Ajker Patrika

বিয়ের পর যৌথ পরিবারে থাকা কি জরুরি

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৫: ০২
Thumbnail image

প্রশ্ন: আমাদের সমাজে বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে বাবা-মা, ভাইবোনসহ পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে যৌথভাবে থাকাকে উত্তম বিবেচনা করা হয়। পৃথক হয়ে আলাদা ঘরে বসবাস করাকে নিন্দাযোগ্য মনে করা হয়। এ বিষয়ে ইসলামে কোনো বিধিনিষেধ আছে? স্ত্রীকে কেমন ঘরে রাখার কথা বলে ইসলাম? বিস্তারিত জানতে চাই। আবদুল্লাহ কামিল, ঢাকা 

উত্তর: বাবা-মায়ের সেবা করা, ভাইবোনের দেখাশোনা করা এবং আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যক্তির অন্যতম দায়িত্ব। তবে স্ত্রীর থাকার ঘর ও পারিবারিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও একজন স্বামীর অন্যতম দায়িত্ব। তাই বিয়ের আগেই তার জন্য আলাদা ঘর বা কক্ষ তৈরি করতে হবে অথবা বাসা ভাড়া নিতে হবে। বিয়ের পর স্বাভাবিক অবস্থায় স্ত্রী স্বামীর ঘরেই থাকবে, স্ত্রীর বাবার বাড়িতে নয়। এটাই ইসলামের নির্দেশ। ওমর (রা.)-এর শাসনামলে এক ব্যক্তি বিয়ে করার সময় স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে রেখে দেওয়ার শর্তারোপ করে। তখন ওমর (রা.) সেই শর্ত নাকচ করে বললেন, ‘স্ত্রী স্বামীর ঘরেই থাকবে।’ (কানজুল উম্মাল)

স্বামীর দায়িত্ব হচ্ছে, স্ত্রীর জন্য উপযুক্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, যেখানে সে স্বাধীনভাবে ও নিরাপদে বসবাস করতে পারবে এবং স্বাভাবিক চলাফেরার সময় গাইরে মাহরাম পুরুষের চোখের সামনে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। (আল মুগনি)

যৌথ পরিবারে থাকতে যদি স্ত্রীর কষ্ট হয়, তার স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয় বা পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হয়, তাহলে স্ত্রীকে যৌথ পরিবারে রাখা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে যৌথ পরিবারে থাকতে বাধ্য করা জুলুম। যৌথ পরিবারে স্ত্রীর কষ্ট হচ্ছে কি হচ্ছে না, তা যাচাই করার জন্য স্ত্রীর মতামতই যথেষ্ট। অন্য কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই। (বাদায়ে আস-সানায়ে)

সুতরাং স্ত্রী যদি যৌথ পরিবারে থাকতে না চায়, তাহলে অবশ্যই তার জন্য স্বতন্ত্র আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশিষ্ট ফকিহ কাসানি (রহ.) বলেন, ‘যদি স্বামী তার স্ত্রীকে সতিন, সতিনের ছেলেমেয়ে, দেবর, শাশুড়ি, ননদ ও অন্যান্য আত্মীয়ের সঙ্গে এক ঘরে রাখতে চায়, আর স্ত্রী তাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে, তাহলে তার জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। (বাদায়ে আস-সানায়ে)

হাসকাফি (রহ.) বলেন, ‘একইভাবে স্ত্রীর জন্য স্বামীর সাধ্য অনুযায়ী স্বতন্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ওয়াজিব। (দুররুল মুখতার) তবে স্বামী যদি অসচ্ছল হয়, স্বতন্ত্র থাকার ব্যবস্থা করা যদি তার পক্ষে সম্ভব না হয়, তাহলে স্ত্রী স্বামীর কাছে স্বতন্ত্র ঘর দাবি না করে ধৈর্য ধারণ করবে। (মাতালিবু উলিন নুহা)

স্বতন্ত্র আবাসস্থল বলতে স্বামীর পৈতৃক ভিটা থেকে দূরে গিয়ে নতুন ঘর নির্মাণ করতে হবে অথবা ভাড়া বাসায় চলে যেতে হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পৈতৃক বাড়িতেই স্ত্রীর জন্য স্বতন্ত্র থাকার ঘর, রান্নাঘর ও বাথরুমের ব্যবস্থা করে দিলেই যথেষ্ট। এটুকু পাওয়ার পর অন্য বাড়ির দাবি করা অথবা পৈতৃক ভিটা ছেড়ে শহরে বা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার দাবি করার অধিকার স্ত্রীর নেই। (মাজমাউল আনহুর)

কাসানি (রহ.) বলেন, ‘যদি স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে বড় ঘরের একটি কক্ষে থাকে এবং স্ত্রীর মৌলিক প্রয়োজন এককভাবে পূরণ করার ব্যবস্থা করে দেয়, তখন স্বামীর কাছে আলাদা ঘর দাবি করার অধিকার স্ত্রীর নেই।’ (বাদায়িয়ুস সানায়ি)

হাসকাফি (রহ.) বলেন, ‘বড় ঘরের একটি অংশে স্ত্রীকে রেখে তার জন্য আলাদা বাথরুম ও রান্নাঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া যথেষ্ট।’ এর টীকায় ইবনে আবেদিন (রহ.) বলেন, ‘রান্নাঘর ও বাথরুম স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ঘরের ভেতরে হতে হবে অথবা বাইরে হলেও তাতে অন্য কারও অংশীদারত্ব থাকা যাবে না।’ (রদ্দুল মুহতার) তবে স্ত্রীকে আলাদা ঘরে রাখলেও পরিবারের অন্য সদস্যের প্রতি কর্তব্য পালন করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না; বিশেষ করে মা-বাবার সেবায় কার্পণ্য করা কোনোভাবেই ইসলাম অনুমোদন করে না। 

উত্তর দিয়েছেন
মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত