Ajker Patrika

প্রথম বিসিএসেই পছন্দের পুলিশ ক্যাডার

আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৮: ০০
প্রথম বিসিএসেই পছন্দের পুলিশ ক্যাডার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান। তিনি ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার চাকরি পাওয়ার গল্প লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

হামিদপুর নওদাপাড়া পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। স্বপ্ন ছিল কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন কিন্তু প্রয়োজনীয় জিপিএ না থাকায় তা পূরণ হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ থেকে তিনি ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩.৪৫ সিজিপিএ নিয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন। ৪১তম বিসিএসে অ্যাপেয়ার্ড ক্যান্ডিডেট হিসেবে অংশগ্রহণ করে প্রথম বিসিএসে প্রথম পছন্দ পুলিশ ক্যাডারে মেধাক্রম ৪২তম হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। 

বিসিএসের স্বপ্ন যেভাবে
হলে থাকাকালীন দেখতেন বড় ভাইয়েরা চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে ৩৭তম/৩৮তম এসআই নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তাঁদের এই সাফল্য দেখে পুলিশ ও সরকারি চাকরির প্রতি ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে। তখন চিন্তা করলেন চাকরি যখন করবই, সরকারি চাকরিই করব। 

প্রস্তুতির শুরু 
মেহেদী একমাত্র লক্ষ্য স্থির করেন বিসিএস। আর তাতে আবেদন করার জন্য মাস্টার্সের দরকার নাই। তাই চিন্তা করলেন মাস্টার্স ৩০ বছর বয়সের পরেও করতে পারব, কিন্তু ৩০-এর পরে বিসিএস দিতে পারব না। তাই মাস্টার্সের চিন্তা বাদ দিলেন। অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করে বিসিএস সম্পর্কে জানলেন এবং যেটা বুঝতে পারলেন, বিসিএস পরীক্ষায় ক্যাডার হতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো লিখিত পরীক্ষা। তাই তিনি লিখিত পরীক্ষার এক সেট বই কেনেন এবং বিগত সালের প্রশ্ন, সিলেবাস ও উত্তরের উৎস বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন। মূলত প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির আগেই তিনি লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

বিসিএস প্রস্তুতিতে অনলাইন
৪১তম বিসিএসে তিনি কোনো কোচিংই করেন নাই, অনলাইনই ছিল তাঁর কোচিং। তবে হ্যাঁ, কোচিং না করলেও প্রায় সব কোচিং সেন্টারের পেজ বা গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত থেকে তাদের ফ্রি অনলাইন ক্লাসগুলো করতেন। করোনা মহামারির সময় চারদিকে সবকিছু যখন লকডাউনে আটকে আছে, তখন অনলাইনই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। ফেসবুকে বন্ধু, ফানি বা মিমস গ্রুপ ও পেজগুলোকে আনফলো করে দিলেন, যাতে টাইমলাইনে না আসে আর বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার সহায়ক বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজগুলো অনুসরণ করলেন।

তাই ফেসবুকে ঢুকলে চাকরিসংক্রান্ত বিষয়গুলো বাদে অন্য কিছু সামনে আসত না। ফেসবুক, ইউটিউব থেকে প্রচুর নোট সংগ্রহ করতেন, ভিডিও ক্লাসগুলো দেখতেন আর আলাদা আলাদা ফোল্ডার করে সংরক্ষণ করতেন। আগের বিসিএসে সফল হওয়া প্রথম দিকের ক্যান্ডিডেটদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার বা ছোট ছোট উপদেশ তিনি ফেসবুক, ইউটিউব ও পত্রিকা থেকে প্রতিনিয়ত দেখতেন। বিশেষ করে তাঁরা কী লিখেছেন, তার চেয়ে কীভাবে লিখেছেন, সেটা শেখার চেষ্টা করতেন। মেহেদী ভাইভা প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন ধরনের গ্রুপ, ‘ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি’ বইটি এবং পত্রিকা ও ভিডিও থেকে প্রায় ২ হাজার রিয়াল ভাইভা সংগ্রহ করেছিলেন, যা ভাইভায় তার ভাইভা পরিকল্পনা সাজাতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছিল।

প্রস্তুতিতে পত্রিকা
বিশেষ করে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে পত্রিকার ভূমিকা কখনোই অস্বীকার করার উপায় নাই। বাংলা ও ইংরেজি রচনার ১০০ নম্বর, আন্তর্জাতিকের ১০০ নম্বর ও বাংলাদেশ বিষয়াবলির ২০০ নম্বর সাধারণত সমসাময়িক ঘটনা নিয়েই হয়ে থাকে। এই দিক বিবেচনায় নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নের আভাস দেয়। তিনি যেহেতু ফেসবুকে বাংলা পত্রিকাকে ইংরেজিতে এবং ইংরেজি পত্রিকাকে বাংলায় ট্রান্সলেট বা অনুবাদ করতেন, তাই বিষয়টা লিখিত পরীক্ষায় তাঁর খুব কাজে লেগেছে। 

পারিবারিক সাপোর্ট
বিসিএস নামক এই মহাযুদ্ধে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট ছিল তাঁর পরিবার। বিশেষ করে তাঁর দুই ভাই। তাঁদের একটাই চাওয়া ছিল—বিসিএস ক্যাডার হিসেবে দেখা। তাঁর বিসিএস যাত্রায় তাঁরা কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা আসতে দেননি।

অনুজদের জন্য পরামর্শ 
মেহেদী বলেন, বিসিএস ক্যাডার হতে চাইলে লক্ষ্যটাকে খুব ভালোভাবে শক্ত করে ধরতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন বিসিএসের প্রস্তুতি তেমন না নিলেও ইংরেজি আর গণিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বেশির ভাগ ক্যান্ডিডেটের সমস্যাই হচ্ছে এ দুটি। তাই এ দুই বিষয়ে দক্ষতা তাদের হাজার হাজার ক্যান্ডিডেট থেকে এগিয়ে রাখবে। এ ক্ষেত্রে টিউশনি খুব ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। এরপর অনার্স শেষ হলে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়াই উত্তম বলে আমি মনে করি। 

মানসিক শক্তি ও সৃষ্টিকর্তার 
সন্তুষ্টি আমরা যত বড়ই মেধাবী হই না কেন, সৃষ্টিকর্তা না চাইলে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। তাই প্রতিনিয়তই সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতে হবে। 
আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন, নিজ নিজ সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে। এটা মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে, মনকে সুস্থির রাখতে খুব কাজ করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত