Ajker Patrika

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ঐকমত্যের কাছাকাছি মার্কিন মধ্যস্থতার আলোচনা 

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ৪০
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ঐকমত্যের কাছাকাছি মার্কিন মধ্যস্থতার আলোচনা 

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা আশা দেখাচ্ছে। মার্কিন অংশগ্রহণের পাশাপাশি আরব বিশ্বের একাধিক দেশ এই আলোচনায় জড়িত। পক্ষগুলো যুদ্ধবিরতি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে আরও বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। বিভিন্ন পক্ষের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিবদমান দুই পক্ষ হামাস ও ইসরায়েলকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দাপ্রধানদের মধ্যে আলোচনায় একটি খসড়া শান্তিচুক্তি তৈরি করা হয়েছে। সেই খসড়া অনুসারে প্রথম ধাপে গাজায় ছয় সপ্তাহ দীর্ঘ একটি অস্ত্রবিরতি কার্যকর করা হবে। মোট তিন ধাপের শান্তিচুক্তির প্রথম ধাপ এটি। বাকি দুটি ধাপে আরও বেশি সময়ের যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে আরও বন্দিবিনিময় কার্যকর করা হবে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে এই শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা সিআইএর প্রধান উইলিয়াম বার্নস বলেছেন, একবার দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর আবার আগের শক্তিমত্তা ও তীব্রতা নিয়ে কোনোভাবেই যুদ্ধ শুরু করতে পারবে না ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে আলোচনার অন্যান্য পক্ষকে বলা হয়েছে, হামাসের হাতে ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পেলে ইসরায়েল গাজায় বিমান ও স্থল অভিযানসহ অন্যান্য হামলার পরিমাণ ও তীব্রতা ব্যাপক কমিয়ে আনবে।

এই আলোচনার সফলতার বিষয়ে আশাবাদী ওয়াশিংটন। বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাডমিরাল জন কারবি বলেছেন, ‘আমরা এই আলোচনার লক্ষ্য হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির দিকে তাকিয়ে আছি।’

সর্বশেষ শান্তি আলোচনা প্রায় এক সপ্তাহ সময় ধরে চলেছে উল্লেখ করে জন কারবি বলেন, ‘আমরা এখনই সফলতা উদ্‌যাপন করতে চাই না। তবে (বাইডেন) প্রশাসন গাজা থেকে জিম্মিদের বের করে আনা এবং আরও মানবিক সহায়তার জন্য যুদ্ধ থামাতে সব পক্ষকে সম্মত করার ব্যাপারে আশাবাদী।’

সাধারণত এ ধরনে শান্তিচুক্তির সফলতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে থাকা বিভিন্ন শর্তের বিষয়টি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে আরব কর্মকর্তারা বলেছেন, এই আলোচনায়ও এ ধরেন শর্তের বিষয়টি আলোচনাকে ধীরগতির করে দিচ্ছে। কিন্তু এই বাধাগুলো অপসারণ করা গেলে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

এর আগে প্যারিসে হওয়া আলোচনায় ইসরায়েলের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ডেভিড বার্নিয়া। একটি সূত্র জানিয়েছে, ডেভিড বার্নিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তিতে সম্মত হয়ে তাতে স্বাক্ষরও করেছেন। তবে নভেম্বরে হওয়া স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা স্থবির হয়ে ছিল।

এই শান্তি চুক্তির সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি হলো, হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই শান্তি আলোচনা চালিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে শুরু থেকেই আগ্রহ দেখিয়েছে। আরব কর্মকর্তাদের মত, এটি খুবই ছোট বিষয় হলেই শান্তিচুক্তির চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য এটি বড় একটা অর্জন। হামাস ও ইসরায়েলের এই নমনীয়তার কারণ বোধ হয় যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হয়ে পঞ্চম মাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই যুদ্ধ একটি বিস্তৃত আঞ্চলিক সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, ইসরায়েল এই যুদ্ধ শুরুর দিকে হামাসকে চিরতরে নির্মূল করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামলেও দেশটির হামলায় ব্যাপক বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ৬৬ হাজার মানুষ। এই অবস্থায় ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়াশিংটনের আরব মিত্র দেশগুলো ইসরায়েলকে গাজায় বর্বরতা স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য ব্যাপকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করে, তবেই কেবল তারা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে। কিন্তু এমনটা করার ইচ্ছা ইসরায়েলের কম। আলোচনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমান প্রস্তাবটি একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি ও কার্যকরভাবে সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। হামাসও এই আলোচনায় ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। গোষ্ঠীটি বলেছে, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে তারা অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত