Ajker Patrika

সিরিয়ার জ্বালানি খাত উন্নয়নের কাজ পাচ্ছে বাংলাদেশে এলএনজি বিক্রি করা মার্কিন কোম্পানি

অনলাইন ডেস্ক
সিরিয়ার জ্বালানি খাত উন্নয়নের কাজ পাচ্ছে বাংলাদেশে এলএনজি বিক্রি করা মার্কিন কোম্পানি

সিরিয়ার তেল, গ্যাস ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দায়িত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিক্রি করা মার্কিন কোম্পানি আর্জেন্ট এলএনজি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জোনাথন বাস। গত শুক্রবার তিনি এই তথ্য জানান। খবর রয়টার্সের। তবে এই পরিকল্পনায় অংশীদার আরও দুটি মার্কিন কোম্পানি।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি কোম্পানি—বেকার হিউজ, হান্ট এনার্জি এবং আর্জেন্ট এলএনজি সিরিয়ার তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করবে। আর্জেন্ট এলএনজিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জোনাথন বাস শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছেন। ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এই অংশীদারত্ব গঠিত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জুন মাসের শেষদিকে সিরিয়ার ওপর আরোপিত কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর এই পদক্ষেপ দ্রুত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর আগে, সিরিয়া বিশ্বের অন্যতম কঠোর নিষেধাজ্ঞার অধীনে ছিল।

কোম্পানিগুলো তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে সাহায্য করবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে যাতে দেশটির অর্থনীতি সচল হয়। সিরিয়ার সরকার দেশটিকে বিশ্বমঞ্চে আবারও আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে চাইছে। উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর বিভিন্ন কোম্পানিও সিরিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বন্দর অবকাঠামো জোরদার করার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার পরপরই এই পরিকল্পনা সামনে এল।

জোনাথন বাস রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা সিরিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এবং পরিষেবা সরবরাহে স্বল্পমেয়াদি উন্নতির সুযোগের প্রাথমিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে দেশটির জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি বিস্তৃত মাস্টারপ্ল্যানের উন্নয়ন শুরু করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা প্রাসঙ্গিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি খাতের পুনরুজ্জীবনে সহায়তা করা।’

বাস আরও বলেন, ‘এর মধ্যে অনুসন্ধান ও উৎপাদন থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এমনকি কম্বাইন্ড-সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট সহ পুরো মূল্য শৃঙ্খলে সম্ভাব্য কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’

আর্জেন্ট এলএনজি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি ফ্যাসিলিটি তৈরি করছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানিটি ২০২৫ সাল থেকে বার্ষিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর এটি ছিল প্রথম কোনো বড় মার্কিন এলএনজি সরবরাহ চুক্তি।

বেকার হিউজের কাছে ই-মেইল করে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। টেক্সাসভিত্তিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি হান্ট এনার্জি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

পরিকল্পনাটি প্রাথমিকভাবে ইউফ্রেতিস বা ফোরাত নদীর পশ্চিমের এলাকা থেকে শুরু হবে। এই অঞ্চলটি সিরিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সিরিয়ার বেশির ভাগ তেল উৎপাদিত হয় পূর্বাঞ্চল, এটি এখনো সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রণে। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এবং কুর্দি নেতৃত্বাধীন এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ওয়াশিংটন সাবেক সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পর দামেস্কের নতুন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

দীর্ঘ ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার বিদ্যুৎ খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১১ সালের আগে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৯ গিগাওয়াট, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৬ গিগাওয়াটে। এই খাতকে মেরামত করতে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাই নগদ অর্থ সংকটে থাকা দেশটি বেসরকারি বিনিয়োগ বা দাতাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

গত মে মাসে সিরিয়া কাতারের ইউসিসি হোল্ডিংয়ের সঙ্গে ৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে চারটি কম্বাইন্ড-সাইকেল গ্যাস টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং দক্ষিণ সিরিয়ায় ১ হাজার মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত।

এর আগে, গত বুধবার সকালে জোনাথন বাস, হান্ট এনার্জির প্রধান নির্বাহী হান্টার এল. হান্ট এবং বেকার হিউজের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যক্তিগত বিমানে সিরিয়ায় পৌঁছান এবং বার্নিহের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পরদিন গত বৃহস্পতিবার লিঙ্কডইনে শেয়ার করা এক পোস্টে সিরিয়ার অর্থমন্ত্রী ইয়াসির বার্নিহ বলেছেন, তিনটি মার্কিন কোম্পানি সিরিয়ায় বিনিয়োগ করতে এবং দেশটির জ্বালানি খাত উন্নয়নে একটি জোট গঠন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত