Ajker Patrika

হজের আহকাম ও আরকান সম্পর্কে জানুন

আদিয়াত উল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহর সন্তুষ্টি, প্রেম ও ভালোবাসা অর্জনের এক অনন্য প্রেমময় ও তুলনাহীন ইবাদত হজ। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মোমিন বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি, ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভের আশায় হজ পালন করতে মক্কা মোকাররমায় ছুটে যান। বিশ্ব মুসলিমের এক অনন্য মহা মিলনমেলা এ হজ। সবার কণ্ঠে একই সুর, একই তালবিয়া। একই লেবাস সবার পরনে। সবার অবস্থা যেন একরকম হয়ে যায়। সে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সবার কণ্ঠে এক লয়ে এক তালবিয়া—‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’। অর্থ: ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির। আমি হাজির, আপনার কোনো অংশীদার নেই, আমি হাজির। নিশ্চয় সকল প্রশংসা, নিয়ামত ও রাজত্ব আপনারই। আপনার কোনো অংশীদার নেই।’ আজকের লেখায় আলোচনা করব হজের প্রকারভেদ, হজের প্রয়োজনীয় মাসআলা ও আহকাম বিষয়ে।

হজ কাকে বলে—

কোরআন-হাদিসের বর্ণনা এবং ইসলামবিষয়ক গবেষকদের মত অনুসারে—পবিত্র মক্কায় জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানসমূহে নির্দিষ্ট কিছু ইবাদতের সমষ্টিকে হজ বলে।

হজ সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআলার একটি অলঙ্ঘনীয় বিধান। আল্লাহ তাআলা এটি জীবনে একবার আদায় করা ফরজ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর মানুষের উচিত আল্লাহর জন্য ঘরের (বায়তুল্লাহ শরিফ) হজ করা, যারা সেখানে যেতে সক্ষম। (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

হজ তিন প্রকার—

এক. হজে তামাত্তু অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন নিয়তে এবং ইহরামে হজ ও ওমরাহ পালন করা।

দুই. হজে কিরান অর্থাৎ একই নিয়ত ও ইহরামে হজ এবং ওমরাহ পালন করা।

তিন. হজে ইফরাদ অর্থাৎ শুধু হজ পালন করা।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)–এর মতে কিরান হজ সর্বোত্তম। কেননা এতে দীর্ঘদিন ইহরাম বেঁধে থাকতে হয়। এ ছাড়া নবী করিম (সা.)-এর বিদায় হজ ছিল কিরান হজ। আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-কে একত্রে হজ ও ওমরাহর তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি। তালবিয়ায় তিনি বলছিলেন—লাব্বাইকা ওমরাতান ওয়া হাজ্জান।’ (সহিহ্ মুসলিম)

তবে অন্যান্য ফকিহদের মতে, যদি কিরান হজ পালনে দীর্ঘদিন ইহরামের নিষেধাজ্ঞাগুলো পালন করা সম্ভব না হয় তবে তামাত্তু হজ করাই উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে শামি)

হজের ফরজ তিনটি—

এক. ইহরাম বাঁধা। (সুনানুল কুবরা: ৯১৯০)।

দুই. উকুফে আরাফা অর্থাৎ জিলহজ মাসের ৯ তারিখ সূর্য হেলার পর থেকে ঈদুল আজহার দিন সুবহে সাদিক পর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। এ সময়ের মধ্যে অতি অল্প সময়ও আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। (জামে তিরমিজি: ৮১৪)

তিন. তাওয়াফে জিয়ারত অর্থাৎ আরাফায় অবস্থানের পর কাবায় সাতবার তাওয়াফ (চক্কর) করা।

হজের ওয়াজিব প্রধানত ছয়টি—

এক. জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সামান্য সময়ের জন্য হলেও মুজদালিফায় অবস্থান করা। (সুরা বাকারা: ১৯৮, জামে তিরমিজি: ৮১৫)

দুই. সাফা-মারওয়ায় সাতবার সায়ি করা বা চক্কর লাগানো। এটা সাফা থেকে শুরু হয়ে মারওয়ায় গিয়ে শেষ হবে। (সহিহ্ মুসলিম: ২১৩৭)

তিন. যথাসময়ে রমি (শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ) করা। (সহিহ্ মুসলিম: ২২৮৬)

চার. তামাত্তু ও কিরান হজকারীরা দমে শোকর বা হজের কোরবানি করা।

পাঁচ. হারামে কোরবানির দিনসমূহে মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা। (সহিহ্ বুখারি)

ছয়. মক্কাবাসী ছাড়া অন্যরা তাওয়াফে সদর বা তাওয়াফে বিদা করা। (সহিহ্ মুসলিম)

হজের সুন্নাতগুলো হলো—

এক. ইহরাম বাঁধার সময় গোসল বা অজু করা ও শরীরে সুগন্ধি মাখা। (জামে তিরমিজি: ৭৬০)

দুই. নতুন বা পরিষ্কার চাদর পরা। সাদা হওয়া উত্তম। (জামে তিরমিজি: ২৭২৩)

তিন. ইহরাম বাঁধার আগে দু’রাকাত নামাজ আদায় করা। (সহিহ্ মুসলিম: ২০৩১)

চার. বেশি বেশি তালবিয়া পড়া। (সহিহ্ মুসলিম: ২২৪৬)

পাঁচ. মক্কাবাসী ছাড়া অন্যরা হজে ইফরাদ বা কিরান করার সময় তাওয়াফে কুদুম করা। (সহিহ্ মুসলিম: ২১৩৯)

ছয়. মক্কায় থাকাকালীন বেশি বেশি তাওয়াফ করা। (জামে তিরমিজি: ৭৯৪)

সাত. ইজতিবা করা। এটা হলো তাওয়াফ শুরু করার আগে চাদরের এক দিককে নিজের ডান বাহুর নিচে রাখা এবং অপর দিককে বাম কাঁধের উপর পেঁচিয়ে দেওয়া। (জামে তিরমিজি: ৭৮৭)

আট. তাওয়াফের সময় রমল করা। রমলের পদ্ধতি হলো তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করের সময় ঘনঘন কদম ফেলা ও উভয় কাঁধ হেলাতে হেলাতে চলা। (সহিহ্ বুখারি: ১৫০১)

নয়. কোরবানির দিনগুলোতে মিনায় রাত্রিযাপন করা। (সুনানে আবু দাউদ: ১৬৮৩)

ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ

নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য নিষিদ্ধ কাজসমূহ হচ্ছে—সুগন্ধি ব্যবহার, নখ কাটা, শরীরের কোনো স্থানের লোম পরিষ্কার করা বা উপড়ানো, পশু শিকার, মাথার চুল উঠিয়ে ফেলা বা কাটা, ঝগড়া-বিবাদ করা, সহবাস করা, যৌন কামনার সঙ্গে চুম্বন করা, স্পর্শ করা বা জড়িয়ে ধরা।

পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ কাজসমূহ হচ্ছে—সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা, মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা এবং টাকনুর হাড় ঢেকে যায় এমন জুতা পরা।

নারীদের নিষিদ্ধ কাজ—অলংকার পরা, হাতমোজা পরা, মুখমণ্ডলের ওপর নিকাব পরা (সামনে পুরুষ থাকলেও মুখমণ্ডল ঢাকা যাবে না), প্রাণী হত্যা (কাপড় ও শরীরের উকুন মারাও নিষিদ্ধ)।

যেসব কারণে দম ও সদকা ওয়াজিব হয়—

এক. হজ, ওমরাহ বা অন্য উদ্দেশ্যে মক্কায় গমনকারী ব্যক্তির ইহরাম ছাড়া মিকাত অতিক্রম করা।

দুই. ইহরাম অবস্থায় বড় অঙ্গসমূহের পূর্ণ জায়গায় খুশবু লাগানো। ছোট অঙ্গগুলোতে বেশি পরিমাণ খুশবু লাগানোর হুকুমও একই।

এ ছাড়া দম ও সদকা ওয়াজিব হওয়ার আরও অনেক কারণ রয়েছে। নির্ভরযোগ্য কোনো আলেম, মসজিদের ইমাম সাহেব বা হজের মুআল্লিমদের নিকট থেকে জেনে নেওয়া উচিত।

লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

মার্কিন বিমানবাহিনীর রণতরি থেকে সাগরে পড়ে গেল ৮০০ কোটি টাকার যুদ্ধবিমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত