Ajker Patrika

খাবারের পর মিষ্টি খাওয়া কি সুন্নত

শাব্বির আহমদ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম শুধু নামাজ, রোজা বা ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রতিদিনের জীবনধারায়, এমনকি আহার গ্রহণের মধ্যেও রয়েছে নবীজি (সা.)-এর আদর্শ ও সুন্নতের আলো। খাবার গ্রহণ একটি সাধারণ বিষয় হলেও অনেকেই তা নিয়ে ভুল ধারণা পোষণ করেন। যেমন খাবারের পর মিষ্টি খাওয়া সুন্নত কি না, এ নিয়ে বহুজনের মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তি। কেউ একে বাধ্যতামূলক অভ্যাসে পরিণত করেছেন, কেউবা তা নবী (সা.)-এর নিয়মিত আমল বলে প্রচার করছেন। কিন্তু আসলেই কি খাবারের পর মিষ্টি খাওয়া নবীজির সুন্নত?

নবীজি (সা.)-এর জীবনপাঠ থেকে জানা যায়, দিনের পর দিন তাঁর পেটভরে খাবার খাওয়ারই সুযোগ হতো না। অনাহারে কাটত সময়। কখনো এমনও হতো, শুধু পানি ও খেজুর দিয়ে তিনি খাবার সেরেছেন। এমন পরিস্থিতিতে খাবার খাওয়ার পর বিশেষভাবে মিষ্টি খাওয়ার মতো বিলাসিতা তাঁর জীবনে কীভাবে আসবে!

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘আমাদের ওপর দিয়ে মাস কেটে যেত, আমরা এর মধ্যে ঘরে (রান্নার) আগুন জ্বালাতাম না। আমরা কেবল খুরমা ও পানির ওপর চলতাম। তবে যৎসামান্য গোশত আমাদের কাছে এসে যেত।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬৪৫৮)

সুন্নত শব্দের অর্থ হলো পথ বা আদর্শ। ইসলামি পরিভাষায় সুন্নত বলতে বোঝায়, ‘মহানবী (সা.)-এর কথা, কাজ এবং মৌন সম্মতি বা অনুমোদন, যা মুসলিমদের জন্য অনুসরণযোগ্য আদর্শ।’ খাবার খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়া সুন্নত—এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ, এ ধরনের কোনো বর্ণনা হাদিসে নেই।

তবে, এমনিতে শুধু মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া নবীজি (সা.)-এর অভ্যাসগত সুন্নত। তিনি মিষ্টি পছন্দ করতেন। এটি ইবাদতের সুন্নত বা অবশ্যপালনীয় নয়। এটিকে সুন্নতে আদিয়া অর্থাৎ স্বভাবজাত সুন্নত বলা হয়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হালুয়া (মিষ্টান্ন দ্রব্য) ও মধু ভালোবাসতেন।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৪৩১)

কোনো কাজকে সুন্নত বলার আগে তার হাদিসভিত্তিক প্রমাণ থাকা জরুরি। ইসলামের সৌন্দর্য এটাই—এটি কল্পনা নয়, দলিল-প্রমাণভিত্তিক জীবনব্যবস্থা। অতএব, প্রতিটি সুন্নতের পেছনে থাকা আসল শিক্ষা ও উদ্দেশ্য অনুধাবন করাই একজন সচেতন মুসলমানের দায়িত্ব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত