Ajker Patrika

হজের সফর হোক সেলফিমুক্ত

আমজাদ ইউনুস
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মহান আল্লাহর ঘরে গিয়ে নিজের সব গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার এক অপূর্ব সুযোগ। হজ মানেই কান্না, তওবা এবং লাব্বাইকের ধ্বনি আর মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের তীব্র বাসনা। হজ মূলত কায়িক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত একটি ইবাদত। এই ইবাদতের নানা ফজিলত নবীজি (সা.)-এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।’ (সহিহ্ বুখারি: ১৫২১)

হজসহ প্রতিটি ইবাদত শুধু মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত হওয়া আবশ্যক। লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত করলে সেই ইবাদত আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয় না। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে লোকদেখানো ইবাদতের নিন্দা জানানো হয়েছে। এমনকি এক হাদিসে ‘রিয়া’ বা লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদতকে ‘ছোট শিরক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর যারা নিজ ধন-সম্পদ লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং ইমান আনে না আল্লাহর প্রতি এবং না শেষ দিনের প্রতি। আর শয়তান যার সঙ্গী হয়, সঙ্গী হিসেবে কত-না নিকৃষ্ট সে!’ (সুরা নিসা: ৩৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লোকজনের দেখানোর উদ্দেশ্যে কাজ করে, আল্লাহ তাআলাও তাকে লোকজনের সামনে হেয় করবেন।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৯৮৬)

আজকের দিনে হজ-ওমরাহর পবিত্র পরিবেশে সেলফি, ভিডিও ও লাইভ সম্প্রচারের নামে অহেতুক ছবি প্রদর্শন ও লোকদেখানো অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। পবিত্র মক্কা-মদিনার প্রাঙ্গণ, কাবার সামনে সেলফি, ভিডিও, ফেসবুক লাইভ—এসব যেন হজের অন্যতম অংশ হয়ে উঠেছে! এই পরিবেশে ভিডিও ও ছবি তোলার উদ্দেশ্য যদি হয় অন্যকে দেখানো, বাহবা পাওয়া, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে ইখলাস নষ্ট করে ফেলে। পাশাপাশি ইবাদতের গভীরতা, খুশু-খুজু এবং আল্লাহর প্রতি একাগ্রতা ব্যাহত হয়।

অথচ হজের উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের অন্তর ও দেহ উভয়কে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন রাখা। হজের প্রতিটি কর্ম—তাওয়াফ, সায়ি, কোরবানি, আরাফাতে অবস্থান; এসবই এমন গুরুত্বপূর্ণ ও দোয়া কবুলের মুহূর্ত, যেখানে বান্দা আপন রবের দিকে ফিরে যাবে, তাঁর কাছে নিজের গুনাহ স্বীকার করবে। কান্নায় ভেঙে পড়বে। কিন্তু যখন একজন হাজি কাবাঘর ঘিরে তাওয়াফের সময় মোবাইল উঁচিয়ে সেলফি তোলেন, তখন তিনি আর আল্লাহর দিকে নন, বরং নিজেকে দেখানোর দিকে মনোনিবেশ করেন। চোখের দৃষ্টি থাকে মোবাইল স্ক্রিনে এবং অন্তর ব্যস্ত থাকে ছবির অ্যাঙ্গেল ঠিক করার কাজে। এভাবে হাজি হজের মূল উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যান। হজ হয়ে পড়ে বাইরে প্রদর্শনের খোলস।

তাই আমাদের হজ-ওমরাহ সেলফিমুক্ত আত্মশুদ্ধির সফর হয়ে উঠুক। রিয়ামুক্ত হজেই আছে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং অফুরন্ত ফজিলত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত