Ajker Patrika

ট্রাম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান টিভি স্টার এলেন ডিজেনেরাস

অনলাইন ডেস্ক
জনপ্রিয় হলিউড তারকা এলেন ডিজেনেরাস। ছবি: এএফপি
জনপ্রিয় হলিউড তারকা এলেন ডিজেনেরাস। ছবি: এএফপি

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেছেন জনপ্রিয় মার্কিন তারকা এলেন ডিজেনেরাস। বহুদিন ধরেই এ কথা শোনা গেলেও এবার নিজেই এর সত্যতা নিশ্চিত করলেন এই তারকা। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গ্লস্টারশায়ারের চেলটেনহ্যামে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এ কথা বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার পর এ অনুষ্ঠানেই প্রথম জনসমক্ষে এলেন জনপ্রিয় এই কমেডিয়ান।

যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় যুক্তরাজ্যের জীবন অনেক বেশি ভালো বলে জানান তিনি। এলেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখনো নিজের পরিচয়ে বসবাস করা বেশ বিপজ্জনক।’ তিনি এবং তার স্ত্রী পোর্শিয়া দ্য রোসি আবারও বিয়ের পরিকল্পনা করছেন। তবে, এবার যুক্তরাজ্যে। কারণ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে সমকামীদের বিয়ে করার অধিকার প্রত্যাহারের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

২০২২ সালে এলেন ডিজেনারেসের বহু বছর ধরে চলা জনপ্রিয় টক শোটি বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর্মস্থলে ‘বিষাক্ত পরিবেশ’ থাকার যে অভিযোগ উঠেছিল, তা তিনি একেবারেই মানতে নারাজ। এলেন জানান, তিনি হয়তো কখনো কখনো ‘খুব সোজাসাপ্টা’ ভাষায় কথা বলেন, কিন্তু তাঁর সম্পর্কে যেসব অভিযোগ ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো তিনি শুধুই ‘ক্লিকবেইট’ বা কাটতি বাড়ানোর জন্য বানানো গল্প।

তিন দশক ধরে মার্কিন টেলিভিশনের সবচেয়ে পরিচিত মুখদের একজন ছিলেন এলেন ডিজেনেরাস। ১৯৯০-এর দশকে নিজের নামে করা সিটকম, টক শো, অস্কার-গ্র্যামি-এমির মতো অ্যাওয়ার্ড শোগুলোর উপস্থাপনা এবং জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড মুভি ফাইন্ডিং নিমোতে ‘ডরি’ চরিত্রে কণ্ঠ দিয়ে নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি।

২০২২ সালে তাঁর দীর্ঘদিনের টক শো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এক বিদায়ী স্ট্যান্ডআপ ট্যুরে বের হন এলেন। এরপর ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক ও পটে আঁকা ছবির মতো এক অঞ্চল কটসওল্ডসে একটি বাড়ি তৈরি করেন তিনি ও তার স্ত্রী। এটি মূলত গ্লস্টারশায়ার ও অক্সফোর্ডশায়ারের কিছু অংশ জুড়ে বিস্তৃত।

সম্প্রতি চেলটেনহ্যামের এভরিম্যান থিয়েটারে এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপক রিচার্ড বেকন এলেনকে জিজ্ঞেস করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের কারণেই কি যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন তিনি? নির্দ্বিধায় এক কথায় উত্তর দেন এলেন—‘হ্যাঁ।’

৬৭ বছর বয়সী এই তারকা জানান, তিনি ও তাঁর স্ত্রী পোর্শিয়া দ্য রসি মূলত প্রতি বছর তিন থেকে চার মাস ইংল্যান্ডে কাটানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই ভাবনায় তাঁরা একটি ‘পার্ট-টাইম বাড়ি’ও কিনেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন নির্বাচনের আগের দিন। পরদিন ঘুম থেকে উঠে বন্ধু-বান্ধবেরা হাজারো বার্তা পাঠিয়ে রেখেছে যে ট্রাম্প জিতে গেছে। তারপর আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্তও লাগেনি। সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করি এখানেই থেকে যাব।’

এলেন বলেন, তাঁকে দুইবার বের করে দেওয়া হয়েছিল হলিউড থেকে। ১৯৯৭ সালে যখন সমকামী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তখন প্রথমবারের মতো বহিষ্কারের স্বীকার হয়েছিলেন তিনি। চেলটেনহ্যামের ওই অনুষ্ঠানে এলেন বলেন, সমকামী হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরই বন্ধ হয়ে যায় তাঁর সিটকম। হাত গুটিয়ে নেন বিজ্ঞাপনদাতারা। প্রচারে আগ্রহ হারায় টিভি চ্যানেলও।

তাঁর এই আত্মপ্রকাশ কি অন্যদেরও পরিচয় প্রকাশ্যে আনতে উৎসাহিত করেছিল কি না—জানতে চাইলে এলেন বলেন, ‘না, আমার মনে হয় না। আমার মনে হয় আমি নিজের ওরিয়েন্টেশন জানানোর পর কেউ কেউ হয়তো একবারের জন্য ভেবেছে যে নিজের ব্যাপারটি সামনে আনবে। কিন্তু, পরে আবার ভেবেছে, না এভাবেই ঠিক আছে।’

তিন বলেন, আগের তুলনায় পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে, একেবারে সবকিছু সহজ হয়ে গেছে তা তিনি মনে করেন না। বলেন, ‘যদি সত্যিকার অর্থেই অগ্রগতি হতো, তাহলে যেসব সমকামী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আমি চিনি, তারা নিশ্চয়ই প্রকাশ্যে আসতেন। কিন্তু এখনো তাঁরা ব্যাপারটি গোপন করছেন। এর মানে এখনো নিজের সত্য পরিচয় প্রকাশে নিরাপদবোধ করেন না তাঁরা।’

এলেন আমেরিকান ব্যাপটিস্ট চার্চের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের সমকামী বিয়ে স্বীকৃতি সংক্রান্ত রায় বাতিল করার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে। কমপক্ষে নয়টি অঙ্গরাজ্য ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় ব্যাপটিস্ট চার্চ এখন সমকামী বিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করছে। এমনকি ইতিমধ্যে যেসব বিয়ে হয়েছে, সেগুলোও বাতিল করতে চায় তারা। পোর্শিয়া আর আমি ইতিমধ্যেই বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। যদি ওরা সত্যিই এমন কিছু করে, তাহলে আমরা ইংল্যান্ডেই আবার বিয়ে করব।’

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে একরকম গ্রামীণ জীবন যাপন করছেন এলেন। মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন গৃহপালিত মুরগি, ভেড়া, ঘোড়ার মতো প্রাণীগুলোর সঙ্গে কাটানোর মুহূর্তগুলো। এলেন বলেন, ‘অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গায় এখন থাকছি আমি। এত সুন্দর যে ভাষায় বর্ণনা করাটা খুব কঠিন। গ্রাম, শহর, স্থাপত্য সবকিছুতেই একটি সরলতা আছে। ভিন্ন রকমের একটা জীবনযাপন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে সবকিছু অনেক বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রাণীদের সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহার করছে না। সবকিছুই ভালো। আমি নভেম্বরে এখানে এসেছি। সময়টা খুব সুবিধাজনক ছিল না। তবে, জীবনে প্রথমবারের মতো তুষারপাত দেখেছি আমি।’

এলেন জানান, তিনি ও তার স্ত্রী পোর্শিয়া যুক্তরাজ্যে মুরগি পালছেন। এ ছাড়া পোর্শিয়ার ঘোড়াও রয়েছে। কিছুদিনের জন্য তারা ভেড়াও পেলেছেন বলে জানান। তবে, সেগুলো বারবার পালিয়ে যায় বলে বিক্রি করে দিতে হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত