকে কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হন। যাঁরা পোষা কুকুরকে নিয়মিত বাইরে হাঁটতে নিয়ে যান, তাঁদের এটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। এই অভ্যাসের কারণে সকালে কিংবা বিকেলের দিকে কোনো এক বেলা হাঁটার স্বাস্থ্য উপকারিতা পেয়ে থাকেন। এই হাঁটা মানসিক চাপ কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে দূরে রাখে। এটি প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং মানসিক চাপ কমানোর অন্যতম সেরা উপায়।
ধরুন, আপনার বাড়ির বিড়ালটি মাছ ভালোবাসে। আপনার মাছের প্রতি আকর্ষণ না থাকলেও বিড়ালের তৃপ্তি করে মাছ খাওয়ার দৃশ্য আপনাকে মাছ খাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে পারে। প্রাণীদের আরও একটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তাদের নির্দিষ্ট রুটিন। এটিও শিক্ষণীয়। কিছু কিছু মানুষ জীবনকে একটা নির্দিষ্ট রুটিনের ভেতরে নিয়ে আসতে অনেক কষ্ট করে। একটি ধারাবাহিক দৈনন্দিন রুটিন ঘুমের মান উন্নত করে। আপনার পোষ্য যেমন ঘুম থেকে উঠেই গা ঝাড়া দিয়ে সতেজ হয়, তেমনি নিয়মিত স্ট্রেচিং শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় এবং শক্তি দেয়। পোষা প্রাণীরা সব সময় নিজেদের পরিষ্কার রাখে। এই পরিচ্ছন্নতা আত্মসম্মান বাড়াতে সহায়ক।
মানসিক শান্তি ও ইতিবাচকতার সূত্র

পোষা প্রাণীরা অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে না। তারা কেবল বর্তমানে বাঁচে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া মানসিক শান্তির পাঠগুলো হলো—
ক্ষমা করুন এবং ভুলে যান: আপনার পোষ্যটি হয়তো আপনার ওপর রেগে গেছে। কিন্তু সেই রাগ স্থায়ী নয়। তারা কোনো হিংসা পুষে রাখে না। রাগ ধরে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রাণীরা এ বিষয়টিই শেখায়।
ইতিবাচক থাকুন: পোষা প্রাণীরা নিজেদের যেকোনো পরিস্থিতিতে সেরাটা খুঁজে নেয়। হতে পারে সেটা একফালি ঘাস বা একঝলক রোদ। তারা নেতিবাচক দিক নিয়ে পড়ে থাকে না। মানুষের ক্ষেত্রেও তাই। নেতিবাচকতা নিয়ে বেশি ভাবলে বিষণ্নতা বাড়ে।
বর্তমান মুহূর্তে বাঁচুন: তারা মাইন্ডফুলনেস বা সচেতন থাকা শিখেছে মানুষের চেয়ে আগে। তারা খেলুক, ঘুমাক—যা-ই করুক না কেন, তাতে পুরোপুরি মনোযোগ দেয়।
সম্পর্ক ও যোগাযোগের পাঠ
ভালোবাসা, আনুগত্য ও মনোযোগ—এগুলো একটি সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি। এসব আমরা প্রাণীদের কাছ থেকে খুব সহজে শিখতে পারি। বলার আগে শুনতে শিখুন। যখন আমাদের মাথায় নতুন ধারণা ঘুরতে থাকে, তখন আমরা প্রায়ই অন্যকে মাঝপথে থামিয়ে দিই। পোষ্যটি কিন্তু আপনার কথা শেষ করার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে। তাদের এই মনোযোগ দিয়ে শোনা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। পোষা প্রাণীরা আপনার মনের ভাষা বুঝে শরীরের ভাষা পরখ করে। কিন্তু মানুষ শারীরিক ভাষা প্রায়ই উপেক্ষা করে। আপনার অঙ্গভঙ্গি বা চোখের ভাষা কী বলছে, সেদিকে খেয়াল রাখা ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নত করে।
নিঃশর্ত ভালোবাসা দেওয়া প্রাণীরাই শেখায়। কুকুর কখনো খুব ঝানু খেলোয়াড় হওয়ার ভান করে না। সব সময় তারা আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পর্কে ‘খেলোয়াড়ি মনোভাব’ ভুল মানুষকে আকর্ষণ করে। আমরা অনেক সময় খুব দ্রুত মানুষকে বিচার করে ফেলি। কিন্তু খেয়াল করবেন, আপনার বিড়ালটি আপনার পোশাক বা মেধা দেখে আপনার কোলে এসে বসবে না। প্রাণীরা ভদ্রতার ভাষা বোঝে, কোনো সামাজিক স্তর নয়। প্রাণীরা বন্ধুত্ব ও দীর্ঘ জীবন সম্পর্কে ভালো ধারণা দেয়। যাদের বন্ধু বেশি, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে। পোষ্যরা আপনাকে সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব শেখায়।
জীবনের উদ্দেশ্য ও মূল্য
জীবনের আসল আনন্দ আসে উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া এবং ছোট ছোট জিনিসে খুশি হওয়ার মধ্য দিয়ে; শুধু পোষা প্রাণীরা নয়, আমাদের চারপাশের যেকোনো প্রাণীই আমাদের বিষয়টি শেখায়।
খেলা শুধু শিশু বা প্রাণীদের জন্য নয়; এটি বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা ও সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন খেলার জন্য সময় বের করুন। একটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বাঁচুন। বিরক্ত হলে প্রাণীরা আক্রমণাত্মক বা উদ্বিগ্ন হতে পারে। মানুষেরও উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য না থাকলে মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। কাজ করার সহজাত তাড়না আমাদের সুস্থ রাখে। একটি পোষ্য মেঝেতে একটি টুকরা খাবার পেয়ে বা পুরোনো বল খুঁজে পেয়ে পুরো দিনের আনন্দে কাটিয়ে দিতে পারে। তাদের মতো আপনিও প্রিয় খাবার উপভোগ করা বা পছন্দের সিনেমা দেখার মতো ছোট ছোট আনন্দে বেঁচে থাকা শিখুন।
সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার

অনেকে শখ করে বাড়িতে বিড়াল, কুকুর, পাখি, মাছ বা খরগোশ পোষেন। যদি আপনি শিখতে চান, তাহলে এই প্রাণীগুলোর সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাসের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারেন। কীভাবে শান্ত থাকতে হয়, কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং কীভাবে দিন উপভোগ করতে হয়—পোষা প্রাণীর দিকে গভীর মনোযোগ দিলে এগুলো শেখা যায়। কিন্তু আপনি কি শিখছেন?
সুস্থ শরীর ও মনের পাঠ
বাড়ির পোষা প্রাণীর কাছ থেকে শরীর ও মন সতেজ রাখা শেখাটা খুব সহজ। তাদের আচরণ দেখলেই বুঝবেন, শরীর ও মন ভালো রাখতে বিশেষ কিছু করার দরকার নেই। এর জন্য প্রয়োজন শুধু ধারাবাহিকতা এবং প্রকৃতির নিয়ম অনুসরণ করা।
খেয়াল করবেন, আপনার বাড়ির পোষা প্রাণীটি দিনের বেলা ঝিমিয়ে নেয়। যাকে বলা হয় পাওয়ার ন্যাপ। এরপর তারা ছোটাছুটি করে বেড়ায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে। বিষয়টি আসলে পাওয়ার ন্যাপের শক্তি। ন্যাপ কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং সতর্কতা বৃদ্ধি করে—এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। শহরের রাস্তায় দেখে থাকবেন, অনেকে কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হন। যাঁরা পোষা কুকুরকে নিয়মিত বাইরে হাঁটতে নিয়ে যান, তাঁদের এটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। এই অভ্যাসের কারণে সকালে কিংবা বিকেলের দিকে কোনো এক বেলা হাঁটার স্বাস্থ্য উপকারিতা পেয়ে থাকেন। এই হাঁটা মানসিক চাপ কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে দূরে রাখে। এটি প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং মানসিক চাপ কমানোর অন্যতম সেরা উপায়।
ধরুন, আপনার বাড়ির বিড়ালটি মাছ ভালোবাসে। আপনার মাছের প্রতি আকর্ষণ না থাকলেও বিড়ালের তৃপ্তি করে মাছ খাওয়ার দৃশ্য আপনাকে মাছ খাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে পারে। প্রাণীদের আরও একটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তাদের নির্দিষ্ট রুটিন। এটিও শিক্ষণীয়। কিছু কিছু মানুষ জীবনকে একটা নির্দিষ্ট রুটিনের ভেতরে নিয়ে আসতে অনেক কষ্ট করে। একটি ধারাবাহিক দৈনন্দিন রুটিন ঘুমের মান উন্নত করে। আপনার পোষ্য যেমন ঘুম থেকে উঠেই গা ঝাড়া দিয়ে সতেজ হয়, তেমনি নিয়মিত স্ট্রেচিং শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় এবং শক্তি দেয়। পোষা প্রাণীরা সব সময় নিজেদের পরিষ্কার রাখে। এই পরিচ্ছন্নতা আত্মসম্মান বাড়াতে সহায়ক।
মানসিক শান্তি ও ইতিবাচকতার সূত্র

পোষা প্রাণীরা অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে না। তারা কেবল বর্তমানে বাঁচে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া মানসিক শান্তির পাঠগুলো হলো—
ক্ষমা করুন এবং ভুলে যান: আপনার পোষ্যটি হয়তো আপনার ওপর রেগে গেছে। কিন্তু সেই রাগ স্থায়ী নয়। তারা কোনো হিংসা পুষে রাখে না। রাগ ধরে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রাণীরা এ বিষয়টিই শেখায়।
ইতিবাচক থাকুন: পোষা প্রাণীরা নিজেদের যেকোনো পরিস্থিতিতে সেরাটা খুঁজে নেয়। হতে পারে সেটা একফালি ঘাস বা একঝলক রোদ। তারা নেতিবাচক দিক নিয়ে পড়ে থাকে না। মানুষের ক্ষেত্রেও তাই। নেতিবাচকতা নিয়ে বেশি ভাবলে বিষণ্নতা বাড়ে।
বর্তমান মুহূর্তে বাঁচুন: তারা মাইন্ডফুলনেস বা সচেতন থাকা শিখেছে মানুষের চেয়ে আগে। তারা খেলুক, ঘুমাক—যা-ই করুক না কেন, তাতে পুরোপুরি মনোযোগ দেয়।
সম্পর্ক ও যোগাযোগের পাঠ
ভালোবাসা, আনুগত্য ও মনোযোগ—এগুলো একটি সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি। এসব আমরা প্রাণীদের কাছ থেকে খুব সহজে শিখতে পারি। বলার আগে শুনতে শিখুন। যখন আমাদের মাথায় নতুন ধারণা ঘুরতে থাকে, তখন আমরা প্রায়ই অন্যকে মাঝপথে থামিয়ে দিই। পোষ্যটি কিন্তু আপনার কথা শেষ করার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে। তাদের এই মনোযোগ দিয়ে শোনা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। পোষা প্রাণীরা আপনার মনের ভাষা বুঝে শরীরের ভাষা পরখ করে। কিন্তু মানুষ শারীরিক ভাষা প্রায়ই উপেক্ষা করে। আপনার অঙ্গভঙ্গি বা চোখের ভাষা কী বলছে, সেদিকে খেয়াল রাখা ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নত করে।
নিঃশর্ত ভালোবাসা দেওয়া প্রাণীরাই শেখায়। কুকুর কখনো খুব ঝানু খেলোয়াড় হওয়ার ভান করে না। সব সময় তারা আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পর্কে ‘খেলোয়াড়ি মনোভাব’ ভুল মানুষকে আকর্ষণ করে। আমরা অনেক সময় খুব দ্রুত মানুষকে বিচার করে ফেলি। কিন্তু খেয়াল করবেন, আপনার বিড়ালটি আপনার পোশাক বা মেধা দেখে আপনার কোলে এসে বসবে না। প্রাণীরা ভদ্রতার ভাষা বোঝে, কোনো সামাজিক স্তর নয়। প্রাণীরা বন্ধুত্ব ও দীর্ঘ জীবন সম্পর্কে ভালো ধারণা দেয়। যাদের বন্ধু বেশি, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে। পোষ্যরা আপনাকে সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব শেখায়।
জীবনের উদ্দেশ্য ও মূল্য
জীবনের আসল আনন্দ আসে উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া এবং ছোট ছোট জিনিসে খুশি হওয়ার মধ্য দিয়ে; শুধু পোষা প্রাণীরা নয়, আমাদের চারপাশের যেকোনো প্রাণীই আমাদের বিষয়টি শেখায়।
খেলা শুধু শিশু বা প্রাণীদের জন্য নয়; এটি বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা ও সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন খেলার জন্য সময় বের করুন। একটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বাঁচুন। বিরক্ত হলে প্রাণীরা আক্রমণাত্মক বা উদ্বিগ্ন হতে পারে। মানুষেরও উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য না থাকলে মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। কাজ করার সহজাত তাড়না আমাদের সুস্থ রাখে। একটি পোষ্য মেঝেতে একটি টুকরা খাবার পেয়ে বা পুরোনো বল খুঁজে পেয়ে পুরো দিনের আনন্দে কাটিয়ে দিতে পারে। তাদের মতো আপনিও প্রিয় খাবার উপভোগ করা বা পছন্দের সিনেমা দেখার মতো ছোট ছোট আনন্দে বেঁচে থাকা শিখুন।
সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ
১৯ মে ২০২১
ধ্যান বা মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি আনে, শরীরের স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এক দিনে বা এক সপ্তাহে অর্থাৎ কম সময়ে এটি আয়ত্ত করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে আয়ত্ত করুন এবং দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকুন।...
২ ঘণ্টা আগে
আজ আপনার ভেতরের অ্যাড্রেনালিন ডাবল ডোজ নিয়ে নেমেছে। আজ এত দ্রুত কাজ করবেন যে সহকর্মীরা ভাববে আপনি কফি-মেশিনের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করছেন। কিন্তু সাবধান! সব এনার্জি যেন বেলা ২টার পর শেষ না হয়ে যায়।
৩ ঘণ্টা আগে
বাজারে মিলছে চালতা। প্রতিদিনই ডালে কয়েক টুকরা চালতা দিচ্ছেন অনেকে। এবার বানিয়ে ফেলুন আচার। আপনাদের জন্য চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচারের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
৪ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

মেডিটেশন বা ধ্যান জীবন স্থিতিশীল করে। কাজে মনোযোগ ফেরাতে এবং আত্মিক সুখ পেতে মেডিটেশন খুব কার্যকরী অনুশীলন। কিন্তু অনেকে কিছুদিন মেডিটেশন করার পর ছেড়ে দেন। বলে বসেন, ‘কোথায়, কাজ হচ্ছে না তো!’ এমন হলে বুঝতে হবে, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। অথবা আপনি নিজেই বেশ চাপ নিয়ে নিচ্ছেন বলে অস্থিরতাও কাটছে না, মানসিক শান্তিও মিলছে না।
এভারগ্রিন ইয়োগার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক বাপ্পা শান্তনু বলেন, ‘মেডিটেশন করার জন্য সবার আগে মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে শিখতে হবে। যিনি এভাবে বসতে পারেন না, তিনি অতটা উপকার পাবেন না মেডিটেশন থেকে। এভাবে বসার পর নড়াচড়া একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। হাতের আঙুল ও পায়ের আঙুল নাড়ানো থেকেও বিরত থাকা চাই। এরপর শ্বাসপ্রশ্বাসে মনোযোগ দিন। এককথায় শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরের পরিবর্তনগুলো অনুভব করুন। শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খুব ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে খুব ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এরপর ১ অনুপাত ২ হিসাবে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। অর্থাৎ যতটা সময় নিয়ে শ্বাস নেবেন, তার দ্বিগুণ সময় নিয়ে ছাড়তে হবে। কিন্তু প্রথম দিনেই এটা করতে যাওয়া ঠিক নয়। ধীরে ধীরে বুঝে ও অনুভব করে এগোতে হবে। এভাবে ৫ দিন সময় লাগিয়ে এ পর্যন্ত আসতে পারলে অনেকটাই ভালো বোধ হবে।’
নতুনেরা যেভাবে মেডিটেশন বা ধ্যান শুরু করতে পারেন
শুরুতে বেশি সময় নেবেন না
মেডিটেশন যাঁরা শুরু করেছেন, তাঁরা প্রথম দিনগুলোয় ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে নিজেকে ধ্যানে বাধ্য করবেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে ধ্যান করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এতে করে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হওয়ার পরিবর্তে কমে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে পারেন। তাতেও মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হলে এক মিনিটের শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন করা দিয়ে শুরু করুন। প্রতিদিন এভাবে চলতে দিন। এক সপ্তাহ পর এটাই নিয়মে আসবে। তখন মনোনিবেশ করা সহজ হবে।
মানসিকভাবে আরোগ্য় লাভের জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত ২ মাস অন্তত ২০ মিনিট মেডিটেশনে নিমগ্ন হতে হবে। এভাবে মেডিটেশন করলে মস্তিষ্কের গঠনের পরিবর্তন হয়। যেটাকে আমরা নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলি। মেডিটেশন বা ধ্যানের এটাই সহজ মাধ্যম, যা নিজে নিজেই অনুশীলন করা সম্ভব। বাপ্পা শান্তনু, সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক, এভারগ্রিন ইয়োগা
তবে প্রথম কয়েকটি সেশনে মানসিক স্থিরতা আশা করা উচিত নয়। ধ্যান শুরু করার সময় বিভিন্নভাবে মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে প্রতিবার যখন আপনি মনকে পুনরায় শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলনে ফিরিয়ে আনবেন, আপনার মনোযোগের বৃত্তটি আরও শক্তিশালী হবে। এটাই অনুশীলন। অনুশীলনকারীদের মতে, মেডিটেশন বা ধ্যান মানে চিন্তামুক্ত থাকা নয়; বরং চিন্তাভাবনা থাকা সত্ত্বেও আপনার সচেতনতাকে নোঙর করতে পারার নামই মেডিটেশন বা ধ্যান।
ধরন বেছে নিন
সব ধরনের ধ্যান বা মেডিটেশন সবার জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে। ইতিবাচক চিন্তা, ভিজুয়ালাইজেশন থেকে শুরু করে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ধ্যান রয়েছে। প্রতিটিই অনুশীলন করে দেখতে হবে, কোনটির সঙ্গে আপনার শরীরের সমন্বয় ঘটছে। কয়েকবার চেষ্টা করার পর যদি দেখা যায়, সেগুলোর কোনো একটির সঙ্গে আপনার বেশি সংযোগ তৈরি হচ্ছে, তাহলে সেটিই আপনার মেডিটেশনের সঠিক মাধ্যম।

পরিবেশ তৈরি
সমুদ্রের ঢেউয়ের আওয়াজ, বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ, ঝরনার আওয়াজ ইত্যাদির বিভিন্ন ভিডিও বা সাউন্ডট্র্যাক পাওয়া যায় ইউটিউবে। সেগুলোর কোনো একটা ছেড়ে তারপর ধ্যান শুরু করলে কিছুটা সহজে মনোনিবেশ করতে পারবেন। এতে বাড়তি উদ্বেগ কমে আসবে এবং অনেকটাই আরামবোধ হবে।
শ্বাসপ্রশ্বাসে মনোযোগ
খুব দ্রুত ধ্যানে নিমগ্ন হওয়ার জন্য গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন অনেকে। চোখ বন্ধ করে চোয়াল শিথিল করুন। ধীরে ধীরে আপনার কাঁধ শিথিল করে নিন। তারপর নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিতে শুরু করুন। শ্বাস নেওয়ার সময় শরীর প্রসারিত হচ্ছে অনুভব করতে থাকুন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন, যাতে শরীর তার কেন্দ্রে ফিরে আসে। তিন থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য এটি পুনরাবৃত্তি করুন।
সূক্ষ্ম বিষয়ে মনোযোগ দিন
মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়া এড়াতে শ্বাসের অনুভূতি, হাতের তালুর ওজন ইত্যাদি শারীরিক সংবেদনগুলোয় মনোনিবেশ করুন। এগুলো আপনাকে বাইরের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধ্যানে নিমগ্ন হতে সহায়তা করবে।
ধ্যানের নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করুন
ধ্যানের জন্য বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকলে ভালো। এতে অনুশীলন আরও বিশেষ হয়ে উঠবে। এ ছাড়া সে জায়গাটি চোখে পড়লে আপনার মস্তিষ্ক সংকেত দেবে, ধ্যান করার সময় হয়েছে। নিয়মিত ধ্যানের জন্য একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ, আরামদায়ক জায়গা বেছে নিন। সেখানে যেন প্রাকৃতিক আলো, সবুজ ও আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা থাকে, সেদিকে নজর দিন। ধ্যান শুরু করার আগে এই পরিবেশ আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে তুলবে। এই জায়গা আপনার মস্তিষ্ককে বিভ্রান্তি কমানোর নির্দেশ দেবে। এখানে একটি ছোট ট্রেতে সুগন্ধি মোমবাতি, ধূপকাঠি, ফুল থাকতে পারে। সেগুলোর সৌন্দর্য ও গন্ধ মস্তিষ্ক শান্ত করতে সাহায্য করবে।
ধ্যান বা মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি আনে, শরীরের স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এক দিনে বা এক সপ্তাহে অর্থাৎ কম সময়ে এটি আয়ত্ত করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে আয়ত্ত করুন এবং দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকুন।

মেডিটেশন বা ধ্যান জীবন স্থিতিশীল করে। কাজে মনোযোগ ফেরাতে এবং আত্মিক সুখ পেতে মেডিটেশন খুব কার্যকরী অনুশীলন। কিন্তু অনেকে কিছুদিন মেডিটেশন করার পর ছেড়ে দেন। বলে বসেন, ‘কোথায়, কাজ হচ্ছে না তো!’ এমন হলে বুঝতে হবে, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। অথবা আপনি নিজেই বেশ চাপ নিয়ে নিচ্ছেন বলে অস্থিরতাও কাটছে না, মানসিক শান্তিও মিলছে না।
এভারগ্রিন ইয়োগার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক বাপ্পা শান্তনু বলেন, ‘মেডিটেশন করার জন্য সবার আগে মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে শিখতে হবে। যিনি এভাবে বসতে পারেন না, তিনি অতটা উপকার পাবেন না মেডিটেশন থেকে। এভাবে বসার পর নড়াচড়া একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। হাতের আঙুল ও পায়ের আঙুল নাড়ানো থেকেও বিরত থাকা চাই। এরপর শ্বাসপ্রশ্বাসে মনোযোগ দিন। এককথায় শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরের পরিবর্তনগুলো অনুভব করুন। শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খুব ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে খুব ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এরপর ১ অনুপাত ২ হিসাবে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। অর্থাৎ যতটা সময় নিয়ে শ্বাস নেবেন, তার দ্বিগুণ সময় নিয়ে ছাড়তে হবে। কিন্তু প্রথম দিনেই এটা করতে যাওয়া ঠিক নয়। ধীরে ধীরে বুঝে ও অনুভব করে এগোতে হবে। এভাবে ৫ দিন সময় লাগিয়ে এ পর্যন্ত আসতে পারলে অনেকটাই ভালো বোধ হবে।’
নতুনেরা যেভাবে মেডিটেশন বা ধ্যান শুরু করতে পারেন
শুরুতে বেশি সময় নেবেন না
মেডিটেশন যাঁরা শুরু করেছেন, তাঁরা প্রথম দিনগুলোয় ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে নিজেকে ধ্যানে বাধ্য করবেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে ধ্যান করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এতে করে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হওয়ার পরিবর্তে কমে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে পারেন। তাতেও মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হলে এক মিনিটের শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন করা দিয়ে শুরু করুন। প্রতিদিন এভাবে চলতে দিন। এক সপ্তাহ পর এটাই নিয়মে আসবে। তখন মনোনিবেশ করা সহজ হবে।
মানসিকভাবে আরোগ্য় লাভের জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত ২ মাস অন্তত ২০ মিনিট মেডিটেশনে নিমগ্ন হতে হবে। এভাবে মেডিটেশন করলে মস্তিষ্কের গঠনের পরিবর্তন হয়। যেটাকে আমরা নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলি। মেডিটেশন বা ধ্যানের এটাই সহজ মাধ্যম, যা নিজে নিজেই অনুশীলন করা সম্ভব। বাপ্পা শান্তনু, সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক, এভারগ্রিন ইয়োগা
তবে প্রথম কয়েকটি সেশনে মানসিক স্থিরতা আশা করা উচিত নয়। ধ্যান শুরু করার সময় বিভিন্নভাবে মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে প্রতিবার যখন আপনি মনকে পুনরায় শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলনে ফিরিয়ে আনবেন, আপনার মনোযোগের বৃত্তটি আরও শক্তিশালী হবে। এটাই অনুশীলন। অনুশীলনকারীদের মতে, মেডিটেশন বা ধ্যান মানে চিন্তামুক্ত থাকা নয়; বরং চিন্তাভাবনা থাকা সত্ত্বেও আপনার সচেতনতাকে নোঙর করতে পারার নামই মেডিটেশন বা ধ্যান।
ধরন বেছে নিন
সব ধরনের ধ্যান বা মেডিটেশন সবার জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে। ইতিবাচক চিন্তা, ভিজুয়ালাইজেশন থেকে শুরু করে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ধ্যান রয়েছে। প্রতিটিই অনুশীলন করে দেখতে হবে, কোনটির সঙ্গে আপনার শরীরের সমন্বয় ঘটছে। কয়েকবার চেষ্টা করার পর যদি দেখা যায়, সেগুলোর কোনো একটির সঙ্গে আপনার বেশি সংযোগ তৈরি হচ্ছে, তাহলে সেটিই আপনার মেডিটেশনের সঠিক মাধ্যম।

পরিবেশ তৈরি
সমুদ্রের ঢেউয়ের আওয়াজ, বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ, ঝরনার আওয়াজ ইত্যাদির বিভিন্ন ভিডিও বা সাউন্ডট্র্যাক পাওয়া যায় ইউটিউবে। সেগুলোর কোনো একটা ছেড়ে তারপর ধ্যান শুরু করলে কিছুটা সহজে মনোনিবেশ করতে পারবেন। এতে বাড়তি উদ্বেগ কমে আসবে এবং অনেকটাই আরামবোধ হবে।
শ্বাসপ্রশ্বাসে মনোযোগ
খুব দ্রুত ধ্যানে নিমগ্ন হওয়ার জন্য গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন অনেকে। চোখ বন্ধ করে চোয়াল শিথিল করুন। ধীরে ধীরে আপনার কাঁধ শিথিল করে নিন। তারপর নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিতে শুরু করুন। শ্বাস নেওয়ার সময় শরীর প্রসারিত হচ্ছে অনুভব করতে থাকুন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন, যাতে শরীর তার কেন্দ্রে ফিরে আসে। তিন থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য এটি পুনরাবৃত্তি করুন।
সূক্ষ্ম বিষয়ে মনোযোগ দিন
মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়া এড়াতে শ্বাসের অনুভূতি, হাতের তালুর ওজন ইত্যাদি শারীরিক সংবেদনগুলোয় মনোনিবেশ করুন। এগুলো আপনাকে বাইরের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধ্যানে নিমগ্ন হতে সহায়তা করবে।
ধ্যানের নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করুন
ধ্যানের জন্য বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকলে ভালো। এতে অনুশীলন আরও বিশেষ হয়ে উঠবে। এ ছাড়া সে জায়গাটি চোখে পড়লে আপনার মস্তিষ্ক সংকেত দেবে, ধ্যান করার সময় হয়েছে। নিয়মিত ধ্যানের জন্য একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ, আরামদায়ক জায়গা বেছে নিন। সেখানে যেন প্রাকৃতিক আলো, সবুজ ও আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা থাকে, সেদিকে নজর দিন। ধ্যান শুরু করার আগে এই পরিবেশ আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে তুলবে। এই জায়গা আপনার মস্তিষ্ককে বিভ্রান্তি কমানোর নির্দেশ দেবে। এখানে একটি ছোট ট্রেতে সুগন্ধি মোমবাতি, ধূপকাঠি, ফুল থাকতে পারে। সেগুলোর সৌন্দর্য ও গন্ধ মস্তিষ্ক শান্ত করতে সাহায্য করবে।
ধ্যান বা মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি আনে, শরীরের স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এক দিনে বা এক সপ্তাহে অর্থাৎ কম সময়ে এটি আয়ত্ত করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে আয়ত্ত করুন এবং দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকুন।

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ
১৯ মে ২০২১
অনেকে শখ করে বাড়িতে বিড়াল, কুকুর, পাখি, মাছ বা খরগোশ পোষেন। যদি আপনি শিখতে চান, তাহলে এই প্রাণীগুলোর সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাসের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারেন। কীভাবে শান্ত থাকতে হয়, কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং কীভাবে দিন উপভোগ করতে হয়—পোষা প্রাণীর দিকে গভীর মনোযোগ দিলে এগুলো শেখা যায়। কিন্তু আপনি কি...
৪২ মিনিট আগে
আজ আপনার ভেতরের অ্যাড্রেনালিন ডাবল ডোজ নিয়ে নেমেছে। আজ এত দ্রুত কাজ করবেন যে সহকর্মীরা ভাববে আপনি কফি-মেশিনের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করছেন। কিন্তু সাবধান! সব এনার্জি যেন বেলা ২টার পর শেষ না হয়ে যায়।
৩ ঘণ্টা আগে
বাজারে মিলছে চালতা। প্রতিদিনই ডালে কয়েক টুকরা চালতা দিচ্ছেন অনেকে। এবার বানিয়ে ফেলুন আচার। আপনাদের জন্য চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচারের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
৪ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আজ আপনার ভেতরের অ্যাড্রেনালিন ডাবল ডোজ নিয়ে নেমেছে। আজ এত দ্রুত কাজ করবেন যে সহকর্মীরা ভাববে আপনি কফি-মেশিনের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করছেন। কিন্তু সাবধান! সব এনার্জি যেন বেলা ২টার পর শেষ না হয়ে যায়। কোনো মিটিংয়ে আপনার আইডিয়াটা ‘চিৎকার’ করে বলবেন না, সাধারণ স্বরে বলুন। আজকে সাতবার হাই তুলবেন।
বৃষ
আপনার আরামপ্রিয় মন আজ কাজের ডেস্ক থেকে সোজা সোফায় টানতে চাইবে। আজ খাবারের ব্যাপারে কোনো আপস করবেন না। দুপুরের খাবারের মেনু ঠিক করতে গিয়ে যে সময় নষ্ট করবেন, সেটা দিয়ে একটা ছোটখাটো উপন্যাস লেখা যেত। নিজের রূপচর্চা, শরীরের সেবাযত্ন আজ চরম পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। স্ন্যাকস হাতে রাখুন, তবে ঘুমিয়ে পড়বেন না। ঘুম কাজের পরে!
মিথুন
আজ মস্তিষ্ক একটি হাইস্পিড ওয়াইফাই রাউটারের মতো কাজ করবে। একাই তিনজনের সঙ্গে চ্যাট করতে পারবেন, একটি ই-মেল ড্রাফট করতে পারবেন এবং একই সঙ্গে গানও গাইতে পারবেন। কিন্তু সতর্ক থাকুন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুল গ্রুপ চ্যাটে চলে যেতে পারে! জরুরি মেসেজ পাঠানোর আগে প্রাপকের নামটা তিনবার দেখে নিন। ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না।
কর্কট
আপনার হৃদয়ের নিরাপত্তা দরকার আজ। মনে হতে পারে ঘর ছেড়ে কোথাও যাবেন না। কাঁথা মুড়ি দিয়ে থাকাই আজ আপনার কাছে জীবনের পরম সত্য, পরম প্রাপ্তি। ঘরের চার দেয়ালকে আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আশ্রয় মনে হবে। ফ্রিজের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস না ফেলে, নিজেই কিছু রান্না করুন। বাড়িতে আপনার প্রিয়জনের জন্য অপ্রত্যাশিত আরামের ব্যবস্থা করলে সুফল পাবেন।
সিংহ
আলো আকর্ষণকারী হিসেবে আজ আপনার খ্যাতি বাড়বে। আজ আপনি যেখানে যাবেন, সেখানেই আপনার প্রবেশে একটি অদৃশ্য স্পটলাইট জ্বলবে। অতিরিক্ত মনোযোগের জন্য হয়তো অফিসের বাথরুমের আয়নায় সেলফি তুলতে পারেন। আপনার উজ্জ্বলতা এমনিতেই যথেষ্ট। ইনডোরে সানগ্লাস পরা এড়িয়ে চলুন। আজ অযথা একটি দামি জিনিসের জন্য বাজেট নষ্ট হতে পারে, শুধু শুধু লোক দেখানোর জন্য টাকা নষ্ট করার কোনো মানে হয় না!
কন্যা
আজ আপনি জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করবেন। ‘টু-ডু’ লিস্টের রং কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে এক ঘণ্টা ব্যয় করবেন, যা আসলে আপনার ‘টু-ডু’ লিস্টে নেই। নিখুঁতভাবে থাকার চাপ আপনার কপালে ভাঁজ ফেলতে পারে। আজ একটি কাজ নিখুঁত না হলেও পৃথিবী থেমে যাবে না। প্লিজ, শ্বাস নিন। পানি পান করতে ভুলে যেতে পারেন। কারণ, আপনি পানির আণবিক গঠন নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।
তুলা
আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় সংগ্রাম আজ আবার শুরু হবে: সিদ্ধান্তহীনতা। দুপুরে কী খাবেন—ভাত না রুটি? আজ এটা আপনার কাছে জীবনের অর্থ খোঁজার মতোই কঠিন মনে হবে। ভারসাম্য খুঁজতে গিয়ে মাঝখানে আটকে যাবেন। লাঞ্চের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটা কয়েন টস করুন। আর ফল যা-ই হোক, চোখ বন্ধ করে মেনে নিন। সহকর্মীদের সঙ্গে আজ ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’-এর মাঝের শব্দটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
বৃশ্চিক
আপনার ডিটেকটিভ মোড আজ চালু থাকবে। জানতে পারবেন কে শেষ বিস্কুটটি খেয়েছে এবং তার পরিণাম কী হবে। গভীর এবং তীব্র মনোযোগ আজ সাফল্য এনে দেবে অথবা অপ্রয়োজনীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ফেলে দেবে। সবার দুর্বলতা খুঁজে না বের করে, নিজের কাজের ওপর ফোকাস করুন। অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতার কারণে আজ ভালো সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।
ধনু
আপনার ভেতরে থাকা ভবঘুরে মন আজ বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। অফিসে বসেও মনে মনে আন্দিজ পর্বতমালার চূড়ায় অথবা সুন্দরবনের গহিনে ঘুরে বেড়াবেন। ছোটখাটো অ্যাডভেঞ্চার আজ আপনার দরকার। যদি বিদেশে যেতে মন চায়, তবে অন্তত ভিন্ন রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাথরুমে যান। এমন কিছু বলবেন না যা পরে প্রত্যাহার করতে হবে! সুতরাং কথাবার্তা ভেবেচিন্তে বলুন। ওভারস্মার্ট হতে যাবেন না।
মকর
কাজ, কাজ আর কাজ—এটাই আপনার জীবনের মন্ত্র। এমনকি একটি শামুককেও তার ধীরগতির জন্য সমালোচনা করতে পারেন। গ্রহরা বলছে, আপনি পাঁচ বছর আগেই বিরতি পাওয়ার যোগ্য হয়ে রয়েছেন। এবার থামুন। একটি ছোট বিরতি নিন। পৃথিবী আপনার অনুপস্থিতিতেও ঘুরতে থাকবে। আজ অতিরিক্ত টাকা সাশ্রয় করতে পেরে গর্বিত হবেন।
কুম্ভ
আপনার মাথা আজ ‘আউট অব দ্য বক্স’ থেকে অনেক দূরে, সম্ভবত অন্য গ্রহের চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত। এমন একটি চমৎকার আইডিয়া নিয়ে আসবেন, যার মধ্যে কবুতর এবং পুলি সিস্টেম জড়িত থাকতে পারে। আইডিয়াটি দুর্দান্ত, কিন্তু সাধারণ মানুষ কি তা বুঝবে? একবার পরীক্ষা করে দেখুন। আজ এমন এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন, যার কথা ছয় মাস ধরে ভুলে গিয়েছিলেন।
মীন
আজ আপনার বেশির ভাগ সময় কাটবে দিবাস্বপ্নে। হয়তো ট্যাক্সের ফাইল করছেন, কিন্তু মন একই সঙ্গে একটি সিম্ফনি রচনা করছে। বাস্তব জগৎ আজ আপনার কাছে কিছুটা ধূসর লাগতে পারে। কল্পনার জগৎ থেকে একটু বের হয়ে আসুন। টাকা গুনতে গুনতে স্বপ্ন দেখা যায় না। আপনার সৃজনশীলতা আজ চূড়ায় থাকবে। একটি কবিতা লিখুন, কিন্তু অফিসে নয়।

মেষ
আজ আপনার ভেতরের অ্যাড্রেনালিন ডাবল ডোজ নিয়ে নেমেছে। আজ এত দ্রুত কাজ করবেন যে সহকর্মীরা ভাববে আপনি কফি-মেশিনের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করছেন। কিন্তু সাবধান! সব এনার্জি যেন বেলা ২টার পর শেষ না হয়ে যায়। কোনো মিটিংয়ে আপনার আইডিয়াটা ‘চিৎকার’ করে বলবেন না, সাধারণ স্বরে বলুন। আজকে সাতবার হাই তুলবেন।
বৃষ
আপনার আরামপ্রিয় মন আজ কাজের ডেস্ক থেকে সোজা সোফায় টানতে চাইবে। আজ খাবারের ব্যাপারে কোনো আপস করবেন না। দুপুরের খাবারের মেনু ঠিক করতে গিয়ে যে সময় নষ্ট করবেন, সেটা দিয়ে একটা ছোটখাটো উপন্যাস লেখা যেত। নিজের রূপচর্চা, শরীরের সেবাযত্ন আজ চরম পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। স্ন্যাকস হাতে রাখুন, তবে ঘুমিয়ে পড়বেন না। ঘুম কাজের পরে!
মিথুন
আজ মস্তিষ্ক একটি হাইস্পিড ওয়াইফাই রাউটারের মতো কাজ করবে। একাই তিনজনের সঙ্গে চ্যাট করতে পারবেন, একটি ই-মেল ড্রাফট করতে পারবেন এবং একই সঙ্গে গানও গাইতে পারবেন। কিন্তু সতর্ক থাকুন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুল গ্রুপ চ্যাটে চলে যেতে পারে! জরুরি মেসেজ পাঠানোর আগে প্রাপকের নামটা তিনবার দেখে নিন। ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না।
কর্কট
আপনার হৃদয়ের নিরাপত্তা দরকার আজ। মনে হতে পারে ঘর ছেড়ে কোথাও যাবেন না। কাঁথা মুড়ি দিয়ে থাকাই আজ আপনার কাছে জীবনের পরম সত্য, পরম প্রাপ্তি। ঘরের চার দেয়ালকে আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আশ্রয় মনে হবে। ফ্রিজের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস না ফেলে, নিজেই কিছু রান্না করুন। বাড়িতে আপনার প্রিয়জনের জন্য অপ্রত্যাশিত আরামের ব্যবস্থা করলে সুফল পাবেন।
সিংহ
আলো আকর্ষণকারী হিসেবে আজ আপনার খ্যাতি বাড়বে। আজ আপনি যেখানে যাবেন, সেখানেই আপনার প্রবেশে একটি অদৃশ্য স্পটলাইট জ্বলবে। অতিরিক্ত মনোযোগের জন্য হয়তো অফিসের বাথরুমের আয়নায় সেলফি তুলতে পারেন। আপনার উজ্জ্বলতা এমনিতেই যথেষ্ট। ইনডোরে সানগ্লাস পরা এড়িয়ে চলুন। আজ অযথা একটি দামি জিনিসের জন্য বাজেট নষ্ট হতে পারে, শুধু শুধু লোক দেখানোর জন্য টাকা নষ্ট করার কোনো মানে হয় না!
কন্যা
আজ আপনি জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করবেন। ‘টু-ডু’ লিস্টের রং কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে এক ঘণ্টা ব্যয় করবেন, যা আসলে আপনার ‘টু-ডু’ লিস্টে নেই। নিখুঁতভাবে থাকার চাপ আপনার কপালে ভাঁজ ফেলতে পারে। আজ একটি কাজ নিখুঁত না হলেও পৃথিবী থেমে যাবে না। প্লিজ, শ্বাস নিন। পানি পান করতে ভুলে যেতে পারেন। কারণ, আপনি পানির আণবিক গঠন নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।
তুলা
আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় সংগ্রাম আজ আবার শুরু হবে: সিদ্ধান্তহীনতা। দুপুরে কী খাবেন—ভাত না রুটি? আজ এটা আপনার কাছে জীবনের অর্থ খোঁজার মতোই কঠিন মনে হবে। ভারসাম্য খুঁজতে গিয়ে মাঝখানে আটকে যাবেন। লাঞ্চের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটা কয়েন টস করুন। আর ফল যা-ই হোক, চোখ বন্ধ করে মেনে নিন। সহকর্মীদের সঙ্গে আজ ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’-এর মাঝের শব্দটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
বৃশ্চিক
আপনার ডিটেকটিভ মোড আজ চালু থাকবে। জানতে পারবেন কে শেষ বিস্কুটটি খেয়েছে এবং তার পরিণাম কী হবে। গভীর এবং তীব্র মনোযোগ আজ সাফল্য এনে দেবে অথবা অপ্রয়োজনীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ফেলে দেবে। সবার দুর্বলতা খুঁজে না বের করে, নিজের কাজের ওপর ফোকাস করুন। অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতার কারণে আজ ভালো সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।
ধনু
আপনার ভেতরে থাকা ভবঘুরে মন আজ বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। অফিসে বসেও মনে মনে আন্দিজ পর্বতমালার চূড়ায় অথবা সুন্দরবনের গহিনে ঘুরে বেড়াবেন। ছোটখাটো অ্যাডভেঞ্চার আজ আপনার দরকার। যদি বিদেশে যেতে মন চায়, তবে অন্তত ভিন্ন রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাথরুমে যান। এমন কিছু বলবেন না যা পরে প্রত্যাহার করতে হবে! সুতরাং কথাবার্তা ভেবেচিন্তে বলুন। ওভারস্মার্ট হতে যাবেন না।
মকর
কাজ, কাজ আর কাজ—এটাই আপনার জীবনের মন্ত্র। এমনকি একটি শামুককেও তার ধীরগতির জন্য সমালোচনা করতে পারেন। গ্রহরা বলছে, আপনি পাঁচ বছর আগেই বিরতি পাওয়ার যোগ্য হয়ে রয়েছেন। এবার থামুন। একটি ছোট বিরতি নিন। পৃথিবী আপনার অনুপস্থিতিতেও ঘুরতে থাকবে। আজ অতিরিক্ত টাকা সাশ্রয় করতে পেরে গর্বিত হবেন।
কুম্ভ
আপনার মাথা আজ ‘আউট অব দ্য বক্স’ থেকে অনেক দূরে, সম্ভবত অন্য গ্রহের চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত। এমন একটি চমৎকার আইডিয়া নিয়ে আসবেন, যার মধ্যে কবুতর এবং পুলি সিস্টেম জড়িত থাকতে পারে। আইডিয়াটি দুর্দান্ত, কিন্তু সাধারণ মানুষ কি তা বুঝবে? একবার পরীক্ষা করে দেখুন। আজ এমন এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন, যার কথা ছয় মাস ধরে ভুলে গিয়েছিলেন।
মীন
আজ আপনার বেশির ভাগ সময় কাটবে দিবাস্বপ্নে। হয়তো ট্যাক্সের ফাইল করছেন, কিন্তু মন একই সঙ্গে একটি সিম্ফনি রচনা করছে। বাস্তব জগৎ আজ আপনার কাছে কিছুটা ধূসর লাগতে পারে। কল্পনার জগৎ থেকে একটু বের হয়ে আসুন। টাকা গুনতে গুনতে স্বপ্ন দেখা যায় না। আপনার সৃজনশীলতা আজ চূড়ায় থাকবে। একটি কবিতা লিখুন, কিন্তু অফিসে নয়।

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ
১৯ মে ২০২১
অনেকে শখ করে বাড়িতে বিড়াল, কুকুর, পাখি, মাছ বা খরগোশ পোষেন। যদি আপনি শিখতে চান, তাহলে এই প্রাণীগুলোর সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাসের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারেন। কীভাবে শান্ত থাকতে হয়, কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং কীভাবে দিন উপভোগ করতে হয়—পোষা প্রাণীর দিকে গভীর মনোযোগ দিলে এগুলো শেখা যায়। কিন্তু আপনি কি...
৪২ মিনিট আগে
ধ্যান বা মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি আনে, শরীরের স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এক দিনে বা এক সপ্তাহে অর্থাৎ কম সময়ে এটি আয়ত্ত করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে আয়ত্ত করুন এবং দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকুন।...
২ ঘণ্টা আগে
বাজারে মিলছে চালতা। প্রতিদিনই ডালে কয়েক টুকরা চালতা দিচ্ছেন অনেকে। এবার বানিয়ে ফেলুন আচার। আপনাদের জন্য চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচারের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
৪ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

বাজারে মিলছে চালতা। প্রতিদিনই ডালে কয়েক টুকরা চালতা দিচ্ছেন অনেকে। এবার বানিয়ে ফেলুন আচার। আপনাদের জন্য চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচারের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
চালতা চারটি, চিনি এক কাপ, শুকনা মরিচ টালা গুঁড়া এক টেবিল চামচ, পাঁচফোড়ন ২ টেবিল চামচ, বিট লবণ এক চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, পানি চার কাপ, হলুদ সামান্য।
প্রণালি
চালতার খোসা ফেলে টুকরা করে কেটে নিয়ে ধুয়ে ৭-৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার হাঁড়িতে পানি আর চালতা দিয়ে সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ হলে চিনি, বিট লবণ, শুকনা মরিচের গুঁড়া, সামান্য হলুদ দিয়ে রান্না করুন। পরে চামচ দিয়ে থেঁতো করে নিন। ঝোল ঘন হয়ে এলে ঝাল মসলা দেখে নামিয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা করে কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচার।

বাজারে মিলছে চালতা। প্রতিদিনই ডালে কয়েক টুকরা চালতা দিচ্ছেন অনেকে। এবার বানিয়ে ফেলুন আচার। আপনাদের জন্য চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচারের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
চালতা চারটি, চিনি এক কাপ, শুকনা মরিচ টালা গুঁড়া এক টেবিল চামচ, পাঁচফোড়ন ২ টেবিল চামচ, বিট লবণ এক চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, পানি চার কাপ, হলুদ সামান্য।
প্রণালি
চালতার খোসা ফেলে টুকরা করে কেটে নিয়ে ধুয়ে ৭-৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার হাঁড়িতে পানি আর চালতা দিয়ে সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ হলে চিনি, বিট লবণ, শুকনা মরিচের গুঁড়া, সামান্য হলুদ দিয়ে রান্না করুন। পরে চামচ দিয়ে থেঁতো করে নিন। ঝোল ঘন হয়ে এলে ঝাল মসলা দেখে নামিয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা করে কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচার।

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ
১৯ মে ২০২১
অনেকে শখ করে বাড়িতে বিড়াল, কুকুর, পাখি, মাছ বা খরগোশ পোষেন। যদি আপনি শিখতে চান, তাহলে এই প্রাণীগুলোর সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাসের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারেন। কীভাবে শান্ত থাকতে হয়, কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং কীভাবে দিন উপভোগ করতে হয়—পোষা প্রাণীর দিকে গভীর মনোযোগ দিলে এগুলো শেখা যায়। কিন্তু আপনি কি...
৪২ মিনিট আগে
ধ্যান বা মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি আনে, শরীরের স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এক দিনে বা এক সপ্তাহে অর্থাৎ কম সময়ে এটি আয়ত্ত করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে আয়ত্ত করুন এবং দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকুন।...
২ ঘণ্টা আগে
আজ আপনার ভেতরের অ্যাড্রেনালিন ডাবল ডোজ নিয়ে নেমেছে। আজ এত দ্রুত কাজ করবেন যে সহকর্মীরা ভাববে আপনি কফি-মেশিনের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করছেন। কিন্তু সাবধান! সব এনার্জি যেন বেলা ২টার পর শেষ না হয়ে যায়।
৩ ঘণ্টা আগে