Ajker Patrika

সুরা জুমুআর তাৎপর্য, ফজিলত ও অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট

তাসনিফ আবীদ
সুরা জুমুআ। ছবি: সংগৃহীত
সুরা জুমুআ। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কোরআনের ৬২ তম সুরা, সুরা জুমুআ। এটি মাদানি সুরা, যা জুমার দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়েছে। এই সুরার মূল বার্তা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের মাধ্যমে ইমানদারদের পরিশুদ্ধ জীবন লাভ এবং ইহুদিদের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। এই সুরাটি তার অনন্য শিক্ষা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে মুসলিমদের জীবনে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

শানে নুজুল: অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট

সুরা জুমুআর নাজিলের পেছনে একাধিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ঘটনাটি হলো—

একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় একটি বাণিজ্যিক কাফেলা মদিনায় এসে পৌঁছায়। সেই কাফেলার আগমনের খবর শুনে কিছু সাহাবি খুতবা ছেড়ে ব্যবসায়িক পণ্য কেনার জন্য বাইরে চলে যান। তাদের এই কাজের কারণে আল্লাহ তাআলা এই সুরার শেষ আয়াতগুলো নাজিল করেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তারা কোনো বাণিজ্য অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখতে পায়, তখন তারা আপনাকে দাঁড় করিয়ে রেখে তার দিকে ছুটে যায়। বলুন—আল্লাহর কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক ও বাণিজ্য অপেক্ষা উত্তম। আর আল্লাহ উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা জুমুআ: ১১)

এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, জুমার খুতবার সময় মনোযোগের সঙ্গে তা শোনা এবং পার্থিব বিষয় থেকে বিরত থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

এই সুরার আরেকটি অংশ ইহুদিদের সম্পর্কে নাজিল হয়েছে। তাদের কাছে তাওরাত কিতাব থাকা সত্ত্বেও তারা এর ওপর আমল করত না। তাই আল্লাহ তাদের এমন গাধার সঙ্গে তুলনা করেছেন—যে পিঠে বইয়ের বোঝা বহন করে কিন্তু তার মর্ম বোঝে না।

তাৎপর্য ও মূল বিষয়বস্তু

সুরা জুমুআর প্রধান তাৎপর্য ও মূল বিষয়বস্তুগুলো কয়েকটি অংশে বিভক্ত—

  • ১. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা: সুরার শুরুতে আল্লাহ তাআলার মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা রয়েছে। বলা হয়েছে যে, আসমান ও জমিনের সবকিছুই আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা করে।
  • ২. নবীজির রিসালাতের উদ্দেশ্য: এই সুরায় নবীজি (সা.)-এর প্রেরণের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি প্রেরিত হয়েছেন যেন তিনি উম্মিদের মধ্য থেকে তাদের পরিশুদ্ধ করেন, তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন এবং সত্যের পথে পরিচালিত করেন। এটি নবীজির দাওয়াতের মূল ভিত্তি।
  • ৩. ইহুদিদের প্রতি সতর্কবাণী: সুরাটির একটি বড় অংশজুড়ে ইহুদিদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ তাদের কিতাবধারীদের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, যাদের কাছে জ্ঞান ছিল কিন্তু তারা তা অনুসরণ করত না, তারা আসলে গাধার মতোই, যারা শুধু বোঝা বহন করে। এই উপমা মুসলিমদের এই শিক্ষা দেয় যে, শুধু জ্ঞান অর্জন করা যথেষ্ট নয়, বরং সেই অনুযায়ী আমল করাই আসল সফলতা।
  • ৪. জুমার গুরুত্ব ও বিধান: এই সুরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো জুমার দিনের গুরুত্ব ও এর বিধান। যখন জুমার নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ও জাগতিক ব্যস্ততা ছেড়ে আল্লাহর স্মরণে ছুটে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ মুসলিম উম্মাহর জন্য জুমার দিনের গুরুত্বকে সুদৃঢ় করেছে।

ফজিলত ও উপকারিতা

সুরা জুমুআর ফজিলত সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত আছে। জুমার দিনের সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

নামাজের সুন্নত: জুমার নামাজের সুরা জুমুআ পাঠ করা সুন্নত। জুমার নামাজে নবী (সা.) প্রায় সময় সুরা আলা ও সুরা গাশিয়া বা সুরা জুমুআ ও সুরা মুনাফিকুন তিলাওয়াত করতেন।

আয়াত পাঠের সওয়াব: যদিও সুরাটির নির্দিষ্ট ফজিলত নিয়ে দুর্বল হাদিসও রয়েছে, তবে হাদিস অনুযায়ী যেকোনো ইবাদত হিসেবে কোরআন তিলাওয়াতের সাধারণ সওয়াব তো রয়েছেই। এ ছাড়া এই সুরার শিক্ষা অনুধাবন ও সেই অনুযায়ী আমল করাই হলো এর সবচেয়ে বড় ফজিলত।

জীবনবোধের শিক্ষা: এই সুরাটির সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করার শিক্ষা। এটি মুসলিমদের শেখায় যে, পার্থিব জগতের ব্যস্ততা যেন পরকালের পাথেয় অর্জনের পথে বাধা না হয়। জুমার দিন ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে নামাজের জন্য একত্রিত হওয়ার নির্দেশ মুসলিম জীবনে ইমান ও দুনিয়ার কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে শেখায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত