Ajker Patrika

ভারতে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে যে মসজিদ

ইজাজুল হক
আপডেট : ২৫ মে ২০২৪, ১৫: ৪৬
ভারতে জ্ঞানের আলো  ছড়াচ্ছে যে মসজিদ

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ভারতের কেরালায় একটি মসজিদকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক এক শিক্ষানগরী। ১২৫ একরের এই পরিকল্পিত শহরে রয়েছে ইসলাম ও আধুনিক শিক্ষার ডজনখানেক বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান। রয়েছে আধুনিক নগরব্যবস্থার সব অত্যাবশ্যক উপাদানও। শহরের মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জামিউল ফুতুহ—দ্য ইন্ডিয়ান গ্র্যান্ড মসজিদ। নগরীর সব প্রাণচঞ্চলতা যেন এই মসজিদকে ঘিরেই আবর্তিত। লিখেছেন ইজাজুল হক

দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের প্রভাবশালী আলেম শায়খ আবু বকর আহমদ ইসলামের সেবায় বহুমাত্রিক অবদান রেখে চলেছেন। স্থানীয়রা তাঁকে আবু বকর মুসালিয়ার হিসেবেই বেশি চেনে। শাফেয়ি মাজহাবের অনুসারী এই আলেমকে তাঁর অনুসারীরা ভারতের গ্র্যান্ড মুফতি ঘোষণা করেন। বেরলভি চিন্তাধারার এই ইসলামি চিন্তাবিদের কিছু মতামত নিয়ে সমালোচনা থাকলেও তাঁর একটি উদ্যোগ বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। তা হলো, কেরালা রাজ্যের কালিকটে একটি অত্যাধুনিক শিক্ষানগরী গড়ে তুলেছেন তিনি। এর নাম মারকাজ নলেজ সিটি। নগরীর কেন্দ্রে স্থাপন করেছেন একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। 

মারকাজ নলেজ সিটি
শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও আবাসন খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম ১৮টি স্বতন্ত্র অবকাঠামো নিয়ে মারকাজ নলেজ সিটি গড়ে তোলা হয়। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ সামনে রেখে আগামীর নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণের অংশ হিসেবে এই শহরের যাত্রা। ইসলামের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে এই শহরের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। ২০২৩ সালকে শহরটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উদ্বোধনের বছর ঘোষণা করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন কেরালার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। পুরো শহরটি মারকাজ সোসাইটি নামের একটি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শায়খ আবু বকর আহমদ। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন শায়খ আবদুল হাকিম আজহারি। তাঁদের তত্ত্বাবধানে শহরটি উদার ইসলামি ভাবধারায় পরিচালিত হচ্ছে।

দ্য ইন্ডিয়ান গ্র্যান্ড মসজিদ
মারকাজ নলেজ সিটির অবকাঠামোগুলো উঁচু-নিচু পাহাড়ের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। তবে শহরের মধ্যভাগে উঁচু স্থানে নির্মিত নান্দনিক স্থাপত্যের জামিউল ফুতুহ বা দ্য ইন্ডিয়ান গ্র্যান্ড মসজিদ সবার নজর কাড়ে। একে সাম্প্রতিককালে নির্মিত ভারতের সবচেয়ে বড় মসজিদ বলে মনে করা হচ্ছে। পারসিক ও অটোমান স্থাপত্যের মিশেলে মসজিদটির নকশা করা হয়। ২ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুটের বৃত্তাকার বেসমেন্টের ওপর নির্মিত সাততলা উচ্চতার এই মসজিদের প্রধান বৈশিষ্ট হলো, এর চারপাশেই সমান সম্মুখভাগ রয়েছে। অর্থাৎ, চারপাশেই দরজা এবং সমান জায়গা রয়েছে। বাইরের দিকে চারপাশের নকশাও একই। চার কোনায় চারটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। এক পাশে ৩টি করে মোট ১২টি ছোট গম্বুজ এবং ঠিক মাঝখানে ১টি বড় গম্বুজ রয়েছে।

মসজিদের ভেতরে ২৫ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। বাইরে আরও ২৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ভেতরের অংশে দামি কাঠ দিয়ে চমৎকার সব নকশা করা হয়েছে। প্রাচীন আরবি লিপিকলা ব্যবহার করে মসজিদের স্তম্ভগুলো কোরআনের আয়াতে সাজানো হয়েছে। ক্যালিগ্রাফি তৈরি করেছেন তুরস্ক ও ইরানের বিখ্যাত শিল্পীরা। মসজিদের বেসমেন্টের নিচে রয়েছে ৪ হাজার গাড়ি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পার্কিং জোন। 

জামিউল-ফুতুহ-৪শহরের কেন্দ্রবিন্দু জামিউল ফুতুহ
জামিউল ফুতুহই যেন মারকাজ নলেজ সিটির সব কর্মতৎপরতার মূল কেন্দ্র। জামিয়া মারকাজুস সাকাফাহ আস-সুন্নিয়া আল-ইসলামিয়া এর প্রধানতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি ইসলামি জ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিল্লিয়াসহ তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও ইয়েমেনের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা চুক্তি রয়েছে।

এ ছাড়া জামিউল ফুতুহ মসজিদের চারপাশে গড়ে তোলা হয়েছে আরও ১০টি বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে—মারকাজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, মারকাজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মারকাজ ল কলেজ, আলিফ গ্লোবাল স্কুল (কেমব্রিজ সিলেবাস), আভান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, হিলসিনাই সেন্টার অব এক্সিলেন্স, হিলসিনাই ফিনিশিং স্কুল, ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন অ্যাডভান্সড স্টাডিজ ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী জ্ঞান আহরণ করছে। এতে আরও রয়েছে—নারীদের জন্য একাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, দৃষ্টিনন্দন বাণিজ্যিক ভবন, হাসপাতাল, চার তারকা হোটেল ও পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত