Ajker Patrika

ইতিহাসের এই দিনে /বাতানের যুদ্ধে বিপুল সেনার আত্মসমর্পণ, যুক্তরাষ্ট্র হেরেছে আরও যেসব যুদ্ধে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৭: ৩২
বাতান মার্চ। ছবি: যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আর্কাইভ থেকে
বাতান মার্চ। ছবি: যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আর্কাইভ থেকে

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র কোনো যুদ্ধে হেরে যেতে পারে বলে মনে না হলেও ইতিহাসে এমন নজির বিরল নয়। ১৯৪২ সালের আজকের এই দিনে (৯ এপ্রিল) ‘বাতানের যুদ্ধে’ জাপানের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় মার্কিন সেনাবাহিনী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক করুণ অধ্যায় হলো বাতানের যুদ্ধ, যা শেষ হয় মার্কিন ও ফিলিপিনো বাহিনীর জাপানের কাছে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয়, যেখানে প্রায় ৭৫ হাজার সেনা বন্দী হয়।

১৯৪১ সালের ৮ ডিসেম্বর ফিলিপাইনে আক্রমণ চালায় জাপান, যা ছিল পার্ল হারবার হামলার ঠিক এক দিন পর। জাপানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের যৌথ বাহিনী ম্যানিলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বাতান দ্বীপে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রায় তিন মাস ধরে প্রতিরোধ গড়ে টিকে থাকে দুই দেশের সেনারা। কিন্তু খাদ্য, ওষুধ ও অস্ত্রের ঘাটতি ক্রমশ তাদের দুর্বল করে তোলে।

পরে জাপানিদের তীব্র আক্রমণের মুখে ১৯৪২ সালের ৯ এপ্রিল, মার্কিন জেনারেল এডওয়ার্ড কিং আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর শুরু হয় ভয়াবহ ‘বাতান মৃত্যু মার্চ’, যেখানে বন্দী সেনাদের প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ বিরামহীন হাঁটিয়ে নেওয়া হয়। বর্বর এই আচরণে খাবার, পানি ও বিশ্রামের অভাবে পথেই প্রাণ হারান হাজার হাজার সেনা।

সামরিক ইতিহাসে আত্মসমর্পণ প্রায়ই কৌশলগত প্রয়োজনে ঘটে; যেমন রসদ ফুরিয়ে গেলে, শত্রুরা ঘিরে ফেললে, অথবা প্রাণ রক্ষার্থে। ছোট আত্মসমর্পণগুলো উনিশ শতকে বা গেরিলা যুদ্ধের সময় স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। কিন্তু বাতানের মতো ব্যাপক আত্মসমর্পণ মার্কিন কৌশলের জন্য অত্যন্ত বিরল।

বহু যুদ্ধেই আত্মসমর্পণ করেছে মার্কিন সেনারা; কিন্তু বাতানের আত্মসমর্পণকে বিরল মনে করা হয়। কারণ, মার্কিন ইতিহাসে এত বিপুলসংখ্যক সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করার মতো পরিস্থিতির মুখে এর আগে বা পরে কখনোই তারা পড়েনি; বিশেষ করে যে উপায়ে সেনাদের মৃত্যু হয়েছে, তা বিরল। শত কিলোমিটার রাস্তা বিনা বিশ্রামে হাঁটিয়ে নেওয়া হয়েছে সেনাদের। ‘বাতান মৃত্যু মার্চ’ জাপানিদের যুদ্ধাপরাধের প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা বাতান যুদ্ধের গুরুত্ব ও ভয়াবহতাকে আরও গভীরভাবে মানবিক ও ঐতিহাসিক মাত্রা দিয়েছে। এ ছাড়া এই পরাজয়কে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন শক্তির জন্য একটি দুঃখজনক মোড় বলেও মনে করা হয়।

মার্কিন বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে এমন আরও কিছু যুদ্ধ—

ডেট্রয়েটের যুদ্ধ (১৮১২)

গণহত্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট দুর্গে যুদ্ধ শুরুর আগেই ব্রিটিশ ও স্থানীয় মার্কিন বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন মার্কিন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইলিয়াম হল। পরিণতিতে প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সৈন্য বন্দী হয়।

গৃহযুদ্ধকালে যত আত্মসমর্পণ (১৮৬১–৬৫)

ফোর্ট সামটার (১৮৬১) : স্বাধীনতাকামী কনফেডারেট বাহিনীর সংক্ষিপ্ত গোলাবর্ষণের পর মার্কিন সেনারা রবার্ট অ্যান্ডারসনের নেতৃত্বে বাহিনীটির কাছে আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় ৮৫ জন সেনা ছিল সেখানে।

হারপার্স ফেরি (১৮৬২) : অ্যান্টিটাম অভিযানের সময় ইউনিয়ন কর্নেল ডিক্সন এস. মাইলস প্রায় ১২ হাজার ৫০০ সেনা নিয়ে কনফেডারেট জেনারেল স্টোনওয়াল জ্যাকসনের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এটি ছিল যুদ্ধে ইউনিয়নের অন্যতম বড় আত্মসমর্পণ।

রেড ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (১৯ শতক)

ফেটারম্যান ফাইট (১৮৬৬) : রেড ক্লাউড যুদ্ধে আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান গোষ্ঠী লাকোটা, চেয়েন এবং আরাপাহো যোদ্ধাদের আক্রমণে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম জে. ফেটারম্যানের নেতৃত্বাধীন প্রায় ৮০ জনের একটি দল নিঃশেষ হয়ে যায়। এখানে কোনো আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ ঘটেনি; কারণ, পুরো ইউনিটই ধ্বংস হয়ে যায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

ফিলিপাইনের বাতান ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে মার্কিন বাহিনীর ছোট বেশ কয়েকটি ইউনিট আত্মসমর্পণ করে:

গুয়াম ও ওয়েক দ্বীপ (১৯৪১) : ১৯৪১ সালের ডিসেম্বর প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপ দুটিতে জাপানি বাহিনীর কাছে মার্কিন ইউনিট আত্মসমর্পণ করে। গুয়ামে প্রায় ৫৪০ জন এবং ওয়েকে প্রায় ৪৫০ জন মার্কিন সেনা ছিল।

ক্যাসারিন পাস (১৯৪৩) : তিউনিসিয়া অভিযানে কিছু মার্কিন ইউনিট জার্মান বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে। যদিও পুরো বাহিনীর পক্ষ থেকে একত্রে আত্মসমর্পণ করা হয়নি।

কোরিয়া যুদ্ধ (১৯৫০–৫৩)

১৯৫০ সালের জুলাইয়ে যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে তেজনের যুদ্ধে মার্কিন ২৪তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের কিছু ইউনিট উত্তর কোরিয়ার বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আত্মসমর্পণ করে। মার্কিন বাহিনীর মেজর জেনারেল উইলিয়াম এফ. ডিন সৈন্যদের সংগঠিত করতে গিয়ে ধরা পড়েন।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ (১৯৬৫–৭৩)

এ সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে, যেখানে ছোট ইউনিট বা একক সৈনিক আত্মসমর্পণ করে বা বন্দী হয়। যেমন ১৯৬৫ সালে ইয়া দ্রাং-এর যুদ্ধ। তবে বড় পরিসরে কোনো আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত