Ajker Patrika

জিলহজের প্রথম দশক যেভাবে কাটাবেন

আমিনুল ইসলাম হুসাইনী 
জিলহজের প্রথম দশকের আমল। ছবি: সংগৃহীত
জিলহজের প্রথম দশকের আমল। ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহ তাআলা এতই দয়ালু যে, তিনি চান না তাঁর একটা বান্দাও জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হোক। বরং তিনি চান, তাঁর বান্দারা পরকালীন অনন্ত জীবনে পরম শান্তিতে বসবাস করুক। সে জন্যই তো সৃষ্টি করেছেন চিরস্থায়ী সুখ নিবাস জান্নাত।

কিন্তু মানুষ যে গুনাহের পুতুল। কখনো কখনো নিজেরই অজান্তে কিংবা শয়তানের প্ররোচনায় অসংখ্য গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। আর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলগুলোই তখন সুখময় জান্নাতের সম্মুখে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। তবে আল্লাহ তো অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। তিনি ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন।

তাই তো গুনাহগার বান্দারা যেন হতাশ না হয়, সে জন্য ক্ষমার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘হে আমার ইমানদার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করেন। তিনি তো অতি ক্ষমাশীল, বড় মেহেরবান।’ (সুরা জুমার: ৩৯)

তাই যারা ভুল পথে পা বাড়িয়েছিল, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের ভুল শুধরানোর জন্য এমন কিছু বিশেষ সময়কে নির্ধারিত করে রেখেছেন, যে সময়গুলোতে বান্দা বেশি বেশি ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে নিজেদের গুনাহসমূহ মাফ করিয়ে নেন। এমনই এক বিশেষ সময় হলো জিলহজ মাসের প্রথম দশদিন। যে দিনগুলোকে রাসুল (সা.) আখ্যায়িত করেছেন শ্রেষ্ঠ দিন বলে। (মুসনাদে আবি ইয়ালা: ২০৯০)

প্রথমত আল্লাহ তাআলার কাছে প্রত্যেকটা দিনই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তিনিই তো এই দিন-রাতের স্রষ্টা। দিন-রাত প্রত্যেককেই তিনি অনন্য গুণে গুণান্বিত করেছেন। তবে এদিনগুলোতে যেহেতু সবগুলো মৌলিক ইবাদতের সমাবেশ ঘটে, সেহেতু এ দিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য দিনের চেয়ে অধিক হওয়াই যুক্তিসংগত। যেমনটা হাফেজ ইবনে হাজর (রহ.) ফাতহুল বারি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘জিলহজের দশকের বৈশিষ্ট্যে ও কারণ যা প্রতীয়মান হয়, তা হলো—এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি। অন্য কোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না। (ফাতহুল বারি: ২/৪৬০)

এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো আমাদের জন্য অতীব জরুরি। জাগতিক পরীক্ষার দিনগুলোতে যদি সবচেয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করার লক্ষ্যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে পারি, তবে কেন আখিরাতের পরীক্ষার জন্য এমন মাহাত্ম্যপূর্ণ দিনগুলোতে সর্বাধিক প্রচেষ্টা করতে পারব না! এ দিনগুলোতে আমল করার সওয়াব তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক অনেক বেশি।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জিলহজের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্যান্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়। এ মাসের প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছরের রোজার ন্যায়, আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায়।’ (জামে তিরমিজি: ৭৫৮)

জিলহজ মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত যত দিন সম্ভব নফল রোজা রাখা আর রাতের বেলা বেশি বেশি ইবাদত করা একজন সত্যিকার মোমিনের বৈশিষ্ট্য। তাই এই দিনগুলোতে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারির মাধ্যমে কাটানো কিংবা যতটুকু সম্ভব ইবাদত করা উচিত। পুরো নয় দিন রোজা না রাখতে পারলেও আরাফাহর দিনে রোজা রাখা খুবই জরুরি।

হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আরাফাহর দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোজা তার পূর্বের ও পরের বছরের গুনাহ মুছে ফেলবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৭৪০)

আরাফাহর দিনের আরেকটি আমল হলো এই কালিমাটি বেশি বেশি পড়া—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৯২২)

জিলহজ মাসের নবম তারিখের ফজর থেকে তেরো তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক বুদ্ধিমান মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। উল্লেখ্য, পুরুষের জন্য শব্দ করে আর মহিলাদের জন্য নীরবে। তাকবিরে তাশরিক হচ্ছে—‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ (সুনানে বায়হাকি: ৬০৭১)

জিলহজের প্রথম দশকের অন্যতম আরেকটি দিবস হলো কোরবানির দিন। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো, কোরবানির দিন, অতঃপর স্থিরতার দিন (কোরবানির পরের দিন)।’ (সুনানে নাসায়ি: ১০৫১২)। এ দিনের সবচেয়ে বড় আমল হলো ঈদের নামাজ শেষে কোরবানি করা।

যারা কোরবানি দেবেন তাদের জন্য আরেকটি আমল হলো, জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে হাত-পায়ের নখ, মাথার চুল ও অবাঞ্ছিত পশম ইত্যাদি কাটা বা ছাটা থেকে বিরত থাকা।

হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন (জিলহজের প্রথম) ১০ দিনের সূচনা হয়, আর তোমাদের কেউ কোরবানি করার ইচ্ছে করে—সে যেন চুল-নখ ইত্যাদি না কাটে।’ (সুনানে ইবনে মাজা: ৩১৪৯)

তবে খেয়াল রাখতে হবে হাত-পায়ের নখ, মাথার চুল ও অবাঞ্ছিত পশমের বয়স যেন চল্লিশ দিনের বেশি না হয়ে যায়। আর এ জন্য উত্তম হলো জিলহজের চাঁদ উদিত হওয়ার আগেই তা পরিষ্কার করে ফেলা।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনা যাঁকে ঢাকায় ‘হত্যা করলেন’, তিনি ময়মনসিংহে জীবিত!

চরফ্যাশন থেকে গেটিসবার্গ কলেজ

জীবিত ভাইকে জুলাই আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলায় সাক্ষীও দুই ভাই, নেপথ্যে যা জানা গেল

নগদে স্ত্রীর চাকরি, স্বার্থের সংঘাতে জড়ালেন নাহিদের সাবেক পিএ আতিক মুর্শেদ

যুক্তরাষ্ট্রে সি চিন পিংয়ের মেয়েকে বহিষ্কারের দাবি, হঠাৎ কেন এই বিতর্ক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত