Ajker Patrika

হামাস যেভাবে ‘মিনি আর্মি’ তৈরি করল  

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাবে বিগত কয়েক দিন ধরেই গাজায় বিমান হামলা চলছে। এবার গাজায় বড় ধরনের স্থল হামলার তোড়জোড় চালাচ্ছে ইসরায়েল। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের যে লক্ষ্য তা পূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে হামাসের সশস্ত্র ‘মিনি আর্মি’। বিগত কয়েক বছর ধরেই হামাস নিজস্ব সেনাবাহিনী গড়ে তোলার করে যাচ্ছে। 

হামাসের যাত্রা শুরু ১৯৮৭ সালের ১০ ডিসেম্বর। সেদিন ৪ ফিলিস্তিনি দিনমজুরকে বহনকারী একটি গাড়িতে চাপা দেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি ট্রাক। নিহত হন ওই ৪ জনই। সেই ঘটনার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। শুরু হয় ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদা বা প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন। সেই আন্দোলনে অংশ নিতেই হামাসের প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্মিক গুরু শেখ আহমেদ ইয়াসিনের বাড়িতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় হামাস—যার অর্থ উদ্দীপনা—গঠন করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৪ ডিসেম্বর হামাসের নামে প্রথম প্রথমবার লিফলেট বিতরণ করা হয়। 

১৯৮৮ সালে হামাসের প্রথম সাংগঠনিক দলিল প্রকাশ করা হয়। সেখানে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের শত্রু আখ্যা দিয়ে একে ধ্বংস করার কথা বলা হয়। পরে হামাসকে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মিসর ও জাপান সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেয়। কিন্তু কালক্রমের হামাসের অন্যতম সহায়তাদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয় ইরান। এ বিষয়ে লেবাননে নির্বাসিত হামাস নেতা আলি বারাকাহ বলেন, ‘প্রয়োজনই আবিষ্কারে প্রসূতি।’ 

আলি বারাকাহ জানান, হামাস দীর্ঘদিন ধরেই ইরান এবং এর মিত্র লেবাননের হিজবুল্লাহর কাছ থেকে অর্থ, সামরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহায়তা নিচ্ছে। এর পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন দেশের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। তিনি জানান, হামাস আগে ইরান এবং অন্যান্য দেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করলেও এখন গাজায় নিজস্ব অবকাঠামোতেই বিভিন্ন অস্ত্র উৎপাদন করতে পারছে। উদাহরণ হিসেবে আলি বারাকাহ হামাসের রকেট সক্ষমতার উন্নয়নের কথা জানান। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের সময় হামাসের রকেটের পাল্লা ছিল মাত্র ৪০ কিলোমিটার। সেই পাল্লা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩০ কিলোমিটার বা তার বেশিতে। 

হামাসের মূল শক্তির জোগানদাতা মূলত ইরান। এর কারণও রয়েছে। ইরান সব সময়ই চেয়েছে ইসরায়েলকে তার মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দিয়ে ঘিরে রাখতে। আর তাই দেশটি ফিলিস্তিনে হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ, সিরিয়া ও ইরাকে বিভিন্ন শিয়া মতাবলম্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দিয়ে ইরান ইসরায়েলকে ব্যস্ত রাখার কৌশল নিয়েছে। 

হামাসের রাজনৈতিক শাখার নেতারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও হামাসের মূল শক্তি মূলত গাজা কেন্দ্রিক। হামাস সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে ইরান হামাসকে অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করলেও ইসরায়েলে হামলার বিষয়ে তারা পুরোপুরি অন্ধকারে ছিল। সূত্রটি বলেছে, ‘ইরানের কাছ থেকে সাধারণ সব ধরনের সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি কেন্দ্রিক সহযোগিতা সবই এসেছে কিন্তু অপারেশন কখন হবে তা কেবল হামাসের কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের হাতেই ছিল।’ ইরানও বিষয়টি স্বীকার করেছে। 

ইরান হামাসের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে ১৯৯২ সালের দিকে। সে বছর ইরান লেবাননে নির্বাসিত ৪০০ হামাস নেতার সঙ্গে বৈঠক করে। ইরানের মিত্র হিজবুল্লাহ সেই বৈঠকের আয়োজন করেছিল। সেই বৈঠকের পর থেকে ইরান হামাসকে সব ধরনের সহায়তা দিতে শুরু করে। আর্থিক, সামরিক সহযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রযুক্তি দিয়েও সহায়তা করেছে। ঘরে বোমা বানানোর কৌশল শেখানো সহ হামাসের যোদ্ধাদের একটি সেনাবাহিনীর মতো করে গড়ে তুলতে ইরান হামাসকে ব্যাপক সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছে আরেকটি সূত্র। 

হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া গত বছর আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, হামাস ইরানের কাছ থেকে সহায়তা হিসেবে ৭০ মিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত স্বল্প পাল্লার রকেট নির্মাণ করে থাকি কিন্তু আমাদের দূর পাল্লার সব রকেট আসে ইরান, সিরিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে।’ তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২০ সাল থেকে ইরান হামাস ও ফিলিস্তিনের অন্যান্য স্বাধীনতাকামী সমমনা গোষ্ঠীগুলোকে ১০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে। তবে ইসরায়েলি একটি সূত্রের দাবি, গত বছর ইরান হামাসকে ১০০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়েছে। 

যাই হোক, আজ থেকে ৩৬ বছর আগে গঠিত ছোট্ট সংগঠনটি বর্তমানে অনেক বেশি সুসংগঠিত ও গাজাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এর শক্তিশালী সামরিক শাখাও রয়েছে। হামাস সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় তারা (হামাস) একটি ছোট খাটো সেনাবাহিনীর সমান। এই সেনাবাহিনীর নিজস্ব সামরিক একাডেমি রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা ইউনিট থেকে শুরু করে নৌ ও কমান্ডো বাহিনী পর্যন্ত রয়েছে হামাসের। সব মিলিয়ে গোষ্ঠীটির প্রায় ৪০ হাজার সেনা রয়েছে। ১৯৯০ এর দশকেও হামাসের অধীনে মাত্র ১০ হাজার বা তারও কম যোদ্ধা ছিল বলে জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল সিকিউরিটি। 
 
হামাস কেবল সেনাবাহিনী গঠন করেই ক্ষান্ত থাকেনি। গাজা উপত্যকাজুড়ে বিস্তৃত টানেলের এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এই টানেল নেটওয়ার্কে হামাস বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুত করেছে এবং বিভিন্ন অস্ত্র তৈরির কারখানাও এখানে গড়ে তুলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, হামাসের কাছে বিপুল পরিমাণ বোমা, রকেট, মর্টার ও বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। 

রয়টার্স থেকে সংক্ষেপিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত