Ajker Patrika

ট্রাম্পের করছাড় বিল প্রত্যাখ্যান করল রিপাবলিকানরা

অনলাইন ডেস্ক
ট্রাম্পের করছাড় বিল প্রত্যাখ্যান করল রিপাবলিকানরা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত করছাড় বিল কংগ্রেসে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে। শুক্রবার (১৬ মে) হাউস বাজেট কমিটিতে প্রস্তাবটি প্রাথমিক ধাপেই আটকে যায়, কারণ রিপাবলিকান দলের কট্টরপন্থী সদস্যরা আরও বড় পরিসরে খরচ কমানোর দাবিতে বিলটি আটকে দেন। এই ঘটনাটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য একটি বিরল রাজনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই ভোটের আগে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে রিপাবলিকানদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডার চাই না। কথা বন্ধ করো, কাজ শেষ করো!’ কিন্তু তবুও তাঁর আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি।

কমিটির ২১ জন রিপাবলিকানের মধ্যে ৫ জন বিলের বিপক্ষে ভোট দেন। তারা স্পিকার মাইক জনসনকে জানিয়ে দিয়েছেন, যদি মেডিকেইড স্বাস্থ্যসেবা খাতে আরও কাটছাঁট ও ডেমোক্র্যাটদের চালু করা সবুজ জ্বালানি করছাড় সম্পূর্ণভাবে বাতিল না করা হয়, তবে তারা সমর্থন দেবেন না।

বিলটি পাস হলে আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬.২ ট্রিলিয়ন ডলারের ফেডারেল ঋণ আরও কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান রালফ নরম্যান বলেন, ‘এটি কোনো প্রদর্শনী নয়। আমরা আপস করব, কিন্তু সম্পূর্ণটা দিয়ে নয়।’

বিলটি আপাতত আটকে গেলেও, এটি স্থায়ীভাবে ব্যর্থ হয়নি। তবে হাউসে বাজেটে পরবর্তী সপ্তাহে যেই ভোট হওয়ার কথা ছিল, সেটি এখন বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এদিকে রিপাবলিকানদের মধ্যেও বিভাজন স্পষ্ট। কট্টরপন্থীরা মনে করেন, এটি খরচ কমানোর একটি দুর্লভ সুযোগ। অপরদিকে মাঝারি ধাঁচের রিপাবলিকানরা, যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন, তারা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ব্যাপক কাটছাঁটের বিরোধিতা করছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, এতে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ২২০-২১৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হুমকির মুখে পড়বে।

কমিটির চেয়ারম্যান জোডি অ্যারিংটন বলেন, ‘আমরা এমন নীতি চাই যা সাধারণ মানুষের বিপক্ষে যাবে। জনগণ যে পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে, আমাদের সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

কমিটির ভোটে রিপাবলিকান রালফ নরম্যান, চিপ রয়, অ্যান্ড্রু ক্লাইড, জোশ ব্রেচিন এবং লয়েড স্মাকার ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মিল রেখে প্রস্তাবটির বিরুদ্ধে ভোট দেন। টেক্সাসের চিপ রয় বলেন, ‘আমরা এমন সব চেক স্বাক্ষর করছি, যেগুলো আমরা ভাঙাতে পারব না। এর মূল্য আমাদের সন্তানেরা দেবে।’

বিলটিতে কিছু পরিবর্তনের আশায় আগামী সপ্তাহে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্পিকার জনসনের সঙ্গে কাজ করা রিপাবলিকানরা।

লয়েড স্মাকার জানান, তাঁর ‘না’ ভোট ছিল কৌশলগত, যাতে ভবিষ্যতে বিলটি ফের ভোটে তোলা যায়। তিনি আশা করছেন সোমবার আরেক দফা ভোট হতে পারে।

প্রস্তাবিত বিলটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পাস হওয়া করছাড় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। যৌথ ট্যাক্স কমিটির হিসাব মতে, এতে আগামী ১০ বছরে ব্যয় হবে ৩.৭২ ট্রিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্প বলছেন, টিপস ও ওভারটাইমের ওপর কর মওকুফের মতো পদক্ষেপে সাধারণ শ্রমজীবী আমেরিকানরা উপকৃত হবেন। তবে সমালোচকদের দাবি, বিলটি মূলত ধনীদেরই বেশি সুবিধা দেবে।

ডেমোক্র্যাটরা বিলটির সমালোচনা করে বলেছে, এতে ধনকুবেরদের করছাড় দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেসের গবেষণার একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিলের প্রস্তাবিত কাটছাঁটে ৮.৬ মিলিয়ন (৮৬ লাখ) আমেরিকান তাদের স্বাস্থ্যবিমা হারাতে পারেন।

কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট ব্রেন্ডান বয়েল বলেন, ‘মহামন্দার সময়েও এত বিপুলসংখ্যক আমেরিকান তাদের স্বাস্থ্যসেবা হারাননি। এটি নজিরবিহীন।’

রিপাবলিকানদের মধ্যে এখন তিনটি পক্ষ সক্রিয়—

১. ডেমোক্র্যাট শাসিত রাজ্যগুলোর মাঝারি পন্থী— যারা রাজ্য ও স্থানীয় করের (SALT) ওপর ফেডারেল ছাড় বাড়াতে চান।

২. কট্টরপন্থী— যারা রাজ্য ও স্থানীয় করছাড়ের বিনিময়ে আরও গভীর মেডিকেইড কাটছাঁট ও সবুজ জ্বালানি করছাড় সম্পূর্ণ বাতিল চান।

৩. আবার কিছু মাঝারি পন্থী চান— মেডিকেইডে যাতে বড় রকমের কোনো পরিবর্তন না আসে।

বর্তমানে প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০২৯ সাল থেকে মেডিকেইডে কর্ম-যোগ্যতার শর্ত জুড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কট্টরপন্থীরা চাচ্ছেন, এটি অবিলম্বে কার্যকর হোক এবং ফেডারেল মেডিকেইড অর্থায়নে বড় কাটছাঁট করা হোক, যা মাঝারি রিপাবলিকানরা জোরালোভাবে বিরোধিতা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত